সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের সমকাল সাংবাদিক আবদুল হাকিম শিমুল হত্যার আট বছর পেরিয়ে গেলেও উচ্চ আদালতে বিচারিক কার্যক্রম এখনও ঝুলে আছে। শিমুলের পরিবার ও সহকর্মীদের অভিযোগ, রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলিদের আন্তরিক উদ্যোগের অভাব, বিচারিক কাজে দীর্ঘসূত্রতা, সর্বোপরি হত্যা মামলার প্রধান আসামি হালিমুল হক মিরুর নানা চতুরতায় বিচারিক কাজ গত আট বছরে কার্যত শুরুই হয়নি। সাংবাদিক আবদুল হাকিম শিমুল যখন মারা যান, তখন তাঁর কন্যা তামান্না ই ফাতেমার বয়স ছিল মাত্র ৪ বছর। ছেলে আল নোমান নাজ্জাতি সাদিকের বয়স ছিল ১০-১১ বছর। বর্তমানে মেয়ে তামান্না ই ফাতেমা অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী এবং ছেলে নাজ্জাতি সাদিক এইচএসসি শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির চেষ্টা করছেন।
২০১৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারি সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর পৌর এলাকায় আওয়ামী লীগের দু’পক্ষের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের সময় ছবি তুলতে গিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা ও তৎকালীন শাহজাদপুর পৌরসভার মেয়র হালিমুল হক মিরুর শটগানের গুলিতে লুটিয়ে পড়েন সাংবাদিক শিমুল। পরদিন ৩ ফেব্রুয়ারি গুরুতর আহত শিমুলের অবস্থার অবনতি হলে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ঢাকা নেওয়ার পথে দুপুরের দিকে শিমুল মারা যান। পাশাপাশি শিমুল হত্যাকাণ্ডের পর তাঁর স্ত্রী বেগম নুরুন্নাহার খাতুন ওই দিন দিবাগত রাতে সাবেক মেয়র হালিমুল হক মিরুসহ ৩৮ জনকে আসামি করে শাহজাদপুর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। তবে তারা উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়েছেন এবং আছেন বহাল তবিয়তেই। মামলাটি তুলে নিতে নানা প্রলোভনের সঙ্গে আসামিদের প্রচ্ছন্নভাবে নানা হুমকি-ধমকিও সহ্য করতে হচ্ছে নুরুন্নাহারকে।
খুনি মিরুসহ সব আসামি সরকার বদলে গা-ঢাকা দিলেও যে কোনো সময় ক্ষতি করতে পারে বলে পরিবারের আশঙ্কা। শেষ পর্যন্ত স্বামী হত্যার বিচার পাবেন কিনা– এ নিয়েও রয়েছে হতাশা। ছেলেমেয়েও বাবা হত্যার বিচার নিয়ে যারপরনাই সন্দিহান। তাই বিচার প্রক্রিয়া স্বল্প সময়ে শেষ করার জন্য সর্বশেষ আমি, আমরা– বাবাহারা দুই সন্তান সাংবাদিকদের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টার কাছে সনির্বন্ধ অনুরোধ জানাচ্ছি। সমকালের শ্রদ্ধেয় প্রকাশক এবং প্রয়াত সম্পাদক গোলাম সারওয়ার নুরুন্নাহার ও তাঁর দুই সন্তানকে সমকাল পরিবার নিজ পরিবারের সদস্য হিসেবে শুরু থেকেই সুযোগ-সুবিধা দিয়ে আসছেন, যা এখনও অব্যাহত। কিন্তু বর্তমানে গতিহারা মামলাটির অবস্থা স্থবির।
বিচারবঞ্চিতদের কাতারে দীর্ঘ আট বছর ধরে শিমুল হত্যার বিচারও কি অধরা রয়ে যাবে? শিমুলের ছেলেমেয়ে তাদের বাবা হত্যার বিচার দেখতে পারবে না, এমনটি কি হওয়া উচিত? সাংবাদিকদের কাজের পথ কুসুমাস্তীর্ণ নয়। নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়েই তাদের কাজ করতে হয়। নানা ঝুঁকি বিবেচনা করেই তারা সংবাদের পেছনে ছোটেন। সত্য প্রকাশে তারা অবিচল। সাংবাদিকদের সুরক্ষা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। কিন্তু একজন সাংবাদিক লাঞ্ছিত-নিপীড়িত কিংবা হত্যার শিকার হলে বিচার পেতে এত বিলম্ব হবে কেন?
আমরা এও মনে করি, দেশের যে কোনো নাগরিক হত্যাকাণ্ডের শিকার কিংবা নিপীড়ন-নির্যাতনের কবলে পড়লে আইনের শাসন বা বিচার কার্যক্রম কোনোভাবেই বিলম্বিত হওয়া উচিত নয়। খুনিদের অতি দ্রুত বিচার দাবির পাশাপাশি পরম শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার সঙ্গে অষ্টম মৃত্যুবার্ষিকীতে আবারও স্মরণ করি বন্ধুবর আবদুল হাকিম শিমুলকে।
এম আতিকুল ইসলাম বুলবুল: সিরাজগঞ্জের তাড়াশ
প্রতিনিধি, সমকাল
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
এখনও চলছে কাটপিস আমলের সিনেমা!
ঈদে সাধারণত নতুন ও বড় বাজেটের সিনেমা মুক্তি পেয়ে থাকে। এরই ধারাবাহিতায় এবার মুক্তি পেয়েছে পাঁচটি সিনেমা। সারাদেশের প্রেক্ষাগৃহে চলছে সিনেমাগুলো। ঈদ উৎসবের ডামাডোলেও খোদ রাজধানীতে চলছে কাটপিস আমলের সিনেমা! কয়েকটি সিনেমা হলে ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে।
ব্যস্ততম এলাকা ফার্মগেটের আনন্দ সিনেমা হলে চলছে ঈদের আলোচিত সিনেমা ‘বরবাদ’। মেহেদি হাসান হৃদয়ের সিনেমাটি ব্যবসা সফল সিনেমা তালিকায় চলে এসেছে। এর পাশের হল ছন্দতে চলছে বাবুল রেজা পরিচালিত সিনেমা ‘ওপেন চ্যালেঞ্জ’। এতে অভিনয় করেছেন আমিন খান, একা ও আলেকজান্ডার বো। ঈদ উৎসবেও পুরোনো সিনেমা প্রদর্শনীর বিষয়ে ছন্দ হল ম্যানেজার মো. মঞ্জু বলেন, ‘পুরোনো সিনেমার আলাদা দর্শক রয়েছে। এ কারণে পুরোনো সিনেমা চালাচ্ছি। তাছাড়া নতুন সিনেমা আনতে গেলে অনেক টাকা প্রয়োজন। হলের অবস্থা খারাপ। টাকা উঠাতে পারব না। বাধ্য হয়েই পুরোনো সিনেমা দর্শকদের দেখাচ্ছি।’
আনন্দ সিনেমা হলে আসন সংখ্যা ১২০০। সেখানের আজ সন্ধ্যা ৬টায় ‘বরবাদ’-এর শোতে দর্শক ছিল প্রায় ২০০। ঈদে মাল্টিপ্লেক্সগুলোতে দর্শক হলেও সিঙ্গল স্ক্রিনে দর্শক পাওয়া যাচ্ছে না। দর্শক না হওয়ার কারণে হিসেবে হলের দুরবস্থাকেই দায়ী করল আনন্দ হল কর্তৃপক্ষ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বলেন, ‘সিনেমা হলের ১২০০ চেয়ারের মধ্যে অর্ধেকই খারাপ। দর্শক কি খারাপ চেয়ারে বসে সিনেমা দেখবেন! পরিবেশও নোংরা। দর্শক তো ভালো পরিবেশে সিনেমা দেখতে চান। এ কারণে ক্রমেই কমছে দর্শক।’
ছন্দ হলের টিকিট বিক্রেতা কালাম বলেন, ‘দর্শক কমে যাওয়ার কারণে আয় কমে যাচ্ছে। এখন ডিসি ৭০ টাকা ও রিয়েল ৫০ টাকা করে বিক্রি করছি। নিম্ন আয়ের মানুষই পুরোনো সিনেমার দর্শক। দর্শক না হলে অনেক সময় শোই চলছে না। এ কারণে তিন মাস ধরে বিদ্যুৎ বিল দিতে পারছি না। হলের এ রকম খারাপ অবস্থা আগে কখনও দেখিনি।’
ঈদ উপলক্ষে কাঁচপুরের চাঁদমহল সিনেমা হলে চলছে শাকিব খানের সিনেমা ‘বরবাদ’। একই এলাকার লাভলী হলে চলেছে শরীফ উদ্দিন খান দীপু পরিচালিত ‘দুর্ধর্ষ খুনী’। সিনেমাটিতে অভিনয় করেছেন আমিন খান, মুনমুন ও ডিপজল।
লাভলী হলে ‘দুর্ধর্ষ খুনী’ সিনেমা দেখতে এসেছিলেন শিক্ষার্থী আবুল ফয়েজ। তিনি বলেন, ‘ঈদে নতুন সিনেমা মুক্তি পেলেও পুরোনো সিনেমা দেখতে হয়; এটাই দুর্ভাগ্য। দর্শক সবসময় ভালো সিনেমা দেখতে চান। অশ্লীল যুগের সিনেমা বাধ্য হয়ে দেখছেন দর্শক। জালকুড়ির রাজমহল সিনেমা হলে চলছে আজাদ খান পরিচালিত সিনেমা ‘ক্রসফায়ার’। এতে অভিনয় করেছেন আসিফ খান ও ময়ূরী।