স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম বলেছেন, ‘‘এ সরকার একটি চ্যালেঞ্জের মধ্যে দায়িত্ব নিয়েছে। ভঙ্গুর অর্থনৈতিক অবস্থার মধ্যে কাজ শুরু করতে হয়েছে। তারপরও জুলাই গণহত্যায় নিহত এবং আহতদের চিকিৎসায় অবহেলা করা হয়নি। সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।’’

রবিবার (২ ফেব্রুয়ারি) সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।

স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘‘আহতদের বিদেশে চিকিৎসার জন্য এখন পর্যন্ত ১৬ কোটি টাকা খরচ হয়েছে, এই খরচ শুধুমাত্র ১৫ জনের জন্য। বিদেশে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৩০ জন। চিকিৎসার জন্য এখন পর্যন্ত পাঠানো হয়েছে ২০ কোটি টাকা। আরও কত টাকা লাগতে পারে সে হিসেব হয়নি। একজনের জন্য ৬ কোটি ৩৭ লাখ টাকা এবং আরেকজনের জন্য ৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকা খরচ হয়েছে।’’

এ সময় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী প্রফেসর সায়েদুর রহমান বলেন, ‘‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতরা যে কারণে মনঃকষ্ট নিয়ে আন্দোলন করছে তাদের সেসব দাবিকে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করা হবে। কোনোভাবেই সরকার তাদের দাবি দাওয়াকে অবহেলা করছে না। তাদের দাবি অনুযায়ী ক্যাটাগরি অনুযায়ী আহতদের চিকিৎসা, পুনর্বাসন এবং আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। সেজন্য নতুন করে তালিকা তৈরি করবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।’’

তিনি বলেন, ‘‘এখন পর্যন্ত কোনো আহতদের চিকিৎসার জন্য সরকারি খরচের বাইরে নিজেদের ব্যয় হয়নি। যদি কারো নিজস্ব অর্থ ব্যয় হয় সেটাও সরকারকে জানাতে পারেন।’’

ঢাকা/আসাদ/এনএইচ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র জন য সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

চট্টগ্রামে আহতের তালিকা নিয়ে বৈষম্যের অভিযোগ

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় চট্টগ্রাম নগরীর নিউমার্কেট মোড়ে সংঘর্ষে আহত হন মো. ফাহিম। ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সঙ্গে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে সেখানে। হাত ও পায়ে আঘাত পান ফাহিম। হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফেরেন। চিকিৎসকরা বলেছেন, ‘সামান্য আহত’। শারীরিক যাবতীয় বিষয় বিবেচনা করে তাঁর নাম ‘সি’ ক্যাটেগরিভুক্ত করেছে প্রশাসন। তবে এটি মানতে নারাজ তিনি।

ফাহিমের দাবি, ‘হামলায় তিনি গুরুতর আহত হয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পায়ের লিগামেন্ট।’ তাই তিনি বাড়তি সুবিধা পেতে ‘এ’ ক্যাটেগরিতে নাম তালিকাভুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন প্রশাসনের কাছে। এ জন্য নানা পরীক্ষা করে গুরুতর আহত হওয়ার বিষয় প্রমাণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। পরিচিত কয়েকজন সমন্বয়ক ও সহসমন্বয়ক দিয়ে দায়িত্বশীলদের কাছে করাচ্ছেন তদবির।

শুধু ফাহিম নন, জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে আঘাত পাওয়া অনেকেই চাচ্ছেন ‘এ’ কিংবা ‘বি’ ক্যাটেগরির সুবিধা। আন্দোলনে আহতদের তিন ক্যাটেগরিতে ভাগ করা হয়েছে। বাড়তি সুবিধা পেতে ‘সি’ ক্যাটেগরির কেউ কেউ নিজ উদ্যোগে করাচ্ছেন পরীক্ষা-নিরীক্ষা, দেখাচ্ছেন ডাক্তারও। বিষয়টি নিয়ে চাপে আছে প্রশাসন। তবে শত কৌশল কিংবা চাপ প্রয়োগ করে কেউ অনৈতিকভাবে কোনো তালিকায় ঢুকতে পারবে না বলে জানিয়েছেন দায়িত্বশীলরা।

চট্টগ্রামে আন্দোলনে আহতদের তালিকা করা, জমা দেওয়া কাগজপত্র বাছাইসহ যাবতীয় বিষয় তদারকি করছে জেলা প্রশাসন, সিভিল সার্জন কার্যালয়, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালসহ কয়েকটি দপ্তর। জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, আহতদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে আবেদন পড়েছে সাড়ে ৫০০-এর বেশি। চিকিৎসা-সংক্রান্ত কাগজপত্র যাচাই করে এর মধ্যে ‘এ’ ক্যাটেগরিভুক্ত করা হয়েছে পাঁচজনকে। ‘বি’ ক্যাটেগরিভুক্ত ৪৩ জন এবং ৫০৭ জন তালিকাভুক্ত হয়েছেন ‘সি’ ক্যাটেগরিতে। ক্যাটেগরিতে বৈষম্য হয়েছে বলে অভিযোগ করছেন আহতদের অনেকেই।

কয়েকটি দপ্তরে গিয়ে দেখা গেছে, আহত বেশ কয়েকজন চিকিৎসা-সংক্রান্ত কাগজপত্র নিয়ে এক কর্মকর্তার কক্ষ থেকে আরেক কর্মকর্তার কক্ষে ছুটছেন। জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে দেখা হয় শরীফুল ইসলামের সঙ্গে। আন্দোলনে আহত শরীফুল আছেন ‘সি’ ক্যাটেগরিতে। টানা কয়েকদিন এখানে এসেছেন তিনি। তাঁর দাবি, আন্দোলনে গিয়ে একাধিকবার গুরুতর আহত হয়েছেন। গ্রেড নিয়ে তাঁর সঙ্গে অন্যায় করা হয়েছে। তিনি ‘এ’ কিংবা ‘বি’ গ্রেডে নাম তালিকাভুক্ত করাতে চাচ্ছেন।

শরীফুল বলেন, ‘আন্দোলনের সময় নগরের নিউমার্কেট ও দুই নম্বর গেটে আমার ওপর কয়েক দফায় হামলা চালায় ছাত্রলীগ, যুবলীগের নেতাকর্মীরা। হাত, পা, মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাত পেয়েছি। এখনও ভালোভাবে হাঁটতে পারি না।’ তিনি আরও বলেন, ‘বেশ কয়েক কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করেছি। তাদের বলেছি, ডাক্তার আমার এক পায়ের লিগামেন্ট ছিঁড়ে যাওয়ার কথা বলেছেন। কিন্তু টাকা না থাকায় এমআরআই পরীক্ষা করাতে পারিনি। কর্মকর্তারা বলেছেন, লিগামেন্ট ছিঁড়ে যাওয়ার বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রমাণ করতে হবে। তারপর ক্যাটেগরি সংশোধনের বিষয়টি বিবেচনা করবেন তারা।’

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ও গঠিত কমিটির সদস্য সচিব ডা. মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, “আমাদের পাঁচ সদস্যের টিম অত্যন্ত সততা ও স্বচ্ছতার সঙ্গে যাবতীয় তথ্য-উপাত্ত যাচাই থেকে শুরু করে সব কাজ করছি। এর প্রধান লক্ষ্য প্রকৃত আহতরা যাতে তালিকায় সঠিক ক্যাটেগরিভুক্ত হন ও কোনো সুবিধাবাদী যেন সুযোগ নিতে না পারে। ডাক্তারি সার্টিফিকেটসহ প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র একাধিকবার খতিয়ে দেখে এরই মধ্যে সাড়ে ৫০০-এর অধিক আহতকে ক্যাটেগরিভুক্ত করা হয়েছে। ‘সি’ ক্যাটেগরির অনেকেই ‘এ’ বা ‘বি’ ক্যাটেগরিভুক্ত হতে চেষ্টা করছেন। বিষয়টি নিয়ে আমরা বিব্রত।” এখনও অনেকেই তালিকাভুক্ত হতে আবেদন করছেন বলে জানান তিনি।

কমিটিতে থাকা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘অনেকের চিকিৎসা-সংক্রান্ত কাগজপত্র দেখে আমাদের মনে হয়েছে, সামান্য আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন। বিষয়টি চিকিৎসকরাও কাগজপত্রে উল্লেখ করেছেন। তার পরও তা মানতে নারাজ তারা। ক্যাটেগরি সংশোধন করতে তারা নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করছেন।’ চমেক হাসপাতালের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ‘আহতদের অনেকেই গুরুতর আঘাত পেয়েছেন, অনেক মুমূর্ষু ছিলেন– এমন উল্লেখ সংবলিত সার্টিফিকেট পেতে নানাভাবে চেষ্টা করছেন। কেউ কেউ অন্যকে দিয়ে তদবিরও করছেন।’

‘এ’ ক্যাটেগরিভুক্তদের এককালীন ৫ লাখ টাকা, ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে ২ লাখ, ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে ৩ লাখ টাকা দেওয়া হবে। এ ছাড়া মাসিক ২০ হাজার টাকা ভাতা পাবেন। ‘বি’ ক্যাটেগরিভুক্তরা এককালীন ৩ লাখ টাকা, ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে ১ লাখ টাকা, ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে ২ লাখ টাকা পাবেন। তারা মাসিক ১৫ হাজার টাকা ভাতা পাবেন। ‘সি’ ক্যাটেগরিভুক্তরা এককালীন ১ লাখ টাকা, মাসিক ১০ হাজার টাকা ভাতা পাবেন। 

আন্দোলনের সময় গুলিবিদ্ধ ইসমাইল হোসেনের স্ত্রী কলি আক্তার বলেন, “আন্দোলনে গিয়ে আমার স্বামীর ডান হাত ভেঙেছে। আট মাস ধরে তিনি শয্যাশয়ী। এমন অবস্থায় বাচ্চাদের নিয়ে চলতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। অথচ আমার স্বামীকে দেওয়া হয়েছে ‘সি’ ক্যাটেগরি।” আহত রিয়াদ সুলতানা বলেন, ‘সাহস নিয়ে লাগাতার আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলাম। অথচ আজ কেন আমাদের এর কাছে ওর কাছে যেতে হবে? আহতদের যাবতীয় বিষয় দেখভালের জন্য যাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তারা এখন নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত। কে কোন কমিটিতে কী পদ বাগিয়ে নেবেন, সেটিই তাদের এখন বড় মিশন।’

আহত ও তাদের পরিবারের সদস্যদের অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সহযোগিতা নিতে গেলে আগে সমন্বয়কদের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হয়। চিকিৎসা নিতে গেলে সমন্বয়কদের কাছ থেকে স্বাক্ষর নিয়ে আসতে বলা হয়। চোখ নষ্ট হওয়ার মতো গুরুতর আহত বেশ কয়েকজনকে ‘সি’ ক্যাটেগরিতে রাখা হয়েছে। যাদের সঙ্গে সমন্বয়ক কিংবা সহসমন্বয়কদের সখ্য আছে, তাদেরই ভালো সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।

চট্টগ্রামে আন্দোলনে আহতদের অধিকাংশই চিকিৎসা নেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে। হাসপাতালের তথ্যমতে, এ পর্যন্ত সাড়ে ছয় শতাধিক মানুষ চিকিৎসা নিয়েছেন। শহীদ হয়েছেন ১১ জন। এর মধ্যে পাঁচজনকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। অন্যদের মৃত্যু হয় চিকিৎসাধীন অবস্থায়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে
  • রণক্ষেত্র রণভূমি, ১৮ গুলিবিদ্ধসহ আহত ৩০
  • জুলাই আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের সহায়তার জন্য অধিদপ্তর হচ্ছে
  • ভাসানী বললেন ‘লা-কুম দ্বীনুকুম অলইয়াদ্বীন’
  • চট্টগ্রামে আহতের তালিকা নিয়ে বৈষম্যের অভিযোগ
  • জুলাই অভ্যুত্থান নিয়ে ৩০০ প্রামাণ্যচিত্র তৈরি হবে, হবে জাদুঘরও
  • কয়লাবোঝাই জাহাজ থেকে হাত-পা বাঁধা ও অচেতন অবস্থায় উদ্ধার ৬ জন
  • টিকেট কালাবাজারিদের বিরুদ্ধে মানববন্ধন, শেষ হলেই হামলা