অনিরাপদ খাদ্য খেয়ে বছরে মারা যান ৩৫ হাজার মানুষ
Published: 2nd, February 2025 GMT
দেহে পুষ্টির সমস্যার মূল কারণ হচ্ছে অনিরাপদ খাদ্য। এ অনিরাপদ খাবার গ্রহণের ফলে শিশু, গর্ভবতী মায়েদের মধ্যে পুষ্টিহীনতা তৈরি হয়। এ কারণে দেশে দৈনিক ৫ শতাংশ মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। এছাড়া অনিরাপদ খাদ্যের কারণে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে বছরে ৩৫ হাজার মানুষ মারা যান। এ পরিস্থিতিতে খাদ্য নিরাপদতা নিশ্চিত করতে কেনার সময় যাচাই-বাছাই করা ও তেলের ক্ষেত্রে চর্বির পরিমাণ খতিয়ে দেখা দরকার।
রোববার জাতীয় নিরাপদ খাদ্য দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। রাজধানীর শাহবাগে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের লেকচার হলে এ সেমিনার আয়োজন করে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএফএসএ)। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘খাদ্য হোক নিরাপদ, সুস্থ থাকুক জনগণ’।
সেমিনারে খাদ্য সচিব মাসুদুল হাসান বলেন, খাদ্য, স্বাস্থ্য ও সুস্থতাকে আলাদা করে দেখার সুযোগ নেই। এগুলো একে অপরের পরিপূরক। সুস্থ থাকতে হলে নিরাপদ খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। কেননা বর্তমানে বিশ্বে ৭০০ বিলিয়ন লোকের খাদ্য কত নিরাপদ সেই প্রশ্ন জেগেছে।
তিনি বলেন, অনিরাপদ খাদ্য গ্রহণের কারণে দিনে ৫ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনোভাবে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। বর্তমান বিশ্বে নানা কারণে খাদ্যের নিরাপদতা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। ইকোনাইটের সংক্রমণে সবজি পর্যন্ত আক্রান্ত হচ্ছে। এ কারণে সবজি রপ্তানি করতেও সমস্যায় পড়তে হয়।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড.
খাদ্য ও পুষ্টি ইনস্টিটিউটের তথ্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, খাবারে অনেক ভেজাল রয়েছে। ঘির মধ্যে ৬৬ দশমিক ৬৭, গুড়ে ৪৩ দশমিক ৭৫, মধুতে ৩৩ দশমিক ৩৩, মিষ্টিতে ২৮দশমিক ৫৭, হলুদে ২৭দশমিক ৯৩, ডাল ও ছোলায় ৫, চালে ৮ দশমিক ৩৩, মরিচে ১৪ দশমিক ৬৩, গুঁড়া দুধে ১৬ দশমিক ৬৭ এবং লবণে ১৭ দশমিক ৩৩ শতাংশ ভেজাল রয়েছে।
খাদ্য নিরাপদ রাখার উপায় সম্পর্কে ড. খালেদা ইসলাম বলেন, খাদ্য নিরাপদ রাখতে হলে খাবার পরিষ্কার রাখা, রান্না ও কাঁচাখাবার একসঙ্গে না রাখা, রান্নার সময় ঢাকনা দেওয়া, খাবার সঠিক তাপমাত্রায় রাখা এবং রান্নায় নিরাপদ পানি ব্যবহার করতে হবে।
তিনি বলেন, বাজার থেকে ফল, শাক-সবজি কেনার সময় রঙ ঠিক আছে কি না তা দেখতে হবে। মৌসুমী ফল, শাক-সবজি কিনতে হবে। পচা বা গন্ধযুক্ত খাবার কেনা যাবে না। হাত দিয়ে দেখতে হবে। তেলের ক্ষেত্রে চর্বির পরিমাণ কতটা সেটা দেখতে হবে।
স্বাগত বক্তব্যে বিএফএসএর চেয়ারম্যান জাকারিয়া বলেন, দেশে দৈনিক ৮০ জন ও বছরে ৩০ হাজার মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। এর অন্যতম কারণ অনিরাপদ খাদ্য গ্রহণ করা।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন, খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আব্দুল খালেক, কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আহমেদ ফয়সাল ইমাম প্রমুখ।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: দশম ক
এছাড়াও পড়ুন:
নলকূপে পানি উঠছে না, দুর্ভোগে মানুষ
প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুম এলেই মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের হাওর-বাঁওড়, খালবিল, নদীনালার পানি শুকিয়ে যায়। এর ফলে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভর করতে হয় এ এলাকার মানুষের। কিন্তু চলতি বছর বৃষ্টি না হওয়ায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। এতে নলকূপ থেকেও উঠছে না পানি। এতে খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দেওয়ায় এলাকাবাসীকে বাজার থেকে বোতলজাত পানি কিনে খেতে হচ্ছে। এতে করে বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ।
জানা যায়, কমলগঞ্জ উপজেলার পৌর এলাকার নছরতপুর, বরগাছ, আলেপুর, পতনঊষার, শমশেরনগর, সদর ইউনিয়ন, মুন্সীবাজার, আলীনগর, রহিমপুরসহ বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের অধিকাংশ নলকূপেই পানি উঠছে না। নলকূপ থেকে পানি না পাওয়ার কারণে এলাকাবাসী বেশ ভোগান্তিতে পড়েছেন। অনেককে দূরবর্তী জায়গা থেকে পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে। কেউ কেউ দোকান থেকে নিয়মিত পানি কিনে খেতে বাধ্য হচ্ছেন। গত কয়েক বছর ধরে শুষ্ক মৌসুমের দুই থেকে তিন মাস এসব এলাকায় বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দেয়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ব্যাপকভাবে পানির অপচয়, বোরো ধান আবাদ বেড়ে যাওয়া, খালবিল, পুকুর শুকিয়ে ফেলা, অপরিকল্পিতভাবে নলকূপ স্থাপনসহ বিভিন্ন কারণে পানির সংকট দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া হাওর-বাঁওড়, খালবিল, নদীনালার পানি শুকিয়ে যাওয়ায় বোরো আবাদে সেচ সংকট দেখা দেয়। কৃষকরা বাধ্য হয়ে ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার করে সেচ কাজ চালান। এতে উপজেলায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়ার কারণে নলকূপে পানির সংকট দেখা দিচ্ছে।
কমলগঞ্জ পৌর এলাকার বাসিন্দা মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের এলাকায় নলকূপে একদম পানি পাওয়া যাচ্ছে না। পানির জন্য হাহাকার হচ্ছে। বাজার থেকে পানি কিনে খেতে হচ্ছে। দূরবর্তী এলাকা থেকে আমাদের পরিবারের সদস্যরা গোসল ও কাপড় ধুয়ে নিয়ে আসেন। এতে আমাদেরসহ অন্যান্য পরিবারে ভোগান্তির শেষ নেই।’
পতনঊষার ইউনিয়নের রশিদপুর গ্রামের সায়েক আহমদ, রনি মিয়া, লক্ষ্মীপুর গ্রামে নিমাই মালাকার বলেন, তাদের এলাকায় প্রায় ১০০ পরিবারের নলকূপে পানি উঠছে না। এসব পরিবারকে অনেক কষ্ট করে পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপজেলা জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তা সুজন আহমেদ বলেন, শুষ্ক মৌসুম এলেই এ সমস্যা হয়। কৃষকরা বোরো মৌসুমে শ্যালো মেশিন দিয়ে পানি তোলার কারণে পানির স্তর নেমে যায়।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাখন চন্দ্র সূত্রধর বলেন, পানি সংকটের কারণের কথা তুলে ধরে কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা তাঁর কাছে অভিযোগ দিয়েছেন। তদন্তক্রমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।