কখনোই বিএনপির রাজনীতিতে সম্পৃক্ত ছিলেন না। বিগত দিনে নৌকার টিকেটে বনেছেন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনে পট পরিবর্তনের পরেও কমেনি নৌকার জাকিরের দাপট। বরং নৌকার জাকিরের ডান হাত খবু বাহিনী এখন বক্তাবলী আলীরটেকের ত্রাসে পরিণত হয়েছে। খবু বাহিনীর কাছ থেকে রেহাই মিলছেনা বিএনপি নেতাকর্মীদেরও।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ ২০২২ সালের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন জাকির হোসেন। নৌকার মাঝি হিসেবে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতে তাকে সক্রিয় থাকতে দেখা গেছে।

অথচ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনে ২০২৪ সালের ৫ আগষ্ট ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পরে এবার নিজেকে বিএনপি সমর্থক হিসেবে পরিচয় দিয়ে আসছেন আলীরটেকে নৌকার মাঝি হিসেবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত জাকির হোসেন। বিএনপির কতিপয় শীর্ষ নেতাদের ম্যানেজের মাধ্যমে অনেক মামলা থেকেও রেহাই মিলেছে জাকিরের।

বেশীরভাগ ইউপিতে চেয়ারম্যান বদল হলেও আলীরটেকে এখনো বহাল জাকির। জেলা ও মহানগর বিএনপির কতিপয় নেতাদের শেল্টারে ওসমান পরিবারের অতি কাছের লোক ও ঘনিষ্ট সহচর নৌকার জাকিরের ডান হাত খবু এখন বক্তাবলী আলীরটেক পরগনার ত্রাসে পরিণত হয়েছে। জাকিরের পালিত সন্ত্রাসী যখন তখন যাকে খুশি কোপায়।

এর আগেও বহুবার এই কুখ্যাত সন্ত্রাসী প্রকাশ্যে দেশীয় অস্ত্রের মহড়া দিয়ে বিএনপিরই অনেককেই হুমকি দিয়েছে। প্রাণের ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করেনি। জাকিরের ক্লাবে খবুর রাত দিন সশস্ত্র আড্ডা বসে। ওই ক্লাব থেকেই এলাকা ব্যাপী মাদক ব্যবসা ও সন্ত্রাসী কর্ম কান্ড পরিচালিত হয়ে থাকে বলে অভিযোগ রয়েছে।

এলাকার সবাই জানে, কিন্ত চেয়ারম্যান জাকিরের ক্ষমতার দাপটে সবাই ভয়ে মুখ বুঝে থাকে। জাকিরের ক্ষমতার উৎস ছিলো আওয়ামীলীগের আমলে শামীম ওসমানের পরিবার। সেই ক্ষমতা এখনো বিএনপির কিছু নেতার আস্কারায় ও ছত্রছায়ায় আজও বহাল থাকায় জাকিরের ছত্র ছায়ায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে খবু ও তার বাহিনী।

সম্প্রতি আলীরটেক ইউনিয়ন নৌকা মার্কার চেয়ারম্যান জাকিরের ছোট ভাই মাদক ব্যাবসায়ী খবির উদ্দিন (খবু) রামনগরের বিসমিল্লাহ মার্কেটে চাদাবাজী করতে আসলে সেখানে বক্তাবলী ইউনিয়ন ৬নং ওয়ার্ডর বিএনপি'র সাধারল সম্পাদক রাসেল আহম্মেদ বাধা প্রধান করলে তাকে পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে চাপাতি ও বগি দিয়ে আঘাত করে। রাসেল শারীরিক ভাবে মারাত্মক জখম হয়।

বক্তাবলী ইউনিয়ন বিএনপি'র নেতৃবৃন্দ বলেন, ফ্যাসিবাদ হাসিনা সরকার ও গডফাদার শামীম ওসমানের দোসর নৌকার চেয়ারম্যান জাকিরের পোষা ক্যাডার খবুর দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দাবী করছি। তাকে দ্রুত আইনের আওতায় আনা হোক। মাদক সম্রাট খবু গংদের শাস্তির জোর দাবী জানাচ্ছি।

স্থানীয়রা জানান, খবু বক্তাবলী ও আলীরটেক ইউনিয়ন এলাকায় অবৈধ বালু ভরাট ও ২০-৩০টি ইটের ভাটায় চাঁদা নিয়ন্ত্রণ করে! কেউ চাঁদা না দিলে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে হামলা করে। গত মাসেও মোক্তারকান্দি গ্রামের এক ইট ভাটার মালিককে প্রকাশ্যে দেশীয় অস্ত্র ও বগি নিয়ে ধাওয়া দেয় খবু বাহিনী।

খবু ও তার বাহিনী প্রকাশ্যে মদ সেবন করে ও স্থানীয়দের গালমন্দ করে। নৌকার জাকিরের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা ও খবু বাহিনীকে দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন বক্তাবলী আলীরটেক এলাকাবাসী।
 

.

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ ব এনপ র

এছাড়াও পড়ুন:

ট্রাইব্যুনালে ২২ মামলায় শেখ হাসিনাসহ আসামি ১৪১, গ্রেপ্তার ৫৪

পুনর্গঠনের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এখন পর্যন্ত ২২টি মামলা (বিবিধ মামলা) হয়েছে। এসব মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আসামি করা হয়েছে ১৪১ জনকে। আসামিদের মধ্যে ৫৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং ৮৭ জন পলাতক।

আজ বুধবার দুপুরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয় এসব তথ্য জানিয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল–সংশ্লিষ্ট রিপোর্টারদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় ‘মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্তপ্রক্রিয়ার অগ্রগতিবিষয়ক আপডেট’–বিষয়ক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরেন প্রসিকিউটর (প্রশাসন) গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম। এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করেছে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর ট্রাইব্যুনালের পুনর্গঠন হলে এখানে এখন পর্যন্ত অভিযোগ এসেছে ৩৩৯টি। চলমান তদন্ত কার্যক্রম ৩৯টি। তদন্তের প্রাথমিক সত্যতার আলোকে মামলা (বিবিধ মামলা) হয়েছে ২২টি। এসব মামলায় এখন পর্যন্ত মোট অভিযুক্ত ব্যক্তি ১৪১ জন। তাঁদের মধ্যে ৫৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পলাতক আছেন ৮৭ জন।

১৪১ আসামির মধ্যে ৭০ জন বেসামরিক, ৬২ জন পুলিশ (র‍্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর) সদস্য এবং অবসরপ্রাপ্ত বা বরখাস্ত করা সামরিক কর্মকর্তা ৯ জন।

শেখ হাসিনাসহ চারটি মামলার তদন্ত চূড়ান্ত পর্যায়ে

চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ের উপস্থাপন করা প্রতিবেদন অনুযায়ী, আজ পর্যন্ত তদন্ত শেষ বা প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে—এমন মামলা চারটি। এর মধ্যে গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে হওয়া মামলা, সাভারের আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানোর মামলা, রাজধানীর চানখাঁরপুল হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মামলা এবং রাজধানীর রামপুরায় কার্নিশে ঝুলে থাকা ব্যক্তির ওপর গুলির ঘটনায় হওয়া মামলাটি রয়েছে।

প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম বলেন, এসব মামলার তদন্ত প্রতিবেদন স্বল্পতম সময়ের মধ্যে দাখিল করা হতে পারে। তদন্ত প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনাল গ্রহণ করার সঙ্গে সঙ্গেই আনুষ্ঠানিক বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হবে।

এক হাজার ব্যক্তির সাক্ষ্য গ্রহণ

মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারকাজ এগিয়ে নেওয়ার জন্য এখন পর্যন্ত এক হাজার ব্যক্তির সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভিডিও ও ডিজিটাল সাক্ষ্য সংগ্রহ (এক হাজারের বেশি ভিডিও), পর্যালোচনা, যাচাই–বাছাই ও জিও লোকেশন যাচাইয়ের কাজ চলমান।

গুমবিষয়ক তদন্ত কার্যক্রমে ঢাকা শহরের তিনটি এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও বগুড়া জেলায় গুমের তিনটি কেন্দ্র (আয়নাঘর, হাসপাতাল, এলআইসি ইত্যাদি বিভিন্ন কোডনেমে পরিচিত) পরিদর্শন ও সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। ১৫টি জেলায় তদন্ত পরিচালনার উদ্দেশ্যে একাধিকবার পরিদর্শন করা হয়েছে। তদন্তকাজে জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে বিশ্ববিদ্যালয়-মাদ্রাসা পর্যায়ে এ পর্যন্ত চারটি গণশুনানি গ্রহণ করা হয়েছে। তাতে আট শতাধিক শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও সাধারণ মানুষ অংশগ্রহণ করেছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ