ধাওয়া করায় কুকুরের মালিককে পেটালেন বিচারক
Published: 2nd, February 2025 GMT
কুকুর ধাওয়া দেওয়ায় তার মালিককে ডেকে নিয়ে খাস কামরায় পিঠমোড়া করে বেঁধে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে রাজবাড়ী জেলা জজ আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সুমন হোসেনের বিরুদ্ধে।
এ ঘটনায় শনিবার রাতে রাজবাড়ী সদর থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী ভ্যানচালক আফজাল খান। তাঁর বাড়ি সদরের চন্দনী ইউনিয়নের বাড়াইজুড়ি গ্রামে।
অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করে ম্যাজিস্ট্রেট সুমন হোসেন বলেন, ‘কুকুরের বিষয়ে জানতে আফজাল খানকে ডেকে আনা হয়। কিন্তু গালাগাল কিংবা মারধর করা হয়নি। কোনো মহলের ইশারায় আমাকে হেয়প্রতিপন্ন করতে তিনি এমন অভিযোগ করেছেন।’
আফজাল বর্তমানে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তিনি বলেন, ‘ম্যাজিস্ট্রেট সুমন হোসেনের শ্বশুরবাড়ি আমাদের এলাকায়। গত ৩০ জানুয়ারি হাঁটাহাঁটি করার সময় একটি কুকুর তাঁকে ধাওয়া করে। পরে সুমন স্থানীয়দের কাছে কুকুরটি আমার জানতে পেরে পুলিশ পাঠিয়ে খাস কামড়ায় ডেকে নেন।’
আফজালের দাবি, ‘প্রথমে সুমন কুকুরের বিষয়ে জানতে চান। কুকুরটি আমার না বললে তিনি অকথ্য ভাষায় গালাগাল শুরু করেন। এক পর্যায়ে দড়ি দিয়ে পিঠমোড়া করে বেঁধে চেয়ারের ওপর নিচু হতে বলেন। এর পর তিনি রুল দিয়ে আমার নিতম্বে অন্তত ৩০ বার আঘাত করেন। ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে আমার কখনও কোনো বিরোধ হয়নি। মামলা-মোকদ্দমাও নেই। এমন জায়গায় আঘাত করেছেন কাউকে দেখাতে পারছি না।’
সদর থানার ওসি মাহমুদুর রহমান জানান, বিচারকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছেন আফজাল খান। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
যাত্রাপথে অসুস্থ সাইদুলকে ঘরে রেখেই তাঁর দল ছোটে আসরে
অনেক সাধনার পর শেষ বয়সে বাদশাহর একটি ছেলে হয়। কিন্তু জন্মের পরই অসুস্থ হয়ে পড়ে সেই ছেলে। জ্যোতিষীর কথা অনুযায়ী ছেলেকে বাঁচাতে জন্মের আড়াই দিনের মাথায় রাজদরবারে ‘অদেখা জিনিস দেখানো’র খেলার আয়োজন করেন বাদশাহ। সেখানে সুতার তৈরি ময়ূর নিয়ে খেলা দেখাতে আসেন জরিনা সুন্দরী। রাজার ছেলেকে নিয়ে উড়তে উড়তে দৃষ্টির বাইরে চলে যায় সুতার ময়ূর। সাত সমুদ্র পার হয়ে এক মালিনীর ফুলবাগানে গিয়ে পড়ে সুতার ময়ূর। সেখানেই বড় হতে থাকে রাজকুমার তোতা।
বাদ্যের তালে, নাচ আর গানে মঞ্চে গল্প চলতে থাকে। নওগাঁ জেলা শিল্পকলা একাডেমির মুক্তমঞ্চে ‘লোকনাট্য সমারোহ’ উৎসবে এটা ছিল সাইদুলের দলের পরিবেশনা। শুনতে এসেছিলেন বিভিন্ন বয়সের মানুষ। এর মধ্যে কেউ কেউ আগে দেখলেও বেশির ভাগ দর্শকই প্রথমবারের মতো সাইদুলের কিচ্ছা দেখলেন।
গত সোমবার শুরু হয়েছে এই লোকনাট্য সমারোহ উৎসব। জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির নাট্যকলা ও চলচ্চিত্র বিভাগ নওগাঁ শিল্পকলা একাডেমি মুক্তমঞ্চে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। তিন দিনের উৎসবের উদ্বোধন করেন স্থানীয় সরকার উন্নয়ন বিভাগ নওগাঁর উপপরিচালক টি এম এ মোমিন। স্বাগত বক্তব্য দেন জেলা কালচারাল অফিসার তাইফুর রহমান।
নওগাঁ সদর উপজেলার দিঘিরপাড় গ্রামের বাসিন্দা সাইদুল ইসলাম উত্তর অঞ্চলের কিচ্ছা-কাহিনির কিংবদন্তি হিসেবে পরিচিত। রাতের পর রাত বিয়ের গীত ও কিচ্ছা-কাহিনি বলে মঞ্চ মাতিয়েছেন তিনি। সাইদুল ইসলাম দীর্ঘদিন অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী। বর্তমানে তাঁর পথ ধরে বিয়ের গীত ও কিচ্ছা-কাহিনি পরিবেশন করে চলেছেন তাঁর শিষ্য মোস্তফা কামাল ও মাহতাব সরকার। লোকনাট্য সমারোহ উৎসবে সোমবার রাতে ‘সুতার ময়ূর’ ও ‘দানবের কন্যা বেলবতী কিচ্ছা’ পালা পরিবেশন করেন মোস্তফা কামাল ও মাহতাব সরকার। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে বিয়ের গীত পরিবেশন করে দর্শকদের মুগ্ধ করেন সাইদুলের আরেক শিষ্য বাবুল হোসেন।
সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় মঞ্চে হাজির হয়ে সাইদুলের স্ত্রী সুরাইয়া বেগম বলেন, এ অনুষ্ঠানে সাইদুলেরই আসার কথা ছিল। অনুষ্ঠানে আসার জন্য তিনি ইজিবাইকে উঠেছিলেনও। কিন্তু ইজিবাইকে ওঠার পর তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাই তাঁকে বাসায় রেখেই তাঁর দল এখানে কিচ্ছা পালা পরিবেশন করতে এসেছে। লোকশিল্পী সাইদুলের জন্য তিনি উপস্থিত সবার কাছে দোয়া কামনা করেন। তিনি ঘোষণা দেন, সাইদুলের কিচ্ছা পালা পরিবেশন করবেন তাঁর দুই শিষ্য মোস্তফা কামাল ও মাহতাব সরকার।
বন্দনাসংগীত শেষে মুখে ভারী মেকআপ, গায়ে রঙিন কুর্তি, গলায় ও হাতে জরির সুতা আর কোমরে ওড়না বেঁধে মঞ্চে আসেন সাইদুলের শিষ্য মোস্তফা কামাল।
হারমোনিয়াম বাজিয়ে টানা দেড় ঘণ্টা নেচেগেয়ে ‘সুতার ময়ূর’ কিচ্ছা শোনান মোস্তফা। রাত সাড়ে আটটার দিকে ওঠেন সাইদুলের আরেক শিষ্য মাহতাব সরকার। তিনি পরিবেশন করেন ‘দানবের কন্যা বেলবতী কিচ্ছা’। সেই কিচ্ছা পালায় উঠে আসে দানবের কন্যা মানুষের রূপ ধারণ করে কীভাবে মানুষের সমাজে মিশে যায়। বিয়ে করে রাজকুমারকে। সবার শেষে বিয়ের গীত গেয়ে শোনান লোকশিল্পী বাবুল হোসেন।
সাইদুলের কিচ্ছা দেখতে এসেছিলেন নাট্যশিল্পী মাগফুরুল হাসান বিদ্যুৎ বলেন, ‘একটা সময় আলকাপের গান, সাইদুলের কিচ্ছা, পালাগান, বিয়ের গীতসহ লোকসংস্কৃতির বিভিন্ন ধারার ব্যাপক চর্চা ছিল এ অঞ্চলে। চর্চা না থাকায় ধীরে ধীরে লোকসংস্কৃতির অনেক ধারাই হারিয়ে যেতে বসেছে। বাংলাদেশের উত্তর অঞ্চলে লোকসংস্কৃতির অনন্য এক ধারা তৈরি করেছেন লোকশিল্পী সাইদুল ইসলাম। তিনি অসুস্থ হওয়ার পর মনে করেছিলাম সাইদুলের কিচ্ছা পালা হয়তোবা শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু তাঁর শিষ্যদের কিচ্ছা পরিবেশন দেখে আমি আশাবাদী। এঁদেরকে পৃষ্ঠপোষকতা করলে সাইদুলের কিচ্ছা পালা বেঁচে থাকবে।’
আয়োজন সম্পর্কে নওগাঁ জেলা শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল অফিসার তাইফুর রহমান বলেন, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস-২০২৫ উপলক্ষে ‘বহুভাষিক উৎসব ২০২৫’-এর অংশ হিসেবে নওগাঁ জেলায় তিন দিনব্যাপী লোকনাট্য সমারোহ উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে।
তিন দিনব্যাপী এই উৎসবের প্রথম দিন গতকাল সোমবার সাইদুলের বিয়ের গীত ও সাইদুলের কিচ্ছা–কাহিনি পরিবেশন করেছে লোকশিল্পী সাইদুলের দল। উৎসবের দ্বিতীয় দিন গতকাল মঙ্গলবার পালাগান পরিবেশন করেন লোকশিল্পী বিলকিস বানু ও বিল্লালের পালাগানের দল। শেষ দিন লোকশিল্পের আরেক ধারা আলকাপের গান পরিবেশন করবেন মহামায়া পঞ্চরস নাট্যদল।
আজ বুধবার শেষ দিন লোকশিল্পের আরেক ধারা আলকাপ গান পরিবেশন করবে মহামায়া পঞ্চরস নাট্যদল। সমাপনী দিনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক সৈয়দ জামিল আহমেদ।