শুভেচ্ছা জানিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে চিঠি দিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ। ওই চিঠিতে খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনা করেছেন তিনি। 

আজ রোববার গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান। এদিন বিকেলে পাকিস্তান দূতাবাস থেকে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে চিঠিটি পাঠানো হয়েছে বলে জানান শায়রুল। 

চিঠিতে খালেদা জিয়ার উদ্দেশে ৩১ জানুয়ারি শেহবাজ শরীফ লিখেছেন, ‘আমি আপনার (খালেদা জিয়া) স্বাস্থ্য সমস্যা সম্পর্কে জানতে পেরে উদ্বিগ্ন।’ 

সুস্থতা কামনা করে তিনি আরও লেখেন, ‘আমি আপনার সুস্বাস্থ্য এবং মঙ্গল কামনা করি। সর্বশক্তিমান আপনাকে সব অসুস্থতা থেকে রক্ষা করুন এবং আপনাকে সুস্বাস্থ্য দান করুন।’

পাকিস্তান বিএনপির চেয়ারপারসন, তার পরিবার এবং দলের সমর্থকদের সঙ্গে আছে বলেও আশ্বস্ত করেন শেহবাজ। 

চিঠিতে খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক এবং বর্ণাঢ্য জীবন-সংগ্রামের কথা উল্লেখ করে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী আরও লিখেছেন, ‘আপনি বাংলাদেশের রাজনৈতিক দৃশ্যে একটি বিশাল ব্যক্তিত্ব। জনসেবার প্রতি আপনার অবিচল প্রতিশ্রুতি অনেকের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে রয়েছে।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব এনপ ব এনপ

এছাড়াও পড়ুন:

খাদের কিনার থেকে যেভাবে শীর্ষ পর্যায়ে পৌঁছাল সিটি ব্যাংক

আমার আগের প্রজন্মের সময় ব্যবসা নয়, মানুষ দেখে ঋণ দেওয়া হতো। ফলে অনেক ঋণ খারাপ হয়ে পড়ে। ব্যাংকটি সমস্যাগ্রস্ত তালিকায় পড়ে যায়। সেখান থেকে ব্যাংকটিকে সঠিক পথে শক্তিশালী অবস্থানে পৌঁছে দিতে একরকম চ্যালেঞ্জ নিয়ে আমি দায়িত্ব নিই– আজিজ আল কায়সার, চেয়ারম্যান, সিটি ব্যাংক

ব্যাংকটির শুরুর উদ্যোক্তা ছিলেন ১২ জন তরুণ ব্যবসায়ী। তাঁদের মধ্যে ছিলেন আনোয়ার গ্রুপ, ফিনিক্স গ্রুপ, পারটেক্স গ্রুপ, আজিজ গ্রুপ, হোসাইন গ্রুপ ও নূরানী অ্যাগ্রোর উদ্যোক্তারা। ব্যাংকটির প্রথম চেয়ারম্যান ছিলেন ফিনিক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান দীন মোহাম্মদ। ২০০৭ সালের আগ পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ব্যাংকটির উদ্যোক্তা আনোয়ার হোসেন, এম এ হাশেম, ইব্রাহিম মিয়া, আবুল বারিক চৌধুরী ও দীন মোহাম্মদ। ১৯৯৩-৯৫ সাল পর্যন্ত ব্যাংকটি ছিল লোকসানি ব্যাংক। পরিস্থিতি এতই খারাপ হয়ে পড়ে যে নিয়ন্ত্রণমূলক মূলধনেও ঘাটতি দেখা দেয়। নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি এটিকে সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংক হিসেবে তালিকাভুক্ত করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

তবে উদ্যোক্তারা কোনোভাবেই ব্যাংকটিকে সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংক থেকে বের করে আনতে পারছিলেন না। বাংলাদেশ ব্যাংক তখন ব্যাংকটির সব ধরনের কেনাকাটা, ঋণ প্রদানসহ সব ক্ষেত্রে আগাম অনুমোদনের বাধ্যবাধকতা আরোপ করে। সরকারি-বেসরকারি খাতের অভিজ্ঞ ব্যাংকারদের এনে ব্যাংকের কিছুটা উন্নতি হলেও পুরো সংকট থেকে বের হতে পারেনি। ২০০৫ সালের নভেম্বরে সমস্যাগ্রস্ত তালিকা থেকে বের হলেও ‘আর্লি ওয়ার্নিং’ তালিকায় ছিল ব্যাংকটি। ২০০৭ সালে ব্যাংকটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন আজিজ আল কায়সার। তিনি দেশি-বিদেশি ব্যাংকে অভিজ্ঞদের ব্যাংকটিকে ঘুরে দাঁড় করানোর দায়িত্ব দেন। তাঁদের নানা উদ্যোগের ফলে ব্যাংকটি সংকট কাটিয়ে শক্তিশালী ব্যাংক হিসেবে যাত্রা শুরু করে।

আজিজ আল কায়সার বলেন, ‘সিটি ব্যাংক সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংকের তালিকা থেকে বের হলেও আমার অনুরোধে বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যবেক্ষক বহাল রাখে। আমি চেয়েছিলাম ব্যাংকটি উন্নতি করতে যে পদক্ষেপগুলো নেওয়া হচ্ছে, তাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিবিড় তদারকি থাকুক। এতে অন্যরা সতর্ক থাকবে। যার সুফল আমরা পেয়েছি।’

গেম চেঞ্জার

সিটি ব্যাংকের বর্তমান চেয়ারম্যান আজিজ আল কায়সার আগে থেকে পরিচালনা পর্ষদে থাকলেও ২০০৭ সালের জুনে ব্যাংকের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন। পরের মাসেই ইস্টার্ণ ব্যাংককে সফল রূপান্তরে নেতৃত্ব দেওয়া কাজী মাহমুদ সাত্তারকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি ২০১৩ সাল পর্যন্ত ব্যাংকটির এমডি ছিলেন। তাঁর সঙ্গে তখন যোগ দেন বিভিন্ন দেশি-বিদেশি ব্যাংকে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন আরও ৪ ব্যাংকার। এর মধ্যে তখন উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) হিসেবে যোগ দেন সোহেল আর কে হুসেইন, খুচরা ব্যাংকিং বিভাগের প্রধান হিসেবে যোগ দেন মাসরুর আরেফিন, ট্রেজারি বিভাগের প্রধান হিসেবে যোগ দেন শেখ মোহাম্মদ মারুফ ও করপোরেট ব্যাংকিং বিভাগের প্রধান হিসেবে যোগ দেন ইউসুফ সাঈদ। কাজী মাহমুদ সাত্তারের পর সোহেল আর কে হুসেইন ছয় বছর সিটি ব্যাংকের এমডি ছিলেন। বর্তমানে তিনি ব্যাংক এশিয়ার এমডি। মাসরুর আরেফিন ২০১৯ সাল থেকে সিটি ব্যাংকের এমডি ও শেখ মোহাম্মদ মারুফ গত বছর ঢাকা ব্যাংকের এমডি হিসেবে যোগ দিয়েছেন। ইউসুফ সাঈদ সিটি ব্যাংকে যোগ দেওয়ার এক বছর পর কাতার ন্যাশনাল ব্যাংকে চলে যান। এখন তিনি কাতারের রিচমন্ড কনসালট্যান্ট অ্যান্ড সার্ভিসেসের কো-এমডি। পরে তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন আরও দেশি-বিদেশি ব্যাংকের অভিজ্ঞ কর্মকর্তারা। পাশাপাশি তরুণ মেধাবীদের নিয়োগ দেওয়া শুরু করে ব্যাংকটি।

কাজী মাহমুদ সাত্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি যখন সিটি ব্যাংকে যোগ দিই, তখন ব্যাংকটি সবে সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংক থেকে বেরিয়ে এসেছে। তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২৭টি সূচকের উন্নতির শর্ত বেঁধে দেয়। আমার ছয় বছরে এসব সূচকের লক্ষ্য পূরণ করে অনেক ওপরে উঠে যায়। এসব অর্জনের প্রধান কারণ ছিল সুশাসন নিশ্চিত করে সঠিক পথে এগোনো। পেশাদারত্বের সঙ্গে ঋণ বিতরণ ও পরিচালনা করা। ওই সময়ে ব্যাংকের লোগো পরিবর্তন করা হয়, অ্যামেক্সের সঙ্গে যুক্ত হয় সিটি ব্যাংক। কার্ড, ভোক্তা ঋণ—সব মিলিয়ে ব্যাংকটি আমার সময়ে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে যায়। পরবর্তী নেতৃত্ব ব্যাংকটিকে আরও শীর্ষ পর্যায়ে পৌঁছে দিয়েছে।’

কাজী মাহমুদ সাত্তার

সম্পর্কিত নিবন্ধ