বন্দরে গৃহবধূকে কুপিয়ে জখমের ঘটনায় মামলা
Published: 2nd, February 2025 GMT
বন্দরে কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় গৃহবধূ শারমিন বেগমকে কুপিয়ে জখম করে বসত বাড়ি ভাংচুর ও স্বর্ণের চেইন ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় থানায় মামলা দায়েরের হয়েছে।
রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) ভুক্তভোগী ভাবী বাদী হয়ে লম্পট দেবর বিল্লাল, ছেলে সৌরভ হোসেন ও মেয়ে ঋতুকে আসামী করে বন্দর থানায় এ মামলা দায়ের করেন তিনি। যার মামলা নং- ২(২)২৫ ধারা- ৪৪৭/ ৩২৩/ ৩২৪/ ৩২৫/ ৩০৭/ ৩৭৯/ ৪২৭/ ৫০৬ / ১১৪ পেনাল কোড।
এর আগে গত শনিবার (১ ফেব্রুয়ারী) সকাল ১০টায় বন্দর উপজেলার লম্বাদরদী এলাকায় এ সন্ত্রাসী হামলার ঘটনাটি ঘটে।
মামলার তথ্য সূত্রে জানা গেছে, বন্দর উপজেলার লম্বাদরদী এলাকার মৃত আব্দুল মান্নান মিয়ার ছেলে বিল্লাল হোসেন মিয়া দীর্ঘদিন ধরে তারেই বড় ভাই মুক্তার হোসেনের স্ত্রী শারমিন বেগমসহ তার পরিবারকে বিভিন্ন ভাবে অত্যাচার নির্যাতন করে আসছে। সে সাথে লম্পট দেবর বিল্লাল তার বড় ভাইয়ের স্ত্রীকে দীর্ঘ দিন ধরে কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছিল।
এতে ভূক্তভোগী গৃহবধূ কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় লম্পট দেবর বিল্লাল তার বড় ভাই মুক্তার হোসেন ও তার ছেলেদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করে আসছে। এর জের ধরে গত শনিবার সকাল ১১টায় লম্পট বিল্লাল, ছেলে সৌরভ হোসেন ও মেয়ে ঋতু পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে দেশিয় অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত হয়ে লম্বাদরদীস্থ শারমিন বেগমের বসত বাড়ি অনাধিকার ভাবে প্রবেশ করে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে।
গৃহবধূ শারমিন বেগম লম্পট বিল্লাল ও তার সন্তানদেরকে গালাগালি করতে নিষেধ করলে ওই সময় লম্পট বিল্লাল ও তার ছেলে সৌরভ এবং মেয়ে ঋতু ক্ষিপ্ত হয়ে ধারালো অস্ত্র ও লোহার রড দিয়ে শারমিন বেগমকে হত্যার উদ্দেশ্যে বেদম ভাবে কুপিয়ে ও পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করে।
ওই সময় হামলাকারি সৌরভ শারমিন বেগমের গলায় থাকা ৮ আনা ওজনের স্বর্ণের চেইন ছিনিয়ে নেয়। ওই সময় হামলাকারিরা বসত ঘরের মালামাল ভাংচুর করে ২৫ হাজার টাকা ক্ষতি সাধন করে। এ রির্পোট লেখা পর্যন্ত এ ঘটনায় জড়িত কাউকে গ্রেপ্তারের সংবাদ জানাতে পারেনি পুলিশ।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ গ হবধ গ হবধ
এছাড়াও পড়ুন:
‘সংসার চালানোই মুশকিল, ইফতার কিনবো কিভাবে’
গাইবান্ধা শহরে কুলির কাজ করেন সদর উপজেলার পূর্ব কোমরনই মিয়াপাড়া গ্রামের জাহিদুল ইসলাম। প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা আয় করেন। কাজকর্ম তেমন না থাকায় অতিরিক্ত আয়ও হয়না। তবুও কষ্ট করে ৭০ থেকে ৮০ টাকার ইফতার কিনতে হয়। তা দিয়েই চলে পরিবারের চারজনের ইফতার।
শুধু জাহিদুল ইসলাম নন, তার মতো আরও অনেক মানুষের আয় কমে যাওয়ায় এবার তাদের অনেকেই ইফতার সামগ্রী কিনতে পারছেন না।
সরকারি চাকরিজীবী ছাড়া প্রায় প্রত্যেক পেশাজীবির আয় কমেছে। এর মধ্যে দিনমজুর, অটোভ্যান-রিকশা চালক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী অন্যতম। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধির তুলনায় তাদের আয় বাড়েনি, বরং কমেছে। যার প্রভাব পড়েছে পবিত্র রমজান মাসের ইফতার সামগ্রী বিক্রির দোকানেও।
গাইবান্ধা ডিবি রোডের রড সিমেন্টের দোকানে কুলির কাজ করেন শফিকুল ইসলাম। সারাদিনে আয় করেন ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। তিনি বলেন, “এই টাকা দিয়ে সংসার চালানোই মুশকিল। ইফতার কিনবো কিভাবে? এবছর এক দিনও ইফতার কিনিনি। ভাত-তরকারি দিয়েই ইফতার করি।”
ডিবি রোডের কাচারি বাজার এলাকায় সড়কের পাশে ভ্রাম্যমাণ ইফতার বিক্রেতা শুভ মিয়া। তিনি বলেন, “গত বছরের তুলনায় এ বছর বেচা-বিক্রি অনেক কম। গত বছর সারাদিনে ৬ থেকে ৭ হাজার টাকার ইফতার বিক্রি করেছিলাম। এ বছর ৩ হাজার টাকাও বিক্রি হচ্ছে না। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, মানুষের হাতে টাকা নেই। ব্যবসা-বাণিজ্যও ভালো না।”
মাঠ বাজার এলাকার আজাদ মিয়া জর্জ কোর্টে চাকরি করেন। বিকেলে ইফতার কিনতে এসেছেন। তিনি বলেন, “আগের মতো আর ইফতার কিনতে পারিনা। এখন বুট, বুন্দিয়াসহ তিন-চারটা আইটেম ৮০ টাকায় কিনেছি। বাসায় মুড়ি আছে, এসব দিয়েই পরিবারের সবাই ইফতার করবো।”
তিনি বলেন, “চাল, ডাল, তেল, মাছ-মাংসসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সবকিছুরই দাম বেড়েছে। কিন্তু সে তুলনায় মানুষের আয় বাড়েনি। সবকিছু কেমন যেন থমকে আছে। যারা ব্যবসা করেন, তারাও ভালো নেই। তাই, ইফতারের পিছনে অতিরিক্ত অর্থ খরচ করা সবার পক্ষে সম্ভব নয়।”
রমজানে শহরের ডিবি রোড, স্টেশন রোড, পার্ক মোড়, কাচারি বাজার, পুরাতন বাজার মোড়, জেলা পরিষদ মোড়, হাসপাতাল রোড, বাস টার্মিনাল, খন্দকার মোড়সহ বিভিন্ন এলাকায় বসেছে অস্থায়ী এসব ইফতার সামগ্রীর দোকান।
ইফতারের বাজার ঘুরে দেখা যায়, ১০০ গ্রাম ছোলা বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকায়, বেগুনি ৫ টাকা, পিঁয়াজু ৫ টাকা, প্রতি পিস জিলাপি আকার ভেদে ১৫ থেকে ২০ টাকা, চিংড়ির বড়া ১০ টাকা, গ্রিল চিকেন সিঙ্গেল ৮৫ টাকা, বুন্দিয়া ১০০ গ্রাম ১৫ টাকা, খাসির কার্টলেট ৩০ টাকা, চিকেন ফ্রাই কোয়ার্টার ১২০ টাকা, হালিম হাফ ৮০ টাকা, চিকেন বিরানি ১৫০ টাকা, খাসির কাচ্চি ১৫০ টাকা, বিফ রোল ৬০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।
ভ্রাম্যমান ইফতার বিক্রেতা ডি বি রোডের সিয়াম বলেন, “গত বছরের তুলনায় এ বছর বিক্রি কমেছে। গত বছর রোজার শুরু থেকেই ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকার ইফতার বিক্রি করেছি। এবছর ছয় রোজা পার হলেও একদিনে ৫ হাজার টাকাও বিক্রি হচ্ছে না।”
সদর উপজেলার মিয়াপাড়া গ্রামের শফিকুল ইসলাম রড সিমেন্টের দোকানে কুলির কাজ করেন। সারাদিনে আয় করেন ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। তিনি জানান, এই টাকা দিয়ে সংসার চালানোই মুশকিল। ইফতার কিনবো কিভাবে?
রড সিমেন্টের দোকানে কাজ করেন শহরের মিতালিবাজার এলাকার কবির মিয়ার ইফতার কেনার সামর্থ্য নেই
শহরের মিতালিবাজার এলাকার ভ্যানচালক কবির মিয়া। বিভিন্ন দোকানে কুলির কাজ করেন। তিনি বলেন, “আগের মতো আয়, রোজগার নাই। এখন সারাদিনে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা কামাই করি। ইফতার কেনার সামর্থ্য নেই। ভাত খেয়েই ইফতার করি।”
শহরের বড় মসজিদ এলাকার ভ্রাম্যমাণ ইফতার বিক্রেতা বাদশা মিয়া গত বছর ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা ইফতার বিক্রি করতেন। এ বছর ৩ হাজার টাকাও বিক্রি করতে পারছেন না তিনি।
বিক্রেতা বাদশা মিয়া বলেন, “এবছর যে বেচা-বিক্রি হচ্ছে, তাতে করে দোকানের কর্মচারীদের বেতন দিতেই শেষ। আগে কখনো এত কম বিক্রি হয়নি। ব্যবসার অবস্থা একেবারেই খারাপ।”
ঢাকা/মাসুম/টিপু