কাজের লোকরাই ‘ধরিয়ে দেন’ আনিসুল হককে
Published: 2nd, February 2025 GMT
সাবেক আইনমন্ত্রী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ আসনের (কসবা-আখাউড়া) সংসদ সদস্য আনিসুল হককে কৌশলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ‘ধরিয়ে দেন’ তারই বাসার দুজন ‘কাজের লোক’।
রবিবার (০২ ফেব্রুয়ারি) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এমন তথ্য তুলে ধরেন নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়ার সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শরিফুল।
যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা হলেন—সাবেক মন্ত্রীর অসুস্থ মায়ের সেবা-যত্নের দায়িত্বে থাকা শফিকুল ইসলাম সোহাগ এবং মন্ত্রীর গ্রামের বাড়ির কেয়ারটেকার (দারোয়ান) ইদ্রিস মিয়ার ছেলে আলাউদ্দিন বাবু।
আরো পড়ুন:
ফারুক হত্যা: সাবেক এমপি রানাসহ ৪ ভাই খালাস
সাবেক অর্থমন্ত্রীর একান্ত সচিব আজিজের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
মোহাম্মদ শরিফুল ‘বিশ্বস্ত সূত্রের’ বরাতে ফেসবুক পোস্টে দাবি করেন, গত বছরের ৫ আগস্টের আগে-পরে আনিসুল হকের ব্যক্তিগত শত শত কোটি টাকা নিরাপদে জমা রাখার কথা বলে, সেগুলো নিয়ন্ত্রণে নেয় সোহাগ ও বাবু। সরকার পতনের পর কৌশলে আনিসুল হককে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে ধরিয়ে দেন তারা।
শরিফুল বলছেন, এ বিষয়ে সাবেক আইনমন্ত্রী এখনো অবগত নন। টাকা আত্মসাৎ করে সোহাগ ও বাবু বিদেশে পালিয়ে যান। তারা প্রায়ই নাইট ক্লাবে আড্ডা দিচ্ছেন, আর অবৈধ টাকায় আরাম-আয়েশে বিলাসী জীবন পার করছেন।
স্থানীয় রাজনীতিতে সোহাগ ও বাবুর একচ্ছত্র আধিপত্যের বিষয়েও সবিস্তারে বর্ণনা করেন ছাত্রলীগের এই নেতা।
আনিসুল হকের ডানে শফিকুল ইসলাম সোহাগ, বামে আলাউদ্দিন বাবু
শরিফুল লেখেন, কৌশলে আনিসুল হকের এপিএস রাশেদুল কাওছার ভূঁইয়া জীবনকে সরিয়ে সোহাগ ও বাবু মন্ত্রীর পিএ পদ বাগিয়ে নেন। বনে যান সাবেক মন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা। এরপর দেশের সাব-রেজিস্ট্রার বদলি, চাকরির তদবির, অবৈধভাবে শত শত একর জমি; দেশ-বিদেশে ফ্ল্যাট, কয়েকশ কোটি টাকার মালিক হয়েছেন।
পোস্টে বর্ণনা অনুযায়ী, সোহাগ ও বাবু কায়দা করে মন্ত্রীর গুলশান অফিস সম্পূর্ণ ‘নিয়ন্ত্রণে’ নেন। তখনই শুরু করেন আওয়ামী লীগসহ সব অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের ত্যাগী নেতাকর্মীদের দূরে সরানোর ‘বিশেষ কৌশল’।
অভিযুক্ত দুজন কসবা-আখাউড়ার রাজনীতি ধ্বংস করেছেন দাবি করে শরিফুল বলেন, কে নেতা, চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, মেয়র হবেন; এসব সিদ্ধান্ত তারা নিতেন। আর মন্ত্রী তাদের সিদ্ধান্তকেই চূড়ান্তভাবে ঘোষণা দিতেন।
শরিফুলের ফেসবুক পোস্ট
ছাত্রলীগের এই নেতার দাবি, কসবা-আখাউড়ার দলীয় নেতাকর্মীকে বিদেশে বসে হরতাল-অবরোধ ও দলীয় লিফলেট বিতরণ করতে বলেন তারা।
এই দুজনকে পাওয়ামাত্র ‘গণধোলাই’ দেওয়ার কথা বলে শরিফুল লিখেছেন, তাদের কাছ থেকে মন্ত্রীর অর্থগুলো উদ্ধার করুন। দলের নির্যাতিত নেতাকর্মীদের পরিবারের মাঝে টাকাগুলো বিলিয়ে দিন।
শরিফুলের পোস্টে অনেকে মন্তব্য করেছেন, যার মধ্যে একজন সবুজ আহম্মেদ। তিনি লিখেছেন, ‘‘অভিযুক্ত দুজন অতীতে কখনো রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন না। তৃণমূলের কোনো নেতাকে তারা চিনতেন না। মন্ত্রীর কারণে কসবা-আখাউড়ার আওয়ামী রাজনীতি ধ্বংস হয়ে গেছে।’’
তানজিদ হাসান মিশু নামে একজন লেখেন, ‘‘তারা মন্ত্রীর পিএ পদ ব্যবহার করে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের বিশাল ক্ষতি করেছেন। অথচ অতীতে কখনো ছাত্রলীগ-যুবলীগ বা আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেননি।’’
ছাত্রলীগ নেতা শরিফুলের ফেসবুক পোস্টের মন্তব্য
মো.
অভিযুক্ত দুজনের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তাদের বিষয়ে এলাকায় খোঁজ-খবর করে পাওয়া যায়, সরকার পতনের পরই দুজন বিদেশে চম্পট দেন।
শরিফুলের পোস্টটি নিয়ে আলোচনা শুরু হলে সেটি তার দেওয়া কি না, সে বিষয়ে জানতে তার মোবাইল নম্বরে একাধিকার কল করা হলেও সাড়া দেননি। তাকে এসএমএস দিলে ফিরতি বার্তায় ফেসবুক পোস্টটি তারই বলে জানিয়ে তিনি বলেন, যা লিখেছি সবই সত্য।
মাইনুদ্দীন/এনএইচ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফ সব ক প স ট র র জন ত মন ত র র কর ছ ন আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
অপরাধ জগতে মেরূকরণ, হত্যা হামলা বেড়েছে খুলনায়
খুলনায় সন্ত্রাসীদের মেরূকরণ হয়েছে। দীর্ঘদিন পর এলাকায় ফিরে নতুন করে সংগঠিত হয়েছে সন্ত্রাসী পলাশ গ্রুপের সদস্যরা। পুরোনো সন্ত্রাসী গ্রেনেড বাবু, আশিক বাহিনীর অনুসারীদের মধ্যে প্রায়ই তাদের সংঘাত হচ্ছে। নগরীতে সশস্ত্র মহড়া, প্রকাশ্যে খুনের ঘটনাও বাড়ছে। মূলত এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, বিগত দিনে হামলা ও হত্যার প্রতিশোধ, মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে খুন-সংঘাত বাড়ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যর্থতা সন্ত্রাসীদের অপ্রতিরোধ্য করে তুলেছে।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) তথ্য বলছে, গেল নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে খুলনা মহানগরীতে ১০টি খুনের মামলা হয়েছে। বছরের শেষ ৬ মাসে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে ২৩টি। অন্যদিকে ২০২৩ সালের নভেম্বর ও ডিসেম্বরে খুন হয়েছিল মাত্র একটি। শেষ ৬ মাসে হত্যা মামলা ছিল ১১টি। গত জানুয়ারি মাসেই দুটি হত্যা এবং ৬ জনকে কুপিয়ে ও গুলি করে জখম করা হয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর খুলনায়ও পুলিশের মনোবল ভেঙে পড়ে। এই সুযোগে পালিয়ে থাকা সন্ত্রাসী ও মাদক বিক্রেতারা এলাকায় ফিরে আসে। অনেকে জেল থেকে ফিরে আগের তৎপরতায় জড়িয়েছে। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা।
কর্মকর্তারা জানান, ৫ আগস্টের আগে খুলনায় গ্রেনেড বাবু, আশিক ও নূর আজিম গ্রুপের তৎপরতা ছিল বেশি। এর মধ্যে আশিক ও নূর আজিম নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় তৎপরতা চালাত। কিন্তু নগরজুড়ে আধিপত্য ছিল গ্রেনেড বাবুর তৈরি ‘বি কোম্পানির’। নগরীর মাদক সিন্ডিকেটের বড় অংশ ছিল তার বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে।
গত ১ জানুয়ারি নূর আজিমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আশিকের ভাই সজীবসহ পরিবারের কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশ ও সেনাবাহিনীর তালিকায় নাম থাকায় দেশে ফেরেনি শীর্ষ সন্ত্রাসী গ্রেনেড বাবু। শক্তি প্রদর্শন করতে তৎপর হয়ে ওঠে পলাশ গ্রুপ। গত দুই মাসে ৯ জনকে কোপানাে ও ৩ খুনে গ্রুপটির নাম এসেছে।
সন্ত্রাসীদের তৎপরতার বিষয়ে খোঁজখবর রাখেন এমন দুই ব্যক্তি জানান, মাত্র দুই মাসের মধ্যে বাহিনী তৈরি করে বিভিন্ন এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছে পলাশ গ্রুপ। দেশি ও বিদেশি অস্ত্র, লোকবল তৈরি করে তার উত্থান অবিশ্বাস্য রকম দ্রুততার সঙ্গে ঘটেছে। গ্রেনেড বাবুর সঙ্গে বিরোধ ছিল এমন সন্ত্রাসী ট্যাঙ্কি শাওন, কালা লাভলু এবং দেলোও পলাশের সঙ্গে যোগ দিয়েছে। এছাড়া পুরোনো সন্ত্রাসী সুমন শেখ ওরফে বোমা সুমন, কালা রনি, দাদো মিজান সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (দক্ষিণ) শেখ মনিরুজ্জামান মিঠু বলেন, ১২ সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তারে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। ৪ জন গ্রেপ্তার হয়েছে। আরও অভিযান চলছে।
আলোচিত ৫ খুন, মামলা গতিহীন
গত নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসের ১০টি খুনের মধ্যে রিকশাচালক তাসিনুরকে হত্যা করে রিকশা ছিনতাই, হরিণটানার কৃষ্ণপদ হত্যা, অজ্ঞাত দুটি লাশ উদ্ধার এবং সাবেক এমপি মন্নুজান সুফিয়ানের ভাগনে রূপম হত্যা মামলার সুরাহা হয়েছে। অন্য ৫টি মামলা নিয়ে আলোচনা চলছে নগরজুড়ে। এসব মামলায় মোট আসামি ছিলেন ৪২ জন। এর মধ্যে ১৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গত ২ নভেম্বর রাতে নগরীর আলকাতরা মিল এলাকায় সন্ত্রাসীরা গুলি করে ও কুপিয়ে আশিকুর রহমান ওরফে পঙ্গু রাসেলকে হত্যা করে।
গত ২৯ নভেম্বর রাতে নগরীর টুটপাড়া এলাকায় গুলি ছুড়ে ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ৩০ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আমিন মোল্লা বোয়িংকে গুরুতর আহত করে সন্ত্রাসীরা। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৪ ডিসেম্বর তার মৃত্যু হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক কবির হোসেন বলেন, আশিকের ভাই সজীবসহ দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
১৮ ডিসেম্বর হাজী মুহসীন রোডে সন্ত্রাসীরা গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করে রংমিস্ত্রি মো. সোহেলকে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক তৈমুর ইসলাম বলেন, ফাকাব্বির পলাশ গ্রুপের সঙ্গে জড়িত। অন্যরাও একই গ্রুপের।
গত ২০ জানুয়ারি পুরাতন রেলস্টেশন এলাকায় ২১ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সাবেক সহসভাপতি মানিক হাওলাদারকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। মেহেদী স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
সর্বশেষ গত ২৪ জানুয়ারি রাতে নগরীর তেঁতুলতলা মোড়ে সন্ত্রাসীরা গুলি করে ও কুপিয়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অর্ণব কুমার সরকারকে হত্যা করে। পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গেও পলাশ গ্রুপ জড়িত।
কেএমপি কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দার বলেন, সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারে পুলিশের টহল, চেকপোস্ট, গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। পরিকল্পিতভাবে সন্ত্রাস ও আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটানো হচ্ছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বেশ কয়েকজন সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার হয়েছে। খুব শিগগির পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে।