নির্বাচিত সরকারের আগে মূল্যস্ফীতির পুরোপুরি সমাধান কঠিন: বিবিসিকে অর্থ উপদেষ্টা
Published: 2nd, February 2025 GMT
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার একটি বড় কারণ হিসেবে চাঁদাবাজির কথা বলছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, আগে যারা চাঁদাবাজি করতো তাদের পাশাপাশি রাজনীতিতে যারা জায়গা দখলের চেষ্টায় আছে তাদের লোকজন চাঁদাবাজি করছে এবং স্থানীয় পর্যায়ের অন্যান্য চাঁদাবাজরাও সক্রিয় আছে।
নির্বাচিত সরকার আসার আগে এটার পুরোপুরি সমাধান কঠিন বলে তিনি মন্তব্য করেন।
বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। সাক্ষাৎকারটি হুবহু তুলে ধরা হলো
প্রশ্ন: কেমন আছেন আপনি?
অর্থ উপদেষ্টা: ভালোই।
প্রশ্ন: অন্তর্বর্তী সরকারের তো ছয় মাস হলো। আপনি অর্থ মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্ব দিলেন। এই ছয় মাসে আপনার অভিজ্ঞতা কেমন?
অর্থ উপদেষ্টা: আমরা যখন দায়িত্ব নিলাম অর্থনৈতিক খাতে অনেক ক্ষত ছিল, সমস্যাগুলো বহু ধরনের। প্রথমত ব্যাংকি খাতে যে অনিয়ম, পৃথিবীর কোনও দেশে ব্যাংকিং খাতে এ রকম দুরবস্থা হয়নি। অর্থ চুরি হলো, অসংখ্য ঋণখেলাপি। দুর্নীতি, অর্থপাচার, ব্যাংকিং নীয়মনীতি ভাঙা হয়েছে। গত ১৫ বছরে বাংলাদেশ ব্যাংকেও অনিয়ম হয়েছে।
প্রশ্ন: গত ছয় মাসে একটি বড় ইস্যু বারবার সামনে এসেছে, তা হলো মূল্যস্ফীতি। গত তিন মাসেও মূল্যস্ফীতি ১০ থেকে ১১ শতাংশের মধ্যে রয়েছে। এই উচ্চ মূল্যস্ফীতি আপনারা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছেন না কেন?
অর্থ উপদেষ্টা: মূল্যস্ফীতি এখানে লিগ্যাসি প্রবলেম। গত দুই-তিন বছরে ধরে মূল্যস্ফীতির এই রকম অবস্থা হয় নাই। দেয়ার আর লট অব মানি প্রিন্টটেন্ড, লট অব মানি ফ্লটিং অ্যারাউন্ড (প্রচুর আয়-উপার্জন হয়েছে, অনেকে টাকা উড়ে বেড়িয়েছে)। দ্য বিগ মেগা প্রজেক্টস, কোটি কোটি টাকার মেগা প্রজেক্টস। মেগা প্রজেক্টর সমস্যা হলো, রিটার্ন আর আউটফুট দ্রুত আসে না। ব্রিজ হলো, সরবরাহ চেইনে তো দ্রুত কোনো প্রভাব নাই। অ্যাট দ্য সেম টাইম, রেমিট্যান্স অনেকটা কমে গেল।
এর ফলে মূল্যস্ফীতি আমরা একেবারে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি নাই, তা না। কিছুটা করেছি। খাদ্যে মূল্যস্ফীতি একটু বেড়েছে। কিন্তু নন-ফুডে আবার কিছুটা কমেছে। সামগ্রিকভাবে বেড়েছে। আমরা সরবরাহ ঠিক রাখার চেষ্টা করছি যতটা সম্ভব।
সাপ্লাই চেইন ইজ ব্রোকেন। আর অনেক মিডল ম্যান। মহাস্থানগড় থেকে একটি ট্রাক ঢাকায় আসবে। পাঁচ হাজার টাকা ভাড়া। কিন্তু শেষ পর্যন্ত চাঁদাবাজির কারণে ভাড়া পড়ে ১২ হাজার টাকা। চাঁদাবাজি তো কমে নাই।
প্রশ্ন: চাঁদাবাজি কমানোর দায়িত্ব তো আপনাদের মাঝেই পড়ে।
অর্থ উপদেষ্টা: আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, জোর করে লোকজনকে ধরে…। এর আগে যেমন চাঁদাবাজি কম হতো। কারণ রাজনৈতিক সরকারের সুবিধা হলো, তার পলিটিক্যাল আর্মস ছিল। আমাদের তো সেরকম নাই। ইউ নো দ্য লিমিটিশেন।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, একজন দুইজন ম্যাজিস্ট্রেট এটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।
চাঁদাবাজিতে এখন তিনটি বড় দল জড়িত। এক, আগে যারা ছিল তারাও আছে… (আওয়ামী লীগের); দুই, যারা এখন পলিটিক্যালি ইমার্জিং…মাঠপর্যায়ে আছে, তারাও চাঁদাবাজি করছে; তিন, স্থানীয় জনগণ। এগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা আমাদের জন্য ডিফিকাল্ট হয়ে যাচ্ছে।
প্রশ্ন: আপনি যেটি বলছিলেন, পুলিশ দিয়ে চাঁদাবাজির ইস্যুটা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। রাজনৈতিক দলগুলোর কথা বলছিলেন, রাজনৈতিক দল আসার আগ পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণে আসবে না? বা রাজনৈতিক দল কেন এটি নিয়ন্ত্রণে আনবে?
অর্থ উপদেষ্টা: রাজনৈতিক দলের তো ভোটের দিকে নজর থাকে। তারা ক্ষমতায় যেতে চায়। বড় রাজনৈতিক দল যাদের একেবারে মাঠ পর্যায়ে কর্মী আছে, তাদের তো নিয়ন্ত্রণ করা এখন অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য একটু কঠিন হয়ে পড়ছে।
দ্বিতীয়ত দুর্যোগের বিষয়টিও, কুমিল্লায় যেমন বন্যা হলো, শেরপুর-ময়মনসিংহে অতি বৃষ্টি হলো। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সমস্যার সম্মুখীন তো হয়েছি। তাই এখনও মুল্যস্ফীতি অনেক বেশি।
প্রশ্ন: সে সমস্যাটার কথা বলছেন, এটা কি নির্বাচিত সরকার আসার আগ পর্যন্ত সমাধান হবে না?
অর্থ উপদেষ্টা: আমরা চেষ্টা করছি। আমরা আশা করছি, জুনের মধ্যে মুল্যস্ফীতি ৮ এর নিচে নিয়ে আসতে পারবো। একেবারে পাঁচ-ছয়-চারে চলে যাওয়া অসম্ভব। পাঁচ তো আদর্শিক অবস্থান।
প্রশ্ন: এই দ্রব্যমূল্যের জন্য গত সরকারের আমলে বারবার সিন্ডিকেটের কথা বলা হয়েছে। আপনি বলছিলেন, মিডল ম্যানের কথা। অলিগার্কের কথা বলা হয়েছে, তাদের হাতে সরবারহ চেইন চলে গিয়েছে। আপনিও অনেক সময় এ বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলেছেন। দেখা যাচ্ছে, আপনারা তো এই চেইনটা ভাঙতে পারছেন না। এর কারণটা কী?
অর্থ উপদেষ্টা: ভাঙতে চেষ্টা করছি। আমাদেরকে এখন সরকারি কয়েকটি সংস্থার ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। যারা কিনা পর্যাপ্ত নয়। টিসিবি কার্ড দিয়ে বা ডেপুটি কমিশনার, ইউএনও দিয়ে তো মার্কেট কনট্রোল করা যাচ্ছে না। তারা একবার গেলো, পরে চলে এলো। মূল বিষয় হচ্ছে, জনগণকে সচেতন হতে হবে।
আমি ডেটা সংগ্রহ করছি, মহাস্থানগড় থেকে শুরু করে কুমিল্লার কংশনগরে ফুলকপি কত টাকা বিক্রি হচ্ছে। ওখানে বিক্রি হচ্ছে ১০টাকায়। ১০টাকা না, দুই-তিন টাকায়ও পাচ্ছে। ঢাকায় ২০ টাকায় কিনছেন। আমরা ওদিকে (প্রান্তিক পর্যায়) দামটা বাড়িয়ে দিই, কৃষক তো ভুগছে।
খুবই সত্য যে, পুলিশ আগের মতো সক্রিয় না। তাদেরকে নানা কাজে ব্যবহার করা যাচ্ছে না, যেমন বাজারে যাও, ধরে নিয়ে আসো।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ড স ল হউদ দ ন আহম দ সরক র র ত সরক র পর য য় সমস য
এছাড়াও পড়ুন:
হোয়াটসঅ্যাপে যুক্ত হচ্ছে মেটা এআই উইজেট, যে সুবিধা পাওয়া যাবে
স্মার্টফোনের হোম স্ক্রিনে প্রয়োজনীয় অ্যাপের উইজেট চালু থাকলে সেই অ্যাপে প্রবেশ না করেই হালনাগাদ সব তথ্য জানা যায়। তাই এবার স্বয়ংক্রিয়ভাবে মেটা এআই উইজেট ব্যবহারের সুযোগ চালু করতে যাচ্ছে হোয়াটসঅ্যাপ। নতুন এ সুবিধা যুক্ত হলে হোয়াটসঅ্যাপ চালু না করেই স্মার্টফোনের হোম স্ক্রিন থেকে সরাসরি মেটা এআইয়ের বিভিন্ন প্রযুক্তিসেবা ব্যবহার করা যাবে। এরই মধ্যে নির্বাচিত ব্যবহারকারীদের জন্য পরীক্ষামূলকভাবে মেটা এআই উইজেট চালু করা হয়েছে।
হোয়াটসঅ্যাপের তথ্যমতে, মেটা এআই উইজেটের মাধ্যমে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীরা হোম স্ক্রিন থেকেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর জানার পাশাপাশি ছবি আপলোড ও ভয়েস মোড চালু করতে পারবেন। ফলে মেটা এআই চ্যাটবট ব্যবহারের জন্য হোয়াটসঅ্যাপে প্রবেশ করতে হবে না।
আরও পড়ুনহোয়াটসঅ্যাপে যে ৮ কাজ কখনো করবেন না ১০ জুন ২০২৪অনলাইনে প্রকাশিত স্ক্রিনশটে দেখা গেছে, মেটা এআই উইজেটের আকার সহজেই পরিবর্তন করা যাবে। ফলে ব্যবহারকারীরা তাঁদের প্রয়োজন অনুযায়ী উইজেটের আকার ছোট-বড় করতে পারবেন। তবে এ সুবিধা কেবল যাঁরা হোয়াটসঅ্যাপে মেটা এআই ব্যবহার করছেন, তাঁদের জন্য উন্মুক্ত করা হবে।
আরও পড়ুনহোয়াটসঅ্যাপে কল করার নতুন চার সুবিধা১৪ ডিসেম্বর ২০২৪প্রসঙ্গত, মেটা এআই চ্যাটবটটি নিজস্ব এললামা ভাষা মডেলের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করেছে মেটা। গুগলের জেমিনি বা ওপেনএআইয়ের চ্যাটজিপিটির মতোই বিভিন্ন ধরনের কাজ করা যায় চ্যাটবটটিতে। তাই ইতিমধ্যেই হোয়াটসঅ্যাপে মেটা এআই চ্যাটবট বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। নতুন উইজেট যুক্ত হলে এ সুবিধা আরও সহজলভ্য হবে এবং এর ব্যবহার উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস
আরও পড়ুনহোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট হ্যাকড হওয়ার ৫ লক্ষণ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪