সমালোচনার মুখে অমর একুশে বইমেলা উপলক্ষে প্রদর্শিত একটি পোস্টার সরিয়ে নিয়েছে বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ। তারা বলেছে, পোস্টারটি বাংলা একাডেমি তৈরি করেনি। অন্য কারোর করা এই পোস্টার নজরে আসায় ব্যবস্থা নিয়েছে তারা। 

‘৫২–এর চেতনা ২৪–এর প্রেরণা’ লেখা পোস্টারটি তৈরি করা হয় একটি সাদা–কালো ছবি ব্যবহার করে। এই ছবিতে দেখা যায়, স্লোগানসংবলিত প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে বসে আছেন তরুণী, নারীরা। তাদের হাতের প্ল্যাকার্ডে লেখা ‘মা বোনেরা অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো’। সেখানে বাঁশের লাঠি হাতে নিয়ে বসে থাকা তরুণী বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী ফেরদৌস হক লিনু।

বইমেলার এই পোস্টার নিয়ে গতকাল শনিবার রাতেই ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন কাজী ফেরদৌস হক লিনু। তাতে তিনি লেখেন, ‘সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের এই ছবি ব্যবহারের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। ১৯৭১–এর ছবি ৫২–এর ছবি বলে উল্লেখ করছে, ধিক্কার জানাই। ছবিতে লাঠি হাতে আমি। ১৫ মার্চ ১৯৭১ এর ছবি। তাদের ইতিহাস সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণা নেই। ৫২ তে স্বাধীনতার স্লোগান ছিল না। রাষ্ট্রভাষা মাতৃভাষা বাংলার স্লোগান ছিল।’

এরপর বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার সূত্রপাত হয়। 

পরে সমালোচনার মুখে আজ রোববার এই পোস্টার সরিয়ে নেয় বাংলা একাডেমি। এ বিষয়ে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম বলেন, ‘প্রথম কথা এটা বাংলা একাডেমির পোস্টার না। তবে বইমেলার পোস্টার। একাডেমির মেলার আয়োজকদের পক্ষ থেকে এটি বানানো হয়নি। অন্য একটি পক্ষ তৈরি করেছে। আমাদের কোনোভাবে দৃষ্টি এড়িয়ে গেছে। তবে আমরা জানার সঙ্গে সঙ্গে পোস্টারটি অপসারণ করা হয়েছে।’ 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব ল এক ড ম এক ড ম

এছাড়াও পড়ুন:

তুমুল যুদ্ধের পর মুক্ত বড় এলাকা

নভেম্বর মাস। আবদুল লতিফসহ মুক্তিযোদ্ধারা অস্ত্র কাঁধে এগিয়ে যেতে থাকেন তাঁদের লক্ষ্যস্থল অভিমুখে। নিঃশব্দে সমবেত হন তাঁরা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অবস্থানের অদূরে। লক্ষ্য—পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে আক্রমণ করে সমূলে তাদের উচ্ছেদ করা।

পাকিস্তানি ঘাঁটির তিন দিকে ছিল নদী। সে কারণে আবদুল লতিফ ও তাঁর সহযোদ্ধারা ছিলেন সুবিধাজনক অবস্থায়। মূল আক্রমণকারী দলের মুক্তিযোদ্ধাদের এক পর্যায়ে নদী অতিক্রম করতে হয়। আবদুল লতিফ ছিলেন মূল আক্রমণে।

নদীর ঘাটপাড়ে ছিল পাকিস্তানিদের কয়েকটি বাংকার। আবদুল লতিফ ও তাঁর সহযোদ্ধারা নদী অতিক্রম করে ওই সব বাংকার লক্ষ্য করে অসংখ্য গ্রেনেড ছোড়েন। পাকিস্তানি সেনারা হতভম্ব হয়ে পড়ে। কারণ, ঘাট এলাকা হয়ে পশ্চিম দিক থেকে এই আক্রমণ ছিল তাদের জন্য কল্পনাতীত। এ জন্য তারা মোটেও প্রস্তুত ছিল না।

তীব্র আক্রমণে ভীতসন্ত্রস্ত পাকিস্তানি সেনারা নদীর তীরের অবস্থান ছেড়ে পেছনে গিয়ে ত্বরিত সমবেত হয়। সেখানে ছিল পাকা গুদামঘর। তারা দ্রুত গুদামের ছাদে উঠে মেশিনগান ও এলএমজি স্থাপন করে। নল ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে অসংখ্য গুলিবর্ষণ করে। তখন ভোর আনুমানিক পাঁচটা।

আবদুল লতিফ ও তাঁর সহযোদ্ধারা পাকিস্তানিদের প্রচণ্ড গোলাগুলি উপেক্ষা করে নদীর পাড়ে উঠে পড়েন। সাহসের সঙ্গে পাকিস্তানিদের পাল্টা আক্রমণ করেন। একপর্যায়ে দুঃসাহসী আবদুল লতিফ গুদামঘরের কাছে যান। ছাদ লক্ষ্য করে কয়েকটি গ্রেনেড নিক্ষেপ করেন। হতাহত হয় কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা। এ সময় পাকিস্তানিদের গুলিতে শহীদ হন তিনি। তুমুল রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর পাকিস্তানি সেনারা ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি স্বীকার করে সেখান থেকে পালিয়ে যায়। মুক্ত হয় বিরাট এলাকা। তবে এ বিজয় আবদুল লতিফ দেখে যেতে পারেননি। পরে সহযোদ্ধারা তাঁকে সেখানেই সমাহিত করেন। এ ঘটনা ঘটে সিলেট জেলার গোয়াইন ঘাটে ১৯৭১ সালের ৩ নভেম্বর।

এর আগে ২৪ অক্টোবর আবদুল লতিফ ও তাঁর সহযোদ্ধারা সেখানে আক্রমণ করেছিলেন; কিন্তু সেদিন ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি স্বীকার ও পাকিস্তানিদের তাড়া খেয়ে তাঁদের পিছে হটে যেতে হয়েছিল। পাকিস্তানিরা তাঁর অনেক আহত সহযোদ্ধাকে যুদ্ধক্ষেত্রের আশপাশ থেকে খুঁজে খুঁজে বের করে হত্যা করে।

আবদুল লতিফ চাকরি করতেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। এর অবস্থান ছিল সৈয়দপুরে। তখন তাঁর পদবি ছিল ল্যান্সনায়েক। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে তিনি ভারতে যান। পরে জেড ফোর্সের অধীন বাহাদুরাবাদ ঘাট, রাধানগর, ছোটখেলসহ কয়েক স্থানে সাহসের সঙ্গে যুদ্ধ করেন।

# আবদুল লতিফ মণ্ডল, বীর উত্তম

গ্রাম: চরেরহাট, ইউনিয়ন: পবনাপুর, উপজেলা: পলাশবাড়ী, গাইবান্ধা। বাবা: তোরাপ আলী, মা: বালি বেগম। অবিবাহিত। খেতাবের সনদ নম্বর ৩৮।  গেজেটে নাম আবদুল লতিফ। শহীদ ৩ নভেম্বর ১৯৭১।


সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা। দ্বিতীয় খণ্ড। প্রথমা প্রকাশন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • তুমুল যুদ্ধের পর মুক্ত বড় এলাকা