পুলিশকে মারধর করে আ.লীগ নেতাকে ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ
Published: 2nd, February 2025 GMT
পাবনার সুজানগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল ওহাবকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশের ওপর হামলা করে, পুলিশের গাড়ি থেকে তাকে ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে নেতাকর্মী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের বিরুদ্ধে।
রবিবার (২ ফেব্রুয়ারি) বিকেল পাঁচটার দিকে সুজানগর পৌর সদরের মথুরাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে এ ঘটনা ঘটে। আওয়ামী লীগ নেতা ওহাবের বাড়িও মথুরাপুর মহল্লায়।
সুজানগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম মোস্তফা এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেছেন, “এলাকাবাসী পুলিশের ওপর হামলা করে তাকে ছিনিয়ে নিয়ে গেছে।”
আব্দুল ওহাব সুজানগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও সাবেক পৌর মেয়র। পুলিশের দাবি, তিনি গত জুলাই-আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার পলাতক আসামি।
এলাকাবাসীর বরাত দিয়ে ওসি গোলাম মোস্তফা জানান, আব্দুল ওহাব বাড়ির পাশে মসজিদ থেকে আছরের নামাজ পড়ে বের হন। এসময় সুজানগর থানা পুলিশের একটি দল তাকে একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে গাড়িতে তুলে নিয়ে যাচ্ছিল। সেসময় স্থানীয় জনতার বাধার মুখে পড়ে পুলিশ। এক পর্যায়ে পুলিশের গাড়ি ঘেরাও করে ওহাবকে ছেড়ে দিতে বলে নেতাকর্মী ও স্থানীয়রা। পুলিশ রাজী না হলে গাড়ি থেকে ওহাবকে জোরপূর্বক বের করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে তারা।
পুলিশ বুঝিয়ে নেতাকর্মী ও এলাকাবাসীকে প্রতিহত করার চেষ্টা করে। পরে এলাকার অসংখ্য নারী-পুরুষ একত্রিত হয়ে পুলিশের গাড়ি থেকে আব্দুল ওহাবকে জোর করে ছিনিয়ে নিয়ে চলে যায়। এলাকাবাসীর তোপের মুখে অবশেষে ওহাবকে ছাড়াই ফিরে যেতে বাধ্য হয় পুলিশ। এ সময় ধস্তাধস্তিতে অভিযান দলের ৫ পুলিশ সদস্য আহত হন।
এ বিষয়ে সুজানগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম মোস্তফা বলেন, “সুজানগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল ওহাব বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হামলা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। ঘটনার সময় আমরা তাকে গ্রেপ্তার করতে যাই। তাকে গ্রেপ্তার করে ফেরার সময় এলাকাবাসী প্রথমে বাধা দেয়। আমরা তাদের বিষয়টি বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করি। কিন্তু স্থানীয়রা তা না মেনে পুলিশের ওপর হামলা করে তাকে ছিনিয়ে নিয়ে গেছে।”
এ ঘটনায় ৫ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে দাবি করে ওসি গোলাম মোস্তফা আরো বলেন, “তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।”
তবে আহত পুলিশ সদস্যদের নাম জানতে চাইলে “পরে দিচ্ছি” বলে জানান ওসি।
ঢাকা/শাহীন/এস
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর এল ক ব স স জ নগর ত কর ম উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
চট্টগ্রামে ‘জঙ্গি’ মামলা থেকে বিএনপি নেত্রী শাকিলাসহ ২৫ আসামি খালাস
চট্টগ্রামভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন ‘শহীদ হামজা ব্রিগেডকে’ অর্থায়ন ও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগে হওয়া একটি বিএনপি নেত্রী ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাকিলা ফারজানাসহ ২৫ জন খালাস পেয়েছেন। আজ সোমবার চট্টগ্রামের সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. আবু হান্নান এই রায় দেন।
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে জঙ্গি অর্থায়ন ও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগে ৯ বছর আগে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে এ মামলাটি হয়। উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য শাকিলা বিএনপির সাবেক হুইপ প্রয়াত সৈয়দ ওয়াহিদুল আলমের মেয়ে ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সদস্য।
সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনাল চট্টগ্রামের সরকারি কৌঁসুলি আবদুস সাত্তার সরোয়ার প্রথম আলোকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এই মামলায় সাক্ষীরা সাক্ষ্য দিতে আসছেন না। মাত্র একজন সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন। আসামিদের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণিত না হওয়ায় আদালত বেকসুর খালাস দেন।
আদালত সূত্র জানায়, ২০১৫ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি হাটহাজারীর মাদ্রাসাতুল আবু বকর (র.)-এ অভিযান চালিয়ে ১২ জনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। পরদিন র্যাব-৭-এর সহকারী পরিচালক মাহফুজুর রহমান বাদী হয়ে হাটহাজারী থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করেন। এর দুদিন পর বাঁশখালীর লটমণি পাহাড়ে ‘জঙ্গি প্রশিক্ষণকেন্দ্র’ থেকে বিপুল অস্ত্রসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব । এর প্রায় দেড় মাস পর ১৩ এপ্রিল চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় র্যাব-৭-এর কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, হাটহাজারী ও লটমণি পাহাড়ে প্রশিক্ষণ নেওয়া জঙ্গিরা চট্টগ্রামভিত্তিক নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘শহীদ হামজা ব্রিগেডের’ সদস্য।
তদন্তের একপর্যায়ে ওই বছরের ১৮ আগস্ট হামজা ব্রিগেডকে অর্থায়নের অভিযোগে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় শাকিলা ফারজানাসহ তিন আইনজীবীকে। তদন্ত শেষে পরের বছরের মার্চ মাসে র্যাব দুই মামলায় শাকিলাসহ ৬১ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেয়।
দুটি মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, বাহরাইনের নাগরিক আল্লামা লিবদির নির্দেশে দেশে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালাতে আসামিরা নতুন জঙ্গি সংগঠন গড়ে তোলেন। দেশে তাঁদের বড় ভাই ওরফে জুনাইয়েদ নামের একজন তাঁদের পরিচালনা করতেন। কিন্তু গ্রেপ্তার আসামিরা বড় ভাই সম্পর্কে বিস্তারিত কোনো তথ্য দিতে পারেননি। হামজা ব্রিগেডকে সামরিক, দাওয়াহ ও মিডিয়া নামের তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়। সামরিক বিভাগকে হোয়াইট, ব্লু ও গ্রিন নামে ভাগ করেন। সামরিক বিভাগের প্রধান হলেন মনিরুজ্জামান ওরফে ডন, দাওয়াহ বিভাগের প্রধান নাছির হোসেন, মিডিয়া বিভাগের প্রধান মো. আবদুল্লাহ। জঙ্গিদের কাছে অস্ত্রগুলো বিক্রি করেন অস্ত্র ব্যবসায়ী মোজাহের মিয়া। জঙ্গি অর্থায়নের জন্য মনিরুজ্জামান ওরফে ডনের তিনটি হিসাব নম্বরে আইনজীবী শাকিলা ফারজানা দুই দফায় ২৫ লাখ ও ২৭ লাখ টাকা, হাছানুজ্জামান দুই দফায় ১৫ লাখ ও ১৬ লাখ টাকা, মাহফুজ চৌধুরী ২৫ লাখ জমা করেন। হাটহাজারী ও বাঁশখালী থানার দুই মামলায় ৬১ আসামির বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করেন আদালত।
খালাস পাওয়ার পর শাকিলা ফারজানা প্রথম আলোকে বলেন, আসামিরা আমরা কেউ জঙ্গি ছিলাম না। তৎকালীন সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলের মতাদর্শী হওয়ায় ষড়যন্ত্র করে এসব মামলায় জড়ানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ২ মার্চ প্রথম আলোতে ‘র্যাবের পলাতক জঙ্গি কারাগারে’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। এতে বলা হয়েছিল, মামলায় বাঁশখালী ও হাটহাজারীর ‘পলাতক জঙ্গি’ হিসেবে দেখানো হয় আজিজুল হক ও পারভেজকে। আজিজুলের খোঁজে ২২ ফেব্রুয়ারি বাঁশখালীর দুর্গম পাহাড়ে র্যাব অভিযানও চালিয়েছিল বলে দাবি করেছিল। অথচ আজিজুল ভাঙচুরের একটি মামলায় প্রায় দুই মাস ধরে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন।২০১৫ সালের ৭ জানুয়ারি পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। পরদিন আদালতের মাধ্যমে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়।
এর আগে গত ২১ জানুয়ারি হাটহাজারীর ঘটনায় করা সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আরেকটি মামলায় শাকিলাসহ ৩১ আসামিকে খালাস দেন আদালত।