আন্তর্জাতিক জলাভূমি দিবসে সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই উপজেলায় দেশের সাতটি জেলা নিয়ে হাওর উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রবিবার (২ ফেব্রুয়ারি) উপজেলার তাড়ল ইউনিয়নের কালনী নদীর তীরে বরাম হাওরে দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হয় এই উৎসব।
এতে হাওর অধ্যুষিত জেলা সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, ও ব্রাহ্মনবাড়িয়া জেলার কৃষক, জেলে এবং পরিবেশবাদীরা অংশগ্রহণ করেন।
উৎসব উপলক্ষ্যে উজানদল গ্রামে সকাল থেকে আসতে শুরু করেন হাওর প্রেমিকরা। জলাভূমি সর্ম্পকে সচেতনতা বৃদ্ধি ও হাওরের পরিবেশ, জীবন জীবিকা রক্ষায় উৎসবের আয়োজন করে বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তর।
উৎসবে আগত অংশ গ্রহণকারীরা জানান, বিগত সময়ে হাওরবাসীর উন্নয়নে সরকার নানা ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়ন করলেও হাওরের মানুষের উন্নয়নে কাজে আসেনি। অপরিকল্পিত উন্নয়নে হাওরের পরিবেশ, প্রতিবেশ নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। হাওরের জীববৈচিত্র্য, জলজপ্রাণী ও বসতি রক্ষায় সরকারি বেসরকারি উদ্যোগ গ্রহণ সংশ্লিষ্টিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তারা। হাওরের টেকসই উন্নয়নে হাওরের জন্য আলাদা মন্ত্রণালয় গঠনের দাবি জানান তারা।
হাওর উৎসবে জেলা প্রশাসক ড.
হাওর নিয়ে বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা জানিয়ে মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, “বাংলাদেশে জলাভূমির পরিমাণ ৪৩%। জলাভূমি হারানোর ঝুঁকি বেশি এ দেশে। জলাভূমি আমাদের খাদ্য উৎপাদন করে। হাওরে সাতটি জেলায় ধান উৎপাদন হয় ১৮% থেকে ২০%। মাছ ২০%, গবাদি পশু ২২% উৎপাদিত হয়।”
তিনি আরও বলেন, “হাওরে এখন পর্যটনের অপার সম্ভাবনা। প্রচুর পর্যটক টাঙ্গুয়া, কক্সবাজার ও কুয়াকাটা ভিড় করেন। দেশের হাওরগুলোকে পর্যটনের আদলে গড়ে তোলা হলে দেশের ইকোনমি অনেক দূর এগিয়ে যাবে।
হাওরের জলাভূমিতে মাছ উৎপাদন হয়। দেশে ৩৭৩টি হাওর ও ১০০০ নদী রয়েছে। এসব হাওরে বাইক্কা বিলের মতো মাছ সংরক্ষণ করা গেলে পুষ্টির চাহিদা মিটবে এবং বিদেশে রপ্তানিও করা যাবে। এই হাওরে শতকোটি টাকার করচ গাছ লাগানো যেতে পারে। গাছের শাখায় পাখিরা আশ্রয় নেবে এবং গোড়ায় আশ্রয় নেবে মাছ।”
তিনি বলেন, “ভারত, চায়না, নেপাল থেকে সেডিমেন্ট গড়িয়ে এসে আমাদের হাওর, নদ-নদী ভরাট করে ফেলে। এজন্য সারাদেশের নদী, খাল, বিল ও হাওর খনন করার পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের। এতে পরিবেশ প্রতিবেশ রক্ষা পাবে এবং হাওরে মাটি ব্যবহার করে অর্থনীতির চাকা সচল হবে।”
সুনামগঞ্জ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সমর কুমার পালের সঞ্চালনায় প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন টুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তাহের মোহাম্মদ জাবের, আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আক্তারুজ্জামান। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা পুলিশ সুপার আ. ফ. ম. আনোয়ার হোসেন খান।
ঢাকা/মনোয়ার/এস
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ন মগঞ জ পর ব শ উৎপ দ
এছাড়াও পড়ুন:
ফের নিজের তৈরি বিমানে উড়লেন জুলহাস, যমুনাপাড়ে উৎসবের আমেজ
ফের নিজের তৈরি বিমানে আকাশে উড়েছেন ইলেকট্রিক মিস্ত্রি জুলহাস মোল্লা (২৮)। রবিবার (৯ মার্চ) দুপুর ১টার দিকে মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার জাফরগঞ্জে যমুনার পাড়ে নিজের তৈরি বিমানে আকাশে উড়েন তিনি।
এ সময় বাংলাদেশ বিমানের অবসরপ্রাপ্ত পাইলট ক্যাপ্টেন আব্দুল্লাহ আল ফারুকসহ সিভিল এভিয়েশনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে, গত সোমবার (৩ মার্চ) পরীক্ষামূলক প্রথম ওড়েন তিনি।
জুলহাসের তৈরি বিমানে আকাশে উড়া দেখতে রবিবার সকাল থেকে হাজারো মানুষ যমুনার পাড়ে ভিড় করেন। লোকে লোকারণ্য যমুনাপাড়ে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ।
টাঙ্গাইলের নাগরপুর থেকে লোকমান রহমান ছেলে রোরহানকে নিয়ে এসেছেন জুলহাসের বিমান দেখতে। তিনি বলেন, ‘‘জুলহাসের তৈরি বিমান টিভিতে দেখার পর ছেলে সামনে থেকে দেখার বায়না ধরেছে। ছেলের আবদার পূরণে আজ সকালে যমুনার পাড়ে ছুটে আসি। বিমানটি সামনে থেকে দেখতে পেরে বোরহান খুবই খুশি।’’
মানিকগঞ্জ শহরের উত্তর সেওতা থেকে এসেছেন জুয়েল আহমেদ। তিনি বলেন, ‘‘ইচ্ছা এবং চেষ্টা থাকলে অনেক কঠিন কাজও সম্ভব। সেটাই প্রমাণ করেছেন মানিকগঞ্জের এক তরুণ। তিনি নিজের চেষ্টা ও পরিশ্রমে বিমান তৈরি করেছেন। শুধু তাই নয়, নিজেই সেটি সফলভাবে আকাশে উড়িয়েছেন।’’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জুলহাস মোল্লার বাড়ি মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার তেওতা ইউনিয়নের ষাইটঘর তেওতা গ্রামে। জুলহাসের বাবা জলিল মোল্লার গ্রামের বাড়ি ছিল জেলার দৌলতপুর উপজেলার বাঘুটিয়া এলাকায়।
নদীভাঙনের কারণে বর্তমানে তারা শিবালয় উপজেলার ষাইটঘর তেওতা এলাকায় পরিবারসহ বসবাস করেন। ছয় ভাই ও দুই বোনের মধ্যে জুলহাস পঞ্চম। তিনি জিয়নপুর উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেছেন। পরে অর্থাভাবে আর পড়তে পারেননি। পেশায় ইলেকট্রিক মিস্ত্রি জুলহাস ঢাকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চুক্তিভিত্তিক কাজ করেন। ছুটিতে বাড়িতে এসে তৈরি করেছেন বিমানটি।
জুলহাস মোল্লা জানান, তিন বছর গবেষণা এবং এক বছর সময় লেগেছে বিমানটি তৈরি করতে। অ্যালুমিনিয়াম ও লোহা দিয়ে বিমানটির অবকাঠামো তৈরি। পানির পাম্পের ‘সেভেন হর্স পাওয়ারের’ ইঞ্জিন ব্যবহার করেছেন।
তিনি বলেন, ‘‘বিমানটি পরীক্ষামূলকভাবে প্রশিক্ষণের জন্য তৈরি করা হয়েছে। তবে, সরকারি অর্থায়ন ও পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এটি বাণিজ্যিকভাবে তৈরি করা যেতে পারে। বিমানটি ৫০ ফুট ওপরে উড়তে পারে।’’
বাংলাদেশ বিমানের অবসরপ্রাপ্ত পাইলট ক্যাপ্টেন আব্দুল্লাহ আল ফারুক বলেন, ‘‘জুলহাসের বিমানটি তৈরিতে যে গবেষণা হয়েছে, তা কীভাবে আরো উন্নয়ন ঘটানো যায় সে বিষয়ে সবাই কাজ করব। সেই সঙ্গে তার একাডেমিক রিসোর্স ও কারিগরি যেসব সহযোগিতা প্রয়োজন, সে বিষয়ে আমরা সহযোগিতা করব।’’
ঢাকা/চন্দন/রাজীব