চলতি বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে ২১৮ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। আগের বছরের একই মাসের তুলনায় যা ৭ কোটি ২০ লাখ বা ৩ দশমিক ৪০ শতাংশ বেশি। আর চলতি অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে বেশি এসেছে ২৩ দশমিক ৬১ শতাংশ। রেমিট্যান্সের পাশাপাশি রপ্তানিতে ভালো প্রবৃদ্ধির কারণে বৈদেশিক মুদ্রাবাজার কিছুটা স্বস্তিতে রয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। আবার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আগের মতো না কমে ২০ বিলিয়ন ডলারের আশপাশে রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই–জানুয়ারি সময়ে প্রবাসীরা এক হাজার ৫৯৬ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। আগের অর্থবছরের একই সময়ে এসেছিল এক হাজার ২৯১ কোটি ডলার। এই হিসেবে প্রথম ৭ মাসে রেমিট্যান্স বেড়েছে ৩০৫ কোটি ডলার বা ২৩ দশমিক ৬১ শতাংশ। এর আগের মাস গত ডিসেম্বরে কোনো একক মাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছিল। ডিসেম্বরে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের পরিমাণ ছিল ২৬৪ কোটি ডলার। এর আগে কোনো একক মাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছিল করোনার মধ্যে ২০২০ সালের জুলাইতে। ওই মাসে রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল ২৬০ কোটি ডলার। মূলত বিশ্বব্যাপী মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে ওই সময়ে হুন্ডি চাহিদা তলানিতে নামায় ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স বাড়ছিল।

সংশ্লিষ্টরা জানান, সরকার পতনের পর থেকে রেমিট্যান্সসহ বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ বৃদ্ধির প্রধান কারণ হুন্ডি চাহিদা কমেছে। বাণিজ্যের আড়ালে কিম্বা দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ যারা দেশের বাইরে পাঠাতো তাদের বেশিরভাগই এখন দৌড়ের ওপরে আছে। ভোগ্যপণ্যসহ বিভিন্ন আমদানিতে কম মূল্য দেখিয়ে এলসি খোলার প্রবণতা কমেছে। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে অর্থ পাচারে কড়াকড়ি করছে সরকার। আবার ঋণ জালিয়াতি, রাজস্ব ফাঁকি, অর্থপাচারসহ বিভিন্ন অনিয়মে অভিযুক্ত ১০টি গ্রুপের অনিয়ম তদন্তে যৌথ টিম কাজ করছে। নতুন করে পাচারের সুযোগ তো দূরে থাক, উল্টো আগে পাচার করা অর্থ দেশে আনার চেষ্টা চলছে। এসব কারণে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি বাড়ছে। চলতি অর্থবছরের নভেম্বর পর্যন্ত ৫ মাসে রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ১৩ শতাংশ।

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

অর্থবছরের আট মাসে অর্ধেক বাজেটও বাস্তবায়ন হয়নি

চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের ৮ মাসে বাজেটের অর্ধেকও বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। অর্থবছরের মূল বাজেট বাস্তবায়ন তো দূরের কথা, সংশোধিত বাজেটও অর্ধেক বাস্তবায়ন করা যায়নি। তবে এর আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে বাজেট বাস্তবায়নের হার কিছুটা বেড়েছে। অর্থ বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

বাজেট বাস্তবায়ন প্রতিবেদনের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই ’২৪-ফেব্রুয়ারি ’২৫) বাজেট বাস্তবায়নের হার দাঁড়িয়েছে অর্ধেকের চেয়ে কম। আলোচ্য সময়ে মূল বাজেটের প্রায় ৪০ শতাংশ এবং সংশোধিত বাজেটের প্রায় ৪৩ শতাংশ বাস্তবায়িত হয়েছে।

এর আগের অর্থবছর অর্থাৎ ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের একই সময়ে বাজেট বাস্তবায়ন হার ছিল মূল বাজেটের প্রায় ৩৭ শতাংশ এবং সংশোধিত বাজেটের প্রয় ৪০ শতাংশ। সে হিসাবে উভয় ক্ষেত্রেই চলতি অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে বাজেট বাস্তবায়ন হার প্রায় ৩ শতাংশ বেড়েছে।

চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার ছিল ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে এটি কমিয়ে ৭ লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

অর্থ বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, আট মাসে মোট ব্যয় হয়েছে ৩ লাখ ১৮ হাজার ২ কোটি টাকা। এর আগে, গত ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের একই সময়ে মোট ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৮৩ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকা।

এদিকে, গত অর্থবছরে মূল বাজেটের আকার ছিল ৭ লাখ ৬১ হাজার ও সংশোধিত বাজেটের আকার ছিল ৭৮৫ কোটি টাকা এবং মোট ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ৭ লাখ ১৪ হাজার ৪১৮ কোটি টাকা।

অর্থ বিভাগের হিসাব মতে, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে প্রকৃত ব্যয় দাঁড়ায় ৬ লাখ ১১ হাজার ৫৯৭ কোটি টাকা। সে হিসাবে গত অর্থবছরের ৮ মাসে বাজেট বাস্তবায়িত হয়েছে ৪৭ দশমিক ৩৭ শতাংশ।

অর্থ বিভাগের পরিসংখ্যানে দেখানো হয়েছে, অর্থবছরের ৮ মাসে মোট পরিচালন ব্যয় দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৫৮ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। এটি সংশোধিত পরিচালন ব্যয়ের ৫১ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে সংশোধিত পরিচালন ব্যয়ের আকার হচ্ছে ৫ লাখ ৬ হাজার ২ কোটি টাকা। মূল বাজেটে এর আকার ছিল ৫ লাখ ৬ হাজার ৯৭১ কোটি টাকা।

এদিকে, আলোচ্য সময়ে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নের হার দাঁড়িয়েছে সংশোধিত বাজেটের ২৬ দশমিক ৪৬ শতাংশ। চলতি অর্থছরের মূল বাজেটে এডিপি’র আকার ছিল ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে কাটছাঁট করে এর আকার ২ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর বিপরীতে আট মাসে মোট ব্যয় হয়েছে ৫৭ হাজার ১৪৩ কোটি টাকা। গত ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের একই সময়ে এডিপি-তে মোট ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ৬২ হাজার ৫২৭ কোটি টাকা।

অর্থ বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরর আট মাসে এনবিআর আওতাধীন মোট রাজস্ব আদায় হয়েছে ২ লাখ ৬৬ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৫৩ হাজার ৩৪৯ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে বাজেট ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫১ হাজার ২০২ কোটি টাকা।

এ বিষয়ে অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গত বছর জুলাই-আগস্ট মাসে রাজনৈতিক অচলাবস্থার কারণে অর্থনীতি এক ধরনের স্থবিরতা চলে এসেছিল। এটি নভেম্বর মাস পর্যন্ত অব্যাহত ছিল, যার জন্য এডিপি বাস্তবায়নসহ বাজেট বাস্তবায়নে একটি নেতিবাচক প্রভাব দেখা যাচ্ছে। পরিস্থিতি যেভাবে এগুচ্ছে তাতে বছর শেষে সংশোধিত বাজেটের বড়জোর ৭৫ শতাংশ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হতে পারে।

তিনি আরো বলেন, “রাজস্ব আদায়ের হারও ভালো না, অর্থবছর শেষে রাজস্ব আদায়ের ঘাটতি ৮০ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছতে পারে।”

ঢাকা/হাসনাত/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শিক্ষার মানোন্নয়নে জিডিপির ৪ শতাংশ বরাদ্দ প্রয়োজন
  • ২০২৭ সালের জুনের পর ‘করছাড়’ থাকবে না
  • ৯ মাসে ৪,৬০০ কোটি টাকার ব্যবসা ওয়ালটনের
  • যমুনা অয়েলের মুনাফা বেড়েছে ৩৮ শতাংশ
  • ৩ মাসে ১৪৫ কোটি টাকা মুনাফা পদ্মা অয়েলের
  • প্রথম প্রান্তিকে লোকসানের ধারায় সিঙ্গার, বেড়েছে অনেকটা
  • অর্থবছরের আট মাসে অর্ধেক বাজেটও বাস্তবায়ন হয়নি