আ.লীগ সরকার ৮ মেগা প্রকল্পে ব্যয় বাড়িয়েছে ৯০ হাজার কোটি টাকা
Published: 2nd, February 2025 GMT
পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ৮ মেগা প্রকল্পে ব্যয় প্রাক্কলিত বাজেটের চেয়ে ৬৮ শতাংশ বৃদ্ধি করে ৭৫২ কোটি মার্কিন ডলার (৯০ হাজার ২৪০ কোটি টাকা) বাড়ানো হয়। অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত এক টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে বিষয়টি উঠে এসেছে।
অর্থনীতি চাঙা এবং টেকসই উন্নয়নের কৌশল নির্ধারণ করতে গত বছরের ১০ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের সাবেক মহাপরিচালক কে এ এস মুরশিদকে প্রধান করে এই টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। গত বৃহস্পতিবার পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড.
প্রতিবেদনে ব্যয় বৃদ্ধির কারণ হিসেবে প্রকল্প হাতে নেওয়ার সময় দুর্বল পরিকল্পনা ও সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের ক্রুটি, দুনীতি ও প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্ব হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আর এর সঙ্গে মন্ত্রী, প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ, মন্ত্রণালয় ও আন্তর্জাতিক দাতাদের ভূমিকা থাকার কথাও বলা হয়েছে।
প্রকল্পগুলো হল—পদ্মা সেতু প্রকল্প, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প, যমুনা রেল সেতু প্রকল্প, ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প, বঙ্গবন্ধু টানেল, ঢাকা এমআরটি লাইন ৬, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প এবং বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) লাইন-৩ প্রকল্প।
প্রকল্পগুলোর প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছিল ১১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার, যা পরে বেড়ে ১৮ দশমিক ৬৪ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়ায়।
টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে আটটি মেগা প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি চিত্র তুলে বলা হয়েছে, পদ্মা সেতুর প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছিল ১২০ কোটি মার্কিন ডলার। পরে এই দর বেড়ে হয় ৩৮৬ কোটি ডলার। একইভাবে পদ্মা সংযোগ সেতু ব্যয় ৩১০ কোটি ডলার থেকে ৪৫০ কোটি ডলার, যমুনা রেল সেতু ৮৮ কোটি ডলার থেকে ১৫২ কোটি ডলার, মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে ১১২ কোটি ডলার থেকে ১৪৭ কোটি ডলার, কর্ণফুলী টানেল ৯৮ কোটি ডলার থেকে ১২ কোটি ডলার, এমআরটি লাইন-৬, ২১০ কোটি ডলার থেকে ৩৩০ কোটি ডলার, বিআরটি-৩, ৪৪ কোটি ডলার থেকে ৫৮ কোটি ডলার এবং হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের ব্যয় ১৩০ কোটি ডলার থেকে বৃদ্ধি করে ২২০ কোটি ডলার করা হয়েছে।
টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই ব্যয় বৃদ্ধির প্রধান কারণগুলোর মধ্যে আছে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে দুর্বলতা ও ভুল সিদ্ধান্ত, ভূমি অধিগ্রহণে বিলম্ব, দুর্নীতি ও ভূমি মূল্যায়ন প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রিতা, অধিগ্রহণকৃত জমির অপব্যবহার ও অন্যান্য প্রকল্পের সঙ্গে সাংঘর্ষিক নকশা। পরে এটি প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি নিয়ে অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হয়। সব মিলিয়ে প্রকল্পগুলো সংশ্লিষ্ট দপ্তরের মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন বা অগ্রাধিকারের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ ছিল না। এখানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ভূমিকা ছিল খুবই সীমিত।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের বিষয়টি প্রায় ক্ষেত্রেই ছিল নিছক আনুষ্ঠানিকতা। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত মেগা প্রকল্পগুলোর ক্ষেত্রে প্রকল্পের সুবিধা বাড়িয়ে দেখানো এবং ব্যয় অবমূল্যায়নের প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে।
বলা হয়েছে, জমি অধিগ্রহণের কাজটি প্রায়ই শুরু করা হয় প্রকল্প বাস্তবায়নের পর্যায়ে। তাতে এই কাজে অনেক দেরি হওয়ার পাশাপাশি খরচও বাড়ে। এ ছাড়া জমির মূল্যায়ন, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের শনাক্ত করা এবং ক্ষয়ক্ষতির মূল্যায়নের মতো একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়াটিও দুর্নীতির কারণে বিঘ্নিত হয়েছে।
আবার জমিতে মূল পরিকল্পনার বাইরে গিয়ে বিলাসবহুল বাংলো, সাত তারকা হোটেল, বড় আকারের সেনানিবাস অথবা বন্দর কিংবা শিপইয়ার্ড নির্মাণের মতো প্রকল্প-বহির্ভূত কার্যক্রমে সরিয়ে নেওয়ার উদাহরণও দেখা গেছে। এগুলো প্রকল্পের উদ্দেশ্যর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এ ছাড়া প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে চলমান ও প্রস্তাবিত প্রকল্পগুলির সঙ্গে দ্বন্দ্ব সমন্বয়ের কাজটি চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে। এ কারণে সময় ও ব্যয় বেড়েছে।
টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বিদেশি অর্থায়নে পরিচালিত প্রকল্পগুলো উচ্চ নির্মাণব্যয়ের জন্য ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছে প্রাথমিকভাবে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি বা অপ্রতিযোগিতামূলক দরপত্রের কারণে।
ঢাকা/হাসনাত/এনএইচ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প রকল প ব প রকল প র
এছাড়াও পড়ুন:
টিকিট বিক্রিতে মেট্রোরেলের আয় ২৪৪ কোটি টাকা, মে থেকে শুক্রবার সকালেও ট্রেন
মেট্রোরেলে যাত্রীদের কাছে টিকিট বিক্রি করে ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে আয় হয়েছে ২৪৩ কোটি ৯১ লাখ ৭ হাজার ৬২৫ টাকা। এর আগের অর্থবছরে আয় হয় ১৮ কোটি টাকা। মেট্রোরেল চালুর পর গত সোমবার সর্বোচ্চ দুই লাখ ৮২ হাজার যাত্রী মেট্রোরেলে ভ্রমণ করেছেন।
সোমবার রিপোর্টার্স ফর রেল এন্ড রোডের (আরআরআর) সদস্যদের সঙ্গে বিনিময়ে সভায় মেট্রোরেলের নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্বে থাকা সরকারি কোম্পানি ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবদুর রউফ এ তথ্য জানিয়েছেন। রাজধানীর দিয়াবাড়িতে মেট্রোরেল ডিপোতে এ সভা হয়।
২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর মেট্রোরেলের এমআরটি-৬ লাইনের দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও অংশ চালু হয়। পরের বছরের অক্টোবরে চালু হয় আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশ। আগামী জুনে মতিঝিল থেকে কমলাপুর অংশ উদ্বোধনের মাধ্যমে ২১ দশমিক ২৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এমআরটি-৬ লাইনের পুরোটা চালুর পরিকল্পনা রয়েছে।
মোহাম্মদ আবদুর রউফ বলেন, প্রথম বছর পরীক্ষামূলক ট্রেন চলেছিল। তখন দিনে ১০ বার ট্রেন চলত। এখন ট্রিপের সংখ্যা ২০০। ডিএমটিসিএলের লক্ষ্য দিনে পাঁচ লাখ যাত্রী পরিবহন। তখন মেট্রোরেলে ভর্তুকি থাকবে না। এ দিন বেশি দূরে নয়। দিয়াবাড়ি থেকে টঙ্গী পর্যন্ত এমআরটি-৬ লাইন বর্ধিত হলে যাত্রী আরও বাড়বে।
আগামী মে মাস থেকে শুক্রবার সকালেও ট্রেন চলালোর পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন আবদুর রউফ। তিনি বলেন, মেট্রোরেলের পিলারে পোস্টার লাগানো নিষিদ্ধ হলেও, নান্দনিকতাকে বৃদ্ধিতে গ্রাফিতি গ্রহণযোগ্য। কিন্ত প্রাফিতিতে মনের আনন্দে এখন অনেকে পোস্টার লাগাচ্ছে। তা বন্ধে সিটি কর্পোরেশন ও পুলিশকে চিঠি দিচ্ছি।
৫ আগস্টের ডিএমটিসিএলের কর্মীরা পেশাগত মর্যাদা, গ্রেড ও বেতন বৃদ্ধির দাবিতে কর্মবিরতি করেছিলেন। আবদুর রউফ বলেন, এখন পর্যন্ত ২০০ জন কর্মী চাকরি ছেড়ে চলে গেছেন। একজন কর্মীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে তৈরির পর চলে যাচ্ছে। হুট করে নতুন লোক পাচ্ছি না। যা চ্যালেঞ্জ।
সভায় অংশ নেন ডিএমটিসিএলের পরিচালক নাসির উদ্দিন আহমেদ, পরিচালক মো. আফতাবুজ্জামান, আরআরআর সভাপতি আনোয়ার হোসেন, সাধারণ সম্পাদক মো. তাওহীদুল ইসলাম, সহসভাপতি পার্থ সারথি দাস এবং নির্বাহী কমিটির সদস্য মুনিমা সুলতানা প্রমুখ।