চট্টগ্রামে ছেলের বিয়ে থেকে গ্রেপ্তার আ.লীগ নেতা ফখরুল কারাগারে
Published: 2nd, February 2025 GMT
চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালী থানার হত্যা চেষ্টা মামলায় চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ নেতা ফখরুল আনোয়ার চৌধুরীকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। আজ রোববার চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবু বক্করের আদালত এই আদেশ দেন।
ছেলের বিয়েতে গতকাল শনিবার রাতে তাকে অবরুদ্ধ করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কয়েক শ’ নেতাকর্মী। পরে নগরীর খুলশী থানা পুলিশ এসে তাকে আটক করে নিয়ে যায়। পরে কোতোয়ালী থানার মামলায় আজ রোববার তাকে আদালতে পাঠায় পুলিশ।
ফখরুল ফটিকছড়ি আসনের সাবেক সংসদ সদস্য রফিকুল আনোয়ার চৌধুরী ওরফে সোনা রফিকের ভাই এবং ফটিকছড়ির সাবেক সংসদ সদস্য খাদিজাতুল আনোয়ার সনির চাচা।
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মফিজ উদ্দিন বলেন, কোতোয়ালী থানার মামলায় ফখরুল আনোয়ারকে আদালতে তোলা হলে বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
চট্টগ্রাম নগরীর টাইগারপাস এলাকায় নৌ বাহিনীর মালিকানাধীন অভিজাত নেভি কনভেনশন সেন্টারে ফখরুল আনোয়ার চৌধুরীর ছেলে সৈয়দ মিনহাজুল আনোয়ারের সঙ্গে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোহাম্মদ মনজুর আলমের নাতনি সৈয়দা মাহবুবা হোসনে আরা মনজুরের বিবাহোত্তর সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। মাহবুবা মনজুর আলমের বড় ছেলে নিজামুল আলমের মেয়ে। বিয়ের অনুষ্ঠানে নগরীর নামীদামি অতিথিরা অংশ নেন। বিয়েতে চট্টগ্রাম সিটি মেয়র বিএনপি নেতা ডা.
ফ্র্যান্স থেকে পিনাকি ভট্টাচার্য ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে কমিউনিটি সেন্টারে শত শত মানুষকে ঘিরে ফেলার আহ্বান জানান। তারপর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা কমিউনিটি সেন্টারে গিয়ে ফখরুল আনোয়ারকে অবরুদ্ধ করেন। রান্নাঘর, বাথরুমে নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী ও খাদিজাতুল আনোয়ার সনিকে খোঁজাখুজি করেন। তখন বিয়ের অনুষ্ঠানে চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ও নৌ বাহিনীর সদস্যরা কনভেনশন সেন্টারে হাজির হয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের আটক করে লাঠিপেটা করেন। পুলিশ ও ছাত্ররা ফখরুল আনোয়ারকে খুলশী থানায় নিয়ে যান।
ছড়িয়ে পড়া অনুষ্ঠানের একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কয়েকজন সদস্য কনভেনশন সেন্টারের ভেতরে থাকা তিন থেকে দুই তরুণকে লাঠিপেটা করছেন। এ সময় কিলঘুসিও দেন। এতে এক তরুণের পরনের পোশাক ছিঁড়ে যায়। তাদের টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যেতে দেখা যায়। মারধরের শিকার ব্যক্তিরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মী বলে জানান কেন্দ্রীয় কমিটির সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নেতারা বিয়ে অংশ নিয়েছেন, খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশকে জানানো হয়। নিজেরাও সেখানে ছুটে যাই। আওয়ামী লীগের নেতারা দেশ নিয়ে ষড়যন্ত্র করছেন। জুলাই আন্দোলনে অংশ নেওয়া ছাত্র-জনতাকে হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন। আওয়ামী লীগের নেতারা জুলাই গণহত্যার সঙ্গে জড়িত। এমন পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের নেতারা স্বাধীনভাবে সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন, চলাফেরা করবেন, ছাত্র-জনতা তা মেনে নেবে না। ফখরুল আনোয়ারকে আটক করতে পারলেও অন্য দু’জন পালিয়ে যান।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আওয় ম ল গ সদস য আওয় ম নগর র
এছাড়াও পড়ুন:
হাসিনা আমলের প্রথম গুমের ঘটনায় ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ
শেখ হাসিনা সরকারের আমলে ২০১০ সালে বিএনপি নেতা চৌধুরী আলম গুমের ঘটনায় আওয়ামী লীগ নেতা মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া ও সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসানসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে।
সোমবার (১০ মার্চ) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে চৌধুরী আলমের ছেলে আবু সাঈদ চৌধুরী এ অভিযোগ দায়ের করেন।
অপর আসামিরা হলেন—অবসরপ্রাপ্ত রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহাইল, কর্নেল মো. মুজিবর, র্যাবের তৎকালীন অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরে লেফটেন্যান্ট জেনারেল ও বরখাস্ত) রিয়াজুল ইসলাম, রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানার তৎকালীন অফিসার ইনচার্জ (ওসি), মেজর এরশাদ, র্যাব-২ এর তৎকালীন উপ-অধিনায়ক খান মো. আকতারুজ্জামান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের তৎকালীন সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ২১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ফরিদ উদ্দিন রতন ও নিসার উদ্দিন আহমেদ কাজল, কিশোরগঞ্জের সাবেক এমপি ও বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সের প্রধান নিয়ন্ত্রক আফজাল হোসেন, মহানগর বিজনেস অ্যাসোসিয়েটসের চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান হুজুর, মহানগর বিজনেস অ্যাসোসিয়েটসের সেক্রেটারি আব্দুল বাসেত মাস্টার, ফুলবাড়ীয়া সুপার মার্কেটের সভাপতি শাহজাহান খান, ফুলবাড়ীয়া বঙ্গ কমপ্লেক্সের সভাপতি মো. শাহজাহান, মীর আল মামুন, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাসিম, ফুলবাড়ীয়া টার্মিনাল সংলগ্ন মার্কেটের উপ-পরিচালক ইসমাইল হোসেন বাচ্চুসহ অজ্ঞাত অনেকে।
২০১০ সালের ২৫ জুন রাজধানীর ইন্দিরা রোডের কাছে চৌধুরী আলমকে তার গাড়ি থেকে বের করে মাইক্রোবাসে তুলে নেওয়া হয়। সে সময় তিনি তৎকালীন ঢাকা সিটি করপোরেশনের ৫৬ নম্বর (বর্তমানে ঢাকা দক্ষিণের ২০ নম্বর) ওয়ার্ডের কমিশনার ছিলেন।
২০১০ সালের জুলাই মাসে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করা হলে আদালত পুলিশ ও সরকারকে দ্রুত চৌধুরী আলমকে খুঁজে বের করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু, আদালতের সেই নির্দেশ কার্যকর করা হয়নি। ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর চৌধুরী আলম গুম হওয়ার পর জিডি করলেও তা আর কার্যকর হয়নি সে সময়।
ঢাকা/মামুন/রফিক