টাঙ্গাইলের আলোচিত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক হত্যা মামলায় কবির উদ্দিন এবং মোহাম্মদ আলী নামে দুই আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এই মামলায় টাঙ্গাইল-৩ আস‌নের সা‌বেক সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানা, তার তিন ভাইসহ ১০ জনকে খালাস দিয়েছেন বিচারক। 

ররিবার (২ ফেব্রুয়ারি) বিকেল সা‌ড়ে ৩টার দি‌কে টাঙ্গাইলের অ‌তি‌রিক্ত জেলা দায়রা জজ প্রথম আদাল‌তের বিচারক মাহমুদুল হাসান রায় ঘোষণা ক‌রেন। এই মামলায় ১৪জন আসামি ছিলেন। তাদের ম‌ধ্যে দুইজন কারাগারে মারা যান। 

খালাস পাওয়া সা‌বেক সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানার ভাইরা হলেন- সহিদুর রহমান খান মু‌ক্তি, জা‌হিদুর রহমান খান কাকন ও সা‌নিয়াত রহমান খান বাপ্পা‌। রায় ঘোষণার সময় স‌হিদুর রহমান খান মু‌ক্তি আদালতে উপ‌স্থিত থাক‌লেও তার অন্য ভাইসহ বা‌কি আসামিরা অনুপস্থিত ছিলেন। 

আরো পড়ুন:

হত্যার শিকার সেন্টু চেয়ারম্যানের ভাতিজাকে কুপিয়ে হত্যাচেষ্টা

ইতালি নেওয়ার কথা বলে লিবিয়ায় দুই যুবককে গুলি করে হত্যা

আসামি প‌ক্ষের আইনজী‌বী অ্যাড‌ভো‌কেট না‌সির উদ্দিন খান ব‌লেন, “এই মামলায় ২৭ জ‌ন স্বাক্ষী রাষ্ট্রপক্ষ উপ‌স্থাপন ক‌রে‌ছিল। আসামিরা যে এই ঘটনার সঙ্গে জ‌ড়িত ছিল তা কেউ প্রমাণ করতে পারেননি। যখন ঘটনা দেখা‌নো হ‌য়ে‌ছিল, তখন স‌হিদুর রহমান খান মু‌ক্তি সস্ত্রীক ভার‌তে ছি‌লেন চি‌কিৎসার জন্য, তার ভাই কাকন মালয়েশিয়াতে ছিলেন, সা‌বেক সংসদ সদস্য রানা ঘাটাইলের এক‌টি অনুষ্ঠা‌নে ছিলেন এবং তা‌দের ছোট ভাই বাপ্পা ঢাকায় ছাত্রলী‌গের অ‌ফি‌সে ছি‌লেন।” 

তি‌নি আরো ব‌লেন, “রাজনৈ‌তিকভা‌বে তা‌দের‌ মিথ্যা মামলায় জড়া‌নো হ‌য়ে‌ছিল। এই রায়ের মাধ্যমে আমরা ন্যায় বিচার পে‌য়ে‌ছি।” 

টাঙ্গাইল আদালতে রাষ্ট্রপ‌ক্ষের কৌশলী এপি‌পি সাইদুর রহমান স্বপন ব‌লেন, “আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক হত্যা মামলায় দুইজন‌কে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন বিচারক। এছাড়া ৫ লাখ টাকা জ‌রিমানা করা হ‌য়ে‌ছে। অনাদা‌য়ে তাদের এক বছ‌রের কারাদণ্ড প্রদান ক‌রেন বিচারক। এই মামলার আসামি সা‌বেক সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানা, তার তিন ভাইসহ ১০ জনের বিরু‌দ্ধে স‌ন্দেহাতীতভা‌বে সাক্ষ্য প্রমাণ না হওয়ায় তা‌দের‌ খালাস দি‌য়ে‌ছেন আদালত।”

তি‌নি আরো ব‌লেন, “এই মামলায় বাদীর সঙ্গে আলোচনা ক‌রে আপি‌লের বিষয়ে প্রদ‌ক্ষেপ নেওয়া হ‌বে।” 

২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদের গুলিবিদ্ধ লাশ তার কলেজপাড়া এলাকার বাসার কাছ থেকে উদ্ধার হয়। ঘটনার তিন দিন পর নিহতের স্ত্রী নাহার আহমেদ বাদী হয়ে টাঙ্গাইল সদর থানায় নাম না জানা ব্যক্তিদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন। 

২০১৪ সালের আগস্টে এই হত্যার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে আনিসুল ইসলাম রাজা ও মোহাম্মদ আলী নামে দুইজনকে গোয়েন্দা পুলিশ গ্রেপ্তার করে। তারা আদালতে জবানবন্দি দেন। তাদের জবানবন্দিতে আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানা, তার ভাই টাঙ্গাইল পৌরসভার তৎকালীন মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তি, ব্যবসায়ী নেতা জাহিদুর রহমান খান কাকন ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি সানিয়াত খান বাপ্পার নাম উঠে আসে। এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ওয়াহেদ, আবদুল খালেক ও সনি আদালতে জবানবন্দি দেন। এরপর চার ভাই আত্মগোপনে চলে যান। আমানুর রাহমান খান রানা আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। তিন বছর হাজতে থাকার পর জামিন পান তিনি। গত বছরের ৫ আগস্টের পর তিনি আবারো আত্মগোপনে  যান। অপর দুই ভাই ২০১৪ সাল থেকে বিদেশে অবস্থান করছেন বলে তাদের ঘনিষ্ঠরা জানিয়েছেন। 

গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম মাহফিজুর রহমান ২০১৬ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি চার ভাইসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। ২০১৭ সালের ৬ সেপ্টেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে এই মামলার বিচারকাজ শুরু হয়। বিচার চলাকালে দুই আসামি আনিছুর রহমান ওরফে রাজা ও মোহাম্মদ সমির কারাগারে মৃত্যুবরণ করেন। গত ২৬ জানুয়ারি ফারুক হত্যা মামলার যুক্তিতর্ক শেষ হয়।

ঢাকা/কাওছার/মাসুদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর হ দ র রহম ন খ ন ম আওয় ম ভ ইসহ

এছাড়াও পড়ুন:

নিষিদ্ধ প্রেম, অসম বিয়ে: উর্মিলার ক্যারিয়ারে অমাবস্যা

মীনাক্ষী, অনু আগরওয়াল থেকে মমতা কুলকার্নি— একসময় রুপালি পর্দায় রাজত্ব করেছেন। খ্যাতি কুড়ানোর পরও বলিউডের এমন অনেক অভিনেত্রীর ক্যারিয়ার থমকে গেছে। এ তালিকায় আরো একজন রয়েছেন, যার নাম উর্মিলা মাতন্ডকর। শরীরি সৌন্দর্য ও নাচের হিল্লোলে অসংখ্য ভক্তের হৃদয় জয় করেন এই তারকা। নব্বই দশকের শীর্ষ নায়িকাদের অন্যতম হয়ে উঠেন উর্মিলা। নিজ গুণে অভিনেতাদের তুলনায়ও বেশি পারিশ্রমিক নিতেন তিনি।

২০১৪ সালে মুক্তি পায় উর্মিলা অভিনীত সর্বশেষ সিনেমা। চার বছর পর অর্থাৎ ২০১৮ সালে ‘ব্ল্যাকমেইল’ সিনেমায় অতিথি চরিত্রে দেখা যায় তাকে। বলা যায়, ২০১৪ সালের পর খুব নীরবে ঝলমলে দুনিয়া থেকে হারিয়ে গেছেন এই অভিনেত্রী। তার হারিয়ে যাওয়ার পেছনের গল্প নিয়ে সাজানো হয়েছে এই প্রতিবেদন।

উর্মিলা-রাম গোপালের পরকীয়া
১৯৯৫ সালে আমির খানের সঙ্গে ‘রঙ্গিলা’ সিনেমায় অভিনয় করেন উর্মিলা মাতন্ডকর। শুটিং সেটে সিনেমাটির পরিচালক রাম গোপাল ভার্মার প্রেমে পড়েন এই অভিনেত্রী। এরপর এই পরিচালকের ‘দাউদ’, ‘সত্য’, ‘কৌন’, ‘মাস্ত’, ‘জঙ্গল’, ‘ভূত’, ‘এক হাসিনা থি’সহ বেশ কিছু সিনেমায় অভিনয় করেন উর্মিলা। সেই সময়ে পরকীয়া প্রেমের কারণে নিয়মিত খবরের শিরোনামও হয়েছেন উর্মিলা-রাম গোপাল।  

নিষিদ্ধ প্রেম’ ধ্বংস করে উর্মিলার ক্যারিয়ার
পরিচালক রাম গোপাল ভার্মাকে পাগলের মতো ভালোবাসতেন উর্মিলা। যার কারণে অন্য কোনো পরিচালকের সিনেমায়ও অভিনয় করতেন না তিনি। এটি এই অভিনেত্রীর ক্যারিয়ারে সবচেয়ে বড় ভুল ছিল। চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, রাম গোপালের সঙ্গে ‘নিষিদ্ধ প্রেমের’ সম্পর্কে জড়িয়ে ক্যারিয়ার ধ্বংস করেছেন এই অভিনেত্রী।

উর্মিলার সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কের খবরটি রাম গোপালের স্ত্রী রত্নার কানেও পৌঁছেছিল। এ নিয়ে দাম্পত্য জীবনে বড় জটিলতা তৈরি হয়েছিল। জানা যায়, এজন্য উর্মিলাকে থাপ্পড় মেরেছিলেন রত্না। এরপর রাম গোপাল ভার্মা রত্নার সঙ্গে বিবাহিত জীবনের ইতি টানেন এবং উর্মিলাকে নিয়ে সিনেমা নির্মাণ বন্ধ করে দেন। এই ঘটনাই উর্মিলার অভিনয় ক্যারিয়ার ধ্বংস করে দেয় এবং চলচ্চিত্র ছেড়ে দেন তিনি।

উর্মিলার অসম বিয়ে
২০১৪ সালে ঋদ্ধি মালহোত্রার বিয়েতে মডেল-অভিনেতা মোহসীন আখতারের সঙ্গে পরিচয় হয় উর্মিলার। পরিচয় রূপ নেয় বন্ধুত্বে; খুব অল্প সময়ের মধ্যে এ সম্পর্ক প্রেমে গড়ায়। কাশ্মীরের এই যুবক বলিউডে ভাগ্য পরীক্ষার জন্য মুম্বাই পাড়ি দেন। ২০০৯ সালে ‘ইটস আ ম্যান’স ওয়ার্ল্ড’ সিনেমার মাধ্যমে বলিউডে তার অভিষেক ঘটে। এরপর ‘লাক বাই চান্স’, ‘মুম্বাই মাস্ট কালান্দার’, ‘বি. এ. পাস’ সিনেমায় অভিনয় করেন তিনি। মোহসীনের চেয়ে ১০ বছরের বড় উর্মিলা। জেনেবুঝে সবকিছু উপেক্ষা করে ২০১৬ সালের ৩ মার্চ মোহসীনকে বিয়ে করেন উর্মিলা। ঘনিষ্ঠজনদের নিয়ে ছোট আয়োজনে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন এই প্রেমিক যুগল।   

ভাঙছে উর্মিলার সংসার
ভালোবেসে ঘর বাঁধলেও সুখকর হয়নি উর্মিলা-মোহসীনের সংসার। গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে আদালতে বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করেন উর্মিলা। এখন আলাদা থাকছেন তারা। কী কারণে সংসার ভাঙছে তা জানা যায়নি। উর্মিলা-মোহসীনও বিচ্ছেদের বিষয়ে টুঁ শব্দটিও করেননি। তবে এ জুটির সংসার ভাঙার পেছনের কারণ ব্যাখ্যা করেছে সিয়াসাত ডটকম।

এ প্রতিবেদনে জানানো হয়, উর্মিলা-মোহসীনের সংসার ভাঙার পেছনে কয়েকটি কারণ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম— অসম বয়স। মোহসীনের চেয়ে ১০ বছরের বড় উর্মিলা। তা ছাড়া একটু বেশি বয়সে বিয়ে করেন এই অভিনেত্রী। অর্থাৎ ৪০ বছর বয়সে বিয়ে করেন তিনি। সাধারণত, বয়সের এত ব্যবধান সম্পর্কের ক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি করে। এটি কেবল উর্মিলার ক্ষেত্রে নয়, এমন অনেক ঘটনাই রয়েছে। এতে করে নারীর সন্তান ধারণে সমস্যাও হয়। আর এসব নিয়ে ছেলে পক্ষের পরিবার থেকেও একটা চাপ তৈরি হয় (যদিও এ বিষয়টি উর্মিলার ক্ষেত্রে নাও ঘটতে পারে)।

উর্মিলা-মোহসীনের সংসার ভাঙার পেছনে অন্য আরেকটি কারণ আলোচনায় উঠে এসেছে। তা হলো— টাকা নিয়ে এ দম্পতির মাঝে ঝগড়া হয়েছে। মোহসীন ও তার পরিবার উর্মিলাকে তার সম্পত্তি বিক্রি করতে বাধ্য করেছে। মূলত, মোহসীনের ব্যবসার জন্য অর্থের প্রয়োজন ছিল, সেখান থেকে এটা করা হয়। এ কারণ বিবাহবিচ্ছেদ সমঝোতার মাধ্যমে হচ্ছে না।

তথ্যসূত্র: বলিউড লাইফ, বলিউড শাদি

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নিষিদ্ধ প্রেম, অসম বিয়ে: উর্মিলার ক্যারিয়ারে অমাবস্যা