ফারুক হত্যা: সাবেক এমপি রানাসহ ৪ ভাই খালাস
Published: 2nd, February 2025 GMT
টাঙ্গাইলের আলোচিত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক হত্যা মামলায় কবির উদ্দিন এবং মোহাম্মদ আলী নামে দুই আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এই মামলায় টাঙ্গাইল-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানা, তার তিন ভাইসহ ১০ জনকে খালাস দিয়েছেন বিচারক।
ররিবার (২ ফেব্রুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত জেলা দায়রা জজ প্রথম আদালতের বিচারক মাহমুদুল হাসান রায় ঘোষণা করেন। এই মামলায় ১৪জন আসামি ছিলেন। তাদের মধ্যে দুইজন কারাগারে মারা যান।
খালাস পাওয়া সাবেক সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানার ভাইরা হলেন- সহিদুর রহমান খান মুক্তি, জাহিদুর রহমান খান কাকন ও সানিয়াত রহমান খান বাপ্পা। রায় ঘোষণার সময় সহিদুর রহমান খান মুক্তি আদালতে উপস্থিত থাকলেও তার অন্য ভাইসহ বাকি আসামিরা অনুপস্থিত ছিলেন।
আরো পড়ুন:
হত্যার শিকার সেন্টু চেয়ারম্যানের ভাতিজাকে কুপিয়ে হত্যাচেষ্টা
ইতালি নেওয়ার কথা বলে লিবিয়ায় দুই যুবককে গুলি করে হত্যা
আসামি পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান বলেন, “এই মামলায় ২৭ জন স্বাক্ষী রাষ্ট্রপক্ষ উপস্থাপন করেছিল। আসামিরা যে এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল তা কেউ প্রমাণ করতে পারেননি। যখন ঘটনা দেখানো হয়েছিল, তখন সহিদুর রহমান খান মুক্তি সস্ত্রীক ভারতে ছিলেন চিকিৎসার জন্য, তার ভাই কাকন মালয়েশিয়াতে ছিলেন, সাবেক সংসদ সদস্য রানা ঘাটাইলের একটি অনুষ্ঠানে ছিলেন এবং তাদের ছোট ভাই বাপ্পা ঢাকায় ছাত্রলীগের অফিসে ছিলেন।”
তিনি আরো বলেন, “রাজনৈতিকভাবে তাদের মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয়েছিল। এই রায়ের মাধ্যমে আমরা ন্যায় বিচার পেয়েছি।”
টাঙ্গাইল আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের কৌশলী এপিপি সাইদুর রহমান স্বপন বলেন, “আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক হত্যা মামলায় দুইজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন বিচারক। এছাড়া ৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অনাদায়ে তাদের এক বছরের কারাদণ্ড প্রদান করেন বিচারক। এই মামলার আসামি সাবেক সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানা, তার তিন ভাইসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে সন্দেহাতীতভাবে সাক্ষ্য প্রমাণ না হওয়ায় তাদের খালাস দিয়েছেন আদালত।”
তিনি আরো বলেন, “এই মামলায় বাদীর সঙ্গে আলোচনা করে আপিলের বিষয়ে প্রদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদের গুলিবিদ্ধ লাশ তার কলেজপাড়া এলাকার বাসার কাছ থেকে উদ্ধার হয়। ঘটনার তিন দিন পর নিহতের স্ত্রী নাহার আহমেদ বাদী হয়ে টাঙ্গাইল সদর থানায় নাম না জানা ব্যক্তিদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন।
২০১৪ সালের আগস্টে এই হত্যার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে আনিসুল ইসলাম রাজা ও মোহাম্মদ আলী নামে দুইজনকে গোয়েন্দা পুলিশ গ্রেপ্তার করে। তারা আদালতে জবানবন্দি দেন। তাদের জবানবন্দিতে আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানা, তার ভাই টাঙ্গাইল পৌরসভার তৎকালীন মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তি, ব্যবসায়ী নেতা জাহিদুর রহমান খান কাকন ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি সানিয়াত খান বাপ্পার নাম উঠে আসে। এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ওয়াহেদ, আবদুল খালেক ও সনি আদালতে জবানবন্দি দেন। এরপর চার ভাই আত্মগোপনে চলে যান। আমানুর রাহমান খান রানা আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। তিন বছর হাজতে থাকার পর জামিন পান তিনি। গত বছরের ৫ আগস্টের পর তিনি আবারো আত্মগোপনে যান। অপর দুই ভাই ২০১৪ সাল থেকে বিদেশে অবস্থান করছেন বলে তাদের ঘনিষ্ঠরা জানিয়েছেন।
গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম মাহফিজুর রহমান ২০১৬ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি চার ভাইসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। ২০১৭ সালের ৬ সেপ্টেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে এই মামলার বিচারকাজ শুরু হয়। বিচার চলাকালে দুই আসামি আনিছুর রহমান ওরফে রাজা ও মোহাম্মদ সমির কারাগারে মৃত্যুবরণ করেন। গত ২৬ জানুয়ারি ফারুক হত্যা মামলার যুক্তিতর্ক শেষ হয়।
ঢাকা/কাওছার/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর হ দ র রহম ন খ ন ম আওয় ম ভ ইসহ
এছাড়াও পড়ুন:
গুলশানে বাড়ি লুট: জাতীয়তাবাদী চালক দল কীভাবে এল, নেতা কারা
‘অবৈধ অস্ত্র ও ছাত্র-জনতার হত্যাকারীরা’ লুকিয়ে আছে—এমন কথা রটিয়ে ‘মব’ সৃষ্টি করে ঢাকার গুলশানে একটি বাড়ি লুট করতে যায় একদল লোক। ৪ মার্চ মধ্যরাতে এ ঘটনার নেতৃত্বে ছিলেন জুয়েল খন্দকার নামের এক ব্যক্তি। যিনি নিজেকে ‘জাতীয়তাবাদী চালক দল’-এর সাধারণ সম্পাদক বলে পরিচয় দেন।
এ ঘটনার পর আলোচনায় আসে জাতীয়তাবাদী চালক দল। এটা কী ধরনের সংগঠন, কারা বানিয়েছে এটা? এর সঙ্গে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল—বিএনপির কোনো যোগসূত্র আছে কি না। বিএনপির দায়িত্বশীল নেতাদের কেউ এই সংগঠনকে স্বীকৃতি দিতে রাজি নন। কেউ বলেন, এগুলো সব ‘দোকান’; কেউবা বলেন, ‘ভুঁইফোড়’ সংগঠন। বিএনপির নাম ভাঙিয়ে ‘ধান্দা’ করার জন্য সামনে এমন সংগঠন সামনে আরও বাড়তে পারে বলেও নেতাদের অনেকে আশঙ্কা।
কিন্তু জাতীয়তাবাদী চালক দলের সভাপতি জসিম উদ্দিন কবিরের দাবি ভিন্ন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের এই সংগঠনের আবির্ভাব ২০১৪ সালে। এরপর বিভিন্ন সময়ে প্রেস ক্লাবের ভেতরে ও সামনের সড়কে তাঁরা বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছেন। সেসব কর্মসূচিতে বিএনপির কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতাও অতিথি হয়ে গিয়েছিলেন।
জসিম উদ্দিন জানান, তাঁর গ্রামের বাড়ি বরিশালের বাবুগঞ্জে। তিনি আগে মোটরচালক দলের সঙ্গে ছিলেন। সেখানে জুয়েল খন্দকারও ছিলেন। পরে ২০১৪ সালে এসে জসিম নিজে ‘জাতীয়তাবাদী চালক দল’ নামে নতুন সংগঠন তৈরি করেন। তিনি ২০২২ সালে জুয়েল খন্দকারকে এই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক করেন। তাঁদের ৭১ সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটি আছে বলেও দাবি করেন।