ট্রাম্পের বিদেশি সহায়তা বন্ধের পর ইউএসএআইডির ওয়েবসাইট উধাও
Published: 2nd, February 2025 GMT
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাহী আদেশে বিদেশে সব ধরনের সহায়তা কার্যক্রম স্থগিতের ঘোষণার পর যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা ইউএস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল এইডের (ইউএসএআইডি) অফিশিয়াল ওয়েবসাইটও বন্ধ হয়ে গেছে। শনিবার বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে চেষ্টা করেও ওয়েবসাইটটিতে প্রবেশ করা যায়নি। এমনকি ইউএসএআইডির এক্স অ্যাকাউন্টও খুঁজে পাওয়া যায়নি। খবর সিএনএনের
শনিবার ওয়েবসাইটটি অ্যাকসেসের চেষ্টা করা হলে ‘সার্ভারের আইপি ঠিকানা খুঁজে পাওয়া যায়নি’ এমন একটি বার্তা প্রদর্শিত হয়। এক্সে ইউএসএআইডির অ্যাকাউন্ট খুঁজতে গেলে দেখাচ্ছে ‘এই অ্যাকাউন্টটি এখন আর নেই।’
বিভিন্ন সূত্রের বরাতে রয়টার্স জানিয়েছে, ওয়েবসাইট বন্ধ হয়ে যাওয়ার আগে গত শুক্রবার ইউএসএআইডির সব সিলমোহরও এর কার্যালয় থেকে অপসারণ করা হয়। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এটি মূলত এই সংস্থাটিকে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের সঙ্গে একীভূত করার ইঙ্গিত।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত সোমবার একটি নির্বাহী আদেশ জারি করেছেন। সেই আদেশেই বিদেশি সহযোগিতা বন্ধের বিষয়টি সামনে আসে। এতে বলা হয়, ৯০ দিনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিদেশে সব ধরনের সহায়তা কার্যক্রম স্থগিত করেছে এবং নতুন সাহায্য অনুমোদন বন্ধ রেখেছে।
অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থার দেওয়া তথ্যমতে, যুক্তরাষ্ট্র ২০২৩ সালে প্রায় ১৮০ দেশে ৭ হাজার ২০০ কোটি ডলারের বেশি বৈদেশিক উন্নয়ন সহায়তা দিয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানিয়েছেন, এই পর্যালোচনা ৮৫ দিনের মধ্যে শেষ হবে এবং তা নিশ্চিত করবে যে সব সাহায্য যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ রক্ষা করছে।
তিনি আরও বলেছেন, ‘বিদেশে আমাদের ব্যয় শুধু তখনই হওয়া উচিত, যদি তা আমেরিকাকে নিরাপদ, শক্তিশালী ও সমৃদ্ধ করে।’
তবে জরুরি খাদ্য সহায়তার জন্য তিনি ছাড়পত্র জারি দিয়েছেন। অর্থাৎ গাজা ও অন্যান্য যে সব জায়গায় খাদ্য সংকট চলছে সেখানে জরুরি খাদ্য সহায়তা অব্যাহত থাকবে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইউএসএআইড ইউএসএআইড র
এছাড়াও পড়ুন:
ইউএসএআইডি-এর রাজনীতি
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইউএস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ইউএসএআইডি)-এর বিরুদ্ধে হতবাক করা প্রচারণা বা যুদ্ধকৌশল সংস্থাটিকে ‘বিশ্বের বৃহত্তম দাতা’ হিসেবে পরিচিত এ সংস্থাটিকে ধ্বংস করেছে। আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহায়তা ও মানবিক সহায়তা ব্যবস্থা উদ্ধার করতে সচেষ্ট কর্মীদের মরিয়া করে তুলেছে। এটা অস্বীকার করা যায় না, এই সহায়তা শিল্পের ওপর লাখ লাখ মানুষের জীবন নির্ভর করে।
এটা বলা যায়, ‘উন্নয়ন’-এর মূল বিষয় সবসময় তার প্রবক্তাদের দাবির তুলনায় অনেক কম মানবতাবাদী ছিল। প্রকৃতপক্ষে, সাহায্যের পুরো উদ্যোগটি ভূরাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ এবং বিশ্বব্যাপী বৈষম্য দূর করার পরিবর্তে সম্পদ আহরণ ও জমানোর উপায়ে পরিণত হয়েছে। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে ইউএসএআইডির সমাপ্তির পর এই বাস্তবতা সম্পর্কে সচেতনভাবে বা অচেতনভাবে ব্যাপারটি দিন দিন পরিষ্কার হচ্ছে।
উদাহরণস্বরূপ, ‘যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃস্থানীয় মানবিক ও উন্নয়ন সংস্থাগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করে এবং তাদের বার্তা প্রচার করে যে সংস্থা সেই, ইন্টারঅ্যাকশন জারি করা একটি বিবৃতির কথা বলা যায়। সেখানে লেখা হয়েছে, এই সংস্থাগুলো ‘জীবন বাঁচাতে এবং বিশ্বব্যাপী মার্কিন স্বার্থ এগিয়ে নিতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে’। এতে যুক্ত করা হয়েছিল, ইউএসএআইডির ওপর হামলার মধ্য দিয়ে ‘যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক নেতৃত্বকে সমর্থন করে এমন কর্মসূচি স্থগিত করেছে এবং বিপজ্জনক শূন্যতা তৈরি করেছে, যা চীন ও আমাদের প্রতিপক্ষরা দ্রুত পূরণ করবে।’
পশ্চিমা মানবতাবাদ শুধু পথ হারায়নি। এটি শুরু থেকেই পশ্চিমা উপনিবেশবাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে আবদ্ধ। উদাহরণস্বরূপ, ১৮৮৪-১৮৮৫ বার্লিন সম্মেলন ইউরোপের আফ্রিকা বিজয়ের মঞ্চ তৈরি করেছিল, যা একটি মানবিক ঘটনা হিসেবে তৈরি করা হয়েছিল। যদিও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী পুনর্গঠন প্রকল্পগুলো ভেঙে পড়ায় ইউরোপে সংঘাতের বর্বর পরিণতি মোকাবিলা করতে প্রথম মানবিক সংস্থাগুলো গঠন করা হয়েছিল। অনেকে সে সময় গ্লোবাল সাউথে জোরালো ভূমিকা পালন করতে শুরু করে, যেখানে তারা সক্রিয়ভাবে সাম্রাজ্যবাদী আধিপত্যকে সমর্থন করেছিল।
এই সহায়তা শিল্প কার্যত ঔপনিবেশিক ‘সভ্যতা গড়ে তোলার মিশন’ উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছে। অন্যের সম্পদ হস্তগত করার আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাকে ভালোর মুখোশ পরিয়ে দেওয়া এবং বাস্তবে এই পদ্ধতির চ্যালেঞ্জ না করেই এর সবচেয়ে খারাপ দিকগুলো সাজিয়ে-গুছিয়ে দেখানোর চেষ্টা করে। যদি কিছু ঘটে, তাহলে দুটির মধ্যে একটি জৈবিক সম্পর্ক রয়েছে। আন্তর্জাতিক তহবিল সহায়তা
নিষ্কাশনমূলক বৈশ্বিক বাণিজ্য ও শাসন ব্যবস্থার বৈধতা দেয়, যা ফলস্বরূপ এমন পরিণতি নিয়ে আসে, যা তহবিল সংস্থাগুলোর অস্তিত্বের বৈধতা নিশ্চিত করে।
ফলস্বরূপ, আজ তহবিল ও উন্নয়ন সংস্থাগুলোর বিস্তার সত্ত্বেও বর্ণবাদী বৈশ্বিক ব্যবস্থায় তেমন কোনো পরিবর্তন ঘটেনি এবং তা বিভিন্ন জাতির মধ্যে গভীর বৈষম্যভিত্তিক সম্পর্ক তুলে ধরে। ইউএস কংগ্রেসের বাজেট অফিসের ১৯৯৭ সালের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, বৈদেশিক সাহায্য সর্বোত্তমভাবে অর্থনৈতিক উন্নয়নে ও মানব কল্যাণের উন্নতিতে গৌণ ভূমিকা পালন করে। এমনকি ‘যে পরিবেশে সেই তহবিল ব্যবহার করা হয় এবং যে শর্তে এটি দেওয়া হয়, তার ওপর ভিত্তি করে উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হতে পারে।’
পশ্চিমা সাহায্য তহবিল শূন্য হয়ে পড়া নিঃসন্দেহে দুঃখজনক ও বেদনাদায়ক হবে। বিশ্বের সবচেয়ে দুর্বল কিছু মানুষ কষ্ট পাবে এবং অনেকে মারাও যাবে। তবে বিশ্ব যেমন তেমনটাই আমাদের তুলে ধরা উচিত, আমরা যেমনটি চাই তেমনটি নয়।
এর ফলে এমন এক বিশ্ব সৃষ্টি হবে, যেখানে সাহায্যকে বিশ্বব্যাপী অন্যায়ের আবরণ হতে দেওয়া হবে না। আর তহবিলের অবসানকে ‘উন্নয়ন’-এর সমাপ্তি হিসেবেও দেখা উচিত। আমাদের এমন এক পদ্ধতি গড়ে তুলতে কাজ করতে হবে, যা সত্যই একটি মানবতাবাদী ব্যবস্থাকে দৃশ্যমান করে তুলবে।
প্যাট্রিক গাথারা: দ্য নিউ হিউম্যানিটারিয়ানে অন্তর্ভুক্তিমূলক গল্প বলার সিনিয়র সম্পাদক