মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাহী আদেশে বিদেশে সব ধরনের সহায়তা কার্যক্রম স্থগিতের ঘোষণার পর যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা ইউএস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল এইডের (ইউএসএআইডি) অফিশিয়াল ওয়েবসাইটও বন্ধ হয়ে গেছে। শনিবার বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে চেষ্টা করেও ওয়েবসাইটটিতে প্রবেশ করা যায়নি। এমনকি ইউএসএআইডির এক্স অ্যাকাউন্টও খুঁজে পাওয়া যায়নি। খবর সিএনএনের

শনিবার ওয়েবসাইটটি অ্যাকসেসের চেষ্টা করা হলে ‘সার্ভারের আইপি ঠিকানা খুঁজে পাওয়া যায়নি’ এমন একটি বার্তা প্রদর্শিত হয়। এক্সে ইউএসএআইডির অ্যাকাউন্ট খুঁজতে গেলে দেখাচ্ছে ‘এই অ্যাকাউন্টটি এখন আর নেই।’

বিভিন্ন সূত্রের বরাতে রয়টার্স জানিয়েছে, ওয়েবসাইট বন্ধ হয়ে যাওয়ার আগে গত শুক্রবার ইউএসএআইডির সব সিলমোহরও এর কার্যালয় থেকে অপসারণ করা হয়। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এটি মূলত এই সংস্থাটিকে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের সঙ্গে একীভূত করার ইঙ্গিত।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত সোমবার একটি নির্বাহী আদেশ জারি করেছেন। সেই আদেশেই বিদেশি সহযোগিতা বন্ধের বিষয়টি সামনে আসে। এতে বলা হয়, ৯০ দিনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিদেশে সব ধরনের সহায়তা কার্যক্রম স্থগিত করেছে এবং নতুন সাহায্য অনুমোদন বন্ধ রেখেছে।

অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থার দেওয়া তথ্যমতে, যুক্তরাষ্ট্র ২০২৩ সালে প্রায় ১৮০ দেশে ৭ হাজার ২০০ কোটি ডলারের বেশি বৈদেশিক উন্নয়ন সহায়তা দিয়েছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানিয়েছেন, এই পর্যালোচনা ৮৫ দিনের মধ্যে শেষ হবে এবং তা নিশ্চিত করবে যে সব সাহায্য যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ রক্ষা করছে।

তিনি আরও বলেছেন, ‘বিদেশে আমাদের ব্যয় শুধু তখনই হওয়া উচিত, যদি তা আমেরিকাকে নিরাপদ, শক্তিশালী ও সমৃদ্ধ করে।’

তবে জরুরি খাদ্য সহায়তার জন্য তিনি ছাড়পত্র জারি দিয়েছেন। অর্থাৎ গাজা ও অন্যান্য যে সব জায়গায় খাদ্য সংকট চলছে সেখানে জরুরি খাদ্য সহায়তা অব্যাহত থাকবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইউএসএআইড ইউএসএআইড র

এছাড়াও পড়ুন:

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাতে নির্বাচন কবে জানতে চাইবে বিএনপি

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সরকারের প্রকৃত মনোভাব যে কী, তা এখনো বুঝে উঠতে পারছে না বিএনপি। যতই দিন যাচ্ছে, নির্বাচন নিয়ে অস্পষ্টতা বাড়ছে বলে মনে করছে দলটি। এ বিষয়ে স্পষ্টভাবে জানতে বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চায়।

বিএনপির দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে, দলের পক্ষ থেকে এরই মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সাক্ষাতের জন্য সময় চাওয়া হয়েছে। তবে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত উপদেষ্টা কার্যালয় থেকে কিছু জানানো হয়নি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রটি জানিয়েছে, গত সোমবার বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্ষদ জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভায় দলের পক্ষ থেকে শিগগিরই প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাতের সিদ্ধান্ত হয়। উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে সময় দেওয়া হলে দলের প্রতিনিধিদল সাক্ষাৎ করবে। যদিও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ মুহূর্তে চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর রয়েছেন। ১৬ এপ্রিল তাঁর দেশে ফেরার কথা রয়েছে। ফলে তাঁর অনুপস্থিতিতে এ সপ্তাহে সাক্ষাৎ হবে কি না, তা নিশ্চিত নয়।

আরও পড়ুনজুলাইয়ের মধ্যে ভোটের কর্মপরিকল্পনা ঘোষণার চিন্তা ইসির, লক্ষ্য ডিসেম্বরে ভোট ০৮ এপ্রিল ২০২৫

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাতের সময় চেয়েছি। তিনি কখন সময় দেন তার ওপর নির্ভর করবে সাক্ষাৎ। আমরা মহাসচিবকে (মির্জা ফখরুল) নিয়েই দেখা করতে চাই।’

বিএনপির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁরা এর আগে বিভিন্ন সময়ে দলীয় ও জাতীয় বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। তবে এবার দলের পক্ষ থেকে সাক্ষাতের যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সেটি একটু ভিন্ন। বিএনপি যে এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন চায়, সেটা প্রধান উপদেষ্টাকে সরাসরি বলবে। কার্যত নির্বাচন নিয়ে সরকারের মনোভাব কী, তা স্পষ্ট হওয়ার চেষ্টা থাকবে। বিশেষ করে কবে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করা হবে, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে জানা–বোঝার চেষ্টা করবেন বিএনপির নেতারা।

যদি এ বছরের মধ্যে নির্বাচনের নিশ্চয়তা না পায়, তাহলে বিএনপি কী করবে—এমন প্রশ্নের জবাবে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেশের ও জনগণের স্বার্থে রাজনীতিতে যখন যে সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন, বিএনপি সে সিদ্ধান্ত নেবে। বিএনপি তো নির্বাচনের জন্যই এত যুদ্ধ করেছে, অনেক নেতা–কর্মী জীবন দিয়েছেন, গুম হয়েছেন, নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর আমাদের আস্থা আছে। আমরা মনে করি, এ বছরের ডিসেম্বরেই নির্বাচন হবে। বিএনপি সেভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছে, অন্যান্য দলও নিচ্ছে। কোনো কোনো দল তো মনোনয়ন দিয়ে দিয়েছে, মাঠেও নেমে গেছে।’

আরও পড়ুনডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের বিষয়ে বিএনপির সঙ্গে একমত হেফাজত০৫ এপ্রিল ২০২৫

গত বছর ৫ আগস্ট ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই বিএনপি নির্বাচন চেয়ে আসছে। দলটি ভোটকেন্দ্রিক জরুরি সংস্কার শেষে দ্রুত জাতীয় নির্বাচনের দাবি করছে। এ ক্ষেত্রে গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলনসহ কয়েকটি দলের অবস্থানকে কিছুটা প্রতিবন্ধকতা বলে মনে করছেন বিএনপির নেতাদের অনেকে। এই দলগুলো প্রয়োজনীয় সংস্কার এবং নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করে তারপর নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলছে। এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানামুখী আলোচনা চলছে।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য নিজের ব্যক্তিগত অভিমত জানিয়ে গতকাল মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আজ হোক কাল হোক, নির্বাচন তো হতেই হবে। তবে নানা কিছুর মধ্যে নির্বাচন যে কবে হবে, তা আমার কাছে এখনো স্পষ্ট নয়।’

যদিও এরই মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের সম্ভাব্য সময়সীমা জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, এ বছরের শেষ থেকে আগামী বছরের প্রথমার্ধে ভোট নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁদের। গত মার্চ মাসে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ঢাকা সফরে এলে প্রধান উপদেষ্টা তাঁর সরকারের বিভিন্ন রকম সংস্কারের উদ্যোগ এবং আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কথা বলেন। তখন জাতিসংঘের মহাসচিবকে অধ্যাপক ইউনূস বলেছিলেন, রাজনৈতিক দলগুলো যদি ‘সংক্ষিপ্ত সংস্কার প্যাকেজ’ নিয়ে একমত হয়, তবে নির্বাচন ডিসেম্বরেই হতে পারে। তবে তারা যদি ‘বৃহৎ সংস্কার প্যাকেজ’ গ্রহণ করে, তাহলে নির্বাচন আগামী বছরের জুনে অনুষ্ঠিত হবে। প্রধান উপদেষ্টার এমন বক্তব্যকে অস্পষ্ট মনে করছে বিএনপি। সে কারণেই শিগগিরই তাঁর সঙ্গে দেখা করতে চান বিএনপির নেতারা।

আরও পড়ুনসংস্কার-নির্বাচন নিয়ে বিএনপিকে টার্গেট করে প্রচারণা চালানো হচ্ছে: মির্জা ফখরুল০২ এপ্রিল ২০২৫

বিএনপির নেতা সালাহ উদ্দিন আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা একাধিকবার এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলেছেন। আমরা সে অনুযায়ী ওনাকে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার আহ্বান জানাব।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা ছোট সংস্কার বা বড় সংস্কার বলতে কী বোঝাতে চেয়েছেন, সেটা আমরা জানতে চাইব। সংস্কারপ্রক্রিয়া চলছে, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আমাদের বৈঠকও হচ্ছে। সংস্কারপ্রক্রিয়া চালু থাকা অবস্থায় নির্বাচনের রোডম্যাপ দেওয়া যাবে না, বিষয়টা তো ওই রকম না।’

বিএনপির সূত্র জানিয়েছে, সরকারের মনোভাব বুঝতে চলতি এপ্রিল মাসটা দেখবে বিএনপি। এর মধ্যে নির্বাচনের রূপরেখা ঘোষণার বিষয়ে সরকারের দিক থেকে ইতিবাচক অগ্রগতি না দেখলে দলটি ‘ভোটাধিকার’ প্রশ্নে সারা দেশে কর্মসূচি শুরু করবে। এর সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দলগুলোকেও সক্রিয় করা হবে। সবার মূল লক্ষ্য থাকবে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা এবং নির্বাচন আয়োজনের জন্য রূপরেখা ঘোষণা করা। দ্রুততম সময়ে নির্বাচনের রূপরেখা দেওয়া না হলে আন্দোলন তীব্র করার পরিকল্পনাও রয়েছে।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু প্রথম আলোকে বলেন, ‘শুধু বিএনপি নয়, দেশের মানুষের ধারণা একটি গণতান্ত্রিক এবং নির্বাচিত গণপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার দরকার। বিএনপি একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য ১৫ বছর ধরে আন্দোলন করছে। যার ফলে বিগত সরকারের পতন হয়েছে। কিন্তু সেই প্রত্যাশিত নির্বাচন এখনো হয়নি। এখন যদি আমরা যথাসময়ে নির্বাচনের রোডম্যাপ না পাই, তাহলে আন্দোলন ছাড়া তো আর কোনো রাস্তা খোলা নেই।’

আরও পড়ুনএকটি শক্তি ক্ষমতায় থাকার জন্য নতুন নতুন পন্থা বের করছে: আমীর খসরু০১ এপ্রিল ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ