দুর্বার রাজশাহী বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে গেছে গতকাল। খুলনা টাইগার্স শেষ চারে জায়গা করে নেওয়ায় তাদের সফর আটকে গেছে রাউন্ড রবিন লিগেই।

পারিশ্রমিক জটিলতা নিয়ে দলটি এমনিতেই ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। এবার তারা আবারো টক অব দ্য টাউন। বিদেশী ক্রিকেটারদের দেশে ফেরার টিকিট দিতে পারছে না ফ্রাঞ্চাইজিটি। ফলে সকাল থেকেই হোটেলেবন্দী হয়ে আছেন জিম্বাবুয়ের রায়ান বার্ল, পাকিস্তানের মোহাম্মদ হারিস, ওয়েস্ট ইন্ডিজের মার্ক ডেয়াল ও মিগুয়েল কামিন্স এবং আফগানিস্তানের আফতাব আলম।

বার্ল ও হারিস প্রতিযোগিতার শুরু থেকে রাজশাহীর হয়ে খেলেছেন। আফতাব, ডেয়াল ও মিগুয়েল যোগ দিয়েছেন পরে। তারা কেউ কেউ ২৫ শতাংশ পারিশ্রমিক পেয়েছেন। কেউ কোনো অর্থও পাননি। প্রত্যেকেরই ১১ দিনের দৈনিক ভাতা বকেয়া।  প্রত্যেককেই আজ রাজশাহীর টিম হোটেল শেরাটনের লবিতে ঘোরাফেরা করতে দেখা গেছে। জানা গেছে, হোটেল কর্তৃপক্ষ এবং খেলোয়াড়দের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে রাজশাহী। তাদের ম্যানেজার মেহরাব হোসেন অপি, অপারেশন ইনচার্জ জায়েদ আহমেদ এবং মিডিয়া ম্যানেজার ইশতিয়াক পারভেজ কেউই ফোন ধরছেন না।

আরো পড়ুন:

আলো ছড়িয়ে উজ্জ্বল তারা

বিপিএলে নানা অনিয়ম, আসিফ মাহমুদের কড়া হুঁশিয়ারি 

শঙ্কার কারণ দুইটি, হোটেলের বিল বকেয়া এবং দেশে ফেরার টিকিট। খেলোয়াড়রা চাইলেই হোটেল থেকে বেরিয়ে যেতে পারবেন না। এক্ষেত্রে ফ্রাঞ্চাইজির পক্ষ থেকে কাউকে উপস্থিত থাকতে হবে। দেশে ফেরার রিটার্ন টিকিট না পেলে কিভাবে ফিরবেন সেটা নিয়েই উদ্বেগ।

শোনা গেছে, রাজশাহীর মালিক শফিকুর রহমান আজ রাত ৮টা পর্যন্ত সময় চেয়েছেন। কিন্তু সেই সময়ের মধ্যে টিকিট না পেলে পরবর্তী করণীয় কি তা বুঝতে পারছেন না বার্ল-হারিসরা। হারিস ও আফতাব নিজ নিজ দেশের বোর্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। সংশ্লিষ্ট বোর্ড টিকিট কেটে দেওয়ার ব্যবস্থা করছে বলে জানা গেছে।

এদিকে কোচ হিসেবে তারা এনেছিল পাকিস্তানের এজাজ আহমেদ ও রাও ইফতেখারকে। তাদেরও পারিশ্রমিক বকেয়া রয়েছে। দেয়া হয়নি দৈনিক ভাতা।

বিষয়গুলো নিয়ে জানতে চাইলে বিসিবির ডিরেক্টর মনজুর আলম রাইজিংবিডিকে বলেছেন, ‘‘পারিবারিক কারণে আমি ঢাকার বাইরে। বিষয়গুলো নিয়ে আমার কোনো ধারনা নেই। বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল এটা পরিস্কার করতে পারবে।’’

বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য সচিব নাজমুল আবেদীন ফাহিম। তিনি জানিয়েছেন, খেলোয়াড়দের থেকে আনুষ্ঠানিক কিছু তারা এখনো জানতে পারেননি। তাই কোনো সিদ্ধান্তও নিতে পারছেন না।

ঢাকা/ইয়াসিন/নাভিদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব প এল

এছাড়াও পড়ুন:

চীন ও ইউরোপ কীভাবে মার্কিন শুল্ক ঝড় রুখবে

অ্যাডাম স্মিথের লেখা বিখ্যাত বই দ্য ওয়েলথ অব ন্যাশনস অর্থনীতির জগতে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছিল। স্মিথ বলেছিলেন, ভাগ ভাগ করে কাজ করলে উৎপাদন ও দক্ষতা বাড়ে। দেশগুলোর মধ্যেও এই একই নিয়ম প্রযোজ্য। যে দেশ যেটা সবচেয়ে ভালো করতে পারে, সেটাই উৎপাদন করবে এবং অন্য দেশের সঙ্গে বিনিময় করবে। কিন্তু শুল্ক বা ট্যারিফের মতো বাধাগুলো এই স্বাভাবিক প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে, অর্থনীতিকে করে তোলে অকার্যকর এবং শেষ পর্যন্ত ক্ষতিই বেশি হয়।

এই সুপ্রতিষ্ঠিত তত্ত্বের পরও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও শুল্কনীতির পক্ষে সওয়াল করছেন। তিনি দাবি করেন, শুল্ক আরোপের মাধ্যমে ‘আমেরিকাকে আবার মহান’ করে তোলা যাবে। ট্রাম্পের ‘পারস্পরিক শুল্কনীতি’ অনুযায়ী, যেসব দেশ আমেরিকান পণ্যে শুল্ক বসায়, তাদের পণ্যের ওপর আমেরিকাও পাল্টা শুল্ক আরোপ করবে। এতে নাকি আমেরিকার শিল্প এবং চাকরি রক্ষা পাবে এবং রাজস্বও বাড়বে।

শুল্ক আসলে কী করে

কিন্তু বাস্তব চিত্রটা ভিন্ন। শুল্ক মূলত ভোক্তা ও ব্যবসার ওপর একধরনের করের মতো কাজ করে। এতে আমদানি করা পণ্যের দাম বাড়ে, যার ফলাফল হয় মূল্যস্ফীতি। যেসব শিল্প বিদেশি কাঁচামাল ব্যবহার করে, তাদের উৎপাদন খরচ বেড়ে যায় আর এই বাড়তি খরচ পড়ে সাধারণ ক্রেতার ঘাড়ে। অন্যদিকে প্রতিশোধমূলক শুল্ক বসিয়ে অন্যান্য দেশও পাল্টা পদক্ষেপ নেয়। ফলে মার্কিন রপ্তানিকারকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, বিদেশি বাজার হারায় এবং এর প্রভাবে চাকরি হারান বহু মানুষ। এককথায়, সাময়িক যে রাজস্ব আসে, তা এই আর্থিক ক্ষতির তুলনায় নেহাতই সামান্য।

বিভিন্ন প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, এই ‘পারস্পরিক শুল্কনীতি’ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ব্রাজিল এবং ভারতকে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির আশঙ্কায় আছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা ইইউ। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের মূল লক্ষ্য ইউরোপের এমন সব খাত, যেগুলোর প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান অনেক শক্তিশালী। বিশেষ করে ইউরোপের গাড়িশিল্প এই শুল্কের বড় শিকার হতে পারে।

সেই সঙ্গে যন্ত্রপাতি, ওষুধ এবং মহাকাশপ্রযুক্তি—এ তিনটি গুরুত্বপূর্ণ খাতও মারাত্মকভাবে ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে শুল্কসংক্রান্ত উত্তেজনা চলতে থাকলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থনীতিতে মন্দা দেখা দিতে পারে।

সব মিলিয়ে বিশ্বব্যাপী পারস্পরিক সহযোগিতা ও মুক্তবাণিজ্যের বদলে যদি দেশগুলো একে অপরের ওপর শুল্ক চাপিয়ে দেয়, তাহলে ক্ষতিটা সবারই হবে।

আরও পড়ুনবিশ্ব চালাবে কে—চীন নাকি ইউরোপ২০ ঘণ্টা আগেইউরোপ যে ঝামেলায় পড়েছে 

এই মুহূর্তে ইউরোপীয় গাড়ি নির্মাতারা কঠিন এক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন। একদিকে বৈদ্যুতিক গাড়ির উৎপাদনে চীন উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। অন্যদিকে ট্রাম্প প্রশাসনের চাপও ক্রমেই বাড়ছে। চীনা কোম্পানিগুলোর উদ্ভাবন ও উৎপাদনদক্ষতা ইউরোপীয় গাড়িশিল্পের জন্য একটা বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে ইউরোপ এখনো পুরোপুরি প্রস্তুত নয়।

এর মধ্যে আরও চাপ তৈরি করছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বড় বড় ইউরোপীয় কোম্পানিকে যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদনকেন্দ্র সরিয়ে আনার জন্য চাপ দিচ্ছেন। তাঁর যুক্তি, এতে আমেরিকায় চাকরি তৈরি হবে এবং অর্থনীতি মজবুত হবে।

অথচ ইউরোপ ও অন্যান্য দেশ থেকে আসা শিক্ষিত পেশাজীবীদের অভিবাসনের মাধ্যমেও যুক্তরাষ্ট্র অনেক লাভবান হচ্ছে। ইলন মাস্কের কথাই ধরা যাক। তিনি দক্ষিণ আফ্রিকায় বড় হয়েছেন, পড়ালেখা করেছেন কানাডায় এবং পরে যুক্তরাষ্ট্রে এসে টেসলা ও স্পেসএক্সের মতো বৈপ্লবিক কোম্পানি গড়ে তুলেছেন।

ইউরোপিয়ান কাউন্সিল প্রেসিডেন্ট, চীনা প্রধান মন্ত্রী ও ইউরোপিয়ান কমিশন প্রেসিডেন্ট বেইজিং-এ এক সংবাদ সম্মেলনে, জুলাই ২০১৮

সম্পর্কিত নিবন্ধ