এলপিজির দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। আজ রোববার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে ২৩ টাকা বাড়িয়ে ফেব্রুয়ারি মাসের জন্য ভোক্তা পর্যায়ে ১২ কেজি এলপিজির দাম ১ হাজার ৪৭৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। নতুন এই দর আজ সন্ধ্যা থেকেই কার্যকর হবে।
বিস্তারিত আসছে.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: এলপ জ
এছাড়াও পড়ুন:
এখনও পুরনো রীতিতে চৈত্রসংক্রান্তি পালন করেন রংপুরের মানুষ
রংপুরের গ্রামাঞ্চলের মানুষ পহেলা বৈশাখে এখনও পুরনো দিনের রীতি অনুসরণ করে চলেন। সর্বত্র আধুনিকতার ছোঁয়া লাগলেও সেই রেওয়াজ তারা এখনও লালন করেন। বাংলা বছরের শেষ দিনটিকে বলা হয় চৈত্রসংক্রান্তি। শাস্ত্র অনুসারে এই দিনে স্নান, দান, ব্রত, উপবাস প্রভৃতিকে পূণ্যকর্ম বলে মনে করা হয়। চৈত্রসংক্রান্তিকে ঘিরে সন্ন্যাসীরা বাদ্যের তালে তালে নেচে নেচে দেবদেবীর প্রতিকৃতি (পাট) মাথায় নিয়ে ঘুরে বেড়ান। তাঁরা যে বাড়িতে যান, সেই বাড়ির গৃহিণী পরিষ্কার পিঁড়ি বা জলচৌকি পেতে দেন। এরপর তাঁরা ওই পিঁড়ি বা জলচৌকির ওপর পাট নামান। এই সময় গৃহস্তের মঙ্গল কামনায় নেচে নেচে গান পরিবেশন করেন সন্ন্যাসীরা। গান পরিবেশন শেষে সন্ন্যাসীদের চাল, সবজি কিংবা টাকা উপঢৌকন দেন গৃহিণীরা। সংগৃহিত অর্থে বাংলার সংস্কৃতি নতুন প্রজন্মের কাছে ছড়িয়ে দিতে চৈত্রসংক্রান্তি উৎসব ও চড়ক মেলার আয়োজন করা হয়।
পুরনো রীতি অনুয়ায়ী রংপুরের গ্রামাঞ্চলের লোকজন চৈত্রসংক্রান্তির সকালে তিতা জাতীয় (ভাটির পাতার রস, জাত নিমের পাতার রস, নীলতাতের রস) খাবার খান। তাদের বিশ্বাস এতে সারাবছর ধরে শরীরে কোন রোগ-বালাই হবে না। এছাড়া মুলত খেসারী, মসুর, ছোলা জাতীয় কলাই ভেজে চিবিয়ে খাওয়া হয়। বিষয়টি মুলত দাতকে শক্তিশালী করার জন্য। চৈত্রসংক্রান্তি ও পহেলা বৈশাখে রংপুরের বিভিন্ন এলাকায় মেলার আয়োজন অনেক পুরনো রীতি। বাংলার ঐতিহ্যবাহী লোকসংস্কৃতির অন্যতম উপাদান হলো মেলা। গ্রামীণ সমাজ জীবনের পারস্পরিক যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে মেলার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল একসময়। মেলাকে কেন্দ্র করে এক উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। আশপাশের কয়েক গ্রামের মানুষ আসে মেলায়। সামাজিক স¤প্রীতি সৃষ্টির ক্ষেত্রে এই পারস্পরিক যোগাযোগ ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। স্থানীয় কারুশিল্পীদের উৎপাদিত পণ্য এবং কৃষিপণ্যই থাকে গ্রামীণ মেলার মূল বেচাকেনার জিনিস। বাঁশ, বেত, পাট, শোলা, ধাতব, মৃৎ, চামড়া, তন্তুজাত হরেক রকমের কারুপণ্য ও বাচ্চাদের খেলনার বিপুল সমাবেশ গ্রামীণ মেলাকে বর্ণাঢ্য করে তোলে। এর পাশাপাশি থাকে খাজা, গজা, মওয়া এসব খাদ্যসামগ্রীর সমাবেশ। থাকে নাগরদোলা, পুতুলনাচ, গাজির গান, যাত্রাপালা, সার্কাস, লাঠিখেলাসহ হরেক রকমের আয়োজন।
নবাব মুর্শিদ কুলি খান পয়লা বৈশাখে ‘পুণ্যাহ’ উৎসব চালু করেন। তখন কিছুটা জাতীয় পুঁজির বিকাশ ঘটায় ব্যবসা-বাণিজ্যের একটি উন্নত অবস্থা সৃষ্টি হচ্ছিল। এই ব্যবসায়ীরাই পুণ্যাহর আনুষঙ্গিক অনুষ্ঠান হিসেবে ‘হালখাতা’ উৎসব চালু করেন। বাংলার অর্থনীতি ছিল কৃষিনির্ভর। ফলে কৃষকের হাতে নগদ অর্থের জোগান শুধু ফসল কাটার সময়েই আসত। তাই বাধ্য হয়ে তাঁরা দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় জিনিস ব্যবসায়ী বা দোকানিদের কাছ থেকে বাকিতে কিনতে বাধ্য হতেন। নতুন বছরের প্রথম দিনে হালখাতা উৎসবে বকেয়া অর্থের পুরোটা বা আংশিক পরিশোধ করে হালখাতা বা নতুন খাতায় নাম লেখা হতো। তার মধ্যে অবশ্য আনন্দের উপকরণও ছিল। হালখাতা উপলক্ষে খাওয়া-দাওয়া বিশেষ করে মিষ্টান্ন বিতরণের রেওয়াজ ছিল। সেই রীতি অনুসরণ করে রংপুর অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা পহেলা বৈশাখে বাড়ি কিংবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হালখাতার আয়োজন করেন। অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিতদের আপ্যায়নে বাড়িতে তৈরি করা হয় মন্ডা-মিঠাইসহ হরেক রকম খাবারের জিনিস।
আর পহেলা বৈশাখে ভালো খাবার, ভালো কাপড় পরিধান, ঝগড়াঝাটি না করা, কারো সঙ্গে লেন-দেন না করাসহ বিভিন্ন নিয়ম মেনে চলার প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে। এতে করে আগামী বছরজুড়ে ভালো থাকা যাবে-এই বিশ^াস থেকেই পহেলা বৈশাখে রংপুর অঞ্চলের মানুষজন এসব পুরনো রীতিনীতি মেনে চলেন।
রংপুরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, পহেলা বৈশাখ বাংলা বর্ষবরণে চলছে প্রস্তুতি। এতে থাকছে বৈশাখী শোভাযাত্রা, বিভিন্ন প্রতিযোগিতা, গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।