বিতর্কে জড়ালেন ভারতের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী উদিত নারায়ণ। কনসার্ট চলাকালীন নারী ভক্তকে চুমু দিয়ে নিন্দার পাত্র হয়েছেন ৭০ বছরের এই গায়ক। সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া সেই ভিডিও দেখে সমালোচনা করছেন নেটিজেনরা। সেই সঙ্গে গায়কের এমন উদ্ভট আচরণে হতাশ তারা।

প্রথমে কেউ বিশ্বাসই করতে চাইছিলেন না, উদিত এমন কাণ্ড ঘটিয়েছেন। অনেকে ভেবেছেন, পুরোটাই প্রযুক্তির কারসাজি। পরে যখন স্পষ্ট হয় বিষয়টি, তত ক্ষণে সামাজিক মাধ্যমে নিন্দার ঝড়।

ভারতীয় গণমাধ্যমকে উদিত নারায়ণ বলেন, ‘এই ঘটনা কয়েক মাস আগের। কেন নতুন করে ভাইরাল করা হল সেটা বুঝতে পারছি না। সম্ভবত কেউ আমাকে কলঙ্কিত করতেই বিষয়টি ঘটিয়েছেন। তবে এতে শাপে বর হয়েছে। উল্টে আমার জনপ্রিয়তা আরও বেড়েছে।’

বিষয়টি নিয়ে সমালোচনার জবাবে উদিত বলেন, ‘এ ঘটনা নতুন নয়। এর আগেও এ রকম হয়েছে। ভক্তদের চুম্বন করেছি। সবটাই জনপ্রিয়তার কারণে। অনেকের অনেক রকম আবদার থাকে। পূরণ করি, পূরণ করতে হয়। দর্শক-শ্রোতাদের জন্যই তো আমরা আছি।’

তার কথায়, ‘মঞ্চের আশেপাশে অনেক সময় আমার স্ত্রী দীপা, ছেলে আদিত্য থাকে। সে দিনও আদিত্য মঞ্চে ছিল। ওর সামনেই সব ঘটেছে। তারা তো কিছু মনে করে না। আমার জনপ্রিয়তায় ওরা খুব খুশি।’

ভিডিওতে দেখা গেছে, তরুণী অনুরাগী প্রথমে ফেলফি তোলার অনুরোধ জানান। ছবি তুলে উদিতের গালে চুমু খান। বদলে তরুণীর ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দেন গায়ক।

বিষয়টি অযথা কুৎসিতভাবে দেখানোর চেষ্টা চলছে বলেন মনে করছেন এই শিল্পী। তার ভাষ্য, আমাদের হাতের পাতায় এভাবে কত ভক্ত চুম্বন করেন। আমরাও করে থাকি। গালেও চুম্বন করা হয়। ঠোঁটে চুমু খাওয়া মানেই কিন্তু খারাপ নয়।’ সূত্র: আনন্দবাজার।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: জনপ র য় ব ষয়ট

এছাড়াও পড়ুন:

নারী নির্যাতন, বিচারহীনতা ও সরকারের অস্পষ্ট অবস্থান

মাগুরায় আট বছরের শিশু ধর্ষণের বীভৎস ঘটনা যে কোনো বিবেকবান মানুষকে হতবুদ্ধি করে দেয়। বিকৃতির কোন পর্যায়ে আপন ঘরেই শিশু পাশবিক নির্যাতনের শিকার হতে পারে! দেশে ধর্ষণের ঘটনা নতুন নয়, সারাদেশ তোলপাড় করা বেশ ক’টি ধর্ষণের ঘটনার কথা এক নিঃশ্বাসে আমরা বলতে পারি। পূর্ণিমা, তনু, মুনিয়া... বিভিন্ন সময়ে আলোড়ন-জাগানিয়া এসব ধর্ষণকাণ্ডের একটিরও যথার্থ বিচার হয়নি। ধর্ষণের শিকার অগণিত নারী-শিশুর খবর পত্রিকার পাতা পর্যন্ত আসেও না। 

অন্তর্বর্তী সরকারের সাত মাসে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্রমাবনতির সমান্তরালে বেড়েছে নারী নির্যাতন। নারী ও শিশু ধর্ষণ, নির্যাতন, দলবদ্ধভাবে হেনস্তা ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, বিদ্যালয় ও সড়ক-মহাসড়কে সজোর প্রতিবাদ শুরু হয়েছে। রোববার মধ্যরাতে রোকেয়া হলের ছাত্রীরা রাজপথে বেরিয়ে এসে প্রতিবাদের ঝড় তোলে, গড়ে ওঠে ‘ধর্ষণবিরোধী প্রতিবাদ মঞ্চ’; দাবিদাওয়ার মুখে সরকারের উপদেষ্টাদের আপাত সরব দেখা যায়।

সোমবারের (১০ মার্চ, ২৫) সমকাল ও প্রথম আলোর কয়েকটি শিরোনাম: দিনের পর দিন ধর্ষণ, মুক্তি মেলেনি মায়ের মৃত্যুতেও; কেরানীগঞ্জে অন্তঃসত্ত্বাকে দলবদ্ধ ধর্ষণ; শেরপুর ও কুমিল্লায় ধর্ষণের শিকার শিশু, দুই বৃদ্ধ গ্রেপ্তার; সেই শিশুর বুকে বসানো হলো টিউব, জ্ঞান ফেরেনি চার দিনেও; ধর্ষণ থামছে না, ফেব্রুয়ারিতে দিনে গড়ে ১২টি মামলা; শিশুটি কান্নাকাটি করে বোনের বাসা থেকে চলে আসতে চেয়েছিল; ৩ শিশু ধর্ষণের শিকার, অন্তঃসত্ত্বা নারীকে দলবদ্ধ ধর্ষণ। দেশের প্রধান দুটি দৈনিকের প্রথম পাতায় এক দিনের শিরোনাম দেখে মনে হয়, এই দেশে অন্ধকার যুগ চলছে। ধর্ষণের বিরুদ্ধে যখন নারীরা রাস্তায় প্রতিবাদমুখর; তখন আনাচে-কানাচে নারী নিপীড়নের মাত্রা পাল্লা দিয়ে বাড়ছে।

২.
সাম্প্রতিক দুটি নারী নির্যাতনের ঘটনা মনে করা যাক। লালমাটিয়ায় চায়ের দোকানে দুই নারীকে সিগারেট খাওয়ার ‘অপরাধে’ মারধর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে ওড়না না পরার কারণে কর্মচারীর ‘সবক’। দুই ক্ষেত্রেই ‘তৌহিদি জনতা’ দৃশ্যপটে হাজির। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে ‘সবকদাতা’ কর্মচারীর মুক্তির দাবিতে ‘তৌহিদি জনতা’ শাহবাগ থানাও ঘেরাও করে। পরদিন জামিনপ্রাপ্ত নারী উত্ত্যক্তকারীকে ফুলের মালা ও পাগড়ি পরানো হয়। 
নারীর পোশাক নিয়ে সমালোচনার অন্ত নেই। এমনকি নারী টিপ দিল কেন, ঘোমটা নেই কেন– এসব নিয়েও সমালোচনামুখর অনেকে। এসব আচরণ আমাদের সমাজে নারী নির্যাতনের অন্তর্ভুক্ত নয়। অথচ পোশাক বা সাজসজ্জার জন্য প্রতিবন্ধকতায় পড়াই তো বড় নারী নির্যাতন! এই নির্যাতন লাগাতার চলেছে; ওয়াজ মাহফিলে, সামাজিক মাধ্যমে, উগ্রবাদী দলের সভায় নারীর চলন-পোশাক ‘ঠিক’, ‘বেঠিক’ রায় দেওয়া হচ্ছে। এমন ভাষা ও ভঙ্গিমায় বর্ণনা করা হচ্ছে, যেন নারী পণ্যমাত্র, তাঁকে ‘সঠিকভাবে পরিবেশন’ করতে হবে! এই দৃষ্টিভঙ্গি ও পরিবেশনা নারীর স্বাভাবিক বিকাশের অন্তরায় কেবল নয়, নারীর প্রতি সহিংস সমাজ ও প্রতিবেশ গড়ে তোলায় ভূমিকা রাখছে।

৩.
৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে দুঃশাসক আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিষ্ঠার পর সমাজ ও সংস্কৃতির প্রতি সংবেদনশীল আচরণ ন্যূনতম প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু বিস্ময়ের সঙ্গে আমরা দেখি মাজার ভাঙা, মুক্তিযুদ্ধের স্থাপনা ভাঙা, ঐতিহাসিক ৩২ নম্বর চূর্ণ-বিচূর্ণ করা, স্থাপত্য-ভাস্কর্য ভাঙা– সবকিছুতেই নির্বিকার ও নির্লিপ্ত সরকার। তারপর নারীর প্রতি একের পর এক রুচিহীন আক্রমণ। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর হোসেন লালমাটিয়ায় দুই নারীকে প্রহারের পর বলেন, ‘উন্মুক্ত স্থানে নারী বা পুরুষ যে কারও জন্য সিগারেট খাওয়া অপরাধ।’ হা হতোস্মি! যে দেশে উন্মুক্ত স্থানে প্রকাশ্যে যত্রতত্র পুরুষ মূত্রত্যাগ করে, সে দেশে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলছেন এই কথা? পুরুষ তো পারলে অন্যের ঘাড়ের ওপরে দাঁড়িয়ে সিগারেট খায় এ দেশে। কী বলছেন তিনি? বুঝে বলছেন!
রাজধানীর গুলশানে বা যে কোনো শহরের অলিগলিতে কয়েকজন মিলে স্লোগান দিতে শুরু করে– ‘স্বৈরাচারের দোসরেরা/ হুঁশিয়ার সাবধান।’ তারপর ঢুকে যায় কারও তালাবদ্ধ বাড়িতে। তছনছ, ভাঙচুর, লুটপাট করে। তখন প্রশ্ন জাগে, দেশে সরকার বলতে কিছু আছে কিনা? 

মব সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণে অবস্থান স্পষ্ট করতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার। মব সন্ত্রাসীরা নিতান্ত ছোট গোষ্ঠী, তারা এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের আকাঙ্ক্ষা ও সাংস্কৃতিক চেতনার প্রতিনিধিত্ব করে না। সরকারের কি ধারণা, মবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে তাদের বৈধতা কমে আসবে? আশ্চর্যের বিষয়, সরকার তার শক্তি সম্পর্কেই জ্ঞাত নয়!
সরকারপ্রধান বারবার বলেন, পতিত আওয়ামী লীগ ও তার দোসররা কালো টাকা ব্যবহার করে সরকারের বিরুদ্ধে অস্থিরতায় ইন্ধন জোগাচ্ছে। না, মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা। অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপানোর সুযোগ নেই। ক্ষমতাচ্যুতরা সরকারের চেয়েও শক্তিশালী– একথা আপনি বললেও আমরা মানতে পারি না। দেশের ছাত্র-জনতার সমর্থনে আপনি দায়িত্ব নিয়ে কেন পতিত গোষ্ঠীকে এত সমীহ করবেন? ধর্মীয়, লিঙ্গীয় বা রাজনৈতিক পরিচয়ে এ দেশে মানুষে মানুষে নানা পার্থক্য থাকতে পারে। কেউ কারও সঙ্গে একমত না হতেই পারেন, কিন্তু কারও ওপর কেউ আক্রমণ করতে পারবে না। এই ন্যূনতম গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পক্ষে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার অবস্থান স্পষ্ট করতে পারেনি। তাদের দু-একজন উপদেষ্টা বরং দেশের ইতিহাস, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য নিয়ে আপন আপন মতামত দিতে শুরু করেছেন। দেশের মুক্তিযুদ্ধকে কোথাও কোথাও তাতে খর্ব করার উৎসাহও আমাদের চোখে পড়ে। এসবই উগ্র ডানপন্থিদের সবল করার কসরত বলে মনে হয়। 

রোববার রাতে প্রেস ব্রিফিংয়ে আইন উপদেষ্টা সাম্প্রতিক নানা ঘটনা প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে জাতির কাছে ক্ষমা চেয়ে বলেছেন, এখন থেকে তারা আইনশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় জোর দেবেন। সাত মাস পর এ ধরনের মিনতি শঙ্কাজাগানিয়া। এতদিন তারা আইনশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় কেন আরও উদ্যোগী হলেন না? আইন উপদেষ্টা ধর্ষণ মামলায় জামিন পাওয়ার অধিকার রাখবেন না জানিয়ে বলেছেন, এ মামলায় ৯০ দিনের মধ্যে বিচার হবে। তবে জামিন অযোগ্য মামলা হওয়ায় অপ্রয়োজনীয় মামলা বাড়বে কিনা, এদিকে জোর যেমন দেওয়া উচিত; তেমনি আইনি কাঠামো আরও সম্প্রসারণ ও জোরদার করবার প্রসঙ্গটিকেও তিনি গুরুত্ব দেবেন বলে প্রত্যাশা। তথ্য উপদেষ্টা একই ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘জনগণকে জানাতে চাই, যেখানেই মব জাস্টিস পরিস্থিতি হবে, সে যে-ই হোক না কেন, যে ধর্মের, লিঙ্গের, বর্ণের, জাতের হোন না কেন, আমরা এখন থেকে কঠোর ভূমিকায় অবতীর্ণ হবো।’
তথ্য উপদেষ্টার কথাতেই পরিষ্কার, মব সন্ত্রাস নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের এতদিনকার অবস্থান স্পষ্ট ও দৃঢ় ছিল না। সরকারের অবস্থান সুস্পষ্ট থাকলে নারীর প্রতি সহিংসতাও বাড়ত না। অন্যায়ের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ দেখাতে হবে সরকারকে। যেহেতু নির্বাচনে দাঁড়ানোর প্রশ্ন নেই; তাই কারও মন জয় করবার বাড়তি তাগিদও থাকা উচিত নয় সরকারের। সে কারণে তার স্বজনপ্রীতিও থাকবার কথা নয়। আইনশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় কঠোর হাতে সরকারের জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার কোনো বিকল্প নেই।

মাহবুব আজীজ: উপসম্পাদক, সমকাল ও সাহিত্যিক
mahbubaziz01@gmail.com

সম্পর্কিত নিবন্ধ