নতুন একটি ভূগর্ভস্থ ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি উন্মোচন করেছে ইরান। দেশটির রাষ্ট্রীয় টিভি জানিয়েছে, শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) ইরানের সামরিক বাহিনী ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পসের (আইআরজিসি) নৌবাহিনী দক্ষিণ ইরানের উপকূলীয় অঞ্চলে আরেকটি ভূগর্ভস্থ ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি উন্মোচন করেছে।

নতুন ভূগর্ভস্থ ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি উন্মোচনের পর আইআরজিসি নৌবাহিনী প্রধান আলিরেজা তাংসিরি বলেছেন, “আমরা যেকোনো শত্রুর মোকাবেলা করার জন্য নিজেদের প্রস্তুত করছি- যেকোনো মাত্রায় ও যেকোনো উপায়ে।” খবর ইরান ইন্টারন্যাশনালের।

আইআরজিসির প্রধান কমান্ডার হোসেইন সালামি ইরানের শত্রুদের প্রতি একটি বার্তা হিসেবে ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি উন্মোচন করেছেন। তিনি বলেন, “শত্রুকে আরো সুনির্দিষ্ট হিসাব কষতে ও নিশ্চিত হবে যে, তারা এমন ভুল না করে যা নিজেদের এবং অন্যদের উভয়কেই সমস্যায় ফেলবে।”

আরো পড়ুন:

মহানবীকে অবমাননার দায়ে ইরানে পপ তারকার মৃত্যুদণ্ড

ইরান দূতাবাসে ‘দেশে নয়া ইসলামি সভ্যতা গঠনের প্রয়োজনীয়তা’ শীর্ষক সেমিনার

আইআরজিসির প্রধান কমান্ডার সতর্ক করে আরও বলেন, “যদি তারা কোনো ভুল করে, তাহলে ‘আপনি যেসব সিস্টেম দেখতে পাচ্ছেন’ তা সক্রিয় করা হবে।”

আইআরজিসির নৌবাহিনী কমান্ডার আলিরেজা তাংসিরির মতে, আইআরজিসি নতুন ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রও উন্মোচন করেছে, যার রেঞ্জ ১,০০০ কিলোমিটারের বেশি এবং এটি অ্যান্টি-জ্যামিং ক্ষমতা সম্পন্ন।

আইআরজিসি-অনুমোদিত সাবেরিন নিউজ জানিয়েছে, শত্রু পক্ষের ইলেকট্রনিক যুদ্ধবিমানের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতাসম্পন্ন নতুন ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রগুলো আইআরজিসির নতুন ভূগর্ভস্থ ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটিতে মোতায়েন করা হয়েছে। এসব ক্ষেপণাস্ত্র দ্রুত প্রস্তুত করে উৎক্ষেপণ করা যায়।  

ইরান ইন্টারন্যাশনালের প্রতিবেদন বলছে, চলতি বছরে এ নিয়ে তিনটি ভূগর্ভস্থ ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি উন্মোচন করল ইরান। এর আগে গত ১৮ জানুয়ারি, ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতাগ্রহণের দুই দিন আগে আইআরজিসি নৌবাহিনী পারস্য উপসাগরের একটি অপ্রকাশিত স্থানে একটি ভূগর্ভস্থ নৌ ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি উন্মোচন করে। 

সেসময় একটি যুদ্ধ মহড়ার সময় গোপন ঘাঁটিটি পরিদর্শন করার পর আইআরজিসি প্রধান কমান্ডার হোসেইন সালামি বলেন, ঘাঁটিটি দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ এবং দূরবর্তী যুদ্ধ পরিচালনা করতে সক্ষম জাহাজের বেশ কয়েকটি ঘাঁটির মধ্যে একটি।

 

তার আগে, গত ১০ জানুয়ারি আইআরজিসির অ্যারোস্পেস ফোর্স রাষ্ট্রীয় টিভিতে ভূগর্ভস্থ ক্ষেপণাস্ত্রের আরো একটি ঘাঁটির উন্মোচন প্রচার করে। আইআরজিসি-অনুমোদিত তাসনিম নিউজ জানিয়েছে, ২০২৪ সালের এপ্রিল এবং অক্টোবরে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় এই ঘাঁটিটি ব্যবহার করা হয়েছিল। 

এর ক্ষমতা সম্পর্কে রাষ্ট্রীয় টিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “এই পর্বতমালার নিচে অবস্থিত আগ্নেয়গিরিটি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অগ্ন্যুৎপাত করতে পারে।”

ইরান ইন্টারন্যাশনালের প্রতিবেদন বলছে, সেপ্টেম্বর থেকে মিত্রদের টানা পরাজয়ের পর ইরান গত কয়েক সপ্তাহে একাধিক সামরিক মহড়া পরিচালনা করছে, যার মধ্যে রয়েছে নাতানজের মতো পারমাণবিক স্থাপনার কাছে বিমান প্রতিরক্ষা মহড়া এবং তেহরানে ১,১০,০০০-শক্তিশালী বাসিজ মোবিলাইজেশন। এসব সামরিক মহড়া পরিচালনা করা হয় সেপ্টেম্বর থেকে মধ্যপ্রাচ্যে ইরানি মিত্রদের টানা পরাজয়ের পর, এই অঞ্চলে ইরানের প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রদর্শন ও শক্তির বার্তা প্রদানের জন্য।

ঢাকা/ফিরোজ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর কম ন ড র ক ষমত

এছাড়াও পড়ুন:

‘আমাক চিনো না, মাদারগঞ্জের আন্ডারগ্রাউন্ডটা আমিই নিয়ন্ত্রণ করি’

জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক নাজমুল ইসলাম খানের কণ্ঠসদৃশ কথোপকথনের একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ৫ মিনিট ১৫ সেকেন্ডের অডিওতে ইউনিয়ন যুবলীগের রাজনীতিতে জড়িত উপজেলা শহরের এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে তাঁকে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করতে শোনা যায়। আজ বুধবার সকালে অডিওটি ফেসবুক ও মেসেঞ্জারে ছড়িয়ে পড়ে।

ওই ব্যবসায়ীর নাম মো. মনোহর। তিনি উপজেলার বালিজুড়ী ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সদস্য ও উপজেলা শহরের মুঠোফোন ব্যবসায়ী। ৫ আগস্ট পটপরিবর্তনের পর থেকে তিনি আত্মগোপনে।

মুঠোফোন বন্ধ থাকায় কথোপকথনে চাঁদা দাবির বিষয়ে ওই ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। প্রথম আলোর পক্ষ থেকে অডিওটি যাচাই করাও সম্ভব হয়নি।

ছড়িয়ে পড়া অডিওতে ছাত্রদল নেতার কণ্ঠসদৃশ ব্যক্তিকে ব্যবসায়ীর উদ্দেশে বলতে শোনা যায়, ‘তুমি যদি মেল হও, তাহলে তুমি মদ্দা মানুষের মতো বুক ফুলিয়ে চলবা। যেদিক মন চাই, সেই দিক যাবা। তুমাক নিয়ে থানাত যামু, এসপি অফিস যামু, ডিবি অফিস যামু। ব্যাক (সব) মিলতাল করমু। তুমি সম্ভবত আমাক চিনো না। হয়তো আমার সম্পর্কে আইডিয়া নাই। মাদারগঞ্জের আন্ডারগ্রাউন্ডটা আমিই নিয়ন্ত্রণ করি।’

এ সময় ব্যবসায়ী ওই নেতার নাম জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নাম? সাক্ষাতে কথা হবে। আর দুই (দুই লাখ টাকা) কালকে সকালবেলায় দিয়ে দিবা। শুনো, এখানে কোনো কথা হবে না, কোনো প্যাঁচাল হবে না, সাক্ষাতে এসে ডাইরেক্ট দিয়ে দিবা। তুমি তোমার সুবিধামতো জায়গায় থাকবা, আমাক ফোন দিবা। আমি যামু, সাক্ষাতে চা খামু, কথা কমু।’

এ সময় ব্যবসায়ী কথা বলতে উদ্যত হলে থামিয়ে দিয়ে ওই ব্যক্তি বলেন, ‘শুনো, আর কোনো কথা বলবা না। তুমি তো বুঝছ, তোমাকে আমি কোনডা থেকে কী করবার পারছি? ৫০০ পোলাপানের মধ্য থেকে তোমাকে আমি কিন্তু ছোঁ মেরে নিয়ে এসে পড়ছি। তখন কেউ কথা কইবার পারছে?’ এ সময় ব্যবসায়ী বলেন, ‘তা ঠিক আছে। সেটা আমি স্বীকার করি।’ ছাত্রদল নেতা বলেন, ‘তাহলে? উনতি (ওখানে) কত বড় বড় নেতারা আছিল। আমার কাছে ওল্লের (ওদের)...টাইম নাই। শুনো, সাক্ষাতে কথা হবো, পরে চিনবা। বিভিন্ন জায়গা থেকে খোঁজ নিবা। আমি কিন্তু কারোরে হিসাব করি না, ওল্লের টাইম নাই। আমি আমার মতো চলি আগে থেকেই।’

এরপর ছাত্রদল নেতা বলেন, ‘আরেকটা কথা মনে রাইখ, দু-এক দিনের মধ্যে আরও একজনকে ফুল টাইম বিছানায় ফালায়ে দিমু। এটা মনে রেখো, দেখবা এবং শুনবাই।’ এ সময় ব্যবসায়ীকে বলতে শোনা যায়, ‘ভাইজান, কালকে আল্লাহ যদি বাঁচায়ে না রাখে, তাহলে তো সমস্যা। আমার এক জায়গায় পিটুনি দিছে। ভাই, কিডনির সাইডে।’ এরপর ছাত্রদল নেতা বলেন, ‘চিকিৎসা করাবাম। ঢাকাত বড় চিকিৎসক আছে। একদম ফ্রি চিকিৎসা করাই দিমু। সমস্যা নাই।’

কথোপকথনের শেষের দিকে ব্যবসায়ীর উদ্দেশে ওই ব্যক্তি বলেন, ‘তাহলে এক. কথা সাক্ষাতে হবে, দুই. কালকে (চাঁদা) রেডি কইরা দিয়া দিবা। এর আগে আওয়ামী লীগের আমলে যা করছ, তা-তো করছই। এখন থেকে বেশি করে করবা। ঠিক আছে না, দুই ভাই...ভরে সবকিছু করমু। তাহলে কালকে ১০টা–১১টার দিকে ফোন দিয়ো। তোমাদের ওখানে সাইট আছে, আমি যামু, ফোন দিয়ো।’ শেষে ছাত্রদল নেতা বলেন, ‘তুমি, আমি, আল্লাহ—তিনজনের বাইরে চারজন যেন এসব না জানে। না হলে কিন্তু একদম কাউন্টার অ্যাটাক হবে।’

জানতে চাইলে উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক নাজমুল ইসলাম খান মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘মাদারগঞ্জে গ্রুপিং রাজনীতি চলে। অডিওটি আমিও শুনেছি। ওই কণ্ঠ আমার না। গ্রুপিংয়ের কারণে ফেসবুকে আমার ছবি ব্যবহার করে পোস্ট দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় আমি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করছি।’

এ বিষয়ে উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসানের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও না ধরায় বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

জেলা ছাত্রদলের সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) মো. মোশারফ সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, ‘অডিওটি আমি কিছুক্ষণ আগেই পেয়েছি। বিষয়টি যাচাই-বাছাই করা হবে। তারপর যদি ওই ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়, তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ