সালমানকে কেন মাটির মানুষ বললেন রাশমিকা
Published: 2nd, February 2025 GMT
ক্যারিয়ারের দারুণ সময় পার করছেন দক্ষিণী অভিনেত্রী রাশমিকা মান্দানা। গেলো বছর ‘অ্যানিম্যাল’ ও ‘পুষ্পা টু’-এর মতো পরপর ব্লকবাস্টার দুই সিনেমা উপহার দিয়ে তার বৃহস্পতি এখন তুঙ্গে। দক্ষিণি এই অভিনেত্রী এখন ব্যস্ত সালমান খানের আগামী সিনেমা ‘সিকান্দার’-এর কাজ নিয়ে।
এ সিনেমার মাধ্যমে প্রথমবারের মতো জুটি হয়েছেন বলিউডের ভাইজানের সঙ্গে। এবার জানা গেলো, সিকান্দারের শুটিং শেষ না হতেই এ জুটির নতুন সিনেমার খবর।
ভারতীয় একাধিক সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ‘জাওয়ান’খ্যাত নির্মাতা অ্যাটলি কুমারের পরবর্তী সিনেমায় সালমানের সঙ্গে থাকবেন রাশমিকা। যদিও বিষয়টি নিয়ে এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো কিছু বলেননি সালমান এবং রাশমিকা।
ভারতীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ‘সিকান্দার’ সিনেমার সেটে সালমান ও রাশমিকার দারুণ রসায়ন তৈরি হয়েছে। শুটিং শুরুর পর থেকেই সালমানের প্রশংসায় মেতেছেন রাশমিকা। জানিয়েছেন, সেটে সালমান খান তাঁর খেয়াল রাখেন। বলিউড ভাইজানকে মাটির মানুষ বলে উল্লেখ করেছেন নায়িকা।
রাশমিকা বলেন, ‘শুটিংয়ের সময়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম; যে মুহূর্তে তিনি এটি জানতে পারলেন, নিয়মিত আমার খোঁজ করতেন। কলাকুশলীদের বলতেন, আমাকে যেন পুষ্টিকর খাবার, গরম পানি দেওয়া হয়।’ ফলে সালমান ও রাশমিকার এ রসায়ন কাজে লাগাতে চান অ্যাটলি।
এ ছাড়া পুষ্পা টু সিনেমায় রাশমিকার অভিনয় সালমান ও অ্যাটলিকে মুগ্ধ করেছে। তাই নির্মাতা সালমানের বিপরীতে রাশমিকাকেই বেছে নিয়েছেন। ইতোমধ্যে রাশমিকার সঙ্গে চুক্তিও সম্পন্ন হয়েছে বলে দাবি করছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো।
তবে এ বিষয়ে এখনও কোনো মন্তব্য করেননি নির্মাতা অ্যাটলি। নাম চূড়ান্ত না হওয়া অ্যাটলির এ সিনেমায় আরও আছেন রজনীকান্ত ও কমল হাসানের মতো বর্ষীয়ান তারকারা। চলতি বছরেই সিনেমার শুটিং শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।
এদিকে সিকান্দারের শুটিংয়ের সময় জিম করতে গিয়ে পায়ে ব্যথা পান রাশমিকা। সেই ব্যথা পা নিয়েই ছুটে বেড়াচ্ছেন মুক্তিপ্রতীক্ষিত ‘ছাভা’ সিনেমার প্রমোশনে। লক্ষ্মণ উতেকর পরিচালিত ছাভা তৈরি হয়েছে মারাঠি সাম্রাজ্যের গল্প নিয়ে। এতে শিবাজি মহারাজের চরিত্রে অভিনয় করছেন ভিকি কৌশল। রাশমিকা করেছেন রানী যশুবাইয়ের চরিত্র। আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাবে সিনেমাটি।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
সমতার পথে এগিয়ে যাওয়ার সময় এখনই
নারী অধিকার, লিঙ্গ সমতা এবং নারীর ক্ষমতায়নের জন্য বৈশ্বিক সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রতিবছর ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে উদযাপিত হয়। ২০২৫ সালে নারী দিবসের প্রতিপাদ্য: ‘অধিকার, সমতা, ক্ষমতায়ন নারী ও কন্যার উন্নয়ন; যা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা ও লিঙ্গ সমতায়নে গৃহীত পদক্ষেপগুলোর গতি বাড়ানো এখন সময়ের দাবি।
বিগত কয়েক দশকে নারী অধিকার ও ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জিত হলেও বিশ্বজুড়ে বৈষম্য ও অসমতা এখনও প্রকট। বিশেষ করে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, কর্মসংস্থান, সম্পদের মালিকানা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে নারীরা এখনও অনেক ক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে। সমকালীন বৈশ্বিক সমতায়নের অগ্রগতির হার যদি এমনই ধীরগতিতে চলতে থাকে তাহলে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের রিপোর্ট অনুযায়ী লিঙ্গ সমতা অর্জনে ১৩১ বছর সময় লাগবে। এত দীর্ঘ সময় আমরা অপেক্ষা করতে পারি না। লিঙ্গবৈষম্য দূর ও নারীর ক্ষমতায়ন প্রতিষ্ঠায় এখনই আমাদের ত্বরান্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
নারীর ক্ষমতায়ন শুধু নৈতিক ও সামাজিক দায়বদ্ধতা নয়, এটি অর্থনৈতিক ও উন্নয়নমূলক প্রয়োজনও বটে। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, যেখানে নারীরা সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে, সেখানে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, দারিদ্র্য নিরসন ও টেকসই উন্নয়নের হার উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচির তথ্যমতে, যদি কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ সমানভাবে নিশ্চিত করা হয় তাহলে বৈশ্বিক জিডিপি ২৬ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। আমরা যদি ২০২৫ সাল নাগাদ বিশ্বব্যাপী সম্পূর্ণ জেন্ডার সমতা আনতে পারি তাহলে বিশ্ব জিডিপি ২৮ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। শুধু জেন্ডার বৈষম্যের কারণে মানব পুঁজি সম্পদের ক্ষতি হতে পারে ১৬০.২ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাস্তবতা হলো, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো দেশে নারীদের এখনও বৈষম্য, সহিংসতা ও সামাজিক প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সমাজের চিন্তাচেতনা, দৃষ্টিভঙ্গি ও মনমানসিকতার পরিবর্তন না হলে নারীর প্রকৃত ক্ষমতায়ন সম্ভব নয়।
নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন যে কোনো দেশ, সমাজ বা পরিবারের প্রবৃদ্ধির প্রধান চালিকাশক্তি। একটি সমাজ তখনই উন্নত হতে পারে যখন নারীরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়। তবে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য সহজ শর্তে ঋণ সুবিধা, প্রযুক্তিগত সহায়তা, দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ এবং নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত না হলে নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অংশগ্রহণ কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় পৌঁছাবে না। বাংলাদেশে তৈরি পোশাক খাতে নারীদের ব্যাপক অংশগ্রহণ রয়েছে, যেখানে প্রায় ৮০ শতাংশ গার্মেন্টস কর্মী নারী। কিন্তু তারা এখনও ন্যায্য মজুরি, মাতৃত্বকালীন সুবিধা এবং কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার অভাবে ভুগছে। তাই নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে আমাদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে অগ্রাধিকার দিতে হবে। প্রথমত, নারীদের জন্য সমান মজুরি ও কর্মক্ষেত্রে বৈষম্য দূর করতে হবে। দ্বিতীয়ত, সহজ শর্তে ঋণ সুবিধা ও উদ্যোক্তা সহায়তার ব্যবস্থা করতে হবে। তৃতীয়ত, নারীদের ডিজিটাল দক্ষতা ও প্রযুক্তি শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। চতুর্থত, কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে কঠোর আইন বাস্তবায়ন করতে হবে। এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা গেলে নারীর অর্থনৈতিক অংশগ্রহণ বাড়বে, যা দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
নারী শিক্ষায় বিনিয়োগ টেকসই উন্নয়নের চাবিকাঠি। শিক্ষা ছাড়া কোনো সমাজই এগোতে পারে না, আর নারী শিক্ষায় বিনিয়োগ মানেই একটি দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে বিনিয়োগ। বাংলাদেশে নারী শিক্ষায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হলেও প্রযুক্তিগত শিক্ষা, কারিগরি দক্ষতা ও উচ্চশিক্ষায় নারীদের অংশগ্রহণ এখনও সীমিত। বিশেষ করে স্টেম (সায়েন্স, টেকনোলজি, ইঞ্জিনিয়ারিং ও ম্যাথমেটিকস) শিক্ষায় নারীর অংশগ্রহণ কম। এই পরিস্থিতির পরিবর্তনে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। প্রথমত, মেয়েদের জন্য স্টেম ও কারিগরি শিক্ষায় প্রবেশ সহজ করতে হবে। দ্বিতীয়ত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে নারীবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করা জরুরি। তৃতীয়ত, বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ এবং মেয়েদের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে উৎসাহিত করতে হবে। চতুর্থত, পরিবার ও সমাজে মেয়েদের উচ্চশিক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। যা বাস্তবায়ন করা গেলে নারীদের শিক্ষা ও কর্মসংস্থানে অংশগ্রহণ বাড়বে, যা দেশের টেকসই উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
নারীর ক্ষমতায়নের পথে সবচেয়ে বড় বাধা লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা। বাংলাদেশেও এ ধরনের সহিংসতা উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা আইন থাকলেও যথাযথ প্রয়োগের অভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় আইনের কঠোর প্রয়োগ, পারিবারিক ও সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি, নারীদের আত্মরক্ষা ও আইনগত প্রশিক্ষণ এবং অপরাধীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনা জরুরি। আইন প্রয়োগ ও সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে নারীর জন্য নিরাপদ সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব, যেখানে তারা নির্ভয়ে এগিয়ে যেতে পারবেন।
নারীদের কর্মসংস্থান বাড়লেও নেতৃত্বের ক্ষেত্রে তারা এখনও পিছিয়ে। বিশ্বব্যাপী মাত্র ১০ শতাংশ কোম্পানির প্রধান নির্বাহী নারী, আর বাংলাদেশে সরাসরি নির্বাচিত নারী সংসদ সদস্যের সংখ্যা কম। নারীদের নেতৃত্বে এগিয়ে আনতে পদোন্নতির সুযোগ নিশ্চিত করা, প্রশিক্ষণ ও মেন্টরশিপ বাড়ানো এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করা জরুরি।
নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা শুধু সরকারের দায়িত্ব নয়; এটি আমাদের সবার দায়িত্ব। ব্যক্তিগত, সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে। পরিবর্তন শুরু করতে হবে পরিবার থেকে– সন্তান লালন-পালনে লিঙ্গবৈষম্য দূর করা, কর্মস্থলে সমান সুযোগ তৈরি করা এবং নিয়োগ, পদোন্নতি ও নেতৃত্বে নারীদের যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া জরুরি। গণমাধ্যম ও সামাজিক প্রচারাভিযানের মাধ্যমে সচেতনতা বাড়াতে হবে। নারীর ক্ষমতায়ন ও লিঙ্গ সমতা একদিনে অর্জনযোগ্য নয়; এটি একটি চলমান আন্দোলন। নারী দিবস আমাদের আহ্বান জানায়– এখনই পদক্ষেপ নেওয়ার সময়। সরকার, প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি পর্যায়ে সক্রিয় হলে লিঙ্গ মসমতা আর স্বপ্ন নয়, বাস্তবে রূপ নেবে। নারীরা এগোলে সমাজ এগোয়; সমাজ এগোলে দেশও এগিয়ে যায়।
মো. রমজান আলী: ন্যাশনাল প্রোগ্রাম অফিসার ফর এডুকেশন, ইউনেস্কো