প্রকৃতি আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এই প্রকৃতির স্নিগ্ধ ছোঁয়া আমাদের হৃদয়কে করে তোলে প্রশান্ত। এর সঙ্গে যদি যুক্ত হয় সুহৃদ পরিবারের প্রীতি, তবে সেই যাত্রা হয়ে ওঠে এক অনন্য আনন্দময় অভিজ্ঞতা। ঠিক তেমনই একটি দিন কাটিয়েছেন বগুড়া সমকাল সুহৃদ সমাবেশের সদস্যরা। আনন্দ, উচ্ছ্বাস, এবং সৌন্দর্যের অনন্য মেলবন্ধনে ভরা এ দিনটি তাদের জীবনে একটি চিরস্মরণীয় স্মৃতি হিসেবে থেকে যাবে।

প্রকৃতির স্নিগ্ধতা ও আমাদের মিলনমেলা
বগুড়া সমকাল সুহৃদ সমাবেশ আয়োজন করে এক দিনের ভ্রমণের। নওগাঁ জেলার সাপাহারের জবই বিলের মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে আয়োজন করা হয়েছিল এই ‘প্রকৃতি ও প্রীতি যাত্রা’। দিনের শুরু থেকেই সদস্যরা একে একে উপস্থিত হতে থাকেন। তাদের উচ্ছল মুখ আর প্রাণবন্ত হাসি যেন প্রকৃতির সঙ্গেই একাত্ম হয়ে গিয়েছিল। 

আয়োজনের উদ্দেশ্য ছিল প্রকৃতির নৈসর্গিক রূপ উপভোগ করা এবং সদস্যদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক আরও দৃঢ় করা। দিনটি কেটেছে বিভিন্ন কার্যক্রম, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ এবং হাসি-আড্ডার মধ্য দিয়ে। সকালের নাশতা থেকে শুরু করে দিনব্যাপী নানা আয়োজন সবার মুখে হাসি ফোটায়।

দিনব্যাপী আয়োজনে যুক্ত হন সুহৃদ উপদেষ্টা সরকারি আজিজুল হক কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মতিউর রহমান, সমকাল উত্তরাঞ্চলীয় প্রতিনিধি লিমন বাসার, সমকাল বগুড়া ব্যুরোপ্রধান এসএম কাওসার এবং হাজী ফিলিং স্টেশন ও হাজী মোটরসের স্বত্বাধিকারী মিজানুর রহমান। এ ছাড়া সুহৃদ সভাপতি আবু মোত্তালেব মানিক, সিনিয়র সহসভাপতি সাজিয়া আফরিন সোমা, সহসভাপতি শেখর রায়, মশিউর রহমান জুয়েল, আব্দুর রহমান ও সিরাজ উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক আসলাম হোসাইন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিজু আহমেদ, সাংগঠনিক সম্পাদক সঞ্জু রায়, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলে রাব্বি, অর্থ সম্পাদক চন্দন কুমার ঘোষ, দপ্তর সম্পাদক মানিক রতন ঘোষ, নারী ও শিশু কল্যাণ সম্পাদক হাবিবা নাসরিন, সহ-নারী ও শিশু কল্যাণ সম্পাদক রাফসানা আক্তার রাখি, কার্যনির্বাহী সদস্য শানেওয়াজ শাওন, নাহিদ ইসলাম, আতিক হাসান, তুহিন ইসলাম, আরমান হোসেন, আসিফ আহমেদ, তুহিন ইসলাম, রিমি, হুমায়রা ও সরকারি আজিজুল হক কলেজ শাখার সদস্য সিরাজুল ইসলাম। 

সভাপতি আবু মোত্তালেব মানিক বলেন, বগুড়া সুহৃদ সমাবেশের সব সদস্য মিলে আমরা একটি পরিবারের মতো। প্রকৃতি ও বন্ধুত্বের এ আয়োজন আমাদের বন্ধনকে আরও দৃঢ় করেছে। এ ধরনের আয়োজন আমাদের নতুনভাবে প্রেরণা দেয় এবং প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা জাগিয়ে তোলে। আমরা চাই এই যাত্রা যেন আমাদের জীবনকে আরও সমৃদ্ধ ও আনন্দময় করে তোলে। 

সারাদিনের কার্যক্রম 
আয়োজনের দিনটি নানা ধরনের মজাদার কার্যক্রমে ভরপুর ছিল। সকালের নাশতা, দলবদ্ধ খেলা, মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক পরিবেশনা এবং প্রকৃতি ঘুরে দেখার মধ্য দিয়ে দিনটি ছিল ভিন্নরকম আনন্দময়। সদস্যদের প্রাণখোলা হাসি আর আড্ডার পরিবেশ আয়োজনটিকে আরও বেশি স্মরণীয় করে তোলে। সুন্দর এই দিনের প্রতিটি মুহূর্ত যেন একটি স্মৃতি হয়ে রয়েছে। আয়োজনে অংশগ্রহণকারীরা প্রকৃতির সৌন্দর্য এবং পারস্পরিক বন্ধুত্বের মধ্য দিয়ে দিনটিকে উপভোগ করেছেন। এই প্রকৃতি ও প্রীতির যাত্রা সবার জন্য হয়ে থাকবে এক অনন্য অভিজ্ঞতা।

 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ভ রমণ র রহম ন ইসল ম সমক ল আনন দ সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

হঠাৎ বাড়ছে হাইডেলবার্গ সিমেন্টে শেয়ারদর, চার দিনে বাড়ল ৬৩ টাকা

দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গত সপ্তাহে মূল্যবৃদ্ধিতে চমক দেখিয়েছে সিমেন্ট খাতের বহুজাতিক কোম্পানি হাইডেলবার্গ সিমেন্ট। মাত্র চার কার্যদিবসে ঢাকার বাজারে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ৬৩ টাকা বা প্রায় ৩০ শতাংশ বেড়েছে। তাতে গত ছয় মাসের মধ্যে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছে। ডিএসইর সাপ্তাহিক বাজার তথ্য পর্যালোচনা করে এ চিত্র পাওয়া গেছে।

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, ঈদের ছুটির আগে সর্বশেষ গত ২৭ মার্চ হাইডেলবার্গ সিমেন্টের শেয়ারের বাজারমূল্য ছিল ২১৪ টাকা। ঈদের ছুটির পর শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় গত রোববার। ওই দিন বাজারে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম সাড়ে তিন টাকা কমেছিল। এর পরের চার দিন মূল্যবৃদ্ধিতে কোম্পানিটি বড় চমক দেখায়। চার দিনেই কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বেড়েছে ৬৩ টাকা। তাতেই সপ্তাহ শেষে ঢাকার বাজারে কোম্পানিটি মূল্যবৃদ্ধির শীর্ষে জায়গা করে নেয়। সপ্তাহ শেষে কোম্পানিটির শেয়ারের বাজারমূল্য বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ২৭৪ টাকায়।

হঠাৎ গত সপ্তাহে কোম্পানিটি মূল্যবৃদ্ধির কারণ জানতে বাজারসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সামনে বছর শেষের লভ্যাংশ ঘোষণা করবে কোম্পানিটি। গত ডিসেম্বরে কোম্পানিটির আর্থিক বছর শেষ হয়েছে। শেয়ারবাজারের নিয়ম অনুযায়ী, বিমা খাতের কোম্পানি ব্যতীত অন্যান্য কোম্পানির ক্ষেত্রে হিসাব বছর শেষ হওয়ার ১২০ দিন বা চার মাসের মধ্যে বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত করে তা পরিচালনা পর্ষদে অনুমোদন করতে হয়। সাধারণত পরিচালনা পর্ষদের যে সভায় বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদন করা হয়, সেই সভা থেকেই বছর শেষে শেয়ারধারীদের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়। এই নিয়ম অনুযায়ী, হাইডেলবার্গ সিমেন্টকে চলতি মাসের মধ্যে ২০২৪ সালের আর্থিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত করে লভ্যাংশের ঘোষণা দিতে হবে। এই ঘোষণা সামনে রেখে কোম্পানিটির শেয়ারের প্রতি হঠাৎ বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেড়ে থাকতে পারে বলে মনে করছেন বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

* চলতি মাসের মধ্যে লভ্যাংশ ঘোষণা করতে হবে কোম্পানিটিকে।
* সিমেন্ট খাতের ৭ কোম্পানির মধ্যে এটিই সর্বোচ্চ দামি শেয়ার।
* ছয় মাসের মধ্যে শেয়ারের দাম সর্বোচ্চ, ২৭৪ টাকা।

নেদারল্যান্ডসভিত্তিক বহুজাতিক কোম্পানি হাইডেলবার্গ স্ক্যান ও রুবি ব্র্যান্ডের সিমেন্ট বাজারজাত করে থাকে। শেয়ারবাজারে সিমেন্ট খাতের কোম্পানিগুলোর মধ্যে এটিই সর্বোচ্চ দামি শেয়ার। ঢাকার শেয়ারবাজারে বর্তমানে দেশি-বিদেশি সাতটি কোম্পানি তালিকাভুক্ত রয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি দেশীয় মালিকানাধীন আর বাকি দুটি বিদেশি বহুজাতিক কোম্পানি। সিমেন্ট খাতের দেশীয় কোম্পানিগুলোর হিসাব বছর গণনা হয় দেশের অর্থবছরের সঙ্গে সংগতি রেখে, অর্থাৎ জুলাই-জুনকেন্দ্রিক। আর বিদেশি কোম্পানিগুলোর হিসাব বছর মূলত ক্যালেন্ডার বছর বা জানুয়ারি-ডিসেম্বরকেন্দ্রিক।

গত বছরের প্রথম ৯ মাসের (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ সময়ে হাইডেলবার্গ সিমেন্ট ৪১ কোটি টাকার মুনাফা করেছে, যা ২০২৩ সালের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১০ কোটি টাকা কম। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর—এই সময়ে কোম্পানিটি মুনাফা করেছিল ৫১ কোটি টাকা। গত বছর কোম্পানিটির মুনাফা কমে যাওয়ার কারণ বিক্রি বা ব্যবসা কমে যাওয়া। গত বছরের প্রথম ৯ মাসে হাইডেলবার্গ সিমেন্ট ১ হাজার ১১৫ কোটি টাকার ব্যবসা করেছে। ২০২৩ সালের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৩৮৬ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটি ব্যবসা কমেছে ২৭১ কোটি টাকার। একদিকে ব্যবসা কমেছে, অন্যদিকে উৎপাদন খরচ বেড়েছে। সেই কারণে মুনাফা কমে গেছে।

কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের প্রথম তিন প্রান্তিক বা ৯ মাসের মধ্যে শেষ ৩ মাস (জুলাই-সেপ্টেম্বর) কোম্পানিটি লোকসান করেছে। ওই প্রান্তিকে কোম্পানিটির লোকসানের পরিমাণ ছিল প্রায় ৮০ লাখ টাকা। এক প্রান্তিকে লোকসানের পরও আগের দুই প্রান্তিকের মুনাফার কারণে এটি শেষ পর্যন্ত মুনাফার ধারাতেই ছিল।

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে কোম্পানিটি শেয়ারধারীদের ২৫ শতাংশ বা শেয়ারপ্রতি আড়াই টাকা নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল। তার আগের বছর এই লভ্যাংশের পরিমাণ ছিল নগদ ১০ শতাংশ। এখন শেয়ারধারীরা অপেক্ষায় আছেন গত বছরের লভ্যাংশের জন্য। যে লভ্যাংশ সামনে রেখে কোম্পানির শেয়ারের হঠাৎ মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছে গত সপ্তাহে।

হাইডেলবার্গ সিমেন্ট ১৯৮৯ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। এটি মাঝারি মূলধনের একটি কোম্পানি। কোম্পানিটির মূলধন ৫৬ কোটি টাকা। গত ডিসেম্বর শেষে এটির শেয়ারের প্রায় ৬১ শতাংশেরই মালিকানায় ছিলেন উদ্যোক্তা-পরিচালকেরা। বাকি ৩৯ শতাংশ শেয়ারের মধ্যে ২৬ শতাংশ রয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে। আর ১৩ শতাংশ শেয়ার রয়েছে ব্যক্তিশ্রেণির সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে।

হাইডেলবার্গ সিমেন্টের শেয়ারধারণ-সংক্রান্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে কোম্পানিটির শেয়ারধারীর সংখ্যা ছিল মোট ১০ হাজার ১৯১ জন। এর মধ্যে ৯ হাজার ৯১৭ জন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী, যাঁদের হাতে কোম্পানিটির ৫ হাজারের কম শেয়ার রয়েছে। এসব বিনিয়োগকারী কোম্পানিটির মোট শেয়ারের প্রায় ৬ শতাংশ ধারণ করেন। আর ৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার শেয়ার ধারণ করেন এমন বিনিয়োগকারী রয়েছেন ২২৬ জন। ৫০ হাজার থেকে ২ লাখ শেয়ার রয়েছে এমন বিনিয়োগকারীর সংখ্যা ৩৮ জন। আর ২ লাখ থেকে ৫ লাখ পর্যন্ত শেয়ার রয়েছে ৮ জন বিনিয়োগকারীর হাতে। ৫ লাখ থেকে ১ কোটি শেয়ার ধারণ করেন এমন বিনিয়োগকারী রয়েছেন ৬ জন। এক কোটির বেশি শেয়ার রয়েছে শুধু কোম্পানিটির উদ্যোক্তাদের হাতে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ