সান্তোসের মাঠ ভিলা বেলমিরো থেকে হাঁটা দূরত্ব আধা কিলোমিটারের মতো ১৪ তলা সমাধি ভবন, সেই একুমেনিকেল মেমোরিয়াল সিমেট্রির প্রথম তলাতেই শান্তিতে চিরঘুমে পেলে। তিনিই বলে গিয়েছিলেন, মৃত্যুর পরও যেন সান্তোসের কাছাকাছি থাকতে পারেন। সান্তোসের কিং পেলে কি এদিন শুনতে পেয়েছিলেন, এক প্রিন্সের প্রত্যাবর্তনে সেখানকার মানুষের হর্ষধ্বনি। অনুভব করতে পেরেছিলেন কি, তাদের আবেগ! দেখতে পেয়েছিলেন কি, সেই যুবরাজকে পরানো তাঁর পছন্দের সেই ১০ নম্বর জার্সিটি?
যখন হাজার বিশেক সমর্থকের সামনে এসে সেই ১০ নম্বর জার্সিটি পরে কান্নায় ভাসছিলেন নেইমার, তখন ওপর থেকে নিশ্চিত তাঁকে আশীর্বাদ করেছিলেন পেলে। আসলে সাও পাওলোর প্রত্যেক ফুটবলারের কাছে সান্তোস একটি আবেগের নাম। গতকাল সেই ক্লাবে ১৫ বছর পর ফিরে এসে নেইমারও ভাসলেন আবেগ ও ভালোবাসার স্রোতে।
‘কিছু সিদ্ধান্ত আছে, যা ফুটবল বা যুক্তির সীমানার বাইরে। কিছু আছে প্রভাব বিস্তারি। স্বীকার করছি, জানুয়ারির শুরুতেও আমি কল্পনা করিনি, সান্তোসে ফিরব বা আল হিলাল ছাড়ব। আমি সেখানে খুশি ছিলাম, আমার পরিবারও খুশি ছিল। তবে এর পর কিছু ব্যাপার ঘটল এবং আমাকে সিদ্ধান্ত নিতে হতো। প্রতিদিনের অনুশীলনে আমি ভালো অনুভব করছিলাম না। তাই সান্তোসে ফেরার প্রস্তাব পেয়ে দ্বিতীয়বার ভাবিনি।’ মাইক হাতে কথাগুলো বলতে বলতেই যেন কৈশোরের সেই দিনগুলোতে ফিরে যান নেইমার।
১১ বছর বয়সে এই ক্লাবে পা রেখেছিলেন। ৬ বছর পর এখান থেকেই পেশাদার ফুটবলে যাত্রা শুরু হয় তাঁর। চার বছরে সান্তোস এফসির হয়ে মোট ২২৫ ম্যাচে ১৩৬ গোল করেন। ২০১১ সালে কোপা লিবের্তাদোরেস চ্যাম্পিয়ন হয়, যা ছিল ৫০ বছরের মধ্যে সেই টুর্নামেন্টে সান্তোসের প্রথম শিরোপা। তার পরই তো ব্রাজিল থেকে বার্সেলোনা, প্যারিস, রিয়াদ হয়ে ফের সান্তোসে আসা।
‘নতুন প্রাণশক্তি নিয়ে ফিরেছি আমি। এখানে পা রাখার পরই মনে হচ্ছে, যেন বয়স আবার ১৭ হয়ে গেছে।’ বছর বত্রিশের নেইমারকে এ সময় সতেরোর কিশোরের মতোই লাগছিল যেন। কখনও গ্যালারির দিকে মাথা ঝুঁকিয়ে, কখনও মাটিতে চুমু খেয়ে, কখনও দুই হাত গোল সেলিব্রেশনের মতো ছড়িয়ে বারবার সান্তোসের দর্শকদের ধন্যবাদ জানাচ্ছিলেন। তাঁর জন্য রাজকীয় সংবর্ধনার আয়োজন করেছিল ক্লাবটি। স্থানীয় শিল্পীদের নিয়ে কনসার্টও আয়োজন করেছিল। আতশবাজি ও আলোর ঝলকানিতে মাঠে প্রবেশ করেন তিনি। দর্শকদের আবদারে ড্রিবলিং দেখানোর পর নেইমার বলতে থাকেন, ‘ম্যাচে এসব নান্দনিক সৌন্দর্য দেখানোর সাহসের ঘাটতি থাকবে না।’
নেইমারকে নিয়ে ‘দ্য প্রিন্স ইজ কামিং ব্যাক’ শিরোনামে একটি ভিডিও পোস্ট করে ক্লাবটি। যেখানে নেইমার বলেন, ‘কিং পেলে, আপনার ইচ্ছা আমার কাছে আদেশের মতো। সিংহাসন এবং মুকুট এখনও আপনার। আপনি চিরন্তন। আপনার এই ১০ নম্বর; পবিত্র এই জার্সিটি গায়ে জড়ানো আমার জন্য সম্মানের।’ ছয় মাসের জন্য সান্তোসের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে তাঁর। এদিন সাও পাওলো থেকে বন্দরনগরী সান্তোসে হেলিকপ্টারে আসেন নেইমার। তাঁকে দেখার জন্য স্টেডিয়ামের বাইরেও হাজারখানেক মানুষ ভিড় করেন, যা দেখে পুরোনো সেই দিনে ফিরে গিয়েছিলেন ব্রাজিলিয়ান সুপারস্টার নেইমার।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
পরিশ্রম করলে সফলতা আসবেই
ছোটবেলা থেকেই চিকিৎসক হয়ে মানুষের সেবা করার ইচ্ছা ছিল সুশোভনের। সন্তানকে ভবিষ্যতে একজন ভালো মানুষ আর সৎ চিকিৎসক হিসেবে দেখার স্বপ্ন বুনতেন বাবা-মাও। স্বপ্নপূরণের প্রাথমিক ধাপ যে স্বপ্নের মতো হবে, তা কখনও কল্পনাতে ছিল না।
সহপাঠীদের তাক লাগিয়ে দিয়ে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস কোর্সে মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় দেশসেরা হয়েছেন খুলনার ছেলে সুশোভন বাছাড়। সবাইকে ছাড়িয়ে ৯০ দশমিক ৭৫ নম্বর পেয়ে প্রথম স্থান অধিকার করেছেন তিনি।
সুশোভনদের গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার আনুলিয়া ইউনিয়নে। থাকেন খুলনা নগরীর বড় বয়রা এলাকায়। তাঁর বাবা সুভাস চন্দ্র বাছাড় খুলনার টিঅ্যান্ডটি আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক। মা বন্দনা সেন একসময় শিক্ষক ছিলেন। ১৪ বছর আগে একমাত্র সন্তানের দেখভালের জন্য চাকরি ছেড়ে দেন। সুভাস চন্দ্র ও বন্দনা সেন দম্পতির একমাত্র সন্তান সুশোভন।
সুশোভন বলেন, কখনও প্রাইভেট ব্যাচ বা বাইরের শিক্ষকদের কাছে পড়িনি। শিক্ষক বাবাই পড়াতেন, বাকিটা মা দেখিয়ে দিতেন। বাবা-মার চেষ্টাতেই স্কুলে-কলেজে প্রতিবছর ভালো ফল করেছেন। তিনি বলেন, আমি কখনও সময় ধরে বা রাত জেগে পড়াশোনা করিনি। পড়ার বাইরে খেলাধুলা করতাম। আমি বই পড়া খুব পছন্দ করি, প্রচুর বই পড়ি।
ভবিষ্যতে এমন একটি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন রয়েছে সুশোভনের সেখানে গরিব-অসহায় মানুষেরা বিনা পয়সায় চিকিৎসা পাবে। নিজের সাফল্যে সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতার পাশপাশি কৃতিত্ব দেন বাবা-মা, বন্ধু ও আত্মীয়স্বজনকে।
ছেলেকে নিয়ে স্বপ্নটা এখন আরও বড় বাবা-মায়ের। চিকিৎসক হয়ে দেশের গবিব অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াবে, এমনটাই প্রত্যাশা তাদের। তার এমন সাফল্যে বাঁধভাঙা আনন্দের জোয়ার বইছে এলাকাতে। মিষ্টিমুখের পাশাপাশি ফুলেল শুভেচ্ছা দেওয়া হয়েছে তাঁকে।
সুশোভনের মা বলেন, শুনে প্রথমে বিশ্বাস করতে পারিনি। পরে আনন্দে কেঁদে ফেলেছি। আমার সন্তান যেন মানুষের ডাক্তার হয়- সেই প্রার্থনা আমাদের। তিনি বলেন, জীবনে কখনও প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়েনি সুশোভন। নিজে পড়া তৈরি করেছে, আমরা সহযোগিতা করেছি।
বাবা সুভাস চন্দ্র বাছাড় বলেন, আমি তাকে বই কিনে দিতে কখনও কার্পণ্য করিনি। তার মা তাকে সব সময় অনুপ্রেরণা দিয়েছে। ছোটবেলা থেকেই ছেলের স্বপ্ন ছিল চিকিৎসক হবে, মানুষের সেবা করবে। বাবা-মা হিসেবে আমরা খুবই গর্বিত।
ভবিষ্যতে মেডিকেল ভর্তিচ্ছুদের উদ্দেশে সুশোভন বলেন, এইচএসসি পরীক্ষার পর সময় নষ্ট করা যাবে না। কোথায় নিজের দুর্বলতা রয়েছে খুঁজে বের করে সেখানে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তাঁর পরামর্শ, মূল বই ফোকাস দিতে হবে। মূল বই শেষ করে কনসেপ্ট ক্লিয়ার করতে হবে। মূল বই শেষ করতে না পারলে যতই কোচিং বা সহায়ক বই পড়া হোক না কেন কোনো কাজে লাগবে না।
২০২২ সালে যশোর বোর্ডের টিঅ্যান্ডটি আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক এবং ২০২৪ সালে সরকারি মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন সুশোভন। দুই পরীক্ষাতেই জিপিএ৫ পেয়েছেন তিনি। এর আগে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস কোর্সে মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় দেশসেরা হয়েছিলেন খুলনার মেয়ে সুমাইয়া মোসলেম মীম।
আগামী দিনের পরীক্ষার্থীদের উদ্দেশে সুশোভন বলেন, বুঝে পড়াশোনা করতে হবে। সবাই ভাবে মুখস্থ করতে হবে। কিন্তু না; যা পড়ছ সেই বিষয়টা পরিষ্কার বুঝতে হবে। মুখস্থ করলে পরদিন ভুলে যেতে পার। কিন্তু বুঝে পড়লে সেটা কাটিয়ে ওঠা যায়। কিছু বিশেষ টপিক, অধ্যায়, ছক থেকে প্রতিবার প্রশ্ন এসে থাকে। সেসব গুরুত্ব সহকারে পড়তে হবে। মনে রাখতে হবে, কেউ মেধাবী হয়ে জন্মায় না। সবার ভেতরেই মেধা সুপ্ত ও ঘুমন্ত থাকে। জীবনের লক্ষ্য স্থির করে নিজের সুপ্ত মেধাকে জাগানোর জন্য সাধনা করতে হবে। স্বপ্ন ছোঁয়ার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে। প্রচুর পড়াশোনা করতে হবে, পরিশ্রম করতে হবে। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। সময়ের কাজ সময়েই করতে হবে। আর পাঠ্যবইয়ের বাইরেও পৃথিবীকে জানতে হবে। তাহলেই সাফল্য মিলবে।
মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা। তাই মূল বই পড়ার কোনো বিকল্প নেই। পরীক্ষার পূর্বমুহূর্তে মডেল টেস্টের মাধ্যমে নিজেকে যাচাই করে নিতে হবে। প্রতিটি বই খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়তে হবে। জীববিজ্ঞানে ভালো করার জন্য একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির পাঠ্যবই ভালো করে পড়া উচিত। রসায়ন বিষয়ও যথেষ্ট আয়ত্তে রাখতে হবে। তাই ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নব্যাংকসহ একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির পাঠ্যবইয়ের অধ্যায়ে দেওয়া প্রশ্নগুলো চর্চা করতে হবে । আগের বছরের প্রশ্নগুলোতে যা এসেছে, সেগুলো তো বারবার পড়বেই, অন্য বিষয়গুলোও পড়তে হবে। v