তদন্ত কমিটির ৪ প্রতিবেদন জমা, জড়িত বিএসইসির কর্মকর্তারা
Published: 2nd, February 2025 GMT
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) গঠিত ‘অনুসন্ধান ও তদন্ত কমিটি’ ১২টি বিষয়ের মধ্যে মাত্র চারটির তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এতে বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান, কমিশনার ও দায়িত্বরত অনেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নাম উঠে এসেছে বলে জানা গেছে।
অনুসন্ধান ও তদন্ত কমিটিকে প্রাথমকিভাবে বেক্সিমকোর সুকুক বন্ডসহ ১২ কোম্পানির বিষয়ে তদন্ত করতে বলা হয়। এজন্য ৬০ দিন সময় দেওয়া হয়েছিল। যে সময়ে কমিটি পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট দিতে ব্যর্থ হয়। এরপরে কয়েক দফায় সময় বাড়ানো হলেও পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট জমা দিতে পারেনি। তবে ওই সময়ের মধ্যে আংশিক রিপোর্ট জমা দিয়েছে কমিটি। এরমধ্যে ৪টি বিষয়ে রিপোর্ট জমা দিয়েছে, যা এখনো প্রকাশ করা হয়নি।
তবে তদন্ত কমিটি নিয়ে গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ বলেছিলেন, “পুঁজিবাজারে আগের বিভিন্ন অনিয়ম, কারসাজি ও দুর্নীতি খুঁজে বের করতে নবগঠিত অনুসন্ধান ও তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে।”
বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, গঠিত অনুসন্ধান ও তদন্ত কমিটি বেক্সিমকো গ্রীন-সুকুক আল ইসতিসনা, আইএফআইসি গ্রানটিড শেরপুর টাউনশিপ গ্রিন জিরো কুপন বন্ড, বেস্ট হোল্ডিংস এবং কোয়েস্ট বিডিসি লিমিটেড (পূর্বে পদ্মা প্রিন্টার্স অ্যান্ড কালার লিমিটেড) নিয়ে তদন্ত রিপোর্ট জমা দিয়েছে।
তদন্ত রিপোর্টে কোম্পানি চারটির অর্থ উত্তোলনের অনুমোদনকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। এতে বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান, সাবেক দুইজন কমিশনার এবং বিএসইসির ক্যাপিটাল রেইজিং বিভাগের কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার বিষয় উঠে এসেছে। এছাড়া, অন্যান্য বিভাগের কিছু নির্বাহী পরিচালকের দুর্নীতির বিষয় তদন্তে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
এদিকে, গঠিত অনুসন্ধান ও তদন্ত কমিটি বিএসইসির দূর্নীতির সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দূর্নীতি দমন মিশনে (দুদক) অধিকতর তদন্তের জন্য পদক্ষেপ নিতে সুপারিশ করেছে। এছাড়া, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নিতেও সুপারিশ করেছে। আর অভিযুক্ত কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে সিকিউরিটিজ আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করেছে পাঁচ সদস্যের পুঁজিবাজার অনুসন্ধান ও তদন্ত কমিটি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, অনুসন্ধান ও কমিটি চারটি রিপোর্ট দাখিল করেছে বেশ আগে। তবে বিএসইসির অনেক কর্মকর্তার দুর্নীতির তথ্য তদন্ত রিপোর্টে উঠে আসায়, বর্তমান কমিশন তা প্রকাশ করতে গড়িমসি করছে। এরইমধ্যে বিএসইসির সাবেক ও বর্তমান নয় জন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পাসপোর্ট বাতিল করা হয়েছে। একইসঙ্গে দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্ত কাজও চলছে।
এ বিষয়ে বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, “পাঁচ মাসের মধ্যেও যদি তদন্ত রিপোর্ট দিতে না পারে, তাহলে এমন কমিটির প্রয়োজনীয়তা দেখছি না। এমন তদন্ত কমিটি করার চাইতে, না করাই ভালো।”
এদিকে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) একজন পরিচালক বলেন, “তদন্ত রিপোর্ট নিয়ে লুকোচুরি করার কিছু নেই। এ কমিশন নিজেদেরকে স্বচ্ছ বলে দাবি করে, তাই তাদের উচিত তদন্ত রিপোর্ট সবার উদ্দেশ্যে প্রকাশ করা।”
গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সুরক্ষা এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে যুক্তরাষ্ট্রের টেরা রিসোর্সেস ইন্টারন্যাশনালের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এবং কনসালটেন্ট ড.
‘অনুসন্ধান ও তদন্ত কমিটি’ যেসব বিষয় খতিয়ে দেখছে-
বেক্সিমকো গ্রিন-সুকুক আল ইসতিসনা ইস্যু সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয়াদি অনুসন্ধান ও তদন্ত।
আইএফআইসি গ্রানটিড শেরপুর টাউনশিপ গ্রিন জিরো কুপন বন্ড ইস্যু সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয়াদি অনুসন্ধান ও তদন্ত।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ পিএলসির (সিএসই) স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার বা কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে বসুন্ধরা গ্রুপের প্রতিষ্ঠান এবিজি লিমিটেডের অনুমোদন বা মনোনয়ন, শেয়ার বরাদ্দকরণ বা শেয়ার অধিগ্রহণ ও মূল্য নির্ধারণ সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয়াদি অনুসন্ধান ও তদন্ত।
বেস্ট হোল্ডিংস লিমিটেড সংক্রান্ত আইপিও অনুমোদন ও ইস্যু সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয়াদি অনুসন্ধান ও তদন্ত।
আল-আমিন কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ সংক্রান্ত পুঁজিবাজারের যাবতীয় অনিয়ম ও কারসাজি, ব্লক মার্কেটে শেয়ার অধিগ্রহণসংক্রান্ত কারসাজি এবং ওটিসি থেকে এসএমই প্ল্যাটফর্মে স্থানান্তরের জন্য বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন থেকে আরোপিত শর্তসমূহ পরিপালনের হালনাগাদ তথ্যাদিসহ যাবতীয় বিষয়ে অনুসন্ধান ও তদন্ত।
সোনালী পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলস লিমিটেড সংক্রান্ত পুঁজিবাজারে যাবতীয় অনিয়ম ও কারসাজি এবং ২০২০ সালে কোম্পানিটিকে ওভার-দ্য-কাউন্টার (ওটিসি) মার্কেট থেকে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান বোর্ডে পুনরায় তালিকাভুক্তকরণ সংক্রান্ত অনিয়ম এবং কোম্পানিটির শেয়ার মূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিবর্গ ও প্রতিষ্ঠানসমূহের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান ও তদন্ত।
ফরচুন সুজ লিমিটেড সংক্রান্ত পুঁজিবাজারের যাবতীয় অনিয়ম ও কারসাজি, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে লভ্যাংশ বিতরণ সংক্রান্ত অনিয়ম এবং কোম্পানিটির শেয়ার মূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের ও প্রতিষ্ঠানসমূহের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান ও তদন্ত।
রিং শাইন টেক্সটাইল লিমিটেডের প্রাইভেট ও পাবলিক অফারের মাধ্যমে মূলধন উত্তোলন ও বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন অতিরঞ্জিত করে বিক্রয় বেশি দেখানো এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে অর্থ স্থানান্তর বা পাচার বিষয়ে অনুসন্ধান ও তদন্ত।
একমি পেস্টিসাইডস লিমিটেড সংক্রান্ত পুঁজিবাজারের যাবতীয় অনিয়ম ও কারসাজি, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে লভ্যাংশ বিতরণ সংক্রান্ত অনিয়ম এবং আইপিও’র মাধ্যমে উত্তোলিত টাকা থেকে ন্যাশনাল ফাইন্যান্সের ঋণ পরিশোধের অনিয়মের বিষয়ে অনুসন্ধান ও তদন্ত।
কোয়েস্ট বিডিসি লিমিটেড (পূর্বে পদ্মা প্রিন্টার্স অ্যান্ড কালারস লিমিটেড) সংক্রান্ত পুঁজিবাজারের যাবতীয় অনিয়ম ও কারসাজির বিষয়ে অনুসন্ধান ও তদন্ত।
কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড সংক্রান্ত পুঁজিবাজারের যাবতীয় অনিয়ম ও কারসাজির বিষয়ে অনুসন্ধান ও তদন্ত।
এমারেল্ড ওয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের শেয়ার অধিগ্রহণ বা হস্তান্তর, মূল্য সংবেদনশীল তথ্য সরবরাহ, সেকেন্ডারি মার্কেটে অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি এবং এ-সংক্রান্ত পুঁজিবাজারের যাবতীয় অনিয়ম ও কারসাজির বিষয়ে অনুসন্ধান ও তদন্ত।
ঢাকা/এনটি/ইভা
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এসইস র স ব ক তদন ত র প র ট কম ট র
এছাড়াও পড়ুন:
বিএসইসি চেয়ারম্যানকে এনটিসির শেয়ারহোল্ডারদের লিগ্যাল নোটিশ
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদকে আইনি নোটিশ (লিগ্যাল নোটিশ) পাঠিয়েছে ন্যাশনাল টি কোম্পানির (এনটিসি) কিছু শেয়ারহোল্ডার। কোম্পানিটিতে নূন্যতম শেয়ার ধারণ না করা সত্ত্বেও একজন পরিচালককে পদে রাখায় তাকে এই নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
বিএসইসি চেয়ারম্যানের পাশাপাশি আইনি নোটিশটি ডিএসই ও সিএসইর এমডি, অর্থ মন্ত্রণালয়ে সচিব, এনটিসির এমডি ও ১০ পরিচালককে এবং জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মসের রেজিস্টারকে দেওয়া হয়েছে।
এই নোটিশটি ন্যাশনাল টি কোম্পানির নেসার উদ্দিন, কোহিনুর আহমেদ, কাজী মুরসালিন উল্লাহসহ ১২ জন শেয়ারহোল্ডারের পক্ষে ব্যারিস্টার ফারাবি সালাউদ্দিন তুসহিব পাঠিয়েছেন।
গত রবিবার (২ ফেব্রুয়ারি) লিগ্যাল নোটিশটি বিএসইসিতে পাঠানো হয়েছে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।
লিগ্যাল নোটিশে বলা হয়েছে, ন্যাশনাল টি কোম্পানি পরিচালকদের দ্বারা পরিচালিত হয়, যা কোম্পানি আইন ও বিএসইসির রুলস অ্যান্ড রেগুলেশনসের ভঙ্গ। এ কোম্পানিটিতে বিএসইসির নির্দেশনা অনুযায়ী একজন পরিচালক ২ শতাংশ করে শেয়ার ধারণ করে না। তারপরেও সে পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। এ অবস্থায় কোম্পানি পরিচালনায় পর্ষদের সিদ্ধান্তকে ক্ষতিকর মনে করা হচ্ছে।
এদিকে কোম্পানির পর্ষদের রাইট শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে লিগ্যাল নোটিশে। যে অর্থ সঠিকভাবে ব্যবহার করা হয়নি। এ বিষয়ে তদন্ত হওয়া জরুরি বলে দাবি করা হয়েছে।
কোম্পানিটিতে পরিচালকদের কোরাম পূরণ ছাড়াই অবৈধভাবে পর্ষদ সভা করে বিশেষ এজেন্ডা পাশ করিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। যেটা পর্ষদের স্বেচ্ছাচারিতা ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
লিগ্যাল নোটিশে আরো বলা হয়েছে, বিএসইসির রেগুলেশনস ও নোটিফিকেশন ভঙ্গের মাধ্যমে কোম্পানি ও শেয়ারহোল্ডারদের বিনিয়োগকে বিপদে ফেলা হয়েছে। অথচ বিএসইসি কোম্পানিটিকে আইন ও প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন (কর্পোরেট গভরনেন্স) অনুযায়ী পরিচালনা করাতে বাধ্য। এ অবস্থায় বিএসইসিকে কোম্পানিটির পুরো পর্ষদের কার্যক্রম তদন্তের পদক্ষেপ নিতে আহবান করা হয়েছে। এছাড়া আইন অনুযায়ি পদক্ষেপ নিতে, বিএসইসিকে একজন পরিচালক নিয়োগ দিতে বা অন্যকোন পদক্ষেপ নিতে এবং পর্ষদের সব সভা বাতিল করার দাবি জানানো হয়েছে।
ঢাকা/এনটি/টিপু