গোপালগঞ্জে স্কুলের দেয়াল উচ্ছেদের প্রতিবাদে ৪ ঘণ্টাব্যাপী সড়ক অবর
Published: 2nd, February 2025 GMT
গোপালগঞ্জে জেলা শহরের প্রধান সড়ক প্রশস্তকরণ কাজে স্কুলের গেট ও দেয়াল ভেঙে ফেলার প্রতিবাদে প্রায় চার ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা। পরে প্রশাসনের আশ্বাসের ভিত্তিতে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়।
শহরের গেটপাড়া এলাকায় স্থাপিত অ্যাডভেন্টিস্ট ইন্টারন্যাশনাল মিশনারিজ স্কুলের রাস্তার পাশের দেয়াল জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় সওজ কর্তৃপক্ষ গতকাল শনিবার সকালে ভেঙে দেয়। জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাসেল মুন্সীর নেতৃত্বে এ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হয়।
এদিকে স্কুলের শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্তৃপক্ষের দাবি, প্রার্থনা চলাকালে কোনো সময় না দিয়ে, তাদেরকে না জানিয়েই দেয়াল ভেঙে ফেলা হয়েছে। এতে নিরাপত্তাহীনতায় পড়েছে শিক্ষার্থীরা।
জানা গেছে, টেকেরহাট থেকে ঘোনাপাড়া পর্যন্ত ৪৪ কিলোমিটার সড়কের প্রশস্তকরণের কাজ চলছে। শনিবার সকালে শহরের গেটপাড়া এলাকার অ্যাডভেন্টিজ ইন্টারন্যাশনাল মিশনারিজ স্কুলের গেট ও রাস্তার পাশের দেয়াল জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাসেল মুন্সীর নেতৃত্বে সড়ক ও জনপদ বিভাগ ভেঙে দেয়। ফলে এর প্রতিবাদে সকাল ১০টার দিকে স্কুলের সামনে সড়কের ওপর বসে অবরোধ করে প্রতিবাদ জানায় শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা। এ সময় ওই সড়ক দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
পরে অ্যাডভেন্টিজ ইন্টারন্যাশনাল মিশনারিজ স্কুলের সাথে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো.
এ ঘটনায় ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক লবনী মারান্ডি বলেন, “উচ্ছেদ অভিযানের কোনো নোটিশ আমরা পাইনি। আমরা অনুরোধ করেছিলাম দেয়ালটি না ভাঙার জন্য। কিন্তু তারা আমাদের কোনো অনুরোধ না শুনেই দেয়ালটি ভেঙে দেয়।”
অ্যাডভেন্টিজ ইন্টারন্যাশনাল মিশনারিজ গীর্জার ফাদার পাস্টার জোব মিন্টু হালদার বলেন, “সকাল ৯টার দিকে হঠাৎ করেই একজন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে স্কুলটির গেট ভেঙে দেয় সড়ক ও জনপদ বিভাগ। এ সময় না ভাঙার অনুরোধ জানিয়ে জেলা প্রশাসকের সাথে কথা বলার জন্য ১ ঘণ্টা সময় চাওয়া হয়। কিন্তু তারা সময় না দিয়েই ভেঙে ফেলে।”
অ্যাডভেন্টিজ ইন্টারন্যাশনাল মিশনারিজের পুরোহিত দানিয়েল ফুলিয়া বলেন, “আমাদের না জানিয়ে দেয়াল ভেঙে ফেলায় শিক্ষার্থীসহ পুরো স্কুলটি অনিরাপদ হয়ে উঠেছে। দেয়াল ভাঙার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে। পরে প্রশাসনে সাথে আলোচনা হয়। সেখানে আমাদের সময় দেওয়া হয়েছে। ফলে শিক্ষার্থীরা অবরোধ তুলে নেয়।”
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক গোলাম কবির বলেন, “শহরের সড়কটি প্রশস্তকরণ করা হচ্ছে। তারই অংশ হিসাবে জমি অধিগ্রহণের জন্য ৮ ধারার নোটিশ দেওয়া হয়েছিলো। সেই নোটিশের প্রেক্ষিতে সড়ক ও জনপথ বিভাগকে যে অংশ বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছিলো সেখান থেকে ভাঙা হচ্ছিলো। তবে তারা মনে করেছিলো অনেক বেশি জায়গা নেওয়া হচ্ছে। পরে বিষয়টি নিয়ে অ্যাডভেন্টিজ ইন্টারন্যাশনাল মিশনারিজ কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা হয়েছে। তারাও রাস্তা সম্প্রসারণ চায়। ইতিমধ্যে ভুল বোঝাবুঝির অবসান হয়েছে।”
ঢাকা/বাদল/ইমন
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র ধ কর অবর ধ শহর র র সড়ক
এছাড়াও পড়ুন:
পাতা খুঁটে মজুরি পান পুরুষের অর্ধেক
ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় সন্তোষপুরের রুক্ষ-বিরান রাবার বাগান। সেই কাঁকডাকা ভোর থেকে সেখানে ঝরেপড়া পাতায় জীবিকা খুঁটতে নেমে এসেছেন একদল নারী। রাবার গাছের ঝরাপাতা খুঁটেই তাদের জোগাড় হয় দুই বেলা আহারের। পঞ্চাশোর্ধ্ব দুই সন্তানের জননী আম্বিয়া খাতুন। ঘরে অসুস্থ স্বামীকে রেখে টাঙ্গাইলের মধুপুরের জিগলবাইদ গ্রাম থেকে রোজ সন্তোষপুর রাবার বাগানে কাজে আসেন সেই ভোরে, কাজ শেষে ফেরেন সন্ধ্যায়। আম্বিয়ার স্বামীর নাম এহসান পাগলা; মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ অবস্থায় পড়ে আছেন ঘরে। জীবনে হাড়ভাঙা খাটুনিতে যেটুকু সঞ্চয় ছিল তা দিয়েই দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। আম্বিয়ার শরীরেও বাসা বেঁধেছে নানা রোগ। দূরের সমান্তরাল ধেয়ে যাওয়া পথটার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন, ‘সুখ আর পাইলাম না জীবনে। বাপ নাই, মা নাই, ঘর নাই, জমি নাই। থাহি পরের জায়গাত। সারাদিন পাতা হুইরা পাই ২৫০; কুনু দিন আবার ৩০০ টেকা। একদিন কাম করলে দুই দিন পারি না। স্বামীডার অসুখ। এই টেকায় সদাই কিনুম, ওষুধ কিনুম নাকি নিজে একটু ভালাবুড়া কিনা খামু কন দেহি?’
রহিমার দুই ছেলে, স্বামী ভেনগাড়ি চালান। একার রোজগারে সংসার চলে না বলেই পাতা কুড়াতে এসেছেন তিনি। এক ছেলে কলেজে পড়েন আরেক ছেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রতি মাসে ছেলেদের লেখাপড়ার খরচ জোগাতেই এই মায়ের হাড়ভাঙা খাটুনি।
আম্বিয়া, রহিমার মতো অন্যরাও কুলুর বলদ হয়ে ঘানি টানছেন সংসারের। তবে দিনশেষে এই মজুরিতে নুন আনতেই পান্তা ফুরায় আম্বিয়াদের। ১ হাজার ৬৫ একরের রাবার বাগানে মৌসুমে অন্তত ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকার কর্মসংস্থান হয় শুকনা পাতা ঝাড়ু দিয়ে; যা গেরস্তরা ব্যবহার করেন আবাদি আনারস, হলুদের ফসলের ঢাক হিসেবে। সন্তোষপুর রাবার বাগানের সুপারভাইজার নাছির উদ্দীন জানান, ‘এই বাগানে প্রচুর শুকনা পাতা ঝরে এই সময়টাতে, পাতা ঝাড়ু দিতে গিয়ে কর্মসংস্থান হয় এই এলাকার কয়েকশ নারীর। আশপাশের গেরস্তরা তাদের দিয়ে পাতা ঝাড়ু দিয়ে টাকা দেন দিনপ্রতি চুক্তি হিসেবে। আমাদের বাগানও পরিষ্কার হয়, তবে তাদের মজুরিটা একেবারেই কম দেন গেরস্তরা।’
১৭ বছরের কিশোরী সেলিনা বিশ্বাস অভাবের তাড়নায় রাজশাহীর প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে স্বামী স্বপনকে নিয়ে কাজের সন্ধানে আসেন ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলায় বুড়ার বাজার এলাকায়। পুরুষের সঙ্গে সমান তালে কাজ করলেও, মজুরি জোটে মাত্র দুই থেকে আড়াইশ টাকা।
সেলিনা বলেন, ‘খুব কম বয়সে বাপমায় বিয়া দিয়া দেয় আমারে, দেশে মেলা অভাব, কাম নাই। তাই জামাইকে সাথে নিয়া এই দেশে আইছি। আইয়াতো দেখি ওমা সারাদিন হলুদ খেতে কাম করাইয়া দেয় মাত্র ২৫০ টেকা। কত আশা আছিলো। পোলাপানগরে লেখাপড়া করামু, ভালো একটা থাকার ঘর বানামু, কিছুই হইলো না।’
ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার এই জনপদের কৃষি অর্থনীতিতে গ্রামীণ নারীদের মজুরি পুরুষের অর্ধেকেরও কম। কলা, আনারস, হলুদ, পাতা ঝাড়ু দেওয়াসহ কৃষিতে মজুরি খেটে জীবন চলে এই উপজেলার নাওগাঁও, রাঙ্গামাটিয়া, কালদহসহ বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের বহু নারীর। সরকারি বিভিন্ন সামাজিক সুরক্ষা থেকেও বঞ্চিত এ জনপদের নারীসমাজ।