‘জেমকন তরুণ কবিতা পুরস্কার-২০১৯’ প্রাপ্ত কবি রফিকুজ্জামান রণি। কবিতা ও গল্প দুই’ই লেখেন তিনি। এখন পর্যন্ত রফিকুজ্জামানের প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৮টি। তার সর্বশেষ প্রকাশিত কবিতার বই ‘না ফেরার ব্যাকরণ’। সম্প্রতি রাইজিংবিডির সঙ্গে কবিতা, গল্প, বইমেলাসহ নানা বিষয়ে কথা বলেছেন রফিকুজ্জামান রণি। সাক্ষাৎকার গ্রহণে স্বরলিপি।


রাইজিংবিডি: ‘না ফেরার ব্যাকরণ’-এ কি ধরনের কবিতা স্থান পেয়েছে?
রফিকুজ্জামান রণি:
‘না ফেরার ব্যাকরণ’ কবিতার বইয়ে বিচিত্র ধারার কবিতা স্থান পেয়েছে। সনেট, সেস্টিনা, কোয়াট্রেন, ম্যাক্সিম, রুবাই, হাইকু, ছন্দোবদ্ধ কবিতা, অণুকাব্য, গদ্যকাব্য, গীতিকাব্য ও দীর্ঘকবিতা। 

রাইজিংবিডি: ‘জেমকন তরুণ কবিতা পুরস্কার-২০১৯’ অর্জনের পর বই প্রকাশ করা কিছুটা সহজ হয়েছে কিনা?
রফিকুজ্জামান রণি:
খুব বেশি সহজ হয়েছে বলা যাবে না। তবে পুরস্কার অর্জনের সুবিধাটুকু অনেক ক্ষেত্রেই পাই। বই প্রকাশের ক্ষেত্রেও কিছুটা পাই।  

আরো পড়ুন:

উপন্যাস লিখবার সময় আমি অন্য যেকোন লেখা থেকে বিরত থাকি: পাপড়ি রহমান

‘বিশ্বের বিভিন্ন অনুবাদ সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনে আমরা পিছিয়ে আছি’

রাইজিংবিডি: প্রকাশনীগুলোর সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন? 
রফিকুজ্জামান রণি:
হাতেগোনা কিছু প্রকাশনী ছাড়া বাকি সবাই বাণিজ্যিক চিন্তা মাথায় নিয়ে প্রকাশনায় নামে। তাই রয়্যালিটি অনেকটা সোনার হরিণে পরিণত হয়েছে। অথচ রয়্যালিটি পাওয়া লেখকদের ন্যায্য অধিকার। দেশের হাজার হাজার লেখক এ অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। মুনাফাভোগী প্রকাশকরা কৌশলে তাদের ঠকাচ্ছে। শুধু তাই নয়, উল্টো লেখকদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে বই প্রকাশ করে নিজেদের ব্যবসা-বাণিজ্য চাঙ্গা করছে তারা। তবে অনুপ্রাণন ও জলধি প্রকাশনের সঙ্গে কাজ করে ভালো অভিজ্ঞতা হয়েছে। লেখকদের প্রতি তাদের আন্তরিকায় মুগ্ধ হয়েছি।

রাইজিংবিডি: কোনো বই শেষ হয়ে গেছে কিন্তু পুনর্মুদ্রণ করা হচ্ছে না এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে?
রফিকুজ্জামান রণি:
না। এমনটি কখনও হয়নি। তবে কখনও কখনও জটিলতা তৈরি হয়েছে।  

রাইজিংবিডি: কবিতা নাকি কথাসাহিত্যে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন? 
রফিকুজ্জামান রণি:
কবিতা এবং কথাসাহিত্য দুটোই আমার কাছে সমান গুরুত্বের। তবে যখন কবিতা নিয়ে কাজ করি তখন কথাসাহিত্যে তুলনামূলকভাবে মনোযোগটা একটু কম দিই। আবার যখন কথাসাহিত্য নিয়ে কাজ করি তখন কবিতায় একটু মনোযোগ দিই কম। কিন্তু চর্চার জায়গা থেকে কোনোটাকেই গুরুত্বহীন ভেবে দূরে সরিয়ে রাখি না।

রাইজিংবিডি: লেখকের বই প্রচার কৌশল কেমন হওয়া উচিত?
রফিকুজ্জামান রণি:
লেখক বই অবশ্যই প্রচার করবে। বইয়ের প্রচার রবীন্দ্রনাথও করেছেন। কিন্তু সেটা যেন ব্যক্তিত্বহীনভাবে না হয়। কোনো ছল- চাতুরীর আশ্রয় নিয়েও প্রচার করা ঠিক না। আমি মনে করি, লেখক তার বই সরল-বিশ্বাসে এবং জড়তাহীনভাবে প্রচার করলে মানুষ সেটা ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করবে।

রাইজিংবিডি: শিশুসাহিত্যও লিখছেন, শিশুসাহিত্যর বিষয়, ভাষাবিন্যাস কেমন হওয়া উচিত বলে মনে করেন?
রফিকুজ্জামান রণি:
হ্যাঁ, শুরু থেকেই শিশুসাহিত্য নিয়ে কাজ করছি। প্রচারে এসেছি দেরিতে। সেটা ইচ্ছে করেই। শিশুদের ভাষা, আচরণ এবং কল্পনার জগত একেবারেই ভিন্ন। ওদের রুচিবোধ এবং চিন্তার পরিধি বুঝে লিখতে হয়। বাক্যবিন্যাস, শব্দ চয়ন এবং উপমা-উৎপ্রেক্ষার ক্ষেত্রে কঠিনতা পরিহার করে আকর্ষণীয়, সহজ-সরল ও সাবলীলভাবে উপস্থাপন করা উচিত। সেই সঙ্গে হতাশা এবং দুঃখ-বেদনার বিষয় উপস্থাপন না করে বিনোদনমূলক সাহিত্য রচনা করা উচিত।

রাইজিংবিডি: অন্য লেখকের কোন বইটি আপনার বেশি প্র্রিয়, কেন?
রফিকুজ্জামান রণি:
কোন বইটি আমার প্রিয় সেটা নির্দিষ্ট করে বলা মুশকিল। কারণ, বয়স, বিষয়, ধরন ও প্রেক্ষাপট বিবেচনায় প্রিয় ও অপ্রিয় তালিকাটা দীর্ঘ হয়। সুতরাং একটা নয়, অসংখ্য বই আমার প্রিয় তালিকায় ঠাঁই পেয়েছে।

ঢাকা/লিপি

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ক জ কর

এছাড়াও পড়ুন:

খেলাপি ঋণ আদায়ে রেকর্ড

বড় ঋণগ্রহীতা বেশির ভাগই পলাতক। কেউ কেউ আছেন জেলে। এর মধ্যেই খেলাপি ঋণ আদায়ে রেকর্ড হয়েছে। গত অক্টোবর-ডিসেম্বরে খেলাপি ঋণের বিপরীতে ব্যাংকগুলো ৯ হাজার ৭৯২ কোটি টাকা আদায় করেছে। এর মধ্যে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর আদায় ৮ হাজার ২৬ কোটি টাকা, যা প্রায় ৮২ শতাংশ। ঋণ পরিশোধ না করেও নিয়মিত দেখানোর সুযোগ বন্ধ; কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোর তদারকি এবং কোনো কোনো ব্যাংক অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে আদায় জোরদার করেছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
ব্যাংকাররা জানান, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে খেলাপি ঋণের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কঠোর নীতি নিয়েছে। ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের কাছে একটা কঠোর বার্তা গেছে– টিকে থাকতে হলে ব্যাংকের টাকা ফেরত দিতে হবে। ঋণ পরিশোধ না করে আর আগের মতো নিয়মিত দেখানো যাবে না। আবার চলতি মূলধন ঋণে সীমা বাড়িয়ে নিয়মিত দেখানোর পথও বন্ধ। চাইলেই আদালত থেকে খেলাপি ঋণের ওপর স্থগিতাদেশ মিলছে না। দুর্বল ব্যাংকগুলো নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার লড়াইয়ে রয়েছে। ব্যাংক না টিকলে চাকরি বাঁচবে না– এমন চাপও আছে। এসব কারণে খেলাপিদের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন ব্যাংকাররা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের শেষ তিন মাসে খেলাপি ঋণের বিপরীতে মোট ৯ হাজার ৭৯২ কোটি টাকা আদায় হয়েছে। এর আগে কোনো এক প্রান্তিকে সর্বোচ্চ আদায়ের পরিমাণ ছিল ৭ হাজার ৯৬০ কোটি টাকা। ২০২৩ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বরে এই আদায় হয়েছিল। ২০২২ সালের শেষ তিন মাসে আদায় হয় ৫ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা। আর ২০২১ সালে মাত্র ২ হাজার ৬৭২ কোটি এবং ২০২০ সালে ছিল ২ হাজার ৩০৬ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে ২০২৪ সালে খেলাপিদের থেকে আদায় হয়েছে ২৪ হাজার ৯১ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান সমকালকে বলেন, খেলাপি ঋণের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কঠোর তদারকি করছে। যে ঋণের যা শ্রেণিমান, ব্যাংকগুলোকে তা-ই দেখাতে হচ্ছে। আবার অনেক ব্যাংক নিজের অস্বিত্বের স্বার্থে আদায় জোরদার করছে। অবশ্য কেউ খেলাপি ঋণ পুনঃতপশিল করতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সহায়তা করবে। এ ক্ষেত্রে নির্ধারিত ডাউন পেমেন্ট দিয়ে সব নিয়ম মেনে আসতে হচ্ছে। একদিকে কঠোরতা, আরেকদিকে নিজেদের অস্বিস্তের স্বার্থে ঋণ আদায় জোরদার করেছে ব্যাংক।

বিগত সরকারের সময়ে ঋণ আদায়ের চেয়ে নানা কৌশলে খেলাপি ঋণ কম দেখানোর উপায় বের করা হতো। মূলত ব্যবসায়ীদের খুশি করতে ২০১৪ সালের ‘রাতের ভোট’-এর আগের বছর থেকে ব্যাপকভাবে এ সংস্কৃতি শুরু হয়। কখনও নামমাত্র ডাউন পেমেন্ট দিয়ে ঋণ পুনঃতপশিল, কখনও ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে বিশেষ ব্যবস্থায় ১২ বছরের জন্য ঋণ নবায়ন কিংবা পুনর্গঠনের সুযোগ দেওয়া হয়। এসব ছাপিয়ে করোনার পর ২০২০ সাল থেকে কিস্তি ফেরত না দিয়েও নিয়মিত দেখানোর পথ বাতলে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর এখন আর আগের মতো যেনতেন উপায়ে নিয়মিত দেখানোর সুযোগ মিলছে না। লুকানো খেলাপি ঋণের আসল চিত্র সামনে আসতে শুরু করেছে। যে কারণে খেলাপি ঋণ দ্রুত বাড়ছে। গত ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ ঠেকেছে তিন লাখ ৪৫ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকায়, যা মোট ঋণের ২০ দশমিক ২০ শতাংশ। এক বছর আগের তুলনায় বেড়েছে ২ লাখ ১৩১ কোটি টাকা। আর কেবল শেষ তিন মাসে বেড়েছে ৬০ হাজার ৭৮৮ কোটি টাকা।
বেসরকারি একটি ব্যাংকের ঋণ আদায়সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, ২১ বছর তাঁর ব্যাংকিং ক্যারিয়ার। এর আগে কখনও ঋণ আদায়ে এত চাপ তৈরি হয়নি। ব্যাংকারদের মধ্যে একটা কঠোর বার্তা গেছে– ঋণ আদায় করতে না পারলে চাকরি থাকবে না। বিশেষ করে দুর্বল ব্যাংকগুলোতে এই চাপ বেশি। এ ছাড়া ব্যাংকগুলোর বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত হয় বছরের শেষ প্রান্তিকের পরিস্থিতির ভিত্তিতে। সে অনুপাতে ব্যাংকগুলো লভ্যাংশ, কর্মীদের ইনসেনটিভ বোনাসসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকে। এবার প্রকৃত আদায় ছাড়া কোনো ব্যাংক খেলাপি ঋণ নিয়মিত করতে পারছে না। আবার কারও প্রভিশন ঘাটতি রেখে লভ্যাংশ দিতে পারবে না। এসব কারণে ঋণ আদায় বেড়েছে। ঋণগ্রহীতা বড় অংশই পলাতক না থাকলে আরও অনেক বেশি আদায় হতো বলে তিনি জানান।
আব্দুর রউফ তালুকদার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে যোগদানের এক সপ্তাহের মাথায় ২০২২ সালের ১৮ জুলাই ব্যাপক শিথিল করে ঋণ পুনঃতপশিলের একটি নীতিমালা করা হয়। ওই নীতিমালার পর আগের সব রেকর্ড ভেঙে শুধু ২০২২ ও ২০২৩ সালে পুনঃতপশিল হয় ১ লাখ ৫৪ হাজার ৯৪১ কোটি টাকার ঋণ। আর ২০২৩ সাল পর্যন্ত ৫ বছরে পুনঃতপশিল করা হয়েছে আড়াই লাখ কোটি টাকার বেশি ঋণ। এভাবে লুকিয়ে রাখা ঋণই এখন আবার খেলাপি হচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বয়স তাঁর কাছে সংখ্যামাত্র
  • চীনের ওপর আরও ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ যুক্তরাষ্ট্রের
  • সারাজীবনের সম্বল ১০ মিনিটে পুড়ে শেষ
  • খেলাপি ঋণ আদায়ে রেকর্ড
  • ভূমি ভাবতেই পারেননি তার জীবনে এমন সুযোগ কখনও আসবে