মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির মহাসচিব। অন্তর্বর্তী সরকার, সংস্কার, নির্বাচন বিতর্কসহ সমসাময়িক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেছেন সমকালের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সমকালের সহকারী সম্পাদক এহ্‌সান মাহমুদ 

সমকাল : বিএনপি রাষ্ট্রক্ষমতার বাইরে আসার পর প্রায় ১৮ বছর কেটে গেল। এর মধ্যে ১/১১ সরকার এবং আওয়ামী লীগ সরকার ছিল। দীর্ঘ সময় পর বিএনপিতে বর্তমানে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে বলে মনে হচ্ছে.

..

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর : নিঃসন্দেহে একটা বড় স্বস্তি হচ্ছে, শেখ হাসিনা নেই। সাম্প্রতিক সময়ের একজন বড় ফ্যাসিস্ট চলে গেল। একই সঙ্গে তাঁর সাঙ্গোপাঙ্গ ও দোসররা পালিয়ে গেল। মানুষের দম ফেলার, নিঃশ্বাস নেওয়ার একটি সুযোগ তৈরি হয়েছে। এটা শুধু বিএনপির নয়, দেশবাসীর জন্যও স্বস্তির। 

সমকাল : অন্তর্বর্তী সরকারের ছয় মাস হয়ে যাচ্ছে। এই সরকারের সফলতা বা ব্যর্থতা হিসেবে কোনগুলো চিহ্নিত করবেন? 

মির্জা ফখরুল : মোটাদাগে এই সরকারের সফলতা কয়েকটি আছে। আমি বলব, বেশ কিছু সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি কমিশন তাদের রিপোর্ট জমা দিয়েছে। এই ছাত্র-জনতার যে অভ্যুত্থান হয়ে গেল, এটাকে যতটুকু সম্ভব মর্যাদা দিয়ে তারা কাজ করছেন। আর্থিক ক্ষেত্রে বেশ কিছু সাফল্য এরই মধ্যে এসেছে। একটা নিয়মের মধ্য দিয়েই আর্থিক খাতটি এখন চলছে। তবে তাদের ব্যর্থতা আছে কয়েকটি জায়গায়। বড় ধরনের ব্যর্থতা বলতে পারব এগুলোকে। 
প্রথমত, এই সরকারের যে মিশন, সেটি তারা জনসাধারণের মাঝে হাজির করতে পারেনি। অর্থাৎ তারা কী করতে চায়, এটা এখনও পরিষ্কার নয়। মানুষের যে আকাঙ্ক্ষা, মানুষ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে নিজেদের প্রত্যাশা পূরণে এগিয়ে যেতে পারবে এই লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশনের যে কাজ, রোডম্যাপ ঘোষণা করা– এটা তারা এখনও করতে পারেনি।

দ্বিতীয়ত, আমার কাছে যেটা মনে হচ্ছে– প্রশাসনিক ক্ষেত্রে তাদের ব্যর্থতা সবচেয়ে বেশি। শেখ হাসিনার আমলে সচিবালয়ে যারা ছিল, তারা এখনও অনেকেই আগের অবস্থানে বহাল আছে। এটা আমার কাছে তাদের একটা ব্যর্থতা মনে হয়েছে। ফ্যাসিস্টের যারা দোসর, তারা এখনও বহাল তবিয়তে আছে। 
তৃতীয়ত, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম জনসাধারণের নাগালে রাখার জন্য কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ তারা নিতে পারেনি। এ জন্য মানুষ অনেক দুর্ভোগের মধ্যে আছে। 

সমকাল : আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দিক থেকে কতটুকু এগোল?

মির্জা ফখরুল : বিগত ফ্যাসিস্ট আমলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, বিশেষ করে পুলিশ বাহিনীতে যে অনিয়ম তৈরি হয়েছিল, তার ফলে ৫ আগস্টের পর এটি সম্পূর্ণরূপে ভেঙে পড়েছিল। তবুও এই সরকার চেষ্টা করছে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে। এটি খুবই কষ্টসাধ্য একটি বিষয়। বাহিনীর নিচের দিকে যারা রয়েছেন, তারা সেভাবে কাজ করতে পারছেন না, কারণ তাদের মধ্যে আগের অনিয়মের ফলে সৃষ্টি হওয়া ভীতি কাজ করছে। আবার পুলিশের মধ্যে যারা আওয়ামী লীগের দোসর ছিল, যারা সরাসরি হত্যার সঙ্গে জড়িত, হত্যার নির্দেশদাতা তাদের অনেককেই এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়নি। পুলিশ বাহিনীর কাজ হচ্ছে দ্রুত অপরাধীদের চিহ্নিত করা, অপসারণ করা এবং অবশ্যই যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ায় বিচারের মুখোমুখি করা।  

সমকাল : অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের শুরু থেকেই আপনারা বলে আসছিলেন, এই সরকারকে আপনারা সহায়তা করতে চান। ছয় মাস পরও কি আগের অবস্থানেই আছেন? 

মির্জা ফখরুল : অবশ্যই। আমরা এখনও এই সরকারকে সহযোগিতা করছি, সহযোগিতা করতে চাই। কারণ, আমরা আগেও বলেছি– এই সরকার ব্যর্থ হওয়া মানে গণঅভ্যুত্থান ব্যর্থ হয়ে যাওয়া। 

সমকাল : নির্বাচন বনাম সংস্কার– বিতর্ক কেন সামনে এসেছে বলে মনে করেন?

মির্জা ফখরুল : আমার কাছে যেটা মনে হয়েছে এটা একটা অহেতুক বিতর্ক। কারণ, এটার কোনো প্রয়োজন নেই। আমরা তো বলেছি– সংস্কার এবং নির্বাচনের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই। আমাদের দল ২০১৬ সালে প্রথম রাষ্ট্র সংস্কারের রূপরেখা দিয়েছিল। এর পর ২০২২ সালে ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। ক্ষমতার ভারসাম্য, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট সেগুলোই এখন আলোচিত হচ্ছে। এখন সংস্কার এবং নির্বাচন নিয়ে যে বিতর্কটা– সেটা নিয়ে যদি বলি, নির্বাচনের জন্য যেটা দরকার, সেই নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। পাশাপাশি সংস্কার যেটা দরকার সেটাও এগিয়ে যেতে পারে। তাই নির্বাচন এবং সংস্কার নিয়ে যে বিতর্ক অযথাই তৈরি করা হয়েছে। 

সমকাল : নির্বাচনের সময় নিয়ে আপনাদের দলের অবস্থান কী? ঠিক কোন সময়ে আপনারা নির্বাচন চাইছেন? 

মির্জা ফখরুল : আমরা আগেও বলেছি, আবারও পরিষ্কারভাবে বলতে চাই– চলতি বছরে, অর্থাৎ ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন চাই। 

সমকাল : বিভিন্ন সময়ে আপনি ছাড়াও আপনাদের দলের কেউ কেউ জুলাই-আগস্টে নির্বাচনের কথা বলছেন...

মির্জা ফখরুল : সেটা আমরা বলেছি যত দ্রুত নির্বাচন সম্ভব সেটা বুঝাতে। কারণ, নির্বাচন যত দ্রুত হবে, তা দেশের মানুষের জন্য মঙ্গল। দেশের জন্যও মঙ্গল। নির্বাচন যত দেরি হবে, দেশে অশান্তি তত বাড়বে। বিভেদ তত বাড়বে। আমরা দেখতে পাচ্ছি– গণঅভ্যুত্থানের পর শুরুর দিকে যেমন ছিল, এখন কিন্তু তা নেই। দিন দিন বিভক্তি বাড়ছে। 

সমকাল : কিন্তু অভিযোগ শোনা যাচ্ছে– বিএনপি নির্বাচন দিয়ে দ্রুত রাষ্ট্র ক্ষমতায় যেতে চাইছে... 

মির্জা ফখরুল : ক্ষমতায় যাওয়ার জন্যই তো আমরা রাজনীতি করি। রাজনৈতিক দলগুলো রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়ার জন্যই রাজনীতি করে। আমরা যদি নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় যাই, তাহলে আমাদের যে লক্ষ্যগুলো আছে, রাষ্ট্র সংস্কারের যে ৩১ দফা প্রস্তাব আছে, তা পূরণ করতে পারব। তাই নির্বাচন চাওয়া মানে বিএনপির ক্ষমতায় যাওয়া নয়। নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দেশকে স্থিতিশীলতার দিকে নিয়ে যেতে পারব। দেশকে গণতান্ত্রিক যাত্রায় এগিয়ে নিতে পারব। সেজন্যই আমরা নির্বাচন চাইছি। আমরা চাইছি লাইনে তুলে দিতে, যাতে দেশ সঠিকভাবে চলতে পারে।  

সমকাল : নির্বাচনে জয়ী হলে বিএনপি জাতীয় সরকার গঠন করবে– এমনটি বলা হয়েছে। কিন্তু গণঅভ্যুত্থানের পরে জাতীয় সরকারের একটি আলোচনা ছিল। কেউ কেউ অভিযোগ তুলে বলছেন, বিএনপি চায়নি বলেই জাতীয় সরকার হয়নি। নির্বাচনের আগেই জাতীয় সরকার গঠিত হলে নির্বাচন পিছিয়ে যেতে পারে– এমন ধারণা থেকে বিএনপি তখন জাতীয় সরকারে সম্মত হয়নি। এ বিষয়ে আপনার মতামত কী?

মির্জা ফখরুল : প্রথম কথা হচ্ছে– এটা পুরোনো আলাপ। আর এটা পুরোপুরি সত্যও নয়। আমরা বরাবরই যেটা মনে করে এসেছি, সেই সময়ে জাতীয় সরকার হলে তাহলে আরেকটি নির্বাচন হতো না। তাহলে হয়তো আরেকটি পাল্টা ক্যু (অভ্যুত্থান) হয়ে যেত। কারণ বাংলাদেশের মানুষ এখনই একটি বিষয় নিয়ে একমত হতে পারেন না। তখন জাতীয় সরকার হলে তো প্রতিদিনই একেকটি বিষয় নিয়ে বিতর্ক তৈরি হতো। আমরা যেটা চাইছি, একটি নির্বাচিত জাতীয় সরকার।

সমকাল : গণঅভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি শোনা যাচ্ছে বিভিন্ন মহলে। বিএনপি কেন আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে চাইছে না?

মির্জা ফখরুল : বিএনপি আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে সম্মত হচ্ছে না বা নিষিদ্ধ চায় না– কথাটি সত্য নয়। আমরা বলছি, জনগণ সিদ্ধান্ত নেবেন। বিএনপি চাইল আর আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হয়ে গেল, এটা তো ঠিক নয়। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হবে কিনা, এই সিদ্ধান্ত জনগণকে নিতে হবে। গোটা রাষ্ট্র মিলে এই সিদ্ধান্তটি নিতে হবে। পার্লামেন্টে বসে সিদ্ধান্ত নিলে সেটা সবচেয়ে ভালো হয়। আমরা বলেছি, একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে আরেকটি রাজনৈতিক দলকে আমরা নিষিদ্ধ করতে পারি না। যেমন– জামায়াতে ইসলামীকে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করেছিল। তখন আমরা এর প্রতিবাদ করেছিলাম। তাই আমরা যেটা বলেছি, একটি রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করতে হলে পার্লামেন্টে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে জনগণের হাত দিয়ে সম্মিলিতভাবে তা করা উচিত। 

সমকাল : গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে সামনে আসা সম্ভাব্য নতুন রাজনৈতিক নেতৃত্ব আমরা দেখতে পাচ্ছি। নতুন রাজনৈতিক দলের কথাও আলোচিত হচ্ছে। বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন? 

মির্জা ফখরুল : যে কোনো গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক শক্তিকে আমরা স্বাগত জানাতে চাই।

সমকাল : জুলাই-আগস্টের ঘটনাকে আপনারা বলছেন ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান। ছাত্ররা এবং অন্য কেউ কেউ ‘বিপ্লব’ হিসেবে চিহ্নিত করতে চাইছেন। ‘বিপ্লব’ এবং ‘গণঅভ্যুত্থান’ নিয়ে আপনাদের অবস্থান কী? 

মির্জা ফখরুল : এটা অবশ্যই একটা ‘গণঅভ্যুত্থান’ হয়েছে। ‘বিপ্লব’ নয়। ‘বিল্পব’ হলে তার একটি বিপ্লবী বাহিনী থাকবে। কর্মসূচি থাকবে। এখানে তার কিছুই নেই। এখানে যেটা হয়েছে মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিয়েছে। একটা গণবিস্ফোরণ হয়েছে। গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিস্ট শক্তি ক্ষমতাচ্যুত হয়েছে। 

সমকাল : ৫ আগস্টের পর ছাত্রদের কিছু উদ্যোগের সঙ্গে বিএনপির বিরোধ দেখা গেল। সর্বশেষ ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ নিয়েও বিরোধ চলছে। কেন এমন হচ্ছে? 

মির্জা ফখরুল : বিএনপির জুনিয়র নেতাকর্মীর ব্যক্তিগত বক্তব্য কিংবা সোশ্যাল মিডিয়ায় বিএনপির সমর্থকদের কথাকে বিএনপির দলগত বক্তব্য হিসেবে নেওয়া যাবে না। বিএনপি একটি বিশাল জনসম্পৃক্ত দল। এর সিদ্ধান্ত কেন্দ্র থেকেই আসে।
একটা কথা বলতে চাই, ছাত্রদের সঙ্গে বিএনপির কোনো বিরোধ নেই। ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ নিয়ে আমাদের কোনো বিরোধ নেই। আমরা বিরোধিতা করেছিলাম সেকেন্ড রিপাবলিকের বিষয়ে। ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ নিয়ে আমরা কাজ করছি। সেটা নিয়ে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আমরা আলোচনা করছি। 

সমকাল : একাত্তর ও চব্বিশকে মুখোমুখি দাঁড় করানোর মতো পাল্টাপাল্টি বক্তব্য আমরা দেখেছি ... 

মির্জা ফখরুল : একাত্তর ও চব্বিশকে দুঃখজনকভাবে মুখোমুখি দাঁড় করানো হয়েছে। একাত্তরে যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকে মেনে নিতে পারেনি, তাদের মধ্যে এই চেষ্টাটা থাকতে পারে। সেটা আমি জানি না। কিন্তু আমি মনে করি, ১৯৭১ ও ২০২৪ এক নয়। একাত্তর ছিল একটি দেশ পাওয়ার লড়াই। লাখো মানুষের জীবন, কোটি মানুষের শরণার্থী হওয়ার সংগ্রাম ও ত্যাগের মধ্য দিয়ে আমরা বাংলাদেশ পেয়েছি, স্বাধীনতা অর্জন করেছি। আর চব্বিশ হচ্ছে একটি ফ্যাসিস্ট সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াই। 

সমকাল : রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপ বা সাক্ষাৎ সাধারণত নির্বাচনের রোডম্যাপের পর দেখা যায়। সম্প্রতি তেমন ঘটনা দেখা যাচ্ছে। বিএনপি ইসলামী দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসল। এটা কি জামায়াতে ইসলামীর বাইরে ইসলামী দলগুলোকে নিজের দিকে টেনে রাখার কৌশল? 

মির্জা ফখরুল :  বিগত পনেরো বছরে আমরা কি ইসলামী দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসিনি? বাম দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসিনি? এবারের বসা আগের বসারই ধারাবাহিকতা।

সমকাল : নতুন যে রাজনৈতিক দলের কথা আলোচনা হচ্ছে, তাদের পক্ষ থেকেও ইসলামী দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা ও বৈঠকের খবর জানা যাচ্ছে ...

মির্জা ফখরুল : আমাদের এটা চলমান প্রক্রিয়া। আমরা একটা ন্যাশনাল ইউনিটির কথা বলছি। সে জন্যই আলাপ-আলোচনা করছি। আগেও করেছি। 

সমকাল : সম্প্রতি দেশের কয়েকটি জায়গায় ‘তৌহিদী জনতা’র ব্যানারে কিছু ঘটনা ঘটেছে। নারীদের ফুটবল খেলার মাঠে হামলা, অভিনেত্রীদের শোরুম উদ্বোধন করার কাজে বাধা দেওয়া হয়েছে। এটাকে কীভাবে দেখছেন?

মির্জা ফখরুল : প্রথমত, এটা হচ্ছে ধর্মান্ধতা। দ্বিতীয়ত, এক ধরনের ষড়যন্ত্র। বাংলাদেশে মৌলবাদের উত্থান হচ্ছে, ইসলামী জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিচ্ছে– এধরনের প্রচারকে প্রমাণ করার জন্য এসব করা হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ ধর্মভীরু, ধর্মান্ধ নয়। আমরা স্পষ্টভাষায় বলতে চাই, বাংলাদেশে কোনো ধরনের ধর্মান্ধতাকে আমরা প্রশ্রয় দেব না। এসব যারা করছেন, তারা বাংলাদেশের পক্ষের শক্তি নয়।

সমকাল : আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হয়ে পালিয়ে যাওয়ার পর দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিএনপি নেতাকর্মীর নামে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। অভিযোগ আমলে নিয়ে অনেক নেতাকর্মীকে বহিষ্কারও করা হয়েছে দলের পক্ষ থেকে ...

মির্জা ফখরুল : কী অভিযোগ– চাঁদাবাজি? দখলবাজি? এসব আমরাও শুনছি। 

সমকাল :  নেতাকর্মীরা কি বেপরোয়া হয়ে উঠছেন মনে করেন? নেতাকর্মীকে নিয়ন্ত্রণে রাখতেই দ্রুত নির্বাচনের দাবি করছেন?

মির্জা ফখরুল : এটার জন্য নির্বাচন চাইছি না। আমাদের নির্বাচন চাওয়ার কারণ হচ্ছে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক আদর্শের কারণে। বাংলাদেশে যত দ্রুত নির্বাচন হবে, তত অনেক সমস্যার সমাধান হবে। নির্বাচিত সরকার ছাড়া অন্য কোনো সরকারের পক্ষেই সবকিছু নিয়ন্ত্রণে এনে সরকার কিংবা রাষ্ট্র পরিচালনা করা সম্ভব নয়। 
দখল-চাঁদাবাজির ঘটনা যাতে না ঘটে আমাদের পার্টির পক্ষ থেকে সেসব বিষয়ে কঠোরভাবে বলা আছে। পাশাপশি কিছু আছে অতিরঞ্জন। আবার প্রচারমাধ্যমে এখনও যেভাবে ফ্যাসিবাদের ভূত বসে আছে, তা সবাই জানেন। এ ছাড়া মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে দেওয়ার মতো ঘটনাও অহরহ ঘটছে। তবে যেটা শেষ কথা, আমরা নির্বাচনটি চাইছি দেশকে শান্তিপূর্ণ অবস্থায় নিয়ে যেতে। জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে। 

সমকাল : আওয়ামী লীগের আমলে দেশ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা পাচারের তথ্য জানা যাচ্ছে। আবার ঋণখেলাপির সংখ্যাও অতীতের রেকর্ড ভেঙেছে। আপনি সম্প্রতি বলেছেন, বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পেতে প্রার্থীদের ক্ষেত্রে এই বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। ঋণখেলাপিদের আপনারা দলীয় মনোনয়ন দেবেন না। এটা শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে? 

মির্জা ফখরুল : আমরা কোনো অবস্থাতেই এ ধরনের লোকদের বিবেচনায় রাখব না। এটা আমাদের দলীয় সিদ্ধান্ত।

সমকাল : বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ককে কীভাবে মূল্যায়ন করেন?

মির্জা ফখরুল : বাংলাদেশের তিন দিকে ভারত। ৫৪টি অভিন্ন নদী ভারত থেকে বাংলাদেশে এসেছে। এগুলো তো বড় ধরনের বিষয়। সীমান্তে উত্তেজনা হচ্ছে, গোলাগুলি হচ্ছে, মানুষ মারা যাচ্ছে। এটাকে একেবারে শূন্যে নামিয়ে আনা, সীমান্ত হত্যা একেবারেই বন্ধ করা, পানির ন্যায্য হিস্যা পাওয়া, ব্যবসা-বাণিজ্যে অংশগ্রহণমূলক সহযোগিতা– এসবের বাস্তব ভিত্তি দেখতে হবে। পারস্পরিক মর্যাদা ও সম্মানের ভিত্তিতে সবকিছু হতে হবে। 

সমকাল : সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। 

মির্জা ফখরুল : সমকালের জন্যও শুভকামনা।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ম র জ ফখর ল ইসল ম আলমগ র গণঅভ য ত থ ন র ন ষ দ ধ করত জ ত য় সরক র ক ষমত চ য ত ন ষ দ ধ কর দলগ ল র স ক ষমত য় য র অবস থ ন ন ত কর ম ব এনপ র সরক র র র জন য যত দ র দ র দল ধরন র সমক ল ইসল ম ফখর ল আপন র র একট আগস ট আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

ভোটেই ড্যাবের নতুন কমিটি, আলোচনায় ১ ডজনের বেশি প্রার্থী

বিএনপিপন্থি পেশাজীবী সংগঠনগুলোর অন্যতম চিকিৎসকদের নিয়ে গঠিত ‘ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)’। চলতি মাসেই সম্মেলনের মাধ্যমে ড্যাবের নতুন কমিটি গঠন করতে চায় বিএনপি। সেই লক্ষ্যে ৩ সদস্যের নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ ভোটে নেতৃত্ব নির্বাচনকে প্রাধান্য দিচ্ছে বিএনপির হাইকমান্ড।

নির্বাচন কমিশনের প্রধান বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বিজন কান্তি সরকার জানান, তারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই ড্যাবের কাউন্সিল করবেন এবং সম্মেলনের মাধ্যমে একটি সুন্দর কমিটি উপহার দেবেন। 

এবার ড্যাবের সম্মেলনে ১৪ জন সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম আলোচনায়। যাদের অধিকাংশই কাউন্সিলরদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়েছেন। তারা নিয়মিত কথা বলার চেষ্টা করছেন এবং বিগত দিনের আন্দোলন-সংগ্রামে নিজেদের ভূমিকা সম্পর্কে অবহিত করছেন। অবশ্য এসব ব্যক্তিদের মধ্য থেকে প্যানেল ঘোষণা করা হতে পারে। 

কয়েকজন কাউন্সিলর বলেন, যারা বিগত দিনে রাজপথে এবং কর্মসূচিতে সক্রিয় ছিলেন তাদেরকেই তারা মূল্যায়ন করবেন।

২০১৯ সালের ২৪ মে কাউন্সিলরদের সরাসরি ভোটে অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশীদ সভাপতি এবং ডা. মো. আব্দুস সালাম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। হারুন-সালামের নেতৃত্বাধীন প্যানেল নিরঙ্কুশ বিজয়ী হয়। ২০২৪ সালের ২৫ মে এই কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ায় গত ২৪ মার্চ পৃথক বিজ্ঞপ্তিতে ড্যাবের কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত করার কথা জানায় বিএনপি। পাশাপাশি সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সম্মেলন ও কাউন্সিল অনুষ্ঠানের জন্য ১২ সদস্যের সম্মেলন প্রস্তুতি ও কাউন্সিল পরিচালনা কমিটিও গঠন করা হয়। কমিটিকে ৪৫ দিনের মধ্যে ড্যাবের সম্মেলন আয়োজনের কথা বলা হয়।

ড্যাবের সম্মেলন প্রস্তুতি ও কাউন্সিল পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক হলেন- বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ। এছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভিসি অধ্যাপক লুৎফর রহমান সদস্য সচিব এবং সদস্যরা হলেন- বিজন কান্তি সরকার, অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, স্বাস্থ্য বিষয়ক সহ-সম্পাদক ডা. এসএম রফিকুল ইসলাম, ডা. পারভেজ রেজা কাকন, সদ্য বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম মহাসচিব ডা. শাহ মুহাম্মদ আমান উল্লাহ, ডা. এরফান আহমেদ সোহেল ও ডা. মোস্তফা আজিজ সুমন। 

এই কমিটির সদস্যদের মধ্য থেকে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বিজন কান্তি সরকারকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম এবং অধ্যাপক মামুন আহমেদকে নিয়ে ৩ সদস্যের একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে।
 
নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক লুৎফর রহমান জানান, তারা বুধবার রাতে ড্যাবের কেন্দ্রীয় অফিস পরিদর্শন শেষে বৈঠকে বসে সম্মেলনের বিষয়ে করণীয় নিয়ে আলোচনা করেছেন। ৯ মে’র মধ্যেই তারা ড্যাবের সম্মেলন সম্পন্ন করবেন। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ড্যাবের সম্মেলন সফল হলে পরবর্তী সময়ে অন্যান্য পেশাজীবী এবং অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের কমিটিও সম্মেলনের মাধ্যমে গঠন করা হবে। 

এবার ড্যাবের নতুন কমিটির শীর্ষ পদের জন্য আলোচনায় আছেন সাবেক সভাপতি অধ্যাপক হারুন আল রশিদ, সাবেক মহাসচিব ডা. মো. আব্দুস সালাম, সাবেক কোষাধ্যক্ষ ডা. জহিরুল ইসলাম শাকিল, বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. মো. রফিকুল ইসলাম, সহ-স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. পারভেজ রেজা কাকন ও ডা. নজরুল ইসলাম, ড্যাবের উপদেষ্টা ডা. রফিকুল কবির লাবু, সহ সভাপতি ডা. মোস্তাক রহিম স্বপন ও ডা. সাইফুদ্দিন নিসার আহমেদ তুষান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ডা. মো. মেহেদী হাসান, যুগ্ম মহাসচিব ডা. শাহ মুহাম্মদ আমান উল্লাহ, ডা. সরকার মাহবুব আহমেদ শামীম, ডা. শেখ ফরহাদ, ডা. শাকুর খান প্রমুখ। তবে এসব ব্যক্তির সমন্বয়েই প্যানেল গঠনের সম্ভাবনাও রয়েছে। 

বর্তমানে ড্যাবের প্রায় ৩ হাজারের মতো সদস্য (ভোটার) রয়েছেন। যাদের সবাই ৫ আগস্টের পূর্বের সদস্য। নতুনভাবে কাউকে ভোটার না বানিয়ে আগের সদস্যদের নিয়েই কাউন্সিল করার দাবি ড্যাব নেতাদের। তা না হলে রাজপথের আন্দোলনে সক্রিয় থাকা ত্যাগী ও নির্যাতিতদের মূল্যায়ন করা সম্ভব হবে না।

এ বিষয়ে ড্যাবের সদ্য সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশিদ বলেন, সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি করলে গণতান্ত্রিক চর্চা বিকশিত ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয়। কেননা কাউন্সিলে প্রকৃত নেতাদের মূল্যায়নের সুযোগ থাকে। জয়ী এবং পরাজিত প্যানেলের লোকজন মিল-মিশে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা যায়। এই চর্চা কেন্দ্র থেকে তৃণমূলে সর্বত্র অব্যাহত রাখলে দলের লাভ হবে। 

তিনি বলেন, বিএনপির দুঃসময়ে আমরা চিকিৎসকদের সরাসরি ভোটে নির্বাচনের মাধ্যমে ড্যাবের দায়িত্ব গ্রহণ করি। যে সময় মহামারি করোনায় বিশ্ব বিপর্যস্ত ছিল। সে সময় দায়িত্ব নিয়েই ড্যাব নেতারা বিগত আন্দোলন সংগ্রামে প্রত্যেকটি কর্মসূচিতে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। দলীয় কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি করোনাভাইরাস এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় মাঠে নিরলসভাবে সক্রিয় ছিলাম। প্রান্তিক মানুষের মাঝে ড্যাবের উদ্যোগে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা ক্যাম্প, ত্রাণ ও ওষুধ বিতরণ করা হয়েছে। ড্যাবের নেতাকর্মীরা সেসবের মূল্যায়ন করবেন ইনশাআল্লাহ।

ড্যাবের সাবেক দপ্তর সম্পাদক ডা. মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান প্রধান পাঁচটি পদে ব্যক্তি কেন্দ্রিক নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন। তিনি সম্প্রতি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও ড্যাবের প্রধান পৃষ্ঠপোষক তারেক রহমানকে বলেছেন, কোনো প্যানেলভিত্তিক নির্বাচন না করে প্রধান পাঁচটি পদে ব্যক্তিকেন্দ্রিক মনোনয়ন হলে ড্যাবের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব কমানো সম্ভব। কারণ নির্বাচনে বিজয়ী প্যানেল ও পরাজিত প্যানেলের প্রার্থী ও সমর্থকদের মধ্যে শত্রুভাবাপন্ন বিভাজন তৈরি হয় এবং তা পররর্তী সময়ে কর্মসূচিগুলোয় ব্যাপক প্রভাব ফেলে। যা সংগঠনের জন্য খুবই বিপজ্জনক ও ক্ষতিকর। বিষয়টা বিবেচনা করার জন্য বিশেষ অনুরোধ জানাচ্ছি।

জানা যায়, ১৯৮৯ সালে অধ্যাপক ডা. জাকির হোসেনকে আহ্বায়ক এবং অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনারকে সদস্য সচিব করে ড্যাবের প্রথম কমিটি গঠন করা হয়। এরপর প্রথম ১০ বছরের মধ্যে চারটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। পর্যায়ক্রমে ড্যাবের দায়িত্বে আসেন বেশ কয়েকজন নেতা। সর্বশেষ এমএ আজিজ ও এজেডএম জাহিদের নেতৃত্বে চলছিল ড্যাব। দেড় যুগ পর ২০১৯ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি আজিজ-জাহিদ কমিটি বিলুপ্ত করে ডা. ডোনারকে আহ্বায়ক করে ১৬১ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি দ্রুত সময়ের মধ্যে ২০১৯ সালের ২৪ মে কেন্দ্রীয় সম্মেলন সম্পন্ন করে নবনির্বাচিত পূর্ণাঙ্গ কমিটির কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করে।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ