মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের যাত্রা হয় ১৯৯৯ সালের ২৪ অক্টোবর। এরই মধ্যে ২৫ বছর পেরিয়েছে ব্যাংকটি। দীর্ঘ সময় পর ব্যাংকটির লোগো পরিবর্তন করা হয়েছে। ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন সৈয়দ মাহবুবুর রহমান। এর আগে ঢাকা ও ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি ছিলেন তিনি। এমটিবির লোগো পরিবর্তন, ব্যবসা এবং ব্যাংকিং খাতের বিভিন্ন বিষয়ে সমকালের সঙ্গে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ওবায়দুল্লাহ রনি

সমকাল : এমটিবি প্রতিষ্ঠার ২৫ বছর পার হয়েছে। এমডি হিসেবে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন? 

মাহবুবুর রহমান : এই ব্যাংক যারা শুরু করেছিলেন, তারা সবাই সমাজের গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি। বিভিন্ন ব্যাংকে সেবা নিতে গিয়ে তারা এক সময় চিন্তা করলেন, একটি ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করলে কেমন হয়। সেই চিন্তা থেকে প্রতিষ্ঠিত হয় মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক। ব্যাংকের উদ্যোক্তা চেয়ারম্যান ছিলেন অ্যাপেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী। ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন স্কয়ার গ্রুপের প্রয়াত চেয়ারম্যান স্যামসন এইচ চৌধুরী। উদ্যোক্তাদের মধ্যে শেল্‌টেক, এসিআই, এবিসি, ব্রিটানিয়া, আবুল হোসেন কোম্পানি, স্বদেশ গ্রুপের মতো বিখ্যাত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তারা রয়েছেন। শুরু থেকেই সুশাসন নিশ্চিত করা তাদের অন্যতম লক্ষ্য ছিল। তারা ব্যাংক প্রতিষ্ঠার পরই সিদ্ধান্ত নেন, একজন দুই বছরের বেশি চেয়ারম্যান থাকবেন না। এভাবে ঘুরে ঘুরে সবাই চেয়ারম্যান হন। অনেক ব্যাংকের পর্ষদে দেখা যায় এ নিয়ে নানা ঝামেলা হয়। অনেক সময় একই ব্যক্তি বছরের পর বছর চেয়ারম্যান থেকে যান। 
এমটিবির পরিচালনা পর্ষদে আরেকটি ব্যতিক্রম হলো, বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী চেয়ারম্যানের গাড়িসহ বিভিন্ন সুবিধা প্রাপ্য হলেও এই ব্যাংকের কোনো চেয়ারম্যান সেই সুবিধা নেন না। আরেকটি বিষয় হলো, ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে তারা ক্ষমতায়ন করেছেন। ব্যাংক পরিচালনায় তারা কোনো হস্তক্ষেপ করেন না। ব্যাংক পরিচালনায় যেসব নীতির দরকার তা নিয়ে আলোচনা করেন। কীভাবে গ্রাহকসেবা আরও উন্নত করা যায় এবং আন্তর্জাতিক মানের ব্যাংক করা যায়, এসব নিয়েই তারা ভাবেন। দেশে ও দেশের বাইরে মিউচুয়ালি কীভাবে আস্থা অর্জন করা যায়, এ চিন্তা থেকেই নাম দেওয়া হয় মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক।

সমকাল : ২৫ বছরে আপনাদের বড় অর্জন কোথায়? 

মাহবুবুর রহমান : ২৫ বছরে সবচেয়ে বড় অর্জন একটি ব্র্যান্ড হিসেবে মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করেছে এমটিবি। ব্যালান্স শিটের আকার বিবেচনায় সমসাময়িক কিছু ব্যাংকের তুলনায় হয়তো এই ব্যাংক ছোট। এর অন্যতম কারণ, আমরা কখনও আগ্রাসী ছিলাম না। তবে মানুষের কাছে আস্থা অর্জন করতে পেরেছি। যে কারণে এই ব্যাংক নিয়ে কখনও বড় ধরনের নেতিবাচক কোনো বিষয় সামনে আসেনি। ভালো তদারকির কারণে গত পাঁচ বছরে যেসব ঋণ বিতরণ হয়েছে, তার মধ্যে খেলাপি হয়েছে দেড় শতাংশের কম।

সমকাল : দীর্ঘ সময় পর কেন লোগো পরিবর্তনের প্রয়োজন হলো?

মাহবুবুর রহমান : এখন তারুণ্যের সময়। তরুণরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তাদের ভাবনায় পরিবর্তন এসেছে। এসব কারণে আমরা চিন্তা করলাম গতিশীলতার বিষয়টি। আমরা লোগোতে যে লাইন ব্যবহার করেছি, এটা দিয়ে গতি বোঝানো হয়েছে। রঙিন করার কারণ, বাংলাদেশের বড় একটি অংশ তরুণ। তারাই আমাদের ভবিষ্যৎ। তাদের মতো করে কিছু করার ধারণা থেকেই লোগোতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। আশা করা যায়, মানুষ নতুন লোগো গ্রহণ করবে। সবার কাছে ভালো লাগবে।

সমকাল : সেবার ধরনেও নতুন কিছু আসছে?

মাহবুবুর রহমান : মিউচুয়াল ট্রাস্ট শুরু থেকেই ভালো মানের সেবা দিয়ে আসছে। এরপরও ভালোর শেষ নেই। গ্রাহক ঘরে বসে কীভাবে সব ধরনের সেবা নিতে পারেন, আমরা সেদিকে যাচ্ছি। এমটিবি নিউ অ্যাপে একজন মানুষের যত ধরনের সেবা দরকার, প্রায় সবই আছে। আগামী জুনের মধ্যে সঞ্চয়পত্র সার্টিফিকেট, ট্যাক্স ফাইলসহ যত ধরনের স্টেটমেন্ট দরকার, তা অ্যাপে পাওয়া যাবে। জুনের মধ্যে ছোট ঋণের আবেদনও করা যাবে। করপোরেট গ্রাহকদের জন্য ‘এমটিবি ই ব্যাংক’ নামে আলাদা অ্যাপ রয়েছে। সেখান থেকে সব ধরনের পরিশোধ ও কালেকশন করা যায়। আগামী মার্চের মধ্যে এলসির আবেদনও এখান থেকে করা যাবে। সবচেয়ে বড় বিষয়, দুটি অ্যাপই এমটিবির কর্মীরা তৈরি করেছেন। এতে আর ১০টা থেকে ৪টা ব্যাংকিং করতে হবে না। গ্রাহকের নিজের সময় অনুযায়ী রাত ৮টায় কাজ করবেন। এভাবে গ্রাহককে ক্ষমতায়ন করা হচ্ছে। ফিনটেকের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ৫০ হাজার, ১ লাখ টাকা ঋণ দেওয়া হচ্ছে। সাপ্লাই চেইন অর্থায়নের চেষ্টা করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানের সরবরাহকারীদের অর্থায়ন করা হবে। গ্রামীণফোনের ডিস্ট্রিবিউটররা এখন রাত ১২টায় দরকার হলেও অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা নিয়ে এজেন্টদের ‘টপআপ’ দিতে পারেন।

সমকাল : ঋণ বিতরণে কোন খাতকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে এমটিবি?

মাহবুবুর রহমান : চার বছর আগে মোট ঋণের ৯০ শতাংশ ছিল করপোরেট। এখন তা ৮০ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। ১২ শতাংশ এসএমই এবং রিটেইল ৮ শতাংশ। এসএমই ও রিটেইল মিলিয়ে ৪০ শতাংশে নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আমরা ‘ডে লাইট’ নামে একটি ঋণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন চেয়েছি। 
এর মাধ্যমে গ্রাহক সকালে ঋণ নিয়ে বিকেলে পরিশোধ করবেন। এই ঋণ নেবেন বাদাম, চটপটি বিক্রেতার মতো গ্রাহক। কোনো ধরনের সিকিউরিটিজ ছাড়াই এ ঋণ দেওয়া হবে। 

সমকাল : সার্বিকভাবে ব্যাংকিং খাত এখন কেমন চলছে?

মাহবুবুর রহমান : কয়েক বছর ধরে বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে এক ধরনের চাপ ছিল। মাঝে পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছিল। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের সংজ্ঞায় পরিবর্তন এসেছে। গত সেপ্টেম্বরে খেলাপি ঋণ ১৭ শতাংশ ছাড়িয়েছে। আগামীতে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশে পৌঁছাতে পারে বলে গভর্নর সতর্ক করেছেন। প্রভিশনিং নীতিমালায় পরিবর্তন এসেছে। ফলে ব্যাংকগুলোর মূলধন ও মুনাফা দুটিই চাপে থাকবে। এ বছর বৈদেশিক মুদ্রাবাজার থেকে বেশি আয় আশা করা যাচ্ছে না। আবার সুদহারও অনেক বাড়ানো যাবে না। যদিও আমানতের খরচ বেড়ে যাচ্ছে। আবার মূল্যস্ফীতি 
এখন একটা বড় ইস্যু। ফলে বছরটা সবার জন্যই কঠিন যাবে। এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কী হয়, তার ওপরও নির্ভর করছে অর্থনীতির পরিস্থিতি।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ধরন র স গ র হক এই ব য দরক র সমক ল ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

সৌদিতে প্রবাসীকে অপহরণ করে টাকা আদায়, বাংলাদেশে গ্রেপ্তার ৩

সৌদি আরবের রিয়াদে রাসেল নামে এক বাংলাদেশিকে অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ে জড়িত চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে রাজধানীর খিলগাঁও থানা পুলিশ। গত বুধবার, বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার লক্ষ্মীপুর এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গ্রেপ্তার তিনজন হলেন আকরাম (৩৩), ইসমাঈল হোসেন (৩৪) ও মজিব রহমান নিলয় (২৬)। মুক্তিপণ হিসেবে আদায় করা ৩৫ লাখ টাকার মধ্যে ১২ লাখ টাকা আদালতের আদেশে অবরুদ্ধ করা হয়েছে।

গতকাল খিলগাঁও থানা পুলিশ জানায়, রাসেল সৌদি প্রবাসী ব্যবসায়ী। গত ১১ জানুয়ারি একটি মোবাইল নম্বর থেকে তাঁকে ফোন দিয়ে ব্যবসার কথা বলে দেশটির একটি জায়গায় যেতে বলে অপহরণকারী চক্র। সেখানে যাওয়ার পর তাঁকে অপহরণ করা হয়। চোখ বেঁধে মারধর করে একটি ঘরে আটকে রাখে চক্রের সদস্যরা। এর পর পরিবারের কাছ থেকে চক্রটির দেশে থাকা সদস্য মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে মুক্তিপণ হিসেবে ৩৫ লাখ ৩৫ হাজার টাকা আদায় করে। টাকা পাওয়ার পর অপহরণকারী চক্রটি রাসেলকে সৌদি আরবের রিয়াদের রাস্তায় ফেলে চলে যায়। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর শ্বশুর কামরুল ইসলাম বাদী হয়ে ২১ জানুয়ারি খিলগাঁও থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ