জাকসু নির্বাচন নিয়ে ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি)। পূর্বঘোষিত রূপরেখা অনুযায়ী শনিবার জাকসু নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার কথা ছিল। তবে জাকসু নির্বাচন সংক্রান্ত পরিবেশ পরিষদের পরামর্শক্রমে যথাসময়ে ঘোষণা করা হয়নি তপশিল। তপশিল ঘোষণা নিয়ে ছাত্রদল-বৈষম্যবিরোধী-শিবির পাল্টাপাল্টি অবস্থান নিয়েছে। 

ছাত্রদল ও বাম সংগঠনগুলো চাচ্ছে, জাকসুর গঠনতন্ত্রসহ প্রয়োজনীয় সংস্কারের পর নির্বাচন হোক। এ নিয়ে তারা শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে। অন্যদিকে তপশিল ঘোষণাসহ দ্রুত নির্বাচনের দাবিতে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে পাল্টা অবস্থান নেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, ছাত্রশিবির, জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটভুক্ত ২টি সংগঠন, গণঅভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলন, জুলাই গণহত্যা বিচার নিশ্চিত পরিষদসহ বেশ কিছু সংগঠনের অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মী। এসময় অনতিবিলম্বে জাকসু নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার দাবি জানান তারা। অন্যথায় আসন্ন ভর্তি পরীক্ষা বন্ধের হুঁশিয়ারি দেন নেতা-কর্মীরা। 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাবি শাখার সদস্য সচিব তৌহিদ মোহাম্মদ সিয়াম বলেন, ‘ছাত্রদলের ব্যানারে কিছু অছাত্র আজকে রেজিস্ট্রার ভবনে সামনে অবস্থান নিয়ে জাকসুর তপশিল ঘোষণা না করতে চাপ প্রয়োগ করেছে। তাই তপশিল ঘোষণা করা হয়নি। তার প্রেক্ষিতে জাকসুর পক্ষের সব শক্তিকে এক করে আমরা ক্যাম্পাসে মিছিল দিয়ে অবস্থান নিয়েছি। আসন্ন ভর্তি পরীক্ষার আগে তপশিল ঘোষণা না করা হলে ভর্তি পরীক্ষা হতে দেওয়া হবে না।’  

গণঅভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলনের আহ্বায়ক আব্দুর রশিদ জিতু বলেন, ভর্তি পরীক্ষার আগেই তপশিল ঘোষণা করতে হবে। অন্যথায় ভর্তি পরীক্ষা হতে দেওয়া হবে না। প্রশাসন গত এক মাস আগে জাকসু বাস্তবায়নের লক্ষ্যে একটা রোডম্যাপ প্রকাশ করেছিল, সেই লক্ষ্যে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করেছিল এবং আজকে ছিল তপশিল ঘোষণার তারিখ। কিন্তু একটা কুচক্রী মহলের দাবির প্রেক্ষিতে জাকসু বানচালের চেষ্টা করছে।

প্রয়োজনীয় সংস্কার ছাড়া জাকসু সুষ্ঠু হবে না, সেজন্য সংস্কার চেয়ে শাখা ছাত্রদলের সদস্য সচিব ওয়াসিম আহমেদ অনিক জানান, জাকসু নির্বাচনের গুরুত্বপূর্ণ চেয়ারে যারা বসে আছেন তারা আওয়ামী লীগের দোসর। তাদের বসিয়ে রেখে কোনোভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। তাছাড়া জাকসুর যে গঠনতন্ত্র রয়েছে সেটা অনেক আগের। এই গঠনতন্ত্র সংস্কার করতে হবে এবং এই কাজগুলো সম্পন্ন করে নির্বাচন দিতে হবে অন্যথায় তা মেনে নেওয়া হবে না।

 এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসান বলেন, ‘ছাত্র সংগঠনগুলো দুইটি পক্ষ বিভক্ত হয়েছে—এক পক্ষ নির্বাচন সূচি অবিলম্বে ঘোষণা করার দাবি জানাচ্ছে, অন্য পক্ষ নির্বাচনের সূচি ঘোষণার আগে সংস্কার কমিশন গঠন চাচ্ছে। আমরা ইতোমধ্যে পরিবেশ পরিষদের পরামর্শক্রমে জাকসু নির্বাচনের গঠনতন্ত্র সংস্কারের বিষয়ে একটি কমিটি গঠন করেছি৷’ 

জাকসুর গঠনতন্ত্র সংস্কার কমিটি গঠন
জাকসু নির্বাচনের লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক আব্দুর রবকে আহ্বায়ক করে ১০ সদস্যের জাকসু গঠনতন্ত্র সংস্কার কমিশন গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সংস্কার কমিটিকে আগামী চার কর্মদিবসের মধ্যে সংস্কার বিষয়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিতে বলা হয়েছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ছ ত রদল গঠনতন ত র স স ক র স স ক র কম অবস থ ন ন ছ ত রদল পর ক ষ স গঠন

এছাড়াও পড়ুন:

কুয়েট ভিসিকে অপসারণের দাবিতে আমরণ অনশনের ঘোষণা জাবি শিক্ষার্থীদের

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) উপাচার্য মুহাম্মদ মাছুদের অপসারণের দাবিতে আমরণ অনশনের ঘোষণা দিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা। 

কুয়েটের শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) রাতে তারা জানান, বুধবার (২৩ এপ্রিল) সকাল থেকে তারা এ অনশন শুরু করবেন।

মার্কেটিং বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আরিফুজ্জামান উজ্জল বলেন, “কুয়েটের ভিসিকে অপসারণ না করা হলে অনশনকারী শিক্ষার্থীদের প্রতি পূর্ণ সংহতি জানিয়ে আমরণ অনশনে বসবো আমরা।”

এদিকে, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, "কুয়েট শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে কুয়েটের ভিসিকে অপসারণের দাবিতে বুধবার থেকে আমরণ অনশনের কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। তাকে অপসারণ না করা পর্যন্ত জাবির শহীদ মিনারে আমাদের অনশন কর্মসূচি চলমান থাকবে। সকলকে আমাদের এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি।”

এছাড়া, অনেক শিক্ষার্থী তাদের নিজেদের টাইমলাইনে আমরণ অনশনে বসার ঘোষণা দেন। শিক্ষার্থীরা #kuetVCmustSTEPDOWN হ্যাশট্যাগে প্রচারণা চালাচ্ছেন।

গত ২১ এপ্রিল পূর্বনির্ধারিত ঘোষণা অনুযায়ী কুয়েটে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে থেকে ৩২ জন আমরণ অনশন শুরু করেন। বিকেল ৩টায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টারের বারান্দার পূর্বদিকে অবস্থান নেন। এরপর সেখানে বিভিন্ন বিভাগের ৩২ জন শিক্ষার্থী আনুষ্ঠানিকভাবে অনশন শুরু করেন।  অনশনরত ৩২ শিক্ষার্থীর মধ্যে কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।

ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে ১৮ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাসে ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমর্থকদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এতে আহত হন অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী। পরদিন প্রশাসনিক ভবনসহ সব একাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা।

ওই দিন দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় কুয়েটে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সংঘর্ষের ঘটনা তদন্তে কমিটি করা হয়। রাতে খানজাহান আলী থানায় অজ্ঞাত পরিচয় ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে আসামি করে মামলা করে প্রশাসন।

গত ২০ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ সমাবেশ করে সব রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনকে লাল কার্ড দেখান শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে তারা উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করেন।

২৩ ফেব্রুয়ারি শিক্ষার্থীরা খুলনা থেকে ঢাকায় এসে প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দেন। এতে হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচার, উপাচার্যের পদত্যাগসহ ছয় দফা দাবি জানানো হয়।

এরপর ২৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেটের ৯৯তম (জরুরি) সভায় সব আবাসিক হল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়। পরদিন সকাল ১০টার মধ্যে সব শিক্ষার্থীকে হলত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়।

১৮ ফেব্রুয়ারির সংঘর্ষের ঘটনায় প্রকৃত দোষী শিক্ষার্থীদের খুঁজে বের করাসহ পূর্ণাঙ্গ তদন্তের জন্য গঠিত কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়।

এর মধ্যে কুয়েটের ২২ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে নগরের মহেশ্বরপাশা উত্তর বণিকপাড়া এলাকার হোসেন আলী নামের এক ব্যক্তি মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের আমলি আদালতে মামলা করেন।

আবাসিক হলগুলো খুলে দেওয়ার দাবিতে শিক্ষার্থীরা ১৩ এপ্রিল বিকেল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নিলে, আন্দোলন আবারও দানা বাঁধতে থাকে।

গত সোমবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় সংঘর্ষে জড়িত থাকার অভিযোগে ৩৭ শিক্ষার্থীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্তের কথা জানায় কর্তৃপক্ষ। সেই সঙ্গে আগামী ২ মে থেকে সব আবাসিক হল শিক্ষার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া ও ৪ মে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর সিদ্ধান্ত হয়।

এর মধ্যে গত ১৫ এপ্রিল শিক্ষার্থীরা উপাচার্য মুহাম্মদ মাছুদের পদত্যাগের এক দফা দাবির ঘোষণা দেন। ঘোষণার পর আন্দোলনকারীরা কুয়েটের ছেলেদের ছয়টি হলের তালা ভেঙে হলগুলোতে অবস্থান নেন।

ঢাকা/আহসান হাবীব/ইভা  

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জাবিতে মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের দাবিতে শিক্ষার্থীদের স্মারকলিপি
  • কুয়েট শিক্ষার্থীদের প্রতি সংহতি, আরও তিন বিশ্ববিদ্যালয়ে অনশন
  • কুয়েট ভিসিকে অপসারণের দাবিতে আমরণ অনশনের ঘোষণা জাবি শিক্ষার্থীদের
  • কেন্দ্রীয় দুই নেতার জেলা কমিটিতে প্রার্থী ঘোষণা নিয়ে বিতর্ক