Samakal:
2025-04-25@19:53:06 GMT

মাধবী থেকে মাধবী মার্ট

Published: 1st, February 2025 GMT

মাধবী থেকে মাধবী মার্ট

ফেসবুকে হাজারো ছবির মধ্যে একটি ছবি চোখ কেড়ে নেয়। পিকআপভর্তি নকশিকাঁথা। এর ওপর বসে আছেন এক তরুণী। তাঁর নাম মাধবী। এসএমই মেলা শেষ করে ফেরার পথে কাঁথা ও অন্যান্য পণ্য ট্রাকে তোলার লোক পাননি। তাই মাধবী নিজেই পণ্য তোলেন। নারী হিসেবে আমার গর্ববোধ তো অবশ্যই; কিছুটা কৌতূহলও জাগল। ‘মাধবী মার্ট’ নামে তাঁর একটি শোরুম রয়েছে। উত্তরা উত্তর মেট্রো স্টেশনের কাছে। 
মেট্রোতে করে একদিন মাধবী মার্টের শোরুমে হাজির হলাম। সেখানে সৃজনশীলতার পরিচয় পাওয়া যায়। শোরুমে এমন পণ্য দেখতে পেলাম, যা আগে কখনও দেখিনি। আমি জানতাম, বাংলাদেশের অনুমোদিত জিআই পণ্যের সংখ্যা ৩১টি। মাধবী মার্টে গিয়ে মনে হলো, পুরো বাংলাদেশটাই জিআই পণ্যে ভরপুর। যেমন– মানিকগঞ্জের ঘিওরের বেত দিয়ে তৈরি ঝুড়ি, আয়নার ফ্রেম, বাটি ও থালা, টাঙ্গাইলের দেলদুয়ারের বাঁশের পণ্য, নীলফামারীর হোগলাপাতা ও কচুরিপানার পণ্য, টেকনাফের সুপারির খোল দিয়ে তৈরি ওয়ানটাইম থালা-বাসন, কেরানীগঞ্জের মাটির পণ্য, নারায়ণগঞ্জের জামদানি, টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ি, সিলেটের কমলগঞ্জের মণিপুরি শাড়ি। সব থেকে অবাক হলাম নারকেলের শলার ঝাড়ু দেখে। এটা ভীষণ নান্দনিক। মাধবী বলেন, ‘‘নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জ উপজেলায় আমার বাড়ি। আমার চাচা এই শলার ঝাড়ু তৈরি করেন। একদিন আমাকে বলেন, দেখ তো মাধবী, এটি বিক্রি করা যায় কিনা? আমি দেখেই বলি, বিক্রি করা যাবে না আবার। এটি দৌড়াবে। সেই থেকে শুরু নারকেলের শলার ঝাড়ু বিক্রি। যেদিন মাধবী মার্টের পেজে নারকেলের শলার ঝাঁড়ু বিক্রির ভিডিও ‍দিলাম, সেদিন আমার ফেসবুকে ভালোমন্দ মন্তব্যের ঝড় ওঠে। কেউ আমাকে ‘ঝাড়ুওয়ালি’ উপাধি দেন। কেউ বলেছেন ‘ফাতরা মহিলা’, কেউ বলেছেন ‘বেটির মাথায় সমস্যা আছে’, আবার এর বিপরীতে কেউ কেউ ইতিবাচক মন্তব্যও করেছেন।’’ শান্ত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন মাধবী মার্টের স্বত্বাধিকারী।
চোখে একরাশ আলোর ঝলক নিয়ে মাধবী বলেন, ‘আমার ব্যবসার মূলধন আমার গ্রাহক। আমি ব্যবসা শুরু করেছি ২০১৭ সালে, জামালপুরের নকশিকাঁথা এবং সালোয়ার-কামিজ দিয়ে। তখন আমার কোনো শোরুম ও মূলধন ছিল না। সম্বল ছিল একটা বাইসাইকেল আর রুমমেট সানজিদা ইভা আপুর দেওয়া ১০ হাজার টাকা। আমার গণ্ডির মধ্যে যে কয়জন মানুষ ছিলেন তাদের কাছে সাইকেল চালিয়ে যেতাম ব্যাগে নকশিকাঁথা বা থ্রিপিস নিয়ে। যেহেতু আমার কোনো দোকান ভাড়া নেই। আমি একটু কম দামে পণ্য দিতাম। অল্প কয়েকদিনের মধ্যে বেশ ভালো সাড়া পেলাম। ২০১৯ সালে ফার্মগেটে জেনেটিক মার্কেটে একটি দোকান নিলাম। হঠাৎ করে ব্যবসা খারাপ চলায় দোকানের তিন মাসের ভাড়া দিতে পারিনি। পরে দোকানের মালিক দোকানে তালা দিয়ে দেন। আমি অনেক অনুরোধ করলেও তিনি দোকানের তালা খুলে দেননি। আমাকে বিপদে পড়তে দেখে তিনি আমাকে বাজে প্রস্তাব দেন। আমি মাথা নতো করিনি। মার্কেটের দোকান মালিক সমিতিকে লিখিত বিচার দিলাম। এর পরিপ্রেক্ষিতে মার্কেটের সবার সামনে তিনি আমার কাছে ক্ষমা চান। তিনি তা ভুলে যাননি। ২০২০ সালে একদিন রাস্তায় পেয়ে আমার সঙ্গে অশালীন আচরণ করেন। আমার ওড়না টেনে ধরেন। এ ঘটনার পর আমি মামলা করি।  কোনো অপরাধ না করেও চারদিকের মানুষের কাছে অপরাধী হয়ে গেলাম। মা-বাবাও আমাকে ভুল বুঝলেন।’
নিজের সংগ্রামের কথা বলে চলেন মাধবী– “ব্যবসা নেই। হাতে টাকা নেই। পরিবার বা বন্ধু-বান্ধবও পাশে নেই। আমি হাঁপিয়ে উঠছিলাম। হঠাৎ আমার মনে হয়েছে, প্রজাপতি বেঁচে থাকে মাত্র ২৮ ঘণ্টা। এরই মধ্যে সে চমৎকার পাখা মেলে দুনিয়াকে জানান দিয়ে যায়। আমার মনে হলো– একটাই তো জীবন। এখানে মানুষের জন্য কিছু করতে হবে। তখন শূন্য হাতে সাইকেল নিয়ে বের হয়ে যাই। উদ্দেশ্য– মানুষকে ক্যান্সার সম্পর্কে সচেতন করা। বিশেষ করে ব্রেস্ট ক্যান্সার ও জরায়ু ক্যান্সার নিয়ে স্কুল বা উঠানে বসে নারীদের সচেতন করতাম। এ কাজ করতে গিয়ে সচেতনতা তো হয়েছেই। আমি পুরো বাংলাদেশের কোথায় কী বিখ্যাত, তা কাছ থেকে দেখেছি এবং কিছু ভালো মানুষের সঙ্গে পরিচয় হয়। পরে তারা আমার ব্যবসায় সাহায্য করেন। ২০২১ সালে আইপিডিসি ফাইন্যান্স এবং ডেইলি স্টারের উদ্যাগে ‘অদম্য সাহসী নারী’ হিসেবে নির্বাচিত হই। সেখানে ২ লাখ টাকা পুরস্কার পাই। সেটি দিয়ে আবার ব্যবসা শুরু করি। শোরুম নিলাম। জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার বাউশি বাজারে নকশিকাঁথা উৎপাদন কেন্দ্রে একটি কারখানা খুলি।” 
মাধবী মার্ট এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। মাধবী বলেন, ‘আমি চাই আমার বাংলাদেশ পুরো পৃথিবীর ঘরে ঘরে থাকুক। দু’এক বছর ধরে আমরা পোস্ট অফিসের মাধ্যমে বিশ্বের ৫০টির বেশি দেশে পণ্য পাঠাচ্ছি।’ 
এ নারী উদ্যোক্তার কথা শুনে শুধু এটাই মনে হচ্ছিল– নারীকে সাহসী হতে হবে। এভাবেই এগিয়ে আসতে হবে। অধিকার বুঝে নিয়ে অংশগ্রহণ করতে হবে। নারীর অংশগ্রহণ ছাড়া দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। কর্মসংস্থান ও শ্রমবাজারে নারীর অংশীদারিত্ব সহজ করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। আরও পদক্ষেপ এবং এর তদারকি জরুরি। সেই সঙ্গে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দরকার বলে মনে করেন মাধবী। v

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: নকশ ক ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

পুতিনের সঙ্গে ট্রাম্পের দূতের বৈঠক: ‘রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আরও কাছাকাছি এসেছে’

ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের লক্ষ্যে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ। শুক্রবার মস্কোয় তিন ঘণ্টা ধরে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। দুজনের মধ্যে আলোচনা ‘গঠনমূলক’ হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুতিনের সহযোগী ইউরি উশাকভ।

পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের আগে শুক্রবারই মস্কো সফরে যান স্টিভ উইটকফ। তিন বছরের বেশি সময় ধরে চলা ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে ট্রাম্প যে তৎপরতা চালাচ্ছেন, তার অংশ হিসেবে এ নিয়ে চতুর্থবারের মতো রাশিয়া সফর করলেন উইটকফ। শান্তি আলোচনায় যে অগ্রগতি হচ্ছে, সে ইঙ্গিত দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্টও।

ইউরি উশাকভ বলেন, এই বৈঠকের মধ্য দিয়ে শুধু ইউক্রেন নয়, বরং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিষয়ে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আরও কাছাকাছি এসেছে। ইউক্রেন সংকটের কথা বলতে গেলে, রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রতিনিধিদের মধ্যে সরাসরি আলোচনার সম্ভাবনার বিষয়টি নিয়ে বিশেষভাবে আলোচনা হয়েছে।

পুতিন ও উইটকফের বৈঠকের বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানায়নি ওয়াশিংটন। তবে বৈঠকের সময় যুক্তরাষ্ট্রে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, ‘আমাদের এই আলাপচারিতার সময় এখন তাঁরা পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করছেন। আর আমরা অনেক বিষয় নিয়ে কাজ করছি। আমি মনে করি, সবশেষে আমরা বেশ কিছু ভালো চুক্তি করতে যাচ্ছি। এর মধ্যে শুল্ক চুক্তি ও বাণিজ্য চুক্তিও রয়েছে।’

ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে আগ্রহের কথা জানিয়েছেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভও। বৃহস্পতিবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিবিএসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে আমরা প্রস্তুত রয়েছি। তবে এখনো সুনির্দিষ্ট কিছু বিষয় রয়েছে, যেগুলো আরও পরিমার্জন করা প্রয়োজন। আমরা সেগুলো নিয়ে কাজ করছি।’

এদিকে কিয়েভে রাশিয়ার হামলার পর বৃহস্পতিবার দক্ষিণ আফ্রিকা সফর সংক্ষিপ্ত করে ইউক্রেনে ফিরে এসেছেন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি। একটি পূর্ণ ও শর্তহীন চুক্তি করতে কিয়েভের পশ্চিমা মিত্ররা পুতিনের ওপর যথেষ্ট চাপ দিচ্ছেন কি না—সে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। যুদ্ধ বন্ধে রাজি না হলে মস্কোর বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার যে হুঁশিয়ারি ট্রাম্প দিয়েছিলেন, সেদিকে ইঙ্গিত করে জেলেনস্কি বলেন, ‘রাশিয়ার ওপর শক্তিশালী চাপ বা দেশটির বিরুদ্ধে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হচ্ছে, এমন কিছু দেখছি না আমি।’

আরও পড়ুনপুতিনকে ‘থামতে’ বললেন ট্রাম্প২৪ এপ্রিল ২০২৫আরও পড়ুনজেলেনস্কিকে ট্রাম্পের দোষারোপের পরপরই কিয়েভে রাশিয়ার হামলা, নিহত ৯২৪ এপ্রিল ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ