Samakal:
2025-02-01@21:58:44 GMT

মাধবী থেকে মাধবী মার্ট

Published: 1st, February 2025 GMT

মাধবী থেকে মাধবী মার্ট

ফেসবুকে হাজারো ছবির মধ্যে একটি ছবি চোখ কেড়ে নেয়। পিকআপভর্তি নকশিকাঁথা। এর ওপর বসে আছেন এক তরুণী। তাঁর নাম মাধবী। এসএমই মেলা শেষ করে ফেরার পথে কাঁথা ও অন্যান্য পণ্য ট্রাকে তোলার লোক পাননি। তাই মাধবী নিজেই পণ্য তোলেন। নারী হিসেবে আমার গর্ববোধ তো অবশ্যই; কিছুটা কৌতূহলও জাগল। ‘মাধবী মার্ট’ নামে তাঁর একটি শোরুম রয়েছে। উত্তরা উত্তর মেট্রো স্টেশনের কাছে। 
মেট্রোতে করে একদিন মাধবী মার্টের শোরুমে হাজির হলাম। সেখানে সৃজনশীলতার পরিচয় পাওয়া যায়। শোরুমে এমন পণ্য দেখতে পেলাম, যা আগে কখনও দেখিনি। আমি জানতাম, বাংলাদেশের অনুমোদিত জিআই পণ্যের সংখ্যা ৩১টি। মাধবী মার্টে গিয়ে মনে হলো, পুরো বাংলাদেশটাই জিআই পণ্যে ভরপুর। যেমন– মানিকগঞ্জের ঘিওরের বেত দিয়ে তৈরি ঝুড়ি, আয়নার ফ্রেম, বাটি ও থালা, টাঙ্গাইলের দেলদুয়ারের বাঁশের পণ্য, নীলফামারীর হোগলাপাতা ও কচুরিপানার পণ্য, টেকনাফের সুপারির খোল দিয়ে তৈরি ওয়ানটাইম থালা-বাসন, কেরানীগঞ্জের মাটির পণ্য, নারায়ণগঞ্জের জামদানি, টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ি, সিলেটের কমলগঞ্জের মণিপুরি শাড়ি। সব থেকে অবাক হলাম নারকেলের শলার ঝাড়ু দেখে। এটা ভীষণ নান্দনিক। মাধবী বলেন, ‘‘নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জ উপজেলায় আমার বাড়ি। আমার চাচা এই শলার ঝাড়ু তৈরি করেন। একদিন আমাকে বলেন, দেখ তো মাধবী, এটি বিক্রি করা যায় কিনা? আমি দেখেই বলি, বিক্রি করা যাবে না আবার। এটি দৌড়াবে। সেই থেকে শুরু নারকেলের শলার ঝাড়ু বিক্রি। যেদিন মাধবী মার্টের পেজে নারকেলের শলার ঝাঁড়ু বিক্রির ভিডিও ‍দিলাম, সেদিন আমার ফেসবুকে ভালোমন্দ মন্তব্যের ঝড় ওঠে। কেউ আমাকে ‘ঝাড়ুওয়ালি’ উপাধি দেন। কেউ বলেছেন ‘ফাতরা মহিলা’, কেউ বলেছেন ‘বেটির মাথায় সমস্যা আছে’, আবার এর বিপরীতে কেউ কেউ ইতিবাচক মন্তব্যও করেছেন।’’ শান্ত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন মাধবী মার্টের স্বত্বাধিকারী।
চোখে একরাশ আলোর ঝলক নিয়ে মাধবী বলেন, ‘আমার ব্যবসার মূলধন আমার গ্রাহক। আমি ব্যবসা শুরু করেছি ২০১৭ সালে, জামালপুরের নকশিকাঁথা এবং সালোয়ার-কামিজ দিয়ে। তখন আমার কোনো শোরুম ও মূলধন ছিল না। সম্বল ছিল একটা বাইসাইকেল আর রুমমেট সানজিদা ইভা আপুর দেওয়া ১০ হাজার টাকা। আমার গণ্ডির মধ্যে যে কয়জন মানুষ ছিলেন তাদের কাছে সাইকেল চালিয়ে যেতাম ব্যাগে নকশিকাঁথা বা থ্রিপিস নিয়ে। যেহেতু আমার কোনো দোকান ভাড়া নেই। আমি একটু কম দামে পণ্য দিতাম। অল্প কয়েকদিনের মধ্যে বেশ ভালো সাড়া পেলাম। ২০১৯ সালে ফার্মগেটে জেনেটিক মার্কেটে একটি দোকান নিলাম। হঠাৎ করে ব্যবসা খারাপ চলায় দোকানের তিন মাসের ভাড়া দিতে পারিনি। পরে দোকানের মালিক দোকানে তালা দিয়ে দেন। আমি অনেক অনুরোধ করলেও তিনি দোকানের তালা খুলে দেননি। আমাকে বিপদে পড়তে দেখে তিনি আমাকে বাজে প্রস্তাব দেন। আমি মাথা নতো করিনি। মার্কেটের দোকান মালিক সমিতিকে লিখিত বিচার দিলাম। এর পরিপ্রেক্ষিতে মার্কেটের সবার সামনে তিনি আমার কাছে ক্ষমা চান। তিনি তা ভুলে যাননি। ২০২০ সালে একদিন রাস্তায় পেয়ে আমার সঙ্গে অশালীন আচরণ করেন। আমার ওড়না টেনে ধরেন। এ ঘটনার পর আমি মামলা করি।  কোনো অপরাধ না করেও চারদিকের মানুষের কাছে অপরাধী হয়ে গেলাম। মা-বাবাও আমাকে ভুল বুঝলেন।’
নিজের সংগ্রামের কথা বলে চলেন মাধবী– “ব্যবসা নেই। হাতে টাকা নেই। পরিবার বা বন্ধু-বান্ধবও পাশে নেই। আমি হাঁপিয়ে উঠছিলাম। হঠাৎ আমার মনে হয়েছে, প্রজাপতি বেঁচে থাকে মাত্র ২৮ ঘণ্টা। এরই মধ্যে সে চমৎকার পাখা মেলে দুনিয়াকে জানান দিয়ে যায়। আমার মনে হলো– একটাই তো জীবন। এখানে মানুষের জন্য কিছু করতে হবে। তখন শূন্য হাতে সাইকেল নিয়ে বের হয়ে যাই। উদ্দেশ্য– মানুষকে ক্যান্সার সম্পর্কে সচেতন করা। বিশেষ করে ব্রেস্ট ক্যান্সার ও জরায়ু ক্যান্সার নিয়ে স্কুল বা উঠানে বসে নারীদের সচেতন করতাম। এ কাজ করতে গিয়ে সচেতনতা তো হয়েছেই। আমি পুরো বাংলাদেশের কোথায় কী বিখ্যাত, তা কাছ থেকে দেখেছি এবং কিছু ভালো মানুষের সঙ্গে পরিচয় হয়। পরে তারা আমার ব্যবসায় সাহায্য করেন। ২০২১ সালে আইপিডিসি ফাইন্যান্স এবং ডেইলি স্টারের উদ্যাগে ‘অদম্য সাহসী নারী’ হিসেবে নির্বাচিত হই। সেখানে ২ লাখ টাকা পুরস্কার পাই। সেটি দিয়ে আবার ব্যবসা শুরু করি। শোরুম নিলাম। জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার বাউশি বাজারে নকশিকাঁথা উৎপাদন কেন্দ্রে একটি কারখানা খুলি।” 
মাধবী মার্ট এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। মাধবী বলেন, ‘আমি চাই আমার বাংলাদেশ পুরো পৃথিবীর ঘরে ঘরে থাকুক। দু’এক বছর ধরে আমরা পোস্ট অফিসের মাধ্যমে বিশ্বের ৫০টির বেশি দেশে পণ্য পাঠাচ্ছি।’ 
এ নারী উদ্যোক্তার কথা শুনে শুধু এটাই মনে হচ্ছিল– নারীকে সাহসী হতে হবে। এভাবেই এগিয়ে আসতে হবে। অধিকার বুঝে নিয়ে অংশগ্রহণ করতে হবে। নারীর অংশগ্রহণ ছাড়া দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। কর্মসংস্থান ও শ্রমবাজারে নারীর অংশীদারিত্ব সহজ করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। আরও পদক্ষেপ এবং এর তদারকি জরুরি। সেই সঙ্গে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দরকার বলে মনে করেন মাধবী। v

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: নকশ ক ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

বিএনপি নেতার নেতৃত্বে সরকারি দিঘি থেকে মাছ লুট

সাতক্ষীরার শ্যামনগরে দুই বিএনপি নেতার নেতৃত্বে ১৪ বিঘা আয়তনের কালিঞ্চি সরকারি দিঘি থেকে লক্ষাধিক টাকার মাছ লুটের অভিযোগ উঠেছে। শনিবার সকালে উপজেলার কালিঞ্চি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

এ দুই নেতা হলেন উপজেলার রমজাননগর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মজিদ ও অর্থ সম্পাদক সোহরাব আলী। মাছ ধরায় বাধা দিলে তারা দাবি করেন, পাঁচ বছর আগে দিঘিটি লিজ নিয়ে মাছ ছাড়া হয়েছিল।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ভোরে ১০/১২ জন জেলে নিয়ে কালিঞ্চি সরকারি দিঘিতে জাল টানতে শুরু করেন প্রশান্ত, সুকুমার ও শাহিন। এতে বাধা দিলে তারা বিএনপি নেতা সোহরাব আলীর নির্দেশে মাছ ধরার কথা জানান। জাল টেনে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ধরে স্থানীয় সোনারমোড় মৎস্য আড়তে নিয়ে বিক্রি করেন তারা।

ইউপি সদস্য আজগর আলী বুলু জানান, বহিরাগত জেলেদের নিয়ে সকাল থেকে মাছ লুট করা হয়। তিনটি মোটরসাইকেলযোগে ছয়টির বেশি বস্তায় করে এসব মাছ আড়তে নিয়ে বিক্রি করা হয়। কয়েকটি ভেটকি মাছ ২০ কেজিরও বেশি ওজনের। তিনি বলেন, আশপাশের ছয় গ্রামের প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার মানুষ এই দিঘির পানি ব্যবহার করে। এভাবে জাল টেনে মাছ ধরায় তারা দিঘি থেকে খাওয়ার উপযোগী পানি নিতে পারছেন না।

মাছ ধরার বিষয়ে সুকুমার মণ্ডলের ভাষ্য, প্রায় পাঁচ বছর আগে দিঘিতে এসব মাছ ছাড়েন সোহরাব আলী। তাঁর নির্দেশেই তারা মাছ ধরেছেন। এ বিষয়ে সোহরাব আলী বলেন, অসুস্থতার কারণে তিনি বাড়িতে অবস্থান করছেন। তবে জেলা পরিষদের এ দিঘি লিজ নিয়ে বিএনপি নেতা আবদুল মজিদ ও ছাত্রদল নেতা রাকিব হোসেন মাছ ছেড়েছিলেন।

আবদুল মজিদ দাবি করেন, মাছ ধরার বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। তবে সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রদলের সাবেক নেতা রাকিব তাঁকে মাছ ধরার কথা জানিয়েছিলেন।

নিজেকে জেলা ছাত্রদলের সাবেক নেতা পরিচয় দিয়ে রাকিব হোসেন বলেন, সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম মোস্তফা মুকুল জেলা পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে তাঁর ডাকের দিঘির মাছ লুট করে নিয়েছিলেন। বাধ্য হয়ে তিনি তাঁর ছাড়া মাছ এতদিন পর তুলে নিয়েছেন।

সরকারি দিঘিতে এভাবে মাছ ধরার কথা না জানিয়ে জেলা পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা (চলতি দায়িত্ব) মো. খলিল হোসেন বলেন, দিঘি কাউকে ইজারা দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। তত্ত্বাবধায়ককে ঘটনাস্থলে পাঠিয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ