বিশ্বব্যাপী ১৪ ফেব্রুয়ারি ওবিআর দিবস (ওয়ান বিলিয়ন রাইজিং) উদযাপন হতে যাচ্ছে। নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে ২০১৩ সালে শুরু হওয়া এই বৈশ্বিক আন্দোলনের এক যুগ পূর্তি হবে এ বছর। এ উপলক্ষে ২৬ জানুয়ারি মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে ওবিআর লঞ্চিং সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এ বছর বিশ্বব্যাপী ওবিআরের মূল প্রতিপাদ্য হলো ‘রাইজ ফর ফ্রিডম, রাইজ অ্যাগেইনস্ট ফ্যাসিজম’ (স্বাধীনতার জন্য জাগো, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে জাগো)।
ড্রাম বাজিয়ে লঞ্চিং অনুষ্ঠানের সূচনার পর ওয়ান বিলিয়ন রাইজিংয়ের ২০২৫ সালের মূল প্রতিপাদ্য ইংরেজিতে পাঠ করেন নারীবাদী গবেষক ও মানবাধিকার সংগঠন বহ্নিশিখার প্রতিষ্ঠাতা তাসাফী হোসেন। আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় লিগ্যাল এইড সম্পাদক মানবাধিকারকর্মী রেখা সাহা, পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী অধিকারবিষয়ক আন্দোলনের গবেষক ও মানবাধিকারকর্মী ইলিরা দেওয়ান এবং সাংগাতের কোর কমিটির সদস্য ও প্রাগ্রসরের প্রতিষ্ঠাতা মানবাধিকারকর্মী ফওজিয়া খোন্দকার ইভা।
রেখা সাহা বলেন, ‘সমাজের অর্ধেক অংশ নারী। এই অর্ধেক অংশকে অন্ধকারে রেখে কখনোই আলোর আশা করা যায় না। কারণ, নারী যখনই নির্যাতনের শিকার হয়, তখন তার পরিবারকেও ভুক্তভোগী হতে হয়। একটি প্রবাদ আছে, অর্ধেক আকাশ আঁধারে ঢেকে গেলে পুরো আকাশ আলোকিত হতে পারে না। এই যুগে এসেও আমাদের দেখতে হয় মেয়েরা বাইরে নিরাপদে চলাফেরা করতে পারে না, হয়রানির শিকার হয়। তাই নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাইকে প্রতিবাদী হতে হবে।’
ইলিরা দেওয়ান বলেন, ‘সবার মধ্যে নারীবাদ বিষয়ে একটি ভুল ধারণা রয়েছে, নারীবাদ বোধহয় পুরুষের বিরুদ্ধে। এটি একটি ভুল ধারণা। নারীবাদ কখনোই পুরুষের বিরুদ্ধে নয়। বরং পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে, যে পুরুষতন্ত্র সমাজে নারীকে তার সব অধিকার থেকে বঞ্চিত করার বন্দোবস্ত করে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর সবাই ভেবেছিল সবার সমান অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে। দেখা গেল এখনও পর্যন্ত পাহাড়ের আদিবাসী মানুষ নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন, আদিবাসী নারীরা ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন। এর বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে হবে সবাইকে। নয়তো এ আন্দোলন ব্যর্থ হবে।’
ফওজিয়া খোন্দকার ইভা বলেন, ‘সারাবিশ্বে যেখানে নারীর সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা নিয়ে সব দেশ কাজ করে চলেছে, সেখানে আমাদের দেশে এখনও পর্যন্ত নারীর স্বাভাবিক চলাফেরা বিধিনিষেধের সম্মুখীন হয়। যেখানে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিশাল ভূমিকা রেখে চলেছেন, শিক্ষা-দীক্ষায় সমান তালে এগিয়ে সমাজ ও দেশকে এগিয়ে নিয়ে সমৃদ্ধ করে যাচ্ছেন নারীরা; সেখানে এখনও পর্যন্ত নারীকে পোশাকের দোহাই দিয়ে, ধর্মের দোহাই দিয়ে নির্যাতন ও হেনস্তা করা হয়, নারীর চলাফেরাকে সীমিত করে দেওয়ার চক্রান্ত চলে। পুরুষতান্ত্রিক নিপীড়নমূলক সমাজ যেদিন সৃষ্টি হয়, নারীবাদের জন্মও সেদিন থেকেই। আমাদের সবাইকে নারী হোক বা পুরুষ, নারীর প্রতি নির্যাতন, নিপীড়ন ও সব রকম অন্যায়-বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে।’ 
ফওজিয়া খোন্দকার বক্তব্য শেষে এ বছরের ওয়ান বিলিয়ন রাইজিং ২০২৫-এর উদ্বোধন ঘোষণা করেন। ১৪ ফেব্রুয়ারি মানববন্ধন এবং ২২ ফেব্রুয়ারি দিনব্যাপী সেমিনার, চলচ্চিত্র প্রদর্শনী কর্মসূচি পালনের কথা জানান তিনি।
আলোচনা শেষে নারীপক্ষ, বাদাবন সংঘ, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি, প্রাগ্রসর, একশনএইড বাংলাদেশ, ব্লাস্ট, এএলআরডি, নিজেরা করি, মানব প্রগতি সংঘ, উইমেন্স উইন্ডোজ, নাগরিক উদ্যোগ, প্রশিকা, পথিকৃৎ ফাউন্ডেশন, উইমেন ইন্টারনেট গভর্ন্যান্স ফোরাম, সাংগাতের সদস্য এবং লেখক, চলচ্চিত্র নির্মাতাসহ উপস্থিত মানবাধিকারকর্মীরা ক্যানভাসে লিখে এবং ছবি এঁকে নিজেদের ভাবনা ও প্রতিবাদ তুলে ধরেন। v

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

আবরার ফাহাদের স্বাধীনতা পদকের ক্যাটাগরি হওয়া উচিত মুক্তিযুদ্ধ: উপদেষ্টা ফারুকী

বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদের মরণোত্তর স্বাধীনতা পদকের ক্যাটাগরি ‘মুক্তিযুদ্ধ’ হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। আজ সোমবার নিজের ফেসবুক পেজে এক পোস্টে তিনি এ মন্তব্য করেন।

পোস্টে সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, ‘আবরার ফাহাদের নাম সামনে আসায় সর্বস্তরের মানুষের উচ্ছ্বসিত প্রশংসার পাশাপাশি একটা নির্দিষ্ট দলের লোকদের অবুঝ প্রশ্ন দেখতে পাচ্ছি, “আবরার ফাহাদকে স্বাধীনতা পদক কী বিবেচনায় দেওয়া হবে?” কী বিবেচনায় দেওয়া উচিত, সেটা ব্যাখ্যা না করে আমি বলতে চাই, কোন ক্যাটাগরিতে দেওয়া উচিত। তাহলেই কেন দেওয়া উচিতের উত্তর পাওয়া যাবে। আমার একান্ত ব্যক্তিগত বিবেচনা, আবরার ফাহাদের ক্যাটাগরি হওয়া উচিত, মুক্তিযুদ্ধ! মুক্তিযুদ্ধের ফল স্বাধীনতা। স্বাধীনতার প্রধান শর্ত সার্বভৌমত্ব। আর সার্বভৌমত্বের ভ্যানগার্ড (অগ্রদূত) আবরার ফাহাদ।’

এবারের স্বাধীনতা পদক একুশে পদকের মতোই অনন্য হবে মন্তব্য করে সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী আরও বলেন, ‘এবারের স্বাধীনতা পদক একুশে পদকের মতোই অনন্য হবে। আবরার ফাহাদের কথাটা যেকোনোভাবেই হোক সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ার পর অনেক সাংবাদিক ভাইবোন এর সত্যতা জানতে চেয়েছেন। তাঁদের সবার জন্য উত্তর—একটু অপেক্ষা করেন, পুরো তালিকাই জানতে পারবেন। অসাধারণ সব নাম দেখতে পাবেন।’

ফেসবুক পোস্টে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী আরও বলেন, ‘আবরার ফাহাদ একটা সিম্বল (প্রতীক), যার শক্তি যদি আপনি অনুমান না করতে পারেন, তাহলে বলব জুলাইতে ফিরে যান। গিয়ে তরুণবক্ষে কান পাতেন। যার নিশ্বাস শুনবেন, তার নামই আবরার ফাহাদ।’

এর আগে আজ অন্তর্বর্তী সরকারের যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে আবরার ফাহাদ

মরণোত্তর স্বাধীনতা পদক ২০২৫ পাচ্ছেন বলে জানান।

আবরার ফাহাদ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী ছিলেন। ২০১৯ সালের অক্টোবরে তাঁকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে বর্তমানে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের কিছু নেতা-কর্মী।

আরও পড়ুনমরণোত্তর স্বাধীনতা পদক ২০২৫ পাচ্ছেন আবরার ফাহাদ৯ ঘণ্টা আগে

আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার পোস্টে বলা হয়, ‘অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর সাহসিকতার প্রতীক, মুক্তচিন্তার এক প্রতিচ্ছবি আবরার ফাহাদ। মরণোত্তর স্বাধীনতা পদক ২০২৫-এ ভূষিত হওয়া তাঁর আত্মত্যাগের স্বীকৃতি। তাঁর আদর্শ আমাদের আলোকিত করে, ন্যায়বিচারের পথে এগিয়ে যেতে অনুপ্রেরণা দেয়। জাতি তোমাকে ভুলবে না, আবরার!’

আরও পড়ুনএবার কোন যোগ্যতায় স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে, জানালেন শিক্ষা ও আইন উপদেষ্টা০২ মার্চ ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কেয়ার বাংলাদেশে চাকরি, বেতন ১ লাখ ৮৫ হাজার
  • বেতনের ৪৮ লাখ টাকা এখনও পাননি সাকিব
  • তাসমিয়া কসমেটিকসের পরিবেশক সম্মেলন ২০২৫ অনুষ্ঠিত
  • আজ টিভিতে যা দেখবেন (৪ মার্চ ২০২৫)
  • প্রেমিকার সাবেক স্বামীর ফাঁদে প্রাণ গেছে তাজকীরের
  • আবরার ফাহাদের স্বাধীনতা পদকের ক্যাটাগরি হওয়া উচিত মুক্তিযুদ্ধ: উপদেষ্টা ফারুকী
  • সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো এখনও পুরোপুরি কার্যকর হয়নি: রিজভী
  • কাজ না করে আবহাওয়ার দিকে তাকিয়ে কর্মকর্তারা
  • বিজিএমইএ নির্বাচনে ৬৯০ ভুয়া ভোটার
  • ভারতের কারণে অস্ট্রেলিয়ার পর দ. আফ্রিকাও গেল দুবাইতে