উম্মে কুলসুম পপি ও আবু সাইদ আল সাগর। কৃষির সঙ্গেই তাদের বসবাস। ফেসবুক ব্যবহার করেন অথচ পপির বানানো কৃষিবিষয়ক ভিডিও কনটেন্ট দেখেননি, এমন লোক খুঁজে পাওয়া দুষ্কর! নিজেকে গ্রামের মেয়ে পরিচয় দেওয়া পপি মাটির সোঁদা গন্ধেই নিজেকে খুঁজে বেড়ান। ক্যামেরার আড়ালে থেকে পপির স্বপ্নের সঙ্গে নিজের স্বপ্নের পথে ছুটে চলা তরুণ সাগর। এই দুই স্বপ্নবাজের ফেলে আসা দিন আর তাদের আগামীর স্বপ্নের কথা শুনেছেন আশিক মুস্তাফা

কৃষির সঙ্গেই বসবাস উম্মে কুলসুম পপি ও আবু সাইদ আল সাগরের। লালমনিরহাটের এক ছোট্ট গ্রামে বেড়ে ওঠা পপির। সাগরের জন্ম ও বেড়ে ওঠা রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার ধর্মপুর গ্রামে। দু’জনের পড়াশোনার শুরুটা গ্রামে। পরে একসঙ্গে দেখা বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে। দু’জনেরই শৈশব ও কৈশোরের স্মৃতির একটি বড় অংশজুড়ে রয়েছে দেশের গ্রামীণ সৌন্দর্য। তাই তো প্রকৃতি ও কৃষির প্রতি ভালোবাসার দরুন ছোট, তথ্যবহুল ভিডিও বানাতে থাকেন পপি। তাঁর রসদ জোগাতে থাকেন সাগর। ভিডিওতে বিভিন্ন ফুল, ফলের চাষ নিয়ে কথার পাশাপাশি থাকে কৃষিবিষয়ক নানা কৌশল নিয়ে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণও। আস্তে আস্তে এসব ভিডিও অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ে। মেলে মানুষের অকুণ্ঠ ভালোবাসা। ফলে প্রকৃতি ও কৃষিতেই নিজেদের ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে থাকেন তারা। সেই সঙ্গে অসংখ্য তরুণকে দেখাচ্ছেন কৃষিতে ক্যারিয়ার গড়ার স্বপ্ন। পপির ফেসবুক প্রোফাইল এবং পেজে তাঁকে নিয়মিত অনুসরণ করছেন ৩০ লাখেরও বেশি মানুষ। প্রতিনিয়ত বাড়ছে এই সংখ্যা। ইউটিউবে তাঁর সাবস্ক্রাইবার ৪ লাখ ৫৯ হাজারের বেশি।  
যে কারণে পপির ভিডিও অন্যরকম
ভিডিও তো অনেকেই তৈরি করে। পপির ভিডিওগুলো কেন এত গ্রহণযোগ্যতা পায় দর্শকের কাছে। এটি কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আসলে যে কোনো কনটেন্ট তৈরির আগে আমি সুনির্দিষ্ট বিষয় খুঁজে বের করি। তারপর বিষয়টি কীভাবে সহজভাবে তুলে ধরা যায়, তা নিয়ে কাজ করি। একের পর এক ফলের বাগান থেকে শুরু করে বিস্তৃত মাঠে ঘুরে বেড়াই। নিজে বিষয়টা সম্পর্কে জেনে তারপর সব ধরনের দর্শকের কথা মাথায় রেখে ভিডিও তৈরি করি।’
পপির ভিডিও কনটেন্ট ও ইউটিউব চ্যানেলে যারা চোখ রাখেন, তারা এটি ভালোভাবেই আঁচ করতে পারেন। তাঁর চ্যানেলের প্লে-লিস্টও সুনির্দিষ্ট কনটেন্ট দিয়ে সুসজ্জিত। ফলে দর্শক নিজের পছন্দ অনুযায়ী কনটেন্ট খুঁজে নিতে পারেন। আপনি কী ধরনের মাছ, মসলা, ফল কিংবা ঔষধি গাছ সম্পর্কে জানতে চান তা অনায়াসেই পেয়ে যাবেন পপির ইউটিউব চ্যানেলে। নিজের প্রথম ভিডিওর কথা মনে করিয়ে দিয়ে পপি বলেন, ‘মনে পড়ে প্রথম ভিডিওর কথা। সেই ভিডিওটি বানিয়েছিলাম তিস্তার এক চরে। কুমড়া চাষ নিয়ে। সেই ভিডিওতে আমি প্রত্যাশার চেয়েও বেশি প্রশংসা পেয়েছি; যা আমাকে পরবর্তী সময়ে কাজের প্রতি উৎসাহ দেয়।’
উদ্যোক্তা হিসেবে তাদের পথচলা ও প্রিমিয়াম ফ্রুটসের গল্প
২০২০ সালে করোনার সময়ে পপি ও সাগর যৌথভাবে চালু করেন ‘প্রিমিয়াম ফ্রুটস’ নামের নতুন উদ্যোগ। ২০২২ সালে এটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়। এর মাধ্যমে মূলত তারা রংপুর, রাজশাহী, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও সাতক্ষীরার তাজা ও উচ্চমানের আম সারাদেশের পৌঁছে দিতে থাকেন। পরে সেটি আর উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোয় সীমাবদ্ধ থাকেনি। ছড়িয়ে পড়ে পুরো দেশে। তারা খাগড়াছড়ি থেকে পেঁপে, বান্দরবান থেকে পাহাড়ি কলা, রাঙামাটি থেকে জাম্বুরা সরবরাহসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ফল সংগ্রহ করতে থাকেন। ব্যবসায় গতি আনতে এবং গ্রাহককে সঠিক তথ্য দিতে কৃষক ও বাগান মালিকদের সঙ্গে সরাসরি কাজ শুরু করেন তারা। এ ছাড়া অগ্রিম ক্রয় চুক্তির মাধ্যমে এক বছর আগেই বাগানের ইজারা নেন। ফসল ফলানোর প্রক্রিয়ার সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত হয়ে যান দু’জন। এতে ফলের গুণমান বজায় রাখতে তারা প্রতিটি পর্যায়ে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে থাকেন। একই সঙ্গে ফলের নিরাপত্তা ও বিশুদ্ধতার কথা ভেবে গাছ থেকে ফল নামানোর ১৫ থেকে ২০ দিন আগেই গাছে রাসায়নিক বা কীটনাশক ব্যবহার বন্ধ করে দেন। 
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও স্বপ্নের ডানা মেলা …
উদ্যোক্তা হিসেবে উম্মে কুলসুম পপি ও আবু সাইদ আল সাগরের পথচলা শুরু সেই ২০১৬ সাল থেকে; বিডি অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। প্রতিষ্ঠানটি মূলত রংপুরে ইলেকট্রনিক ডিভাইস সার্ভিসিংয়ের জন্য বিশেষায়িত একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম। প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে আবু সাইদ আল সাগর বলেন, ‘আমরা মূলত শিফটিং সার্ভিস দিয়ে থাকে। সেই সঙ্গে টেকনিশিয়ান হোম সার্ভিস। আমাদের নির্দিষ্ট কিছু টেকনিশিয়ান রয়েছেন। তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে সেবা দিয়ে আসেন। এ ছাড়া দুধ সরবরাহ, গ্যাস সিলিন্ডার সরবরাহ ও রেন্ট-এ-কার সার্ভিস দিয়ে থাকি। বর্তমানে আমাদের সঙ্গে নিয়মিত ও অনিয়মিত প্রায় ৫০ জন লোক কাজ করছেন। শুরুতে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় আমাদের ধারণাপত্র দিতে থাকি। তখন আমাদের ধারণাপত্র ব্র্যাক আয়োজিত আরবান ইনোভেশন চ্যালেঞ্জ অ্যাওয়ার্ড-২০১৭ জিতে নেয়। পুরস্কার হিসেবে তারা আমাদের ৫ লাখ টাকা দেয়। সেই টাকা দিয়ে আমরা কাজ শুরু করি। দ্বিতীয় ধাপে ২০১৮ সালে বিনিয়োগ হিসেবে আমাদের ২০ লাখ টাকা দেওয়া হয়। এ ছাড়া আমরা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে থাকি। এক প্রতিযোগিতা থেকে আমরা সিঙ্গাপুর গিয়েছিলাম। এ ছাড়া সেরা নবীন উদ্যোক্তা হিসেবে বেশ কিছু অ্যাওয়ার্ড অর্জন করি। এসব অর্জন আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে যেতে সহায়তা করে। ২০১৯ সালে রংপুর শহরে বাসা ভাড়া নিয়ে বিডি অ্যাসিস্ট্যান্টকে প্রতিষ্ঠানে রূপ দিই আমরা। পরে সেখান থেকে নিজেদের কাজ পরিচালনা করতে থাকি। বর্তমানে সেই অফিস থেকেই বিডি অ্যাসিস্ট্যান্ট ও প্রিমিয়াম ফ্রুটসের কার্যক্রম পরিচালিত হয়।’
আগামীর স্বপ্ন
নিজেদের স্বপ্নের কথা জানতে চাইলে আবু সাইদ আল সাগর বলেন, ‘আমরা আগামী পাঁচ বছরে ১০০ জন প্রশিক্ষিত টেকনিশিয়ানের ক্যারিয়ার গড়ে দিতে চাই বিডি অ্যাসিস্ট্যান্টে। প্রিমিয়াম ফ্রুটস থেকে নিরাপদ ফল নিয়েও কাজ করছি। তাছাড়া আস্তে আস্তে বিদেশের মতো আমরা প্রসেসিং ফুডেও যাব। সেই সঙ্গে রপ্তানিও করতে চাই নিরাপদ ফল। আমরা নতুন একটি প্রজেক্টের কাজ শুরু করেছি। বলতে পারেন এটি আমাদের স্বপ্নের প্রজেক্ট। এখানে অ্যাগ্রো ট্যুরিজমের সফল বাস্তবায়ন ঘটাতে চাই আমরা। এখানে পাওয়া যাবে বিভিন্ন ফলমূল, শাকসবজি, বাগানের তাজা ফলমূল, পুকুরের মাছ, চোখর সামনে ঘুরে বেড়াবে গরু। এই গরুর দুধ খেতে পারবেন আগতরা। আশা করি, ২০২৫ সালের মাঝামাঝিতে এসে মানুষ সরাসরি এই সেবা নিতে পারবেন।’
উম্মে কুলসুম পপি বলেন, ‘কৃষিতে আমাদের অনেক সম্ভাবনা। অথচ এখানে আমাদের আগ্রহ খুবই কম। আরও অনেকের সম্পৃক্ততা প্রয়োজন এই পেশায়। তখন সম্ভাবনার সব দ্বার উন্মুক্ত করে নতুন শক্তি ও ধারণা নিয়ে আসা যাবে।  এই আগ্রহ তৈরি এবং সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচনেই কাজ করছি আমরা।’  
পপি এবং সাগরের স্বপ্ন নিশ্চয়ই বাস্তবায়ন হবে অচিরেই। সেই স্বপ্ন পূরণের পথ চেয়ে থাকবে না তরুণরা। নিজেরাই নেমে পড়বে কাজে। তাহলেই গড়ে উঠবে আগামীর নিরাপদ বাংলাদেশ! 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প র ম য় ম ফ র টস কনট ন ট ক জ কর

এছাড়াও পড়ুন:

সিন্ধু নদের পানি সরবরাহ আটকে দেওয়ার ভারতের হুমকিতে পাকিস্তানে আতঙ্ক

সিন্ধু নদ থেকে সামান্য দূরের একটি সবজিখেতে কীটনাশক ছিটাচ্ছিলেন পাকিস্তানের কৃষক হোমলা ঠাকুর। তিনি তাঁর ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন। একদিকে সূর্যের প্রখর তাপ, আরেক দিকে নদীর পানি কমে যাচ্ছে। এর মধ্যে আবার কাশ্মীরে ভয়াবহ হামলার পর ভারত উজানে সিন্ধুর পানি সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে।

৪০ বছর বয়সী হোমলা ঠাকুর বলেন, ‘যদি তারা পানি বন্ধ করে দেয়, তাহলে এই পুরো এলাকা, পুরো দেশ থর মরুভূমিতে পরিণত হবে।’ কথাগুলো বলে স্প্রেগানের ট্যাংক ভরাতে নদীর দিকে ফিরে যান হোমলা।

‘আমরা না খেয়ে মরব’

দক্ষিণ-পূর্ব সিন্ধু প্রদেশের লতিফাবাদ এলাকায় প্রায় ৫ একর (প্রায় ২ হেক্টর) জায়গাজুড়ে চাষাবাদ করছেন হোমলা। তিব্বত থেকে উৎপত্তি হওয়া সিন্ধু নদ ভারতের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে এ এলাকায় এসে আরব সাগরে পতিত হয়েছে।

১৫ জনেরও বেশি পাকিস্তানি কৃষক ও একাধিক বিশেষজ্ঞের বক্তব্যেও হোমলা ঠাকুরের উদ্বেগগুলো প্রতিধ্বনিত হয়েছে। বিশেষ করে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বৃষ্টি কম হওয়ায় এমন উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় ১৯৬০ সালে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে হওয়া সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি গত বুধবার একতরফা স্থগিত করেছে নয়াদিল্লি। এ চুক্তির কারণে পাকিস্তানের ৮০ শতাংশ কৃষি খামারের জন্য পানি পাওয়ার পথ নিশ্চিত হয়েছিল।

চুক্তি স্থগিত করে ভারত বলেছে, যতক্ষণ পর্যন্ত না পাকিস্তান নির্ভারযোগ্যভাবে আন্তসীমান্ত সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন দেওয়া বন্ধ করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত স্থগিতাদেশ বহাল থাকবে।

দুই দেশের সরকারি কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারত তাৎক্ষণিকভাবে পানিপ্রবাহ বন্ধ করতে পারবে না। কারণ, চুক্তি অনুযায়ী, অভিন্ন তিনটি নদীতে ভারত শুধু জলবিদ্যুৎ প্রকল্প গড়তে পারে, বড় কোনো জলাধার বা বাঁধ নির্মাণ করতে পারে না। তবে কয়েক মাসের মধ্যে পরিস্থিতি পাল্টাতে পারে।

গত মঙ্গলবার বিকেলে কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর হামলার ঘটনায় ২৬ জন নিহত হন। ভারতের দাবি, কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর হামলা চালানো তিনজনের দুজন পাকিস্তানের নাগরিক। তবে ইসলামাবাদ এ ঘটনায় নিজেদের সংশ্লিষ্টতা থাকার কথা অস্বীকার করেছে। তারা বলেছে, ‘পাকিস্তানের জন্য নির্ধারিত পানির প্রবাহ বন্ধ বা বাধাগ্রস্ত করার যেকোনো চেষ্টা যুদ্ধ ঘোষণার শামিল হবে।’

সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তির মধ্য দিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে অভিন্ন সিন্ধু নদ এবং এর শাখা নদীগুলোর পানিবণ্টন হয়ে আসছে।

দুই দেশের সরকারি কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারত তাৎক্ষণিকভাবে পানিপ্রবাহ বন্ধ করতে পারবে না। কারণ, চুক্তি অনুযায়ী, অভিন্ন তিনটি নদীতে ভারত শুধু জলবিদ্যুৎ প্রকল্প গড়তে পারে, বড় কোনো জলাধার বা বাঁধ নির্মাণ করতে পারে না। তবে কয়েক মাসের মধ্যে পরিস্থিতি পাল্টাতে পারে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে ভারতের পানিসম্পদমন্ত্রী চন্দ্রকান্ত রঘুনাথ পাতিল বলেন, ‘সিন্ধু নদের এক ফোঁটা পানিও যেন পাকিস্তানে না পৌঁছাতে পারে, তা আমরা নিশ্চিত করব।’

এ নিয়ে পাকিস্তানিদের মধ্যে আতঙ্কের বিষয়ে তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল। তিনি জবাব দেননি।

সিন্ধু নদের এক ফোঁটা পানিও যেন পাকিস্তানে না পৌঁছাতে পারে, তা আমরা নিশ্চিত করব।চন্দ্রকান্ত রঘুনাথ পাতিল, ভারতের পানিসম্পদমন্ত্রী

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুই ভারতীয় সরকারি কর্মকর্তা বলেছেন, আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই ভারত নিজেদের কৃষিকাজের জন্য খালের মাধ্যমে পানি সরিয়ে নিতে পারে। পাশাপাশি জলবিদ্যুৎ প্রকল্পেরও পরিকল্পনা করছে তারা। যেগুলো শেষ হতে চার থেকে সাত বছর সময় লাগতে পারে।

ভারতের কেন্দ্রীয় পানি কমিশনের সদ্য অবসরপ্রাপ্ত প্রধান কুশবিন্দর ভোহরা বলেন, ভারত তাৎক্ষণিক যা করতে পারে তা হলো, নদীগুলোর পানিপ্রবাহ–সংক্রান্ত তথ্য ভাগাভাগি বন্ধ করা, বন্যা সতর্কতা দেওয়া বন্ধ রাখা ও পার্মানেন্ট সিন্ধু কমিশনের আওতায় হওয়া বার্ষিক বৈঠকগুলো এড়িয়ে যাওয়া।

পার্মানেন্ট সিন্ধু কমিশন দুই দেশের একজন করে কর্মকর্তার নেতৃত্বে পরিচালিত হয়।

কুশবিন্দর একসময় ভারতের সিন্ধুবিষয়ক কমিশনারও ছিলেন এবং বর্তমানে মাঝেমধ্যে সরকারকে পরামর্শ দেন। তিনি আরও বলেন, ‘কখন পানি আসছে, কতটা আসছে, সেসব তথ্য তারা (পাকিস্তান) বেশি পাবে না। তথ্য ছাড়া তারা পরিকল্পনা করতে পারবে না।’

অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, বিষয়টি শুধু (পাকিস্তানের) কৃষিতে সীমাবদ্ধ থাকবে না। পানির ঘাটতির কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপরও প্রভাব পড়বে। এতে অর্থনীতি দুর্বল হয়ে পড়তে পারে।

পাকিস্তানের অর্থনীতিবিদ ভাকার আহমেদ মনে করেন, ভারতের সিন্ধু চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার হুমকিকে পাকিস্তান যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করেনি। তিনি বলেন, ‘বিশেষ করে বন্যার সময় (সিন্ধু দিয়ে) দ্রুত পানিপ্রবাহ থামানো যাবে, এমন কোনো অবকাঠামো এখনো ভারতের নেই। তাই এ সময়টা পাকিস্তানের জন্য তাদের পানি খাতে বিদ্যমান অদক্ষতাগুলো দূর করার একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ তৈরি করেছে।’

এই অর্থনীতিবিদের মতে, ‘পানি খাতে ব্যবস্থাপনাগত অনেক অদক্ষতা রয়েছে ও অপচয় হচ্ছে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুই ভারতীয় সরকারি কর্মকর্তা বলেন, আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই ভারত নিজেদের কৃষিকাজের জন্য খালের মাধ্যমে পানি সরিয়ে নিতে পারে। পাশাপাশি জলবিদ্যুৎ প্রকল্পেরও পরিকল্পনা করছে তাঁরা, যেগুলো শেষ হতে চার থেকে সাত বছর লাগতে পারে।বিদ্যমান মতপার্থক্য

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার সিন্ধু পানি চুক্তি নিয়ে নতুন করে আলোচনার চেষ্টা করে আসছে। কিষানগঙ্গা ও রাতলে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলোর জলাধারের আয়তন নিয়ে দুই দেশ হেগের পার্মানেন্ট কোর্ট অব আরবিট্রেশনে তাদের মতপার্থক্য মেটানোর চেষ্টা করছে।

ভারতের কেন্দ্রীয় পানি কমিশনের সদ্য অবসরপ্রাপ্ত প্রধান কুশবিন্দর ভোহরা বলেন, ‘এখন আমরা নিজেদের ইচ্ছেমতো আমাদের প্রকল্পগুলো এগিয়ে নিতে পারব।’

গত বৃহস্পতিবার এক চিঠিতে ভারত পাকিস্তানকে বলেছে, চুক্তি স্বাক্ষরের সময় থেকে এখন জনসংখ্যা বেড়ে যাওয়াসহ পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছে এবং অধিক পরিমাণে পরিবেশবান্ধব জ্বালানি উৎসের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের কথা উল্লেখ করেছে তারা।

সিন্ধু প্রদেশের ১৫০ একরের কৃষি খামারের মালিক নাদিম শাহ তুলা, আখ, গম ও সবজি চাষ করেন। তিনিও পানির সংকট নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

নাদিম বলেন, ‘আমরা আল্লাহর ওপর বিশ্বাস রাখি, তবে ভারতের কার্যক্রম নিয়ে আমাদের উদ্বেগ রয়েছে।’

আরও পড়ুনসিন্ধু পানি চুক্তি কী, ভারত কি এটি বাতিল করতে পারে২০ ঘণ্টা আগে

প্রায় ২৫ কোটি জনসংখ্যার দেশ পাকিস্তানের জন্য নির্ধারিত তিনটি অভিন্ন নদীর পানি ১ কোটি ৬০ লাখ হেক্টর পরিমাণ জমির সেচকাজের জন্য ব্যবহৃত হয়, যা দেশের মোট কৃষিজমির প্রায় ৮০ শতাংশ।

করাচিভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পাকিস্তান অ্যাগ্রিকালচার রিসার্চের গবেষক ঘাশারিব শওকত বলেন, ভারতের এ ধরনের পদক্ষেপের কারণে এমন একটি ব্যবস্থার মধ্যে অনিশ্চয়তা ঢুকে গেছে, যা নিয়ে কখনো অনিশ্চয়তা দেখা দেওয়ার কথা ছিল না।

এই গবেষক আরও বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমাদের কাছে কোনো বিকল্প নেই। এ চুক্তির আওতায় থাকা নদীগুলোর ওপর শুধু কৃষি খাতই নয়, বরং নগরব্যবস্থা, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও কোটি কোটি মানুষের জীবনযাত্রা নির্ভর করে।’

পাকিস্তানি রাজনীতিকেরা বলছেন, ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর থেকে ভারত ও পাকিস্তান চারবার যুদ্ধে জড়ালেও এ চুক্তির ওপর প্রভাব পড়েনি। কিন্তু এবার চুক্তি স্থগিত হওয়ার বিষয়টি একটি বিপজ্জনক নজির স্থাপন করল।

পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যেই প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলা সংঘাতে আটকে আছি। আর আমি মনে করি, সিন্ধু পানি চুক্তি থেকে সরে গিয়ে আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকেও নতুন এক সংঘাতের দিকে ঠেলে দিচ্ছি। এটা কোনোভাবেই ঘটতে দেওয়া যাবে না।’

আরও পড়ুনএক ফোঁটা পানিও যাতে পাকিস্তানে না যায়, আমরা তা নিশ্চিত করব: ভারতের জলমন্ত্রী২৬ এপ্রিল ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘মানবিক করিডোর’ নিয়ে বৈশ্বিক অভিজ্ঞতা কী
  • ডিইপিজেডে বিদ্যুৎ নেই, ৯০ কারখানায় ছুটি
  • মঙ্গলবার ৭ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না যেসব জায়গায়
  • পাকিস্তানের সঙ্গে উত্তেজনার মধ্যে আরও ২৬টি রাফাল যুদ্ধবিমান কিনছে ভারত
  • পর্তুগাল ও স্পেনে নজিরবিহীন বিদ্যুৎ বিপর্যয়, পর্যুদস্তু জনজীবন
  • হাসপাতালে ডায়রিয়ার প্রকোপ শয্যা ও স্যালাইন সংকট
  • বিদ্যুৎ না থাকায় ডিইপিজেডে উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ
  • রাবিতে ছড়িয়ে পড়েছে ছোঁয়াচে রোগ ‘স্ক্যাবিস’
  • ভারতের সেনাবাহিনী যুদ্ধের জন্য কতটা সক্ষম
  • সিন্ধু নদের পানি সরবরাহ আটকে দেওয়ার ভারতের হুমকিতে পাকিস্তানে আতঙ্ক