উম্মে কুলসুম পপি ও আবু সাইদ আল সাগর। কৃষির সঙ্গেই তাদের বসবাস। ফেসবুক ব্যবহার করেন অথচ পপির বানানো কৃষিবিষয়ক ভিডিও কনটেন্ট দেখেননি, এমন লোক খুঁজে পাওয়া দুষ্কর! নিজেকে গ্রামের মেয়ে পরিচয় দেওয়া পপি মাটির সোঁদা গন্ধেই নিজেকে খুঁজে বেড়ান। ক্যামেরার আড়ালে থেকে পপির স্বপ্নের সঙ্গে নিজের স্বপ্নের পথে ছুটে চলা তরুণ সাগর। এই দুই স্বপ্নবাজের ফেলে আসা দিন আর তাদের আগামীর স্বপ্নের কথা শুনেছেন আশিক মুস্তাফা

কৃষির সঙ্গেই বসবাস উম্মে কুলসুম পপি ও আবু সাইদ আল সাগরের। লালমনিরহাটের এক ছোট্ট গ্রামে বেড়ে ওঠা পপির। সাগরের জন্ম ও বেড়ে ওঠা রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার ধর্মপুর গ্রামে। দু’জনের পড়াশোনার শুরুটা গ্রামে। পরে একসঙ্গে দেখা বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে। দু’জনেরই শৈশব ও কৈশোরের স্মৃতির একটি বড় অংশজুড়ে রয়েছে দেশের গ্রামীণ সৌন্দর্য। তাই তো প্রকৃতি ও কৃষির প্রতি ভালোবাসার দরুন ছোট, তথ্যবহুল ভিডিও বানাতে থাকেন পপি। তাঁর রসদ জোগাতে থাকেন সাগর। ভিডিওতে বিভিন্ন ফুল, ফলের চাষ নিয়ে কথার পাশাপাশি থাকে কৃষিবিষয়ক নানা কৌশল নিয়ে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণও। আস্তে আস্তে এসব ভিডিও অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ে। মেলে মানুষের অকুণ্ঠ ভালোবাসা। ফলে প্রকৃতি ও কৃষিতেই নিজেদের ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে থাকেন তারা। সেই সঙ্গে অসংখ্য তরুণকে দেখাচ্ছেন কৃষিতে ক্যারিয়ার গড়ার স্বপ্ন। পপির ফেসবুক প্রোফাইল এবং পেজে তাঁকে নিয়মিত অনুসরণ করছেন ৩০ লাখেরও বেশি মানুষ। প্রতিনিয়ত বাড়ছে এই সংখ্যা। ইউটিউবে তাঁর সাবস্ক্রাইবার ৪ লাখ ৫৯ হাজারের বেশি।  
যে কারণে পপির ভিডিও অন্যরকম
ভিডিও তো অনেকেই তৈরি করে। পপির ভিডিওগুলো কেন এত গ্রহণযোগ্যতা পায় দর্শকের কাছে। এটি কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আসলে যে কোনো কনটেন্ট তৈরির আগে আমি সুনির্দিষ্ট বিষয় খুঁজে বের করি। তারপর বিষয়টি কীভাবে সহজভাবে তুলে ধরা যায়, তা নিয়ে কাজ করি। একের পর এক ফলের বাগান থেকে শুরু করে বিস্তৃত মাঠে ঘুরে বেড়াই। নিজে বিষয়টা সম্পর্কে জেনে তারপর সব ধরনের দর্শকের কথা মাথায় রেখে ভিডিও তৈরি করি।’
পপির ভিডিও কনটেন্ট ও ইউটিউব চ্যানেলে যারা চোখ রাখেন, তারা এটি ভালোভাবেই আঁচ করতে পারেন। তাঁর চ্যানেলের প্লে-লিস্টও সুনির্দিষ্ট কনটেন্ট দিয়ে সুসজ্জিত। ফলে দর্শক নিজের পছন্দ অনুযায়ী কনটেন্ট খুঁজে নিতে পারেন। আপনি কী ধরনের মাছ, মসলা, ফল কিংবা ঔষধি গাছ সম্পর্কে জানতে চান তা অনায়াসেই পেয়ে যাবেন পপির ইউটিউব চ্যানেলে। নিজের প্রথম ভিডিওর কথা মনে করিয়ে দিয়ে পপি বলেন, ‘মনে পড়ে প্রথম ভিডিওর কথা। সেই ভিডিওটি বানিয়েছিলাম তিস্তার এক চরে। কুমড়া চাষ নিয়ে। সেই ভিডিওতে আমি প্রত্যাশার চেয়েও বেশি প্রশংসা পেয়েছি; যা আমাকে পরবর্তী সময়ে কাজের প্রতি উৎসাহ দেয়।’
উদ্যোক্তা হিসেবে তাদের পথচলা ও প্রিমিয়াম ফ্রুটসের গল্প
২০২০ সালে করোনার সময়ে পপি ও সাগর যৌথভাবে চালু করেন ‘প্রিমিয়াম ফ্রুটস’ নামের নতুন উদ্যোগ। ২০২২ সালে এটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়। এর মাধ্যমে মূলত তারা রংপুর, রাজশাহী, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও সাতক্ষীরার তাজা ও উচ্চমানের আম সারাদেশের পৌঁছে দিতে থাকেন। পরে সেটি আর উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোয় সীমাবদ্ধ থাকেনি। ছড়িয়ে পড়ে পুরো দেশে। তারা খাগড়াছড়ি থেকে পেঁপে, বান্দরবান থেকে পাহাড়ি কলা, রাঙামাটি থেকে জাম্বুরা সরবরাহসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ফল সংগ্রহ করতে থাকেন। ব্যবসায় গতি আনতে এবং গ্রাহককে সঠিক তথ্য দিতে কৃষক ও বাগান মালিকদের সঙ্গে সরাসরি কাজ শুরু করেন তারা। এ ছাড়া অগ্রিম ক্রয় চুক্তির মাধ্যমে এক বছর আগেই বাগানের ইজারা নেন। ফসল ফলানোর প্রক্রিয়ার সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত হয়ে যান দু’জন। এতে ফলের গুণমান বজায় রাখতে তারা প্রতিটি পর্যায়ে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে থাকেন। একই সঙ্গে ফলের নিরাপত্তা ও বিশুদ্ধতার কথা ভেবে গাছ থেকে ফল নামানোর ১৫ থেকে ২০ দিন আগেই গাছে রাসায়নিক বা কীটনাশক ব্যবহার বন্ধ করে দেন। 
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও স্বপ্নের ডানা মেলা …
উদ্যোক্তা হিসেবে উম্মে কুলসুম পপি ও আবু সাইদ আল সাগরের পথচলা শুরু সেই ২০১৬ সাল থেকে; বিডি অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। প্রতিষ্ঠানটি মূলত রংপুরে ইলেকট্রনিক ডিভাইস সার্ভিসিংয়ের জন্য বিশেষায়িত একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম। প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে আবু সাইদ আল সাগর বলেন, ‘আমরা মূলত শিফটিং সার্ভিস দিয়ে থাকে। সেই সঙ্গে টেকনিশিয়ান হোম সার্ভিস। আমাদের নির্দিষ্ট কিছু টেকনিশিয়ান রয়েছেন। তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে সেবা দিয়ে আসেন। এ ছাড়া দুধ সরবরাহ, গ্যাস সিলিন্ডার সরবরাহ ও রেন্ট-এ-কার সার্ভিস দিয়ে থাকি। বর্তমানে আমাদের সঙ্গে নিয়মিত ও অনিয়মিত প্রায় ৫০ জন লোক কাজ করছেন। শুরুতে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় আমাদের ধারণাপত্র দিতে থাকি। তখন আমাদের ধারণাপত্র ব্র্যাক আয়োজিত আরবান ইনোভেশন চ্যালেঞ্জ অ্যাওয়ার্ড-২০১৭ জিতে নেয়। পুরস্কার হিসেবে তারা আমাদের ৫ লাখ টাকা দেয়। সেই টাকা দিয়ে আমরা কাজ শুরু করি। দ্বিতীয় ধাপে ২০১৮ সালে বিনিয়োগ হিসেবে আমাদের ২০ লাখ টাকা দেওয়া হয়। এ ছাড়া আমরা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে থাকি। এক প্রতিযোগিতা থেকে আমরা সিঙ্গাপুর গিয়েছিলাম। এ ছাড়া সেরা নবীন উদ্যোক্তা হিসেবে বেশ কিছু অ্যাওয়ার্ড অর্জন করি। এসব অর্জন আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে যেতে সহায়তা করে। ২০১৯ সালে রংপুর শহরে বাসা ভাড়া নিয়ে বিডি অ্যাসিস্ট্যান্টকে প্রতিষ্ঠানে রূপ দিই আমরা। পরে সেখান থেকে নিজেদের কাজ পরিচালনা করতে থাকি। বর্তমানে সেই অফিস থেকেই বিডি অ্যাসিস্ট্যান্ট ও প্রিমিয়াম ফ্রুটসের কার্যক্রম পরিচালিত হয়।’
আগামীর স্বপ্ন
নিজেদের স্বপ্নের কথা জানতে চাইলে আবু সাইদ আল সাগর বলেন, ‘আমরা আগামী পাঁচ বছরে ১০০ জন প্রশিক্ষিত টেকনিশিয়ানের ক্যারিয়ার গড়ে দিতে চাই বিডি অ্যাসিস্ট্যান্টে। প্রিমিয়াম ফ্রুটস থেকে নিরাপদ ফল নিয়েও কাজ করছি। তাছাড়া আস্তে আস্তে বিদেশের মতো আমরা প্রসেসিং ফুডেও যাব। সেই সঙ্গে রপ্তানিও করতে চাই নিরাপদ ফল। আমরা নতুন একটি প্রজেক্টের কাজ শুরু করেছি। বলতে পারেন এটি আমাদের স্বপ্নের প্রজেক্ট। এখানে অ্যাগ্রো ট্যুরিজমের সফল বাস্তবায়ন ঘটাতে চাই আমরা। এখানে পাওয়া যাবে বিভিন্ন ফলমূল, শাকসবজি, বাগানের তাজা ফলমূল, পুকুরের মাছ, চোখর সামনে ঘুরে বেড়াবে গরু। এই গরুর দুধ খেতে পারবেন আগতরা। আশা করি, ২০২৫ সালের মাঝামাঝিতে এসে মানুষ সরাসরি এই সেবা নিতে পারবেন।’
উম্মে কুলসুম পপি বলেন, ‘কৃষিতে আমাদের অনেক সম্ভাবনা। অথচ এখানে আমাদের আগ্রহ খুবই কম। আরও অনেকের সম্পৃক্ততা প্রয়োজন এই পেশায়। তখন সম্ভাবনার সব দ্বার উন্মুক্ত করে নতুন শক্তি ও ধারণা নিয়ে আসা যাবে।  এই আগ্রহ তৈরি এবং সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচনেই কাজ করছি আমরা।’  
পপি এবং সাগরের স্বপ্ন নিশ্চয়ই বাস্তবায়ন হবে অচিরেই। সেই স্বপ্ন পূরণের পথ চেয়ে থাকবে না তরুণরা। নিজেরাই নেমে পড়বে কাজে। তাহলেই গড়ে উঠবে আগামীর নিরাপদ বাংলাদেশ! 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প র ম য় ম ফ র টস কনট ন ট ক জ কর

এছাড়াও পড়ুন:

পানিতে অতিরিক্ত লবণাক্ততা নিয়ে ক্যাবের উদ্বেগ 

কিছুদিন ধরে চট্টগ্রাম নগরীতে ওয়াসার সরবরাহকৃত পানিতে অতিরিক্ত লবণাক্ততা পাওয়া যাচ্ছে। পবিত্র রমজান মাসেও এ অবস্থা অব্যাহত থাকায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম। অতিদ্রুত এ সমস্যার সমাধানের দাবি জানিয়েছে তারা। 

বুধবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে ক্যাবের পক্ষে এ দাবি জানানো হয়। বিবৃতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করে ক্যাব নেতারা বলেন, ‘চট্টগ্রামে রমজান মাসে নিরবচ্ছিন্ন পানি, গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিতে ক্যাব সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের আগাম প্রস্তুতির দাবি জানিয়ে এলেও কর্তৃপক্ষ তাতে কর্ণপাত করছে না। এতে সংকটে পড়েছেন সেবাগ্রহীতারা। নগরীর হালদা ও কর্ণফুলী নদীর প্রতি লিটার পানিতে ২ হাজার ৫০০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত লবণাক্ততা দেখা দিয়েছে, যার সহনীয় মাত্রা হলো ২৫০ মিলিগ্রাম। শুকনো মৌসুম শুরু হওয়ার সময় থেকে বেশ কয়েক বছর ধরে এ সমস্যা দেখা দিচ্ছে। লবণাক্ততার কারণে ওয়াসার চার প্রকল্পে পানির উৎপাদন ছয় কোটি লিটার পর্যন্ত কমেছে। এ কারণে রমজানে পানি সংকটে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন গ্রাহকরা।’ 

বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীরা হলেন– ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন, বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, নগর সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু, সাধারণ সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু, যুগ্ম সম্পাদক সেলিম জাহাঙ্গীর, দক্ষিণ জেলা সভাপতি আবদুল মান্নান, যুব ক্যাবের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি চৌধুরী কেএনএম রিয়াদ ও নগর সভাপতি আবু হানিফ নোমান, পলিসি ইনফ্লুয়েন্স গ্রুপ চট্টগ্রামের সভাপতি মুসা খান, সদস্য সচিব আবু মোশারফ রাসেল, যুগ্ম সদস্য সচিব সাঈদুর রহমান মিন্টু প্রমুখ। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ১ ঘণ্টার বাজারে কোটি টাকার দুধের বাণিজ্য
  • নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় থাকায় স্বস্তি
  • হুঁশিয়ারির পরও নির্ধারিত দামে মিলছে না সয়াবিন তেল
  • ইউক্রেনকে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার প্রভাব কী হতে পারে
  • রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রে আরও পিছিয়ে যাচ্ছে উৎপাদন
  • ভোলার গ্যাস খুলনার বদলে ঢাকায় নেওয়ার সিদ্ধান্তে স্থানীয় বিএনপির উদ্বেগ ও ক্ষোভ
  • ইউক্রেনে ট্রাম্পের সহায়তা বন্ধে কতটা সুবিধা পাবে রাশিয়া
  • তথ্য কমিশন কার্যকর করতে অন্তর্বর্তী সরকার উদাসীন: তথ্য অধিকার ফোরাম
  • রোজায় ত্বকের যত্নে সহজ টিপস
  • পানিতে অতিরিক্ত লবণাক্ততা নিয়ে ক্যাবের উদ্বেগ