সিলভিয়া প্লাথ। পুলিৎসারজয়ী আমেরিকান ঔপন্যাসিক, কবি ও গল্পকার। কিংবদন্তি এই সাহিত্যিকের বিভিন্ন সাক্ষাৎকার থেকে অনুপ্রেরণার কথা তুলে এনেছেন জসিম উদ্দিন আকাশ
৯ বছর বয়সে পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত জীবনটা আমার কাছে নির্মল আনন্দের ছিল; ছিল অবাধ। তখন আমি জাদু বিশ্বাস করতাম। সেটি ব্যাপক প্রভাবিত করেছিল আমাকে। এরপর, ৯ বছর বয়সে পৌঁছানোর পর আমার যেন স্বপ্নভঙ্গ ঘটল। রূপকথার জগতের ওপর থেকে বিশ্বাস কমে যেতে থাকল আমার। হয়ে ওঠতে থাকলাম বাস্তববাদী এবং অনেকটা বিষণ্নও। আমার ধারণা, ষোলো-সতেরো বছর বয়স পর্যন্ত এ রকম একটি রূপান্তরের ভেতর দিয়ে গিয়েছিলাম আমি। কৈশোরটা আমার মোটেও আনন্দের ছিল না। সম্ভবত এ কারণে ডায়েরি, গল্প এবং আরও নানাবিধ বিষয়ে লেখালেখি করতে থাকি। বলাবাহুল্য, জীবনের প্রথম পর্যায়ে খুব অন্তর্মুখী মানুষ ছিলাম আমি।
ট্যাবুর আলো.
আস্তে আস্তে দেখলাম, আমেরিকান বিষয়বস্তু আমাকে টানে। নতুন নতুন ব্রেকথ্রু আমাকে দুর্দান্ত রোমাঞ্চিত করে। যেমন ধরুন, রবার্ট লয়েলের ‘লাইফ স্টাডিজ’। এই সিরিয়াস, ব্যক্তিগত, আবেগাত্মক অভিজ্ঞতা– যা কিনা আমার কাছে খানিকটা ট্যাবু বলে মনে হয়। সেটি একটি ব্রেকথ্রু এনে দিয়েছে কবিতায়। এই উদ্ভট, একান্ত ও ট্যাবু বিষয়বস্তুগুলো সমকালীন আমেরিকান কবিতায় আলো ছড়িয়েছে বলে বিশ্বাস করি আমি।
লেখককে এগিয়ে নেয় ভাষা
আমার লেখার ভাষা, আমার মুখের ভাষা আমেরিকান। আমি মনে করি, ভাষাই এগিয়ে নিয়ে যায় লেখককে। এ ক্ষেত্রে নিজেকে একজন সেকেলে আমেরিকান বলে বিশ্বাস করি আমি। এর একটি বড় কারণ সম্ভবত আমার ইংল্যান্ডে বসবাস করা। যদি অতীতে, পঞ্চাশ বছর পেছনে তাকাই, টের পাই, আমাকে উদ্বেলিত করা কবির অধিকাংশই আমেরিকান। অন্যদিকে খুব অল্পসংখ্যক ব্রিটিশ কবি আমাকে দোলা দেয়। এ যেন খানিকটা স্ট্রেট-জ্যাকেটের মতো ব্যাপার। ব্রিটিশ সমালোচক অ্যালভারেজ, ইংল্যান্ডের ভদ্রতার বিপদ সম্পর্কে তাঁর বিতর্ককে আমি সত্য বলে মনে করি। নিশ্চিত করে বলতে চাই, খুব একটা ‘সুশীল’ আমি নই। অনুভব করি, ‘ভদ্রতার’ একটি ভয়ংকর অবদমন রয়েছে। মনে পড়ে, একবার কেমব্রিজে এক তরুণী এসে আমাকে বলেন, ‘লেখালেখি করার, কবিতা ছাপানোর সাহস কী করে পান আপনি; যেখানে একটি লেখা ছাপা হওয়ার পর মুখোমুখি হতে হয় হাজারো ভয়ংকর সমালোচনার?’
ইতিহাসের পাঠ
আমি ইতিহাসবেত্তা নই। তবুও ইতিহাস আমাকে প্রবলভাবে টানে। ফলে প্রতিনিয়ত, যতটুকু সম্ভব, ইতিহাসের পাঠ নিই। নেপোলিয়নের ব্যাপারে আমার আগ্রহ খুব। লড়াই, সংগ্রাম, যুদ্ধ, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ–ইত্যাদি বিষয় আমাকে কৌতূহলী করে তোলে। অথচ জীবনের প্রথম বিশ বছরে এসব বিষয় সম্পর্কে বলতে গেলে কিছুই জানা ছিল না। নিজের সংবেদনশীল ও আবেগাত্মক অভিজ্ঞতা থেকেই আমার কবিতার আবির্ভাব ঘটে। আমি বলতে চাই, কোনো সুই কিংবা ছুরি কিংবা এ রকমই হন্তারক কিছু ছাড়া ক্রন্দনমাখা হৃদয়ের আর কোনো বিষয়ের প্রতি কোনো সহানুভূতি নেই আমার। আমি বিশ্বাস করি, সবারই উচিত নিজের অভিজ্ঞতাকে নিয়ন্ত্রণ ও সুনিপুণভাবে ব্যবহার করা।
একাগ্রতাই নিয়ে আসে সফলতা
নার্সারিতে পড়ার সময় ছড়া খুব ভালো লাগত আমার। তখনই মনে হতো, আমিও এমন লিখতে পারি। এভাবেই প্রথম কবিতা লেখা। আমার লেখা প্রথম কবিতা যখন প্রকাশিত হয়, তখন আমার সাড়ে আট বছর বয়স। ‘দ্য বুস্টন ট্রাভেলার’ পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল সেটি। তারপর মনে হলো, আমি বোধহয় খানিকটা পেশাদার কবি হয়ে গেছি! শুরুর দিকে প্রকৃতি নিয়ে লিখতাম। এই যেমন পাখি, মৌমাছি, বসন্ত, হেমন্ত– জীবনের গভীরতর অভিজ্ঞতার সঙ্গে তখনও আলাপ না ঘটা ব্যক্তিমানুষের কাছে প্রকৃতি থেকে আসা এসব নিখাদ উপহারই হয়ে উঠেছিল আমার বিষয়বস্তু। আমার ধারণা, বসন্তের আগমনী, মাথার ওপরে নক্ষত্রপুঞ্জ, প্রথম দেখা তুষারপাত আর এ রকম নানা প্রাকৃতিক বিষয়ই একজন শিশুর জন্য, একজন অল্পবয়সী কবির জন্য অনন্য উপহার।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব শ ব স কর বছর বয়স প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
হাতে ভাজা মুড়ি, শাশুড়ির পেশাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অর্চনা
হাঁটতে হাঁটতে তিতাস নদীর পাড় পর্যন্ত যেতেই কানে এলো মুড়ি ভাজার শব্দ। কয়েকজন নারী মুড়ি ভাজছেন। পুরাতন পদ্ধতিতে গরম বালুর সঙ্গে খোলায় ভাজা চালের স্পর্শে হাড়িতে মট-মট শব্দে ফুটে তৈরি হচ্ছে সুস্বাদু মুড়ি।
এখানে হাতে ভাজা মুড়ির মূল কারিগর অর্চনা দাস (৫৫)।
অর্চনা দাস ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরশহরের পাইকপাড়া পাটগুদাম রোড দাস পাড়ার ঝান্টু দাসের স্ত্রী। ঝান্টু দাস পেশায় একজন মাছ ব্যবসায়ি। অর্চনা দাসের চার মেয়ে ও একজন ছেলে। চার মেয়েকেই দিয়েছেন বিয়ে এবং ছেলে এই বছর বিবিএ শেষ করেছে।
অর্চনা দাসের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের আগে থেকেই শাশুড়ি তরঙ্গ বালা দাস হাতে ভাজা মুড়ি ভাজতেন। শাশুড়ি আমাকে খুব ভালোবাসতেন। শাশুড়ির কাছাকাছি থাকতে থাকতে আমিও মুড়ি ভাজা শিখে ফেলেছি। শাশুড়ি ২০১৯ সালে মারা গেলে ছেলেমেয়েরা মুড়ি ভাজতে নিষেধ করেছিল কিন্তু শাশুড়ির ৫০ বছরের পেশাটাকে বাঁচিয়ে রাখতেই মুড়ি ভাজার দায়িত্বটা আমি কাঁধে নেই।”
মুড়ি ভাজতে উপকরণ হিসেবে তিনি বলেন, “হাতে ভাজা মুড়ি ভাজতে দেশি চাউল দিয়েও হয় তবে রমজান আসলে মুড়িগুলো সুন্দর করতে ‘শান্তি সিলভার’ নামে এক কোম্পানির চাউল আছে, সেটা ব্যবহার করি। আমি চালগুলো লবণ পানি দিয়ে মেখে দেই। আমার ভাইয়ের মেয়ে সুলেখা দাস লবণ পানি দেওয়া চালগুলো তাওয়াতে ৪-৫ মিনিট গরম করে। তারপর আমার ভাসুরের ছেলের বউ বন্দনা দাস গরম বালুতে সেই চাউলগুলো ঢেলে চিকন কাঠি দিয়ে হাতে নাড়া দিলেই হয়ে যাচ্ছে হাতে ভাজা মুড়ি।”
অর্চনা দাস বলেন, “আমার শাশুড়ির বাড়িতে এসে আমি দেখেছি ১৯৯০ সালে এক কেজি মুড়ি ২৪ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতেন। এখন মুড়ি বিক্রি করি ১২০ টাকা দরে।”
দাম বাড়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, “এক বস্তা চালের দাম ৩৪০০ টাকা, লবণ লাগে ৩০ টাকা, রিকশাভাড়া ৩০ টাকা, ভাজা খরচ ১৪০ টাকা। এক বস্তা চাউলে ৩৮ কেজি মুড়ি হয়। রমজান মাসে এক দিনে ৬০ কেজি মুড়ি বিক্রি করতে পারি। রমজান মাস ছাড়া ২৫ কেজি বিক্রি হয়।”
পাইকার ব্যবসায়িরা এক কেজি মুড়ি ৯৫ টাকা ধরে কিনে নিয়ে যায় পাইকাররা কেজি প্রতি ১২০ টাকা বিক্রি করেন।
প্রতিবেশি নিদু দাস বলেন, “আমরা ২০ বছর ধরে হাতে ভাজা মুড়ি বিক্রি করতাম। বর্তমানে শ্রমিক সংকটের কারণে পেশাটাকে ছেড়ে দিয়েছি। আমাদের যা কাস্টমার ছিল এখন অর্চনা থেকে মুড়ি নিয়ে যায়। কেমিকেল মুক্ত হওয়ায় অনেকেই আসে মুড়ি নিতে। রমজান মাসে চাহিদা বেশি থাকে। আগে এখানে ১০টা পরিবারের মতো হাতে ভাজা মুড়ি তৈরি করতেন কিন্তু বর্তমানে লোকবল সংকটের কারণে এই পেশা থেকে মানুষ দূরে চলে গেছে।”
মুড়ি ক্রেতা ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি জাবেদ রহিম বিজন বলেন, “আমি ১০ বছর ধরে তাদের বাড়ি থেকে মুড়ি কিনি। সুস্বাদু ও কেমিকেল মুক্ত হওয়ায় আমার পরিবারের পছন্দ এই মুড়ি। দুই কেজি মুড়ি ২৪০ টাকা দিয়ে কিনেছি।”
কুমারশিল মোড়ের নিউ স্টোরের সত্ত্বাধিকারী হৃদয় রায় বলেন, “পাইকপাড়া থেকে হাতে ভাজা মুড়ি আমরা কিনে রাখি। হাতে ভাজা মুড়ি পুরাতন কাস্টমার যারা আছে তারা কিনে নিয়ে যায়। ক্যামিকেল মুক্ত হওয়ায় অনেকেই নিয়ে যায়।”
ঢাকা/টিপু