কুলাউড়ায় রাজাপুর সেতুসংলগ্ন এলাকা থেকে অবাধে বালু উত্তোলনের কারণে ঝুঁকির মুখে রয়েছে সেতুটি। স্থানীয়দের আপত্তির পরও অব্যাহত রয়েছে বালু তোলার কাজ। এ নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন উপজেলার বাসিন্দারা। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট এলাকায় চলমান ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করার দাবিও জানান তারা।
রাজাপুর সেতু রক্ষায় সংলগ্ন এলাকার বালুমহালের ইজারা বন্ধ, সেতুর উভয় পাশের সংযোগ সড়ক নির্মাণ এবং রাজাপুর ও ধলিয়া বেড়িবাঁধের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার দাবিতে শনিবার মানববন্ধন করেছেন স্থানীয়রা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলার দক্ষিণাঞ্চলের তিন ইউনিয়নের বাসিন্দারা।
এদিন দুপুরে স্থানীয় সমাজসেবক আমির আলীর সভাপতিত্বে ও সংগঠক ফয়জুল হকের পরিচালনায় রাজাপুর সেতুর ওপর হাজীপুর, শরীফপুর ও পৃথিমপাশা ইউনিয়নবাসী মানববন্ধন কর্মসূচি করেন। স্থানীয়দের দাবির সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে বক্তব্য দেন মৌলভীবাজার-২ কুলাউড়া আসনের সাবেক এমপি নওয়াব আলী আব্বাছ খান, উপজেলা সিপিবির সভাপতি ও পৃথিমপাশা ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ, পৃথিমপাশা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আকদ্দস আলী, ইসলামী আন্দোলনের নেতা মাওলানা আছলাম হোসেন রহমানী, উপজেলা সিপিবির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মোশাররফ আলী, পৃথিমপাশা ইউপির সাবেক সদস্য আব্বাছ আলী, হাজীপুর ইউপি সদস্য মুস্তাফিজুর রহমান রুমেল ও মনিরুজ্জামান হেলাল, প্রভাষক গিলমান আলী, সংগঠক সৈয়দ আতাউর রহমান, ছাত্র সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম, সংবাদকর্মী হাসান আল মাহমুদ রাজু, মাহদী হাসান প্রমুখ। 
স্থানীয় বাসিন্দা ও মানববন্ধনে উপস্থিত ব্যক্তিরা জানান, উপজেলার দক্ষিণাঞ্চলের তিন ইউনিয়ন হাজীপুর, শরীফপুর ও পৃথিমপাশার মানুষের দীর্ঘ আন্দোলনের ফসল রাজাপুর সেতু। এলাকাবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালে সেতু ও এর সংযোগ সড়ক নির্মাণে ৯৯ কোটি ১৭ লাখ ৩৮ হাজার টাকা ব্যয়ে কুলাউড়া-পৃথিমপাশা-হাজীপুর-শরীফপুর সড়কের ১৪তম কিলোমিটারে ২৩২ দশমিক ৯৪ মিটার পিসি গার্ডার সেতু, সাড়ে সাত কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণ এবং প্রকল্পের কাজের জন্য জমি অধিগ্রহণের অনুমোদন দেয় একনেক। পরবর্তী সময়ে ৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০২১ সালে রাজাপুর সেতুর নির্মাণকাজ শেষ 
হয়। সেতুর দু’পাশের সংযোগ সড়কের কাজ শেষ না করায় ওই সেতুতে এখনও শুরু হয়নি যান চলাচল। স্থানীয় লোকজন অপারগ হয়ে সেতুর দুই পাশে বালু দিয়ে ভরাট করা অস্থায়ী রাস্তা বানিয়ে তা ব্যবহার করছেন।
এদিকে রাজাপুর সেতু এলাকা থেকে নদীশাসন আইন না মেনে বর্তমান ইজারাদার অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছেন, যার কারণে সেতু চালু হওয়ার আগেই তা হুমকির মুখে পড়ে। বালু তোলার কারণে সেতুর পিলারের নিচ থেকে বালু ও মাটি সরে গিয়ে বড় গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় সেতুটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রবল। সম্প্রতি জেলা প্রশাসক বরাবর রাজাপুর সেতুর সংযোগ সড়কের কাজে ধীরগতির অভিযোগ এনে লিখিত অভিযোগ দেন পৃথিমপাশা, হাজীপুর ও শরীফপুর ইউনিয়নের ভুক্তভোগীরা।
স্থানীয়রা জানান, বর্ষা মৌসুমের আগে দ্রুত সংযোগ সড়কের কাজ সম্পন্ন করে সেতুতে যানবাহন চালু করা এবং সেতুর নিকটবর্তী এলাকা থেকে বালু উত্তোলন বন্ধ ও ইজারা স্থায়ীভাবে বন্ধ করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এলাকার বেড়িবাঁধের কাজ দ্রুত শেষ করার কথাও জানানো হয়েছে। 
এ বিষয়ে বালুমহালের বর্তমান ইজারাদার খালেদ আহমদ জানান, সরকারি নিয়ম মেনেই বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। বালু উত্তোলনের কারণে সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না বলেও দাবি করেন তিনি।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহ জহুরুল হোসেন জানান, রাজাপুর সেতুর উভয় পাশে এক কিলোমিটারের মধ্যে বালু উত্তোলন না করতে ইজারাদারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। লাল পতাকা দিয়ে সীমানা নির্ধারণ নিশ্চিত করা হয়েছে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ মৌলভীবাজার জেলা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী কায়ছার হামিদ জানান, সেতুর নিচ থেকে বালু উত্তোলন বন্ধে জেলা প্রশাসক বরাবরে চিঠি দিয়ে আপত্তি জানানো হয়েছে। তারপরও যদি সেতুর নিচ থেকে বালু তোলা হয়, তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনিও জানান, সেতুটির সংযোগ সড়কের কাজ দ্রুতগতিতে এগোচ্ছে। অল্প সময়ের মধ্যেই এ এলাকার মানুষের ভোগান্তি দূর হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো.

মহিউদ্দিন জানান, জমি অধিগ্রহণে জটিলতা থাকায় সংযোগ সড়কের কাজ কিছুদিন বন্ধ ছিল। সম্প্রতি জেলা প্রশাসক প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করে দ্রুত কাজ শুরু এবং শেষ করতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশ দিয়েছেন। সেতুর পাশ থেকে বালু উত্তোলনের ব্যাপারে তিনি জানান, বালুমহাল ইজারা বন্ধে এলাকাবাসীর দাবির বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী খালেদ বিন অলীদ জানান, রাজাপুর ও ধলিয়া এলাকার প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণের কাজে জটিলতা ছিল। এতে সেতুসংলগ্ন সংযোগ সড়কের কাজ শুরু করতে বিলম্ব হয়েছে। তা ছাড়া অর্থ সংকটের কারণে অনেক ঠিকাদার কাজ শুরু করতে দেরি করেছেন। চেষ্টা করা হচ্ছে এসব কাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করার।
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স য গ সড়ক ন র ম ণ স য গ সড়ক র ক জ র স য গ সড়ক এল ক র উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

জবি শিক্ষার্থীদের উপর ছাত্রদল কর্মীর নেতৃত্বে হামলার অভিযোগ, প্রতিবাদে বিক্ষোভ

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা এ বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করে দ্রুত বিচার দাবি করেন।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা হলেন, জবির রসায়ন বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আকাশ আলী, তামান্না তাবাসসুম ও আবুল বাসার। অপরদিকে, হামলার নেতৃত্ব দেওয়া অভিযুক্ত ছাত্রদল কর্মী অনিক কুমার দাশ মার্কেটিং বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ।

এর আগে, গতকাল বুধবার (২৯ জানুয়ারি) জবির কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মার্কেটিং বিভাগের দুই শিক্ষার্থী জুতা পায়ে উঠলে রসায়ন বিভাগের দুই শিক্ষার্থী তার প্রতিবাদ করে। এতে তাদের ওপর হামলা চালায় মার্কেটিং বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থী।

এ হামলার নেতৃত্ব দেন জবি ছাত্রদল কর্মী ও মার্কেটিং বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী অনিক কুমার দাশ। এতে আরো যুক্ত ছিলেন, মাহফুজুর রহমান চৌধুরী মাহী, আয়ান, আরিফ, রাতুল, আসিফসহ আরো ১৫ জন।

এ হামলার প্রতিবাদে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, গত ৫ আগস্ট পরবর্তী বাংলাদেশে আমরা আর কোন দমন-পীড়ন বরদাস্ত করব না। আর কাউকে ফ্যাসিস্ট হয়ে ওঠার সুযোগ দেওয়া হবে না। এর আগের হামলাগুলোর ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হলে আজ আমাদের এখানে দাঁড়াতে হত না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এসব ঘটনার দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা করুক। আমরা এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

রসায়ন বিভাগের ভুক্তভোগী নারী শিক্ষার্থী ২০২০ -২০২১ সেশনের তামান্না তাবাসসুম বলেন, “আমরা প্রক্টরের কাছে গিয়েছিলাম। তারা আমাদের কোন সহযোগিতা করেনি। আমরা তাহলে কার কাছে যাব? আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।”

একই বিভাগের শিক্ষার্থী আকরাম হোসেন বলেন, “গতকালের ঘটনার পর আমরা প্রক্টরের কাছে যাওয়ার পর তিনি আমাদের বলেন, ২০০৫ সালের নীতিমালা পড়ার জন্য। এ বিষয়ে তারা কি পদক্ষেপ নেবে, সে ব্যাপারে তিনি আমাদের কিছু জানাতে পারেননি। বরং আমাদের বিভাগের শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। যদি এ ঘটনায় প্রশাসন কোন ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে আমরা প্রশাসন ও যে দলের  প্রশ্রয়ে এ ঘটনা ঘটেছে, তাদের বিরুদ্ধে সাধারণ শিক্ষার্থীরা আন্দোলন গড়ে তুলবে। সেই সঙ্গে আমরা ক্লাস বর্জনের ডাক দেব।”

আব্দুল কাহহার জামিল বলেন, “গতকালের ঘটনায় প্রক্টর স্যার আমাদের কোন খোঁজ নেননি। রাত ১০টার পর একজন সহকারী প্রক্টরকে পাঠান। তিনি চিকিৎসার জন্য কিছু টাকা দেন। কিন্তু প্রক্টর স্যারের সঙ্গে আমরা কথা বলতে গেলে তিনি দুর্ব্যবহার করেন। গত ১ বছরে আামদের বিভাগের শিক্ষার্থীরা তিনটি হামলার অভিযোগ করলেও সুষ্ঠু বিচার পাননি। যদি ওই ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হত, তাহলে আজ আমাদের এখানে দাঁড়াতে হত না। আমরা এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।”

তিনি বলেন, “বিচারের নামে টালবাহানা করা হয়। আমাদের প্রক্টর অফিস থেকে ভয় দেখিয়ে অভিযোগ তুলে নেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হয়। এছাড়া আমাদের নানা হুমকি দিয়ে ভয় দেখনো হয়। বলা হয়, যদি ক্যাম্পাসের বাইরে কেউ হামলা করে, তাহলে সে দায় প্রক্টর অফিস নেবে না।”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক বলেন, “সবকিছুর জন্য সময় দরকার। রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা যেভাবে বিচার চাচ্ছে, সেটা এত দ্রুত সম্ভব না। আগের একটা কমিটি আছে, সে কমিটির কাছেই আমি এটার তদন্ত হস্তান্তর করেছি।”

তিনি বলেন, “হ্যাঁ, আমি তাদের ২০০৫ সালের নীতিমালা পড়তে বলেছি। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে আগামীকাল ভর্তি পরীক্ষা আছে। সব মিলিয়ে ব্যস্ততার মধ্যে আছি।”

ঢাকা/লিমন/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সন্তানদের নিয়ে রাস্তায় নেমে বিচার চেয়ে কাঁদলেন তৌহিদের স্ত্রী
  • সন্তানদের নিয়ে মাইক হাতে বিচার চেয়ে কাঁদলেন তৌহিদের স্ত্রী
  • বিএনপি-যুবদল নেতাদের শাস্তি দাবি গ্রামবাসীর
  • সোনারগাঁয় মোগল আমলের সেতু রক্ষার দাবিতে মানববন্ধন
  • রূপগঞ্জের চড়পাড়ায় আন্ডারপাসের দাবিতে মানববন্ধন
  • সোনারগাঁয়ে পানাম ব্রিজ রক্ষার দাবিতে মানববন্ধন
  • ৫ দাবিতে নোবিপ্রবির ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন
  • জবি শিক্ষার্থীদের উপর ছাত্রদল কর্মীর নেতৃত্বে হামলার অভিযোগ, প্রতিবাদে বিক্ষোভ
  • সেন্টমার্টিনে পর্যটক উন্মুক্ত রাখার দাবি