শীতেও ওএমএসের দীর্ঘ সারি, আছে শিশুরাও
Published: 1st, February 2025 GMT
বাজারে চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় খোলাবাজারে বিক্রি করা (ওএমএস) চালের চাহিদা বেড়েছে। চাল কিনতে ভোর থেকেই নিম্ন ও মধ্যবিত্ত নারী-পুরুষ, এমনকি শিশুরাও ওএমএসের লাইনে দাঁড়াচ্ছে। চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ কম হওয়ায় একটু দেরি হলেই শূন্য হাতে ফিরতে হয় তাদের।
প্রতিদিনই এমন দৃশ্য দেখা যায় ফরিদপুরের বোয়ালমারী পৌর সদর বাজারের দুটি ওএমএস ডিলারের দোকানে। দরিদ্রদের পাশাপাশি লাইনে দাঁড়াচ্ছেন মধ্যবিত্তরাও। চাহিদার তুলনায় জোগান কম হওয়ায় ওএমএস ডিলারের সংখ্যা, চালের বরাদ্দ বাড়ানো ও আটা দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন ভোক্তা, ডিলার ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
বোয়ালমারী পৌর সদরের বরইতলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়ের পাশে ডিলার শিমুল দাসের দোকানে এবং ডাকবাংলো রোডে লালন কান্তি খাঁর ঘরের সামনে প্রতিদিনই দেখা যায় নারী-পুরুষের দীর্ঘ সারি। সেখানে শিশুদেরও দেখা মিলছে। চালের চাহিদা দেখে বরাদ্দ বাড়ানোর বিষয়টি বুঝতে পারছে উপজেলা খাদ্য বিভাগ।
জানা যায়, চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী বোয়ালমারী খাদ্য বিভাগ গত ১৩ জানুয়ারি থেকে খোলাবাজারে চাল বিক্রি শুরু করে। এ জন্য পৌরসভায় দুইজন ডিলার নিয়োগ করা হয়। সরকারি ছুটির দিন বাদে প্রতিদিন ডিলারপ্রতি এক টন বা এক হাজার কেজি চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়; যা চাহিদার তুলনায় খুবই অপ্রতুল। একজন ক্রেতা সর্বোচ্চ ৫ কেজি চাল কিনতে পারেন। চাল কেনার ক্ষেত্রে কোনো এলাকা নির্দিষ্ট নেই। দেখাতে হয় না জাতীয় পরিচয় পত্রও। এ কারণে পৌরসভার বাইরে এবং সব বয়সী লোকজনই চাল নিতে লাইনে দাঁড়াচ্ছেন। বাজারে যেখানে এক কেজি মোটা চাল ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, সেখানে ওএমএসের দোকানে তা বিক্রি হচ্ছে অর্ধেক দামে, মাত্র ৩০ টাকায়। এ কারণে ওএমএসের চালের ব্যাপক চাহিদা। ডিলার খাদ্য বিভাগের কাছ থেকে ২৮ টাকা কেজি দরে চাল কেনেন। জেলা পর্যায়ে আটা দেওয়া হলেও উপজেলা পর্যায়ে আটা দেওয়া হয় না। যদিও আটার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
শিমুল দাসের দোকান মেসার্স দাস ট্রেডার্সে চাল কিনতে আসা দক্ষিণ কামারগ্রামের সমীর বিশ্বাসের ছেলে স্কুলছাত্র সূর্য্য বিশ্বাস (১১) জানায়, তার বাবা ইজিবাইক চালান। এ জন্য তাকে ভোরে এসে লাইনে দাঁড়াতে হয়। চাল পেতে দেরি হলে স্কুলে যাওয়া হয় না তার।
রায়পুর গ্রামের মাহাত্তাব মিয়া (৭২) বলেন, খুব ভোরে এসে শিমুল দাসের দোকানে লাইনে দাঁড়িয়েছেন। দেরি করে এলে চাল পাওয়া যায় না। ছেলেরা অটোভ্যান চালায়। কষ্ট হলেও তাঁকেই আসতে হয়।
ওই এলাকার মহিউদ্দীন বিশ্বাস বলেন, পরে এসে সিরিয়ালে পেছনে পড়ে গেলে চাল পাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। এ কারণে ভোরে এসেই লাইনে দাঁড়িয়ে যান।
গুনবহা গ্রামের হাওয়া বেগম বলেন, স্বামী দোকান চালান। তাঁকেই চাল নিতে আসতে হয়। এর আগে দেরি করে আসায় চাল পাননি। সকাল ৭টার দিকে এসে লাইনে দাঁড়িয়েছেন।
লাইনে দাঁড়ানো সকল নারী-পুরুষই চালের বরাদ্দ বাড়ানো ও আটা দেওয়ার দাবি জানান।
চালের বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানিয়ে ডিলার শিমুল দাস বলেন, পাঁচ কেজি করে ২০০ জন নিলেই এক টন চাল শেষ হয়ে যায়। প্রতিদিন অনেক মানুষ চাল না পেয়ে ফিরে যান। এলাকা ভাগ করা না থাকায় এবং আইডি কার্ড দেখানোর বাধ্যবাধকতা না থাকায় বিভিন্ন এলাকার লোক চাল নিতে আসেন। কখনও অভিভাবক-সন্তান একসঙ্গে আসেন।
ডাকবাংলো রোডের ডিলার লালন কান্তি খাঁও চালের বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানান। দুইজন ডিলারই আটার চাহিদার কথা উল্লেখ করেছেন।
উপজেলা খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লুৎফর রহমান বলেন, সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ওএমএসের চাল দেওয়ার কথা থাকলেও ১১টা-১২টার মধ্যে চাল শেষ হয়ে যায়। পরে এসে অনেকেই চাল না পেয়ে ফিরে যান। চালের বরাদ্দ বাড়ানোর বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন। আটা দেওয়ার বিষয়টিও অনেকে তাঁকে বলেছেন বলে জানান তিনি।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ওএমএস র
এছাড়াও পড়ুন:
শীতেও ওএমএসের দীর্ঘ সারি, আছে শিশুরাও
বাজারে চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় খোলাবাজারে বিক্রি করা (ওএমএস) চালের চাহিদা বেড়েছে। চাল কিনতে ভোর থেকেই নিম্ন ও মধ্যবিত্ত নারী-পুরুষ, এমনকি শিশুরাও ওএমএসের লাইনে দাঁড়াচ্ছে। চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ কম হওয়ায় একটু দেরি হলেই শূন্য হাতে ফিরতে হয় তাদের।
প্রতিদিনই এমন দৃশ্য দেখা যায় ফরিদপুরের বোয়ালমারী পৌর সদর বাজারের দুটি ওএমএস ডিলারের দোকানে। দরিদ্রদের পাশাপাশি লাইনে দাঁড়াচ্ছেন মধ্যবিত্তরাও। চাহিদার তুলনায় জোগান কম হওয়ায় ওএমএস ডিলারের সংখ্যা, চালের বরাদ্দ বাড়ানো ও আটা দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন ভোক্তা, ডিলার ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
বোয়ালমারী পৌর সদরের বরইতলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়ের পাশে ডিলার শিমুল দাসের দোকানে এবং ডাকবাংলো রোডে লালন কান্তি খাঁর ঘরের সামনে প্রতিদিনই দেখা যায় নারী-পুরুষের দীর্ঘ সারি। সেখানে শিশুদেরও দেখা মিলছে। চালের চাহিদা দেখে বরাদ্দ বাড়ানোর বিষয়টি বুঝতে পারছে উপজেলা খাদ্য বিভাগ।
জানা যায়, চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী বোয়ালমারী খাদ্য বিভাগ গত ১৩ জানুয়ারি থেকে খোলাবাজারে চাল বিক্রি শুরু করে। এ জন্য পৌরসভায় দুইজন ডিলার নিয়োগ করা হয়। সরকারি ছুটির দিন বাদে প্রতিদিন ডিলারপ্রতি এক টন বা এক হাজার কেজি চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়; যা চাহিদার তুলনায় খুবই অপ্রতুল। একজন ক্রেতা সর্বোচ্চ ৫ কেজি চাল কিনতে পারেন। চাল কেনার ক্ষেত্রে কোনো এলাকা নির্দিষ্ট নেই। দেখাতে হয় না জাতীয় পরিচয় পত্রও। এ কারণে পৌরসভার বাইরে এবং সব বয়সী লোকজনই চাল নিতে লাইনে দাঁড়াচ্ছেন। বাজারে যেখানে এক কেজি মোটা চাল ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, সেখানে ওএমএসের দোকানে তা বিক্রি হচ্ছে অর্ধেক দামে, মাত্র ৩০ টাকায়। এ কারণে ওএমএসের চালের ব্যাপক চাহিদা। ডিলার খাদ্য বিভাগের কাছ থেকে ২৮ টাকা কেজি দরে চাল কেনেন। জেলা পর্যায়ে আটা দেওয়া হলেও উপজেলা পর্যায়ে আটা দেওয়া হয় না। যদিও আটার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
শিমুল দাসের দোকান মেসার্স দাস ট্রেডার্সে চাল কিনতে আসা দক্ষিণ কামারগ্রামের সমীর বিশ্বাসের ছেলে স্কুলছাত্র সূর্য্য বিশ্বাস (১১) জানায়, তার বাবা ইজিবাইক চালান। এ জন্য তাকে ভোরে এসে লাইনে দাঁড়াতে হয়। চাল পেতে দেরি হলে স্কুলে যাওয়া হয় না তার।
রায়পুর গ্রামের মাহাত্তাব মিয়া (৭২) বলেন, খুব ভোরে এসে শিমুল দাসের দোকানে লাইনে দাঁড়িয়েছেন। দেরি করে এলে চাল পাওয়া যায় না। ছেলেরা অটোভ্যান চালায়। কষ্ট হলেও তাঁকেই আসতে হয়।
ওই এলাকার মহিউদ্দীন বিশ্বাস বলেন, পরে এসে সিরিয়ালে পেছনে পড়ে গেলে চাল পাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। এ কারণে ভোরে এসেই লাইনে দাঁড়িয়ে যান।
গুনবহা গ্রামের হাওয়া বেগম বলেন, স্বামী দোকান চালান। তাঁকেই চাল নিতে আসতে হয়। এর আগে দেরি করে আসায় চাল পাননি। সকাল ৭টার দিকে এসে লাইনে দাঁড়িয়েছেন।
লাইনে দাঁড়ানো সকল নারী-পুরুষই চালের বরাদ্দ বাড়ানো ও আটা দেওয়ার দাবি জানান।
চালের বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানিয়ে ডিলার শিমুল দাস বলেন, পাঁচ কেজি করে ২০০ জন নিলেই এক টন চাল শেষ হয়ে যায়। প্রতিদিন অনেক মানুষ চাল না পেয়ে ফিরে যান। এলাকা ভাগ করা না থাকায় এবং আইডি কার্ড দেখানোর বাধ্যবাধকতা না থাকায় বিভিন্ন এলাকার লোক চাল নিতে আসেন। কখনও অভিভাবক-সন্তান একসঙ্গে আসেন।
ডাকবাংলো রোডের ডিলার লালন কান্তি খাঁও চালের বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানান। দুইজন ডিলারই আটার চাহিদার কথা উল্লেখ করেছেন।
উপজেলা খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লুৎফর রহমান বলেন, সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ওএমএসের চাল দেওয়ার কথা থাকলেও ১১টা-১২টার মধ্যে চাল শেষ হয়ে যায়। পরে এসে অনেকেই চাল না পেয়ে ফিরে যান। চালের বরাদ্দ বাড়ানোর বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন। আটা দেওয়ার বিষয়টিও অনেকে তাঁকে বলেছেন বলে জানান তিনি।