আ’লীগ ঠেকাতে অভিন্ন ভোটের ভাবনায় ভিন্ন
Published: 1st, February 2025 GMT
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর চট্টগ্রামের রাজনীতিতেও বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর থেকে বিএনপির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মাঠে নেমেছে জামায়াতে ইসলামী। আওয়ামী লীগ না থাকায় রাজনীতির মাঠে বিএনপির সামনে ফ্যাক্টর হয়ে উঠেছে এ দলটি। দাপটের সঙ্গে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাচ্ছে তারা। ফলে একসময় দুই দলের মধ্যে মধুর সম্পর্ক থাকলেও এখন তাদের মধ্যে ধীরে ধীরে দূরত্ব বাড়ছে। তবে আওয়ামী লীগ ঠেকানোয় দুই দল এক হলেও ভোটের ভাবনায় তারা ভিন্ন অবস্থানে।
অন্যদিকে, ভারসাম্য রক্ষায় বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান-প্রশাসনও দুই দলের নেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে চলছে। কোনো অনুষ্ঠান হলে দুই দলের নেতাদের গুরুত্ব দিয়ে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। যাতে তারা অংশও নিচ্ছেন। বিশেষ করে জেলা প্রশাসনের শান্তি সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচিতে বিএনপি নেতাদের পাশাপাশি দাওয়াত পাচ্ছেন জামায়াত নেতারাও।
একসময় বিএনপি ও জামায়াত– দুই দলেরই ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ছিল চট্টগ্রাম। বিশেষ করে দেশের যে কয়েকটি এলাকায় জামায়াতের দাপট রয়েছে, তার অন্যতম একটি হচ্ছে চট্টগ্রাম। প্রতিদিনই কর্মী সমাবেশ, রুকন সমাবেশ, কর্মশালা, মিলাদ মাহফিলসহ নানা ধরনের একাধিক কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়ে নেতাকর্মীদের সংগঠিত করা হচ্ছে। সর্বশেষ প্রত্যক্ষভাবে জামায়াত সমর্থিত ইসলামী সমাজকল্যাণ পরিষদের ব্যানারে নগরীর প্যারেড মাঠে পাঁচ দিনব্যাপী তাফসিরুল কোরআন মাহফিলের আয়োজন করা হয়। একসময় চকবাজার সংলগ্ন চট্টগ্রাম কলেজের এ মাঠে পাঁচ দিনব্যাপী তাফসিরুল কোরআন মাহফিলের আয়োজন করত তারা। যাতে প্রধান মুফাচ্ছির হিসেবে বয়ান করতেন আল্লামা দেলওয়ার হোসাইন সাঈদী। দীর্ঘসময় পর পুনরায় তাফসির মাহফিলের আয়োজন করল সমাজ কল্যাণ পরিষদ।
অন্যদিকে বসে নেই বিএনপিও। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর থেকে নির্বাচনমুখী দল পুনর্গঠনে মনোনিবেশ করেছে বিএনপি। পাশাপাশি ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে সভা-সমাবেশের পাশাপাশি নিয়মিত লিফলেট বিতরণ করছে দলটির নেতাকর্মীরা। এ ছাড়া বিভিন্ন দিবসভিত্তিক নানা কর্মসূচি তো রয়েছেই। ইতোমধ্যে গত ৭ জুলাই বিএনপি নেতা এরশাদ উল্লাহকে আহ্বায়ক ও নাজিমুর রহমানকে সদস্য সচিব করে দুই সদস্যের আংশিক নগর কমিটি ঘোষণা করা হয়। ৮৭ দিনের মাথায় গত ৪ নভেম্বর ৫১ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। তারা ইতোমধ্যে নগরীর ইউনিট থেকে ওয়ার্ড ও থানা পর্যায়ের সব কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন করে দল পুনর্গঠনের কাজ শুরু করেছেন। এভাবে চট্টগ্রামে এক প্রকার শক্তিমত্তার পরীক্ষায় অবতীর্ণ হয়েছে বিএনপি-জামায়াত।
সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে চট্টগ্রামের কয়েকটি স্থানে সংঘর্ষ ও মারামারিতেও জড়িয়েছে বিএনপি-জামায়াত। এই ধরনের কলহ দিন দিন বাড়ছে। গত ৬ জানুয়ারি চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার জোরারগঞ্জ বাজারে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের সামনে বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে জামায়াত নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। উভয় পক্ষের চারজন গুরুতর আহত হন। আহতরা হলেন– জেএস এন্টারপ্রাইজের মালিক সাবেক শিবির নেতা জামাল উদ্দিন (৩৯), জামায়াতের কর্মী মো.
জানা যায়, ৮২ কোটি টাকা ব্যয়ে জোরারগঞ্জ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের বিজ্ঞানাগার ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। নির্মাণকাজের মালামাল সাপ্লাই নিয়ে মারামারিতে জড়িয়ে পড়েন দুই দলের নেতাকর্মীরা।
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. হারুন জামান সমকালকে বলেন, ‘জুলাইয়ের ছাত্র-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে দেশে আমরা নতুন স্বাধীনতা পেয়েছি। এই অর্জন যাতে কোনো কারণে নষ্ট না হয় সে জন্য বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছেন। যাদের কারণে দলের ক্ষতি হবে তাদের দল থেকে বের করে দেওয়ার কথাও বলেছেন তিনি। স্বাভাবিকভাবে আমরা গায়ে পড়ে কোনো ঝামেলায় জড়াতে চাই না।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘জামায়াত-শিবির কিছু কিছু জায়গায় গায়ে পড়ে ঝামেলা করার চেষ্টা করছে। বিপ্লবের অর্জন যাতে ম্লান না হয় সে জন্য ধৈর্য ধারণের মাধ্যমে বিএনপি পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছে।’
নগর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি মোহাম্মদ উল্লাহ সমকালকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম হচ্ছে জামায়াতের অন্যতম ঘাঁটি। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার জামায়াতকে নির্মূলে এমন কোনো কাজ নেই, যা তারা করেনি। এমনকি জামায়াতকে নিষিদ্ধ পর্যন্ত করেছিল। এই ধরনের পরিস্থিতি সামাল দিয়ে টিকে আছে দলটি। তাই চাইলেই কেউ আমাদের নিশ্চিহ্ন করতে পারবেন না। জামায়াত তৃণমূল পর্যায়ে সাধারণ মানুষের কাছে দাওয়াত নিয়ে যাচ্ছে। গায়ে পড়ে কেউ ঝামেলা না করলে আমরাও ঝামেলায় জড়াতে চাই না।’
এদিকে বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে যখন দূরত্ব বাড়ছে ঠিক এমন সময় সভা-সমাবেশ, অবরোধ ও হরতালের মতো কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামছে তাদের ভাতৃপ্রতিম সংগঠন ‘নিষিদ্ধ’ ছাত্রলীগও। তারা এভাবে রাজপথে নামার ঘোষণা দিয়ে চলমান রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। তাতে নড়েচড়ে বসেছে। এই অবস্থায় বিএনপি ও জামায়াত দুই মেরুতে থাকলেও আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগকে ঠেকাতে পৃথকভাবে রাজপথে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। বিএনপি ও জামায়াত নেতারা বলছেন, দেশে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের আর কোন রাজনীতি করার অধিকার নেই। তারা এই ধরনের কিছু করে দেশে নতুন করে কোন অস্থিরতা সৃষ্টির পাঁয়তারা করলে তাদের প্রতিহত করা হবে। প্রয়োজনে সাধারণ মানুষকে নিয়ে এলাকায় এলাকায় পৃথকভাবে অবস্থান নেবেন দুই দলের নেতাকর্মিরা।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র জন ত দ ই দল র ন ত ন ত কর ম ব এনপ র র জন ত র গঠন সদস য সরক র ধরন র আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
পোর্টফোলিও ডায়েট কী, কীভাবে এটি হৃদ্রোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে
বর্তমান সময়ে হৃদ্রোগ, উচ্চ রক্তচাপ এবং হাইপার কোলেস্টেরলেমিয়া রোগীর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। তাঁদের রক্তে ক্ষতিকর কোলেস্টেরল ও এলডিএলের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে, যা হার্টের জন্য ঝুঁকি তৈরি করে। বিভিন্ন ধরনের ডায়েট প্ল্যান রক্তের এলডিএল, কোলেস্টেরল কমাতে পারে, কিন্তু তা মাত্র ৫ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকর ডায়েট প্ল্যান হচ্ছে পোর্টফোলিও ডায়েট। পোর্টফোলিও ডায়েটে ২-৫ সপ্তাহের মধ্যেই ২০-২৫ শতাংশ কোলেস্টেরল ও এলডিএল কমে আসতে পারে।
পোর্টফোলিও ডায়েট কীপোর্টফোলিও ডায়েট রক্তের কোলেস্টেরল ও এলডিএলের পরিমাণ কমাতে একটি বিশেষ খাবার ব্যবস্থাপনা, যেখানে সব প্রাণিজ উৎস থেকে পাওয়া খাবার বাদ দেওয়া হয় এবং উদ্ভিজ্জ খাবারের আধিক্য থাকে। পোর্টফোলিও ডায়েটের পাঁচটি বৈশিষ্ট্য থাকে।
১. প্রাণিজ খাবার বাদ: প্রাণিজ প্রোটিন, যেমন মাছ, মাংস, ডিম, দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার বন্ধ করতে হবে। এই খাবারগুলো স্বাভাবিকভাবেই কম আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটসমৃদ্ধ হয়। ফলস্বরূপ এই খাবারগুলো রক্তের কোলেস্টেরল, এলডিএল বাড়ায় এবং গুড ফ্যাট এইচডিএল কমায়। যা দীর্ঘদিন চলতে থাকলে উচ্চ রক্তচাপ ও হার্টের রোগ সৃষ্টি করে।
২. উদ্ভিদ প্রোটিন খেতে হবে: আমাদের শরীরের প্রতিদিনের প্রোটিনের চাহিদা পূরণে শুধু উদ্ভিজ্জ প্রোটিন খেতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে মটরশুঁটি, মসুর ডাল, মুগডালসহ সব ধরনের ডাল, শিমের বিচি, কাঁঠালের বিচি, সব ধরনের বাদাম এবং সয়াবিন থেকে তৈরি খাবার। একটি গবেষণা থেকে দেখা যায়, প্রতিদিন কমপক্ষে ২৫ গ্রাম সয়া প্রোটিন গ্রহণ করলে হৃদ্রোগের ঝুঁকি কম হতে পারে। সয়া প্রোটিন সয়া মিট, সয়া দুধ, সয়া দই—বিভিন্নভাবে বাজারে পাওয়া যায়। এ ছাড়া টকজাতীয় দেশি ফল খাবারের তালিকায় রাখা যাবে।
৩. দ্রবণীয় ফাইবার (সলিবল ফাইবার): দ্রবণীয় ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। এই দ্রবণীয় ফাইবারসমৃদ্ধ খাবারগুলো আমাদের অন্ত্রে জেলির মতো গঠন তৈরি করে। অন্ত্রে, দ্রবণীয় ফাইবার পিত্ত অ্যাসিডের সঙ্গে আবদ্ধ হয়, যা ক্ষুদ্রান্ত্র থেকে চর্বিজাতীয় খাবারকে বৃহদান্ত্রের মাধ্যমে মলত্যাগের জন্য বহন করে। এটি লিভারকে আরও পিত্ত অ্যাসিড তৈরি করতে উৎসাহিত করে। এ প্রক্রিয়ার অন্যতম কাঁচামাল হচ্ছে কোলেস্টেরল। যদি লিভারে পর্যাপ্ত কোলেস্টেরল না থাকে, তখন রক্তে ভাসমান কোলেস্টেরল ও এলডিএলকে ব্যবহার করে। ফলে রক্তের কোলেস্টেরল ও এলডিএলের পরিমাণ কমে।
ওট, বার্লির মতো শস্য, বেগুন, ঢ্যাঁড়স, আপেল, কমলা, বেরিজাতীয় ফল দ্রবণীয় ফাইবারের খুব ভালো উৎস। ইসবগুলের ভুসি ও সব ধরনের শাকসবজিতেও দ্রবণীয় ফাইবার পাওয়া যায়।
৪. ফাইটোস্টেরল: ফাইটোস্টেরল উদ্ভিদের জৈবিক ঝিল্লির কাঠামোগত উপাদান, যা স্টেরল ও স্ট্যানলের সমন্বয়ে গঠিত। যদি কেউ প্রতিদিন ১ দশমিক ৫ থেকে ২ দশমিক ৪ গ্রাম উদ্ভিদ স্টেরল ও স্ট্যানল গ্রহণ করেন, তাহলে রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা ২-৩ সপ্তাহের মধ্যে ৭ থেকে ১০ দশমিক ৫ শতাংশ কমানো সম্ভব। অলিভ অয়েল, সানফ্লাওয়ার অয়েল, নারকেল তেল, বাদাম, সয়াবিন, মটর ও ক্যানোলা তেলে প্রাকৃতিকভাবে বিদ্যমান।
৫. মনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট: স্যাচুরেটেড ফ্যাটের পরিবর্তে মনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট ব্যবহার করতে হবে। এই চর্বি কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। তাই রান্নায় জলপাই তেল, সূর্যমুখীর তেল ব্যবহার করতে হবে। এ ছাড়া অ্যাভোকাডোতেও পর্যাপ্ত পরিমাণে মনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট রয়েছে।
গবেষণা বলছে, পোর্টফোলিও ডায়েট ১৪ শতাংশ পর্যন্ত হৃদ্রোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে পারে। যদিও শুধু ডায়েট মেনে চলাই যথেষ্ট নয়।
● ধূমপানের অভ্যাস থাকলে তা বন্ধ করতে হবে।
● নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম করতে হবে।
● উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
● ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
● ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
● প্রয়োজনে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিতে হবে।
মো. ইকবাল হোসেন, জ্যেষ্ঠ পুষ্টি কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল