১৯৭৬ সাল থেকে ফুলকির পথচলা। শিশুকিশোরদের মানসবিকাশে প্রতিনিয়ত সৃষ্টিশীল কাজকে ব্রত হিসেবে গ্রহণ করেছে ফুলকি পরিবারের সকল কর্মী। ২০২৫-এ ফুলকি পঞ্চাশে পদার্পণ করেছে। সুবর্ণজয়ন্তী বর্ষ উপলক্ষে সারাবছর নানা আয়োজনের পরিকল্পনা করেছে প্রতিষ্ঠানটি। 
শিশু-কিশোর সাংস্কৃতিক উৎসব ফুলকির দ্বিবার্ষিক আয়োজন। এ বছর চতুর্থবারের মতো এ উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। চট্টগ্রামের শিশু-কিশোর ও অভিভাবকদের সমাগমে তাদের প্রাণের উৎসবে রূপ নিয়েছে। এবারের উৎসবের প্রতিপাদ্য ‘মোরা ঝরনার মতো চঞ্চল, মোরা প্রকৃতির মতো সচ্ছল’। ৩০ জানুয়ারি বিকেল ৩টায় জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে উৎসব উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এভারেস্টজয়ী অভিযাত্রী বাবর আলী, ফুলকি ট্রাস্টের সভাপতি আবুল মোমেন, সম্পাদক ওমর কায়সার ও ফুলকির সর্বধ্যক্ষ শীলা মোমেন। 
শীলা মোমেন বলেন, ‘ফুলকি শিশু-কিশোরদের মানস-জগৎ উন্মোচনের কাজটি গত ৫০ বছর ধরে করে যাচ্ছে।’ উদ্বোধক বাবর আলী বলেন, ‘‘কিশোর বয়সে ‘চাঁদের পাহাড়’ বই পড়ে আমি পর্বত আরোহণের স্বপ্ন দেখি। ফুলকির কিশোররা সবাই যার যার স্বপ্নচূড়ায় একদিন আরোহণ করবে।” ওমর কায়সার বলেন, ‘ফুলকির নানা রঙে, নানা আয়োজনে শিশু-কিশোরদের সবসময় রাঙিয়ে রাখে।’ আবুল মোমেন বলেন, ‘স্বপ্নকে লালন করে শিশু-কিশোররা তাদের লক্ষ্যে পৌঁছে যাবে আর এই যাত্রায় তাদের সহযোগিতা করবে অভিভাবক ও ফুলকির মতো প্রতিষ্ঠান।’
গ্যালারিতে বিশ্ববিখ্যাত চিত্রকলা, শিশুদের আঁকা ছবি ও বাবার আলীর এভারেস্ট আরোহণের ছবি প্রদর্শনী ফিতা কেটে উদ্বোধন করেন অতিথি। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ছিল ব্রতচারী, কারাতে, বিশ্ববিখ্যাত চিত্রকলা ও চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, সোনারতরীর সাংস্কৃতিক পরিবেশনা ও নৃত্যাঞ্জলীর শাস্ত্রীয় নৃত্যানুষ্ঠান।
শেষ দু’দিন সকালে ছিল শিশু-কিশোরদের জন্য মাটির কাজ, পাপেট তৈরি, ছাপচিত্র ও তাঁত বুননের কর্মশালা। যেখানে ৯-১৬ বছর বয়সী যে কোনো শিশু-কিশোরের জন্য নিবন্ধন করে অংশগ্রহণের সুযোগ ছিল। শেষদিন সন্ধ্যায় ছোটদের জন্য গান পরিবেশন করে সংগীত সংগঠন ‘রক্তকরবী’। উৎসবের সমাপ্তি হয় ঢোলকবাদক শিবু দাস ও তার দলের ঢোল বাদনের মধ্য দিয়ে।

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০ টাকায় মিলছে বোমা পিঠা

রকমারি পিঠার বাহারি সাজে টেবিল যেন রঙিন এক উৎসবের আঙিনা। সুস্বাদু পিঠার মোহময় ঘ্রাণে মুখরিত চারপাশ। আর ভোজন রসিকদের কৌতূহলী দৃষ্টি প্রতিটি স্তূপে।

তবে সবার নজর কেড়েছে কিছু ব্যতিক্রমী নামের পিঠায়। এর মধ্যে রয়েছে- বোমা, ছেলেদের মন, হাসু আপার কুমড়ানি, হাইভোল্টেজ পায়েশ, আখেরি পাস্তা অন্যতম। নামের ভিন্নতা যেমন আকর্ষণ জাগাচ্ছে, তেমনি স্বাদের রহস্য উন্মোচনেও আগ্রহ বাড়িয়ে তুলছে।

এসব দেখা মিলেছে সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের (গবি) পিঠা উৎসবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এ উৎসবকে ঘিরে পিঠার রাজত্ব দখল করতে দুর্দান্ত এক মধুর লড়াইয়ে নেমেছে। নিজেদের হাতের গুণে, মনের জোরে তারা সাজিয়েছে এক মহারণ; পিঠার মহাযজ্ঞ।

বাঙালিয়ানার জেদ আর ঐতিহ্যের ধুলো ঝেড়ে তারা তুলে এনেছে ২ শতাধিক পিঠার বাহার। ২৫টি স্টল জুড়ে তাদের এ দাপুটে আয়োজন যে কাউকে তাক লাগিয়ে দেবে। বাহারি আকার, রঙ, স্বাদ আর নামের নতুনত্বে পিঠা উৎসব হয়ে উঠেছে প্রাণবন্ত।

এছাড়া পাটিসাপটা, ভাপা পিঠা, নকশি পিঠা, মাংস পুলি, দুধ পুলি, মাংস-ঝাল পিঠা, লবঙ্গ লতিকা পিঠা, জামাই পিঠা, মিষ্টি কুমড়া পিঠা, তক্তি পিঠা, কদম ফুল, গোলাপ পিঠা, ডাবের পুডিং, অরেঞ্জ জেলিসহ পরিচিত সব পিঠা তো আছেই। এদের একেকটির স্বাদ একেক রকম। তবে মেলায় আগতদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে বোমা পিঠা ২০ টাকা, হাসু আপার কুমড়ানি ও ছেলেদের মন।

সমাজবিজ্ঞান ও সমাজকর্ম বিভাগের ‘সামাজিক পিঠাঘর’ স্টলে সাজানো ‘বোমা’ পিঠা দেখতে ভীড় করছেন উৎসুক দর্শকরা।

অন্যদিকে, ভেটেরিনারি অনুষদের স্টলে শিক্ষার্থীরা সাম্প্রতিক সময়ের কলকাতার সাংবাদিক ময়ূখ রঞ্জন ঘোষের জনপ্রিয় ডায়ালগকে অনুসরণ করে ঝুলিয়ে দিয়েছে এক অভিনব ফেস্টুন— ‘থাকবে না, থাকবে না! একটি পিঠাও থাকবে না!’ উৎসবে আসা পিঠাপ্রেমীদের চোখে পড়তেই এটি হয়ে উঠেছে আলোচনার বিষয়, যেন মুহূর্তেই সব পিঠা উধাও হয়ে যাবে!

বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) দিনভর উৎসবের আমেজে মুখর হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণ। বাহারি পিঠার প্রদর্শনীতে যেন মিশে গেছে বাঙালির হাজার বছরের ঐতিহ্যের স্বাদ। গ্রামীণ খেলাধুলার উচ্ছ্বাসে ফিরেছে শৈশবের স্মৃতি। অপরদিকে, ডিবেটিং সোসাইটির আয়োজনে রম্য বিতর্ক যেন বুদ্ধির খেলা জমিয়ে তুলেছে প্রাণবন্ত এক পরিবেশ।

উৎসব উদ্বোধনের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আবুল হোসেন বলেন, “আমাদের ঐতিহ্যকে ধারণ করে প্রতিবছর ন্যায় এবারও শিক্ষার্থীরা পিঠা উৎসব আয়োজন করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস একটি পবিত্র জায়গা। আশাকরি আমরা সবাই মিলে সব ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ও পরিবেশ মোকাবিলা করে সফলভাবে অনুষ্ঠানটি শেষ করতে পারব।”

উৎসবের রঙ আরও গাঢ় করেছে রাফেল ড্রয়ের রোমাঞ্চ, যেখানে প্রত্যেকেই অপেক্ষায় আকর্ষণীয় পুরস্কারের। এরই মাঝে নাচ ও লোকগানের সুরে মেতে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী ও মিউজিক সোসাইটি, যেন সময় ফিরে গেছে হারানো বাংলার গ্রাম্য উৎসবে।

এছাড়া স্বরূপ ও হাইওয়ে ব্যান্ডের প্রাণবন্ত পরিবেশনা যেন রাতের আকাশে এক উচ্ছ্বাসের আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে; ছড়িয়ে দিয়েছে সুর আর উন্মাদনার ঝংকার।

উৎসবের আয়োজক কমিটির সভাপতি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি ও প্রশাসন বিভাগের প্রধান ড. আলী আজম খান বলেন, “আবহমান বাংলায় পিঠা উৎসব চমৎকার এক নিদর্শন। আমাদের শিক্ষার্থীরা আমাদের দেশজ সংস্কৃতিকে অন্তরে লালন-পালন করে। পিঠা উৎসবের মধ্য দিয়ে তারা দেশজ সংস্কৃতির চর্চা অব্যাহত রাখছে, এটি অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। প্রতিবারে দেশজ সংস্কৃতির এ ধারাকে অব্যাহত রেখে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পিঠা উৎসব আয়োজনের সুযোগ করে দেন। এজন্য আমরা কৃতজ্ঞ।”

ঢাকা/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৫ আগস্টের ঐক্য ম্লান হতে দেওয়া যাবে না: আদিলুর রহমান
  • বোমান ইরানির ‘দ্য মেহতা বয়েজ’
  • কাঁকড়াসদৃশ মঞ্চে বর্ণিল পরিবেশনা
  • হিলিতে গ্রামীণ পিঠা উৎসব
  • রাতভর গানের আয়োজন, গাইবেন করিম শাহাবুদ্দিন, অসিত কুমার ও ফেরদৌস আরা
  • রাতভর গানের আয়োজন
  • তারুণ্যের উৎসবে পিঠাপুলির স্বাদ
  • ঢাকা দক্ষিণে তারুণ্যের উৎসব 
  • গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০ টাকায় মিলছে বোমা পিঠা