আজ বিশ্ব জলাভূমি দিবস। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পালিত হচ্ছে দিবসটি। মূলত ২ ফেব্রুয়ারি ইরানের রামসার শহরে ১৯৭১ সালে অনুষ্ঠিত হয় জলাভূমি সম্মেলন। তখন থেকেই সারাবিশ্বে জলাভূমি সম্পর্কিত সচেতনতা বাড়ানোর প্রয়াস হিসেবে পালিত হয় এ দিবসটি। জীববৈচিত্র্যের প্রাকৃতিক সমাহারের জন্য বাংলাদেশের সুন্দরবন, হাকালুকি ও টাঙ্গুয়ার হাওরকে রামসার অঞ্চল হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে অনেক আগেই। সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া বিভিন্ন নদী ও খালে নানা প্রজাতির মাছ, বিশেষ প্রজাতির ডলফিন, উদ্ভিদ ও প্রাণীর সমৃদ্ধ প্রাণবৈচিত্র্য পৃথিবীর মধ্যে আলাদা জায়গা করে নিয়েছে।  
জালের মতো বিছিয়ে থাকা নদনদীর আশীর্বাদে প্রাকৃতিক জলাভূমির বৈচিত্র্যে ভরপুর আমাদের এই দেশ। বাংলাদেশের মানুষের জীবন-জীবিকার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে জলাভূমির অবদান। জলাভূমিগুলো ভৌগোলিক স্থানভেদে এবং গঠন প্রকৃতির কারণে হাওর, বাঁওড়, খালবিলসহ নানা নামে পরিচিত আমাদের কাছে। শুধু প্রকৃতির সৌন্দর্য বাড়ানোই নয়, বরং জলজ জীবন ও প্রাকৃতিক সম্পদের আধার হিসেবে জলাভূমি আগলে রেখেছে বাংলাদেশের পরিবেশ ও প্রতিবেশ। আমাদের দেশের মোট আয়তনের প্রায় ৫০ শতাংশ জলাভূমি। বড় বড়  হাওর, বিলের নাম আমাদের অনেকেরই জানা। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ জেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে সাড়ে তিনশরও বেশি হাওর রয়েছে। হাকালুকি, টাঙ্গুয়ার, খালিয়াজুরী, নিকলি, ইটনার হাওর, পচাশোল, সোমাইসহ বিভিন্ন নামে হাওর রয়েছে এ এলাকায়। এ ছাড়াও চলনবিল, ডাকাতিয়া বিল, আড়িয়ল বিল, গাজনার বিল, বাইক্কা বিল সারাদেশেই পরিচিত। 

যুগ যুগ ধরে এসব জলাভূমি আমাদের দেশীয় মাছের অভয়ারণ্য। দেশের প্রাকৃতিক মৎস্য সম্পদের সিংহভাগই আহরণ করা হয় এসব জলাশয় থেকে। এ ছাড়াও জলজ উদ্ভিদ, শাকসবজি থেকে শুরু করে আমাদের জাতীয় ফুল শাপলা এসব জলাভূমিতেই জন্মে। বাংলাদেশের জাতীয় পানি নীতি (১৯৯৯)-তে হাওর, বাঁওড় ও বিলকে আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্যের ধারক এবং এক অনন্য প্রাকৃতিক সম্পদ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। শীতকালে এ জলাভূমিগুলোই হয়ে ওঠে পরিযায়ী পাখির জন্য সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়স্থল। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি 
জলাশয়গুলো বাস্তুতন্ত্রের নিয়ামক হিসেবে কাজ করছে। শুধু প্রাকৃতিক সম্পদই নয়; বাণিজ্য ও যোগাযোগের ক্ষেত্রেও জলাভূমি বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের খাদ্যশস্যের জোগান দিতে ফসল উৎপাদনে ব্যবহৃত হয় নদনদী, খালবিলের পানি। আবার শুষ্ক মৌসুমে শুকিয়ে যাওয়া জলাভূমির পলির ওপর জন্ম নেয় সোনালি ধান। বাংলাদেশে উৎপাদিত ধানের একটা বৃহৎ অংশ আসে হাওরাঞ্চল থেকে। 

আমরা নিজেরাই আজ সেসব জলাভূমি ধ্বংসে মত্ত। অনেক বছর আগে ডাকাতিয়া বিল নিয়ে কাজ করতে গিয়ে দেখেছি কীভাবে সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা তাদের প্রভাব খাটিয়ে এই বিলের বিভিন্ন অংশ দখল করে নিয়েছেন। দেশের সব জায়গার চিত্র মোটামুটি একই। নানা জায়গায় মার্কেট, বাড়িসহ যে কোনো স্থাপনা নির্মাণের জন্য ভরাট করা হচ্ছে জলাভূমি। অপরিকল্পিত দ্রুত নগরায়ণের করাল গ্রাসের প্রথম বলি হয় আমাদের আশপাশের জলাভূমি। এক দশক আগেও বিভিন্ন নগরীর পাশে যেসব জলাভূমি দেখা যেত, আজ তা ভরাট করে বানানো হয়েছে বহুতল অট্টালিকা অথবা বাণিজ্যিক স্থাপনা। গত দুই দশকে ঢাকা এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় জলাভূমি কমেছে ২৩ শতাংশ, যা ঢাকার জলাবদ্ধতাসহ বিভিন্ন সমস্যার অন্যতম কারণ। গ্রামের তুলনায় শহরাঞ্চলে জলাভূমি দখলের মাত্রা 
অনেক বেশি। 

কয়েক মাস আগেই আমাদের দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে কুমিল্লা, নোয়াখালী ও ফেনীতে ভয়াবহ বন্যা হয়। বন্যার পানিতে দিনের পর দিন মানুষের অবর্ণনীয় কষ্টের খবর ও ছবি বাংলাদেশের প্রত্যেক মানুষকে ব্যথিত করেছে। অথচ লোকালয়ের পানি অনেক দ্রুত নেমে যেত যদি সেই এলাকার জলাভূমিগুলো দখল করে ভরাট না করা হতো। দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের বন্যা দীর্ঘতর হওয়ার প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে সে অঞ্চলের জলাভূমি ভরাট করে ফেলা। মূলত অনেক জলাভূমির সঙ্গে নদীর সরাসরি সংযোগ থাকে। নদীই জলাশয়ের পানি বয়ে নিয়ে যায় সাগরে। এ কারণে ভরাট হওয়া জলাভূমিগুলো পানি নিষ্কাশনে কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি। 

দেশের কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য শিল্পায়নের বিকল্প নেই। ব্যাঙের ছাতার মতো শিল্পকারখানার বিস্তার জলাভূমি বিনষ্টের অন্যতম কারণ। শিল্পকারখানার অপরিশোধিত তরল কিংবা কঠিন বর্জ্য অনেক জায়গাতেই সরাসরি ফেলা হচ্ছে জলাভূমিতে। সেই বর্জ্যের বিষাক্ত ছোবলে সময়ের আবর্তে হারিয়ে গেছে অনেক দেশীয় মাছ, উদ্ভিদ ও জলজ প্রাণী। এ ছাড়া নগরজীবনের জৈব ও অজৈব ক্ষতিকর পদার্থের পাশাপাশি বেশির ভাগ প্লাস্টিক বর্জ্যের শেষ ঠিকানা হয় আমাদের জলাভূমিতে। দখল-দূষণের ভয়াবহতায় অনেক জলাভূমি আজ মৃতপ্রায়। 
সারা পৃথিবীর জলাভূমি রক্ষার জন্যই রামসার সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিবছরই গুরুত্বের ওপর ভিত্তি করে প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়। এবারের বিশ্ব জলাভূমি দিবসের প্রতিপাদ্য– Protecting wetlands for our common future.

। অর্থাৎ আমাদের নিজেদের সুন্দর আগামীর জন্য পৃথিবীর পরিবেশ ও প্রতিবেশের সুরক্ষায় জলাভূমি রক্ষা করার সময় এখনই। বাংলাদেশের জলাভূমিগুলো রক্ষার জন্য সীমানা নির্ধারণ হতে পারে সর্বপ্রথম ধাপ। এই কাজে স্থানীয়, আঞ্চলিক ও জাতীয় পর্যায়ের সবার সদিচ্ছা এবং আন্তরিক কর্মপন্থা খুবই জরুরি। বাংলাদেশের জলাভূমির ধরন, প্রকৃতি ও বৈচিত্র্য অঞ্চলভেদে আলাদা। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জলাভূমি আর দক্ষিণ-পশ্চিমাংশের জলাভূমির ধরন বেশির ভাগ সময় এক রকম হবে না। বিশেষ করে জলাভূমি ও নদীর সংযোগস্থল উন্মুক্ত রাখার ব্যবস্থাটা জরুরি। নদীর গতিপথ ও পানিপ্রবাহ ব্যাহত হলে এর প্রভাব অন্যান্য প্রাকৃতিক জলাশয়ের ওপরও পড়ে। 

অঞ্চলভিত্তিক পরিকল্পনা গ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশের জন্য একটি সমন্বিত মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করে জলাভূমি রক্ষায় কার্যকর ভূমিকা রাখা সম্ভব। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ও মানুষের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত জলাভূমি বাঁচাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সময় এসেছে। জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, জলাভূমির সীমানা নির্ধারণ, দখল-দূষণ প্রতিরোধে আইনের যথাযথ প্রয়োগ এবং সর্বোপরি সামাজিক সচেতনতার মাধ্যমে বাংলাদেশের জলাভূমির সুরক্ষা আমাদেরই নিশ্চিত করতে হবে।  

ড. মো. রাশেদুজ্জামান পবিত্র: সভাপতি, ইএসডি বিভাগ, বশেমুরবিপ্রবি;
পরিচালক, রিভারাইন পিপল

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

বিজয় যখন কড়া নাড়ছে

পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের ঠিক আগমুহূর্তে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সাড়া জাগায়। দেশবাসীসহ বিশ্ব জানতে পারে, জাতিগত গণহত্যার মধ্যেই চলেছিল পরিকল্পিত বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড। এখানে সে সময়ের একটি আলোচিত প্রতিবেদন তুলে ধরা হলো।

আত্মসমর্পণের আগে

ঢাকায় বৃহস্পতিবার আত্মসমর্পণের আগে পাকিস্তান সেনাবাহিনী শহরের বুদ্ধিজীবী, বিজ্ঞানী, ব্যবসায়ীদের গ্রেপ্তার করেছে এবং তাঁদের মধ্যে পঞ্চাশের বেশি লোককে গুলি করে হত্যা করেছে। আকস্মিক সামরিক অভিযানের অংশ হিসেবে নিবিড় পরিকল্পনার আওতায় বাঙালি এলিট নিধনের অংশ হিসেবে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। এটা অবশ্যই কমান্ডিং অফিসার জেনারেল নিয়াজিসহ পাকিস্তান হাই কমান্ডের পূর্ণ জ্ঞাতসারে ঘটেছে।

এসব মৃতদেহের আবিষ্কার ঢাকা শহরে উত্তেজনা বাড়াতে পারে, পাল্টা হত্যাকাণ্ড ও দাঙ্গার জন্ম দিতে পারে, এমনকি মুক্তিবাহিনীর গেরিলা ও ভারতীয় সেনাবাহিনীর মধ্যেও সংঘর্ষ সৃষ্টি করতে পারে।

ঢাকার মূল শহরের পাশের রায়েরবাজারে কতগুলো বিচ্ছিন্ন গর্তে নিহত বুদ্ধিজীবীদের মৃতদেহ আবিষ্কৃত হয়। আমি নিজে ৩৫টি গলিত দেহ দেখেছি। আপাতদৃষ্টে মনে হয়, তাঁরা চার-পাঁচ দিন আগে নিহত হয়েছেন। মৃতের সংখ্যা সম্ভবত আরও বেশি হবে। ঢাকায় অপহরণ করা এ ধরনের লোকের সংখ্যা অন্তত ১৫০ হতে পারে।

ইউপিআইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজের প্রধান হৃদ্​রোগ চিকিৎসক ফজলে রাব্বী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান মুনীর চৌধুরী রয়েছেন। ঢাকার মধ্যবিত্ত এলাকা ধানমন্ডির বাইরে একটি ইটখোলাকে বধ্যভূমিতে পরিণত করা হয়েছে। যদিও কচুরিপানার নীল-সাদা ফুল কর্দমাক্ত জলাশয়ে শোভা পাচ্ছে। স্থানটি লোকালয় থেকে বিচ্ছিন্ন। আজ ঢাকার শত শত মানুষ মাটির বাঁধ দিয়ে হেঁটে হেঁটে এখানে এসেছে, তাদের অনেকেই খুঁজে বেড়াচ্ছে নিরুদ্দিষ্ট স্বজনদের।

বিশিষ্টজনদের অপহরণ করে তুলে নেওয়ার ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার সকালেই। পাঞ্জাবি সেনাদের কয়েকটি স্কোয়াড নির্দিষ্ট ঠিকানায় হাজির হয়ে নির্ধারিত পুরুষ ও নারীকে সশস্ত্র পাহারায় উঠিয়ে নিয়ে এসেছে। তাঁদের সম্ভবত রায়েরবাজার ইটখোলায় এনে মাটির বাঁধের পাশে লাইন ধরে দাঁড় করিয়ে গুলি করেছে, যাতে তাঁরা হুমড়ি খেয়ে নিচের জলাশয়ে পড়ে যান।

ড. আমিনুদ্দিন বেঙ্গল রিসার্চ ল্যাবরেটরির প্রধান, অক্সফোর্ডের পিএইচডি। পাকিস্তানি সেনারা যখন তাঁকে তুলে নেয়, সেই মঙ্গলবার সকাল সাতটায় তাঁকে শেষবারের মতো দেখা যায়। নাজিউর রহমান বললেন, ‘আমি দুঃখিত, আমাকেও যেতে হচ্ছে, খুঁজে দেখি।’ ততক্ষণে তিনিও উলের মাফলার দিয়ে নাক-মুখ পেঁচিয়ে নিয়েছেন।

গতকাল আমি কেবল তিন ঘণ্টা ঢাকায় ছিলাম, ততক্ষণে ইটভাটার এই খবর তেমন ছড়ায়নি। জনতা উত্তেজিত, তবে আচরণে অদ্ভুত কোমলতা। ভারতীয় সেনাদের হাত নেড়ে অভিবাদন জানাচ্ছে, গাড়িতে এই প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত যাচ্ছে, আবার ফিরে আসছে।

সেদিনও অনেক গোলাগুলি হয়েছে, বিশেষ করে রাতের বেলায়। ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে অবস্থানরত সাংবাদিকেরা জানিয়েছেন, পরিস্থিতি তখনো বিস্ফোরণোন্মুখ। বাঙালিরা অভিযোগ করছে, বিহারি এই বিদেশিরা বহু বছর আগে মুসলমান হিসেবে ঘাঁটি গেড়ে বসেছে, তারা বাঙালি হত্যাকাণ্ডে পাকিস্তানি সেনাসদস্যদের সাহায্য করেছে। আট মাস আগে আমি যখন যশোরে ছিলাম, এ কারণেই সেখানে বেসামরিক বিহারিদের হত্যা করা হয়। ঢাকায় বুদ্ধিজীবীদের হত্যাকাণ্ড যশোরের হত্যাকাণ্ডের চেয়ে শতগুণ বেশি ভয়াবহ একটি ব্যাপার। কাজেই একধরনের প্রতিশোধ গ্রহণের ব্যাপার অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠবে।

ইতিমধ্যে ভারতীয় সেনাবাহিনীর পাহারায় সেনানিবাসে বন্দী পাকিস্তানি সেনারা এখনো সশস্ত্র, যদি প্রয়োজন পড়ে! ঢাকা যখন জেনে যাবে পাকিস্তানি সেনারা কত পরিকল্পিতভাবে এই হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে, তখন দেখা দেবে সত্যিকারের সংকট। যা-ই ঘটুক, পরাজিত পাকিস্তানি সেনাদের জন্য সহানুভূতিপ্রবণ হওয়া বাঙালিদের জন্য ক্রমেই কঠিন হয়ে পড়ছে। এ রকম একটি সুশৃঙ্খল সেনাবাহিনী এভাবে খেলাচ্ছলে অপ্রয়োজনে, উন্মত্তের মতো খুন করতে পারে, তা অবিশ্বাস্য।

যদি পাইকারি হত্যাকাণ্ডকে সংবাদপত্র গণহত্যা আখ্যায়িত করে, তা অবশ্যই ভয়ংকর; কিন্তু পরিকল্পিতভাবে বাছাই করে জাতির সবচেয়ে যোগ্য, বুদ্ধিমান ও গুরুত্বপূর্ণ পুরুষ ও নারী হত্যার মাধ্যমে যদি জাতির ভবিষ্যৎ ধ্বংস করে দেওয়া হয়, সেই ‘এলিটোসাইড’ এলিট হত্যা যে আরও বেশি ভয়ংকর।

গত মঙ্গলবারের অনেক আগেই পাকিস্তান শেষ হয়ে গেছে। যেসব কর্মকর্তা এই পরিকল্পনা করেছেন, তাঁরাও তা অবশ্যই জানেন। কাজেই হত্যাকাণ্ডের উদ্দেশ্য ছিল পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশকেও ধসিয়ে দেওয়া। বহুদিন ধরেই অনুমান করা হচ্ছিল, পাঞ্জাব মরুভূমির রুক্ষ সেনারা বাঙালিদের প্রতি হিংস্র বর্ণবাদী ঘৃণা লালন করে আসছে। এখন দেখা যাচ্ছে, তারা বুদ্ধিভিত্তিক ঈর্ষাও লালন করছে, যার প্রকাশ ঘটেছে এই ব্যাপক হত্যাকাণ্ডে।

ঈষৎ সংক্ষেপিত অনুবাদ: এম এ মোমেন

দ্য সানডে টাইমস, ১৯ ডিসেম্বর ১৯৭১

প্রথম আলো, ২৬ মার্চ ২০১১, পুনর্মুদ্রিত

সম্পর্কিত নিবন্ধ