Samakal:
2025-02-01@20:48:28 GMT

পাণ্ডুলিপি পাঠকই ‘যাচাই’ করুক

Published: 1st, February 2025 GMT

পাণ্ডুলিপি পাঠকই ‘যাচাই’ করুক

গতকাল শনিবার অমর একুশে বইমেলা উপলক্ষে নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। এ সময় পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ‘অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে– এমন বিষয়বস্তু ঠেকাতে’ পাণ্ডুলিপি আগেই বাংলা একাডেমি দ্বারা যাচাইয়ের পরামর্শ দিয়েছেন।  
গত বছর–আওয়ামী লীগের আমলে–একুশে বইমেলায় তিনটি বই বাংলা একাডেমি নিষিদ্ধ করে। মজার বিষয়, এসব বইয়ের কাটতি আরও বেড়ে গিয়েছিল। তিনটি বই বুদ্ধিবৃত্তিক দিক থেকেও ছিল বেশ চমৎকার। ফয়েজ আহমদ তৈয়্যবের ‘অপ্রতিরোধ্য উন্নয়নের অভাবনীয় কথামালা’, ফাহাম আব্দুস সালামের লেখা ‘মিডিয়োক্রিটির সন্ধানে’ ও জিয়া হাসানের ‘উন্নয়ন বিভ্রম’। বই তিনটি নিষিদ্ধ করার কারণ হলো, এগুলো আওয়ামী লীগের উন্নয়নের গাঁজাখুরি চিত্র উদোম করে দিয়েছিল। 

বাংলাদেশে বইয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির ঘটনা নতুন কিছু নয়। বিভিন্ন সময় শাসকমহল নিজেদের অপরাধ ও অস্বস্তি গালিচার নিচে লুকিয়ে রাখতে এ ধরনের পদক্ষেপ নেয়। সরকারের এ ধরনের সিদ্ধান্তে হিতে বিপরীত ঘটে। ভারতবর্ষে ইংরেজ সরকার জাতীয় কবি নজরুল ইসলামে ‘যুগবাণী’, ‘বিষের বাঁশি’, ‘ভাঙার গান’, ‘প্রলয় শিখা’ ও ‘চন্দ্রবিন্দু’ কাব্যগ্রন্থ নিষিদ্ধ করেছিল। তারা ‘কারার ঐ লৌহ-কপাট’-এর মতো কবিতা নিষিদ্ধ করেছিল, যা ‘ভাঙার গান’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত। একইভাবে ‘বিদ্রোহী’ কবিতাটিও অনানুষ্ঠানিকভাবে নিষিদ্ধ ছিল, যেটি ‘অগ্নিবীণা’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত। স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৯৫ সালে হুমায়ুন আজাদের ‘নারী’ বইটি নিষিদ্ধের তালিকায় যুক্ত হয়। ১৯৯৩ সালের ১১ জুলাই সরকার ‘জনমনে বিভ্রান্তি ও বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অঙ্গনের বিঘ্ন ঘটানো এবং রাষ্ট্রবিরোধী উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রকাশের জন্য’ তসলিমা নাসরিনের ‘লজ্জা’ উপন্যাসটি নিষিদ্ধ করেছিল। ১৯৮৮ সালে সালমান রুশদির ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’ প্রকাশ পায়। বইটি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিতর্কের ঝড় তুলেছিল।  

বিশেষ কোনো কারণ দেখিয়ে কোনো বই নিষিদ্ধ করার ফজিলত আদৌ আছে কি? এ প্রশ্নের সরাসরি উত্তর না দিয়ে একটু বিশ্লেষণ করা যাক। আধুনিক দুনিয়ায় মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে রয়েছে ব্যাপক সমর্থন। এটি চলমান এক প্রক্রিয়া। সমাজের বৌদ্ধিক পরিপক্বতার সঙ্গে সঙ্গে বিশেষ জনগোষ্ঠীর মতপ্রকাশ উপভোগ করার পরিসরের বিস্তৃতি ঘটে। এ কারণে এখানে লেখক ও পাঠক দুই পক্ষের যেমন দায় রয়েছে, তেমনি রয়েছে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব। যেমন– সরকারের গণতান্ত্রিক মনোভাব কতুটুকু, শিক্ষা ব্যবস্থার হাল ইত্যাদি। 
সমাজে মিথ্যা ও দুর্বল বয়ান আগে-পরে ঠেকে না। গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আমরা আওয়ামী বয়ানও চুরমার হতে দেখেছি। তাই ‘অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে’ এমন কারণ দেখিয়ে পাণ্ডুলিপি যাচাইয়ের ডিএমপির পরামর্শ যুক্তিযুক্ত নয়, বরং আপত্তিজনক। বিষয়টি অর্থনীতির গ্রেশাম’স ল-এর মতোই। এ আইন অনুযায়ী, খারাপ মুদ্রা বাজার থেকে ভালো মুদ্রাকে বিতাড়িত করে। গুণসম্পন্ন বইয়ের কাছে খারাপ বইয়ের পরাজয় ঘটবেই।

তাই বিশেষ কোনো বই কিংবা চিন্তা গ্রহণ বা বর্জনের দায় পাঠকের। এ কারণে বই প্রকাশে বাংলা একাডেমি কিংবা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের হস্তক্ষেপ কোনোভাবেই কাম্য নয়।
গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ দ্বারা পরিচালিত সরকারের আমলে নাগরিক অধিকার, মতপ্রকাশের পরিসরের বিস্তৃতি ঘটবে– সেটিই প্রত্যাশিত। বিশেষ কোনো কারণ দেখিয়ে বিশেষ মত চাপা না দিয়ে বরং সরকার কার্যকর কিছু পদক্ষেপ নিতে পারে। যেমন– জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আর্কাইভ করা, শিক্ষাব্যবস্থা ঢেলে সাজানো, গবেষণায় আরও তহবিল বাড়িয়ে দেওয়া। 
রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বৌদ্ধিক উৎকর্ষের উন্নতি ঘটলে বিশেষ কোনো চিন্তার কারণে সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টির আশঙ্কা কমতে 
থাকে। এ কারণে দায় যতটা ব্যক্তিমানুষের, তার চেয়ে বেশি রাষ্ট্রের। তাই পাণ্ডুলিপি যাচাইয়ের দায়িত্ব পাঠকের হাতে ন্যস্ত করাই যুক্তিযুক্ত।  

ইফতেখারুল ইসলাম: 
সহসম্পাদক, সমকাল
Iftekarulbd@gmail.

com 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন ষ দ ধ কর সরক র বইয় র

এছাড়াও পড়ুন:

শেখ হাসিনার ফাঁসির দাবিতে চট্টগ্রামে অনশনে বৈষম্যবিরোধীরা

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হামলা ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ জড়িত সবার ফাঁসির দাবিতে অনশন করছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নগরীর জামালখানে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে এ অনশন শুরু করেন তারা। পরে প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে অবস্থান নেন। রাত সাড়ে ৮টা এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত অনশন চলছিল। এর আগে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ করেন তারা।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য রাসেল আহমেদ বলেন, ‘বিপ্লবের ছয়মাস পূরণ হতে যাচ্ছে। আমরা এখনও এ সরকারের কাছে কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ দেখতে পাইনি। আমাদের ভাইদের রক্ত এখনও রাজপথে লেগে আছে। আমি এখানে বসলাম, যতক্ষণ পর্যন্ত সরকার কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেবে না আমরা এখান থেকে উঠব না। আমাদের লড়াই চলছে, চলবে। আমরা আমাদের আমরণ অনশন চালিয়ে যাব। আমরা বিচার চাই। বিচার ছাড়া কোনো কথা নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘এ সরকার আমাদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে ক্ষমতায় বসেছে। ইউনূস সরকার কি করে। খুনি বাইরের দেশে বসে আছে। তাদের ধরে এনে ফাঁসির দড়িতে ঝুলাতে হবে। এটাই আমাদের শেষ কথা।’ 

রাসেল আহমেদ বলেন, ‘বিগত বছরগুলোতে যেভাবে ফ্যাসিবাদী কাঠামো গড়ে উঠেছিল, সেটাকে ভেঙে দিয়ে খুনি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আমরা রাজপথে নেমে এসেছিলাম। এখন পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকারের কাছ থেকে আমরা ন্যূনতম সংস্কার ও বিচার পাইনি। জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আমাদের দুই হাজারের অধিক ভাই জীবন দিয়েছে। তারা রাজপথে সাহসিকতার সঙ্গে আওয়ামী লীগের পেটোয়া বাহিনী প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল।’

রাসেল আরও বলেন, ‘স্বাধীনতার পর এখনও আমাদের খুনি হাসিনা, আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগের বিচারের দাবিতে রাজপথে নামতে হয়। আমাদের এ মুক্ত বাতাসে এখনও লাশের গন্ধ ভেসে বেড়ায়। বারবার আমাদের তাদের বিচারের দাবিতে আওয়াজ তুলতে হচ্ছে। এ অন্তর্বর্তী সরকারকে সেসব খুনিদের বিচার করার জন্যই ক্ষমতায় বসানো হয়েছে। আজও ছাত্রলীগ-যুবলীগের গুণ্ডাবাহিনী বীর চট্টলার বুকে মিছিল করেছে। খুনি হাসিনাসহ আমাদের ভাইদের যারা খুন করেছে, তাদের বিচার ও ফাঁসি না হওয়া পর্যন্ত আমরা এখানে এখন থেকেই আমরণ অনশন পালন করব।’ 

আজ বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) শাকিলা সোলতানা বলেন, ‘এখনো তারা সড়কে আছেন। তাদের দাবি দাওয়া নিয়ে আলোচনা চলছে।’ 

অনশনকারীদের অন্য দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- দ্রুত বিচার আইনে বিভাগীয় ট্রাইব্যুনাল গঠন করে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে হত্যাকাণ্ডে জড়িত ও উস্কানিদাতাদের গ্রেপ্তার-বিচার করা, শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরত এনে বিচার করা, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র রাষ্ট্রীয়ভাবে ঘোষণা করা, সব হত্যা, গুম, খুন, ধর্ষণ, অপরাধ ও নির্যাতনের বিচার করা, আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা, আওয়ামী লীগ নেতাদের অবৈধভাবে অর্জিত সব অর্থ ও সম্পদ রাষ্ট্রীয়ভাবে বাজেয়াপ্ত করা, বিদেশে পাচার করা অর্থ ফেরত আনা, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়ে শহীদ পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের জীবনের দায়িত্ব রাষ্ট্রকে গ্রহণ করতে হবে ও নতুন সংবিধান প্রণয়ন করাসহ রাষ্ট্রের যাবতীয় গণতান্ত্রিক সংস্কারের রূপরেখা প্রদান করতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বইমেলায় ‘সেরা লেখক’ স্বীকৃতির আয়োজনের প্রস্তাব প্রধান উপদেষ্টার
  • জুলাই অভ্যুত্থান এবারের বইমেলায় নতুন তাৎপর্য নিয়ে এসেছে: প্রধান উপদেষ্টা
  • বইমেলা শুরু আজ, উদ্বোধন করবেন প্রধান উপদেষ্টা
  • গণঅভ্যুত্থান ও মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণা ভাষা আন্দোলন
  • বইমেলা ঘিরে উচ্ছ্বাস, উদ্বোধনে অধীর অপেক্ষায়
  • প্রকৃত জাতীয় ঐক্য করতে হলে শ্রমিকের ঐক্য দরকার: আনু মুহাম্মদ
  • ছাত্রলীগের ‘ভয়ংকররূপে’ ফেরার বার্তা কী বার্তা দেয়?
  • লাল, কালো, সাদার মন্ত্রে এবারের অমর একুশে বইমেলা
  • শেখ হাসিনার ফাঁসির দাবিতে চট্টগ্রামে অনশনে বৈষম্যবিরোধীরা