জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচনের আগে সংস্কারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে শাখা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।

অন্যদিকে, সংস্কারের দাবি তুলে জাকসু বানচালের চেষ্টা প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়ে ‘জাকসুর পক্ষে জাহাঙ্গীরনগর’ এর ব্যানারে নির্বাচনের রোডম্যাপ অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে তফসিল ঘোষণার দাবিতে বিক্ষোভ-মিছিল ও প্রশাসনিক ভবনের সামনে পাল্টা অবস্থান নিয়েছে শিক্ষার্থীরা৷

শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) বিকেল পৌনে ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বর থেকে শাখা ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা একটি মিছিল নিয়ে নতুন রেজিস্ট্রার ভবনের সামনে এসে অবস্থান গ্রহণ করে। পরে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রায় ৩ ঘণ্টা অবস্থান করেন তারা।

এছাড়া ঘোষিত সময়ের মধ্যে তফসিল ঘোষণা না করা ও ছাত্রত্ব শেষ হওয়া ছাত্রদল নেতাকর্মীদের অবস্থানের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও পাল্টা অবস্থান নিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের প্রায় কয়েক শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেন। 

অবস্থান কর্মসূচীতে শিক্ষার্থীরা ‘অছাত্ররা কেন কাউন্সিল রুমে? প্রশাসন জবাব দে’, ‘অছাত্রদের ঠিকানা এই ক্যাম্পাসে হবে না’, ‘আদু ভাইয়ের আস্তানা ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও’, ‘জাকসু চাই জাকসু চাই দিতে হবে দিতে হবে’, ‘আজকেই তফশীল ঘোষণা করো করতে হবে’, ‘বাহানা দিয়ে জাকসু বানচাল করা যাবে না’, ‘জাকসু নিয়ে টালবাহানা করতে দেওয়া হবে না’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন। 

বিকালের অবস্থান কর্মসূচিতে জাবি ছাত্রদলের সদস্য সচিব ওয়াসিম আহমেদ অনিক বলেন, “জাকসু নির্বাচনের গুরুত্বপূর্ণ চেয়ারে যারা বসে আছেন, তারা আওয়ামী লীগের দোসর। তাদের বসিয়ে রেখে কোনভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। তাছাড়া জাকসুর যে গঠনতন্ত্র রয়েছে, সেটা অনেক আগের। এই গঠনতন্ত্র সংস্কার করতে হবে। এ কাজগুলো সম্পন্ন করে নির্বাচন দিতে হবে। অন্যথায় তা মেনে নেওয়া হবে না। আজ আমাদের দাবি মেনে নেওয়া না হলে আমরা পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করব।”

অবস্থান কর্মসূচিতে জাবি ছাত্রদলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন বাবর বলেন, “ফ্যাসিবাদের দোসরদের বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ আসনে ও সিন্ডিকেটে রেখে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন প্রশাসন দিতে পারে না। সংস্কার বাদ দিয়ে নির্বাচনের দিকে আগালে নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা হারাবে। জুলাই আন্দোলনে হামলাকারী ও ফ্যাসিবাদের দোসরদের বিচার নিশ্চিতের আগে জাকসু নির্বাচন দিলে ছাত্রদল তা মেনে নেবে না। সংস্কার বাদ দিয়ে জাকসুর তফসিল ঘোষণা করলে জাবি ছাত্রদল কঠোর কর্মসূচির দিকে আগাবে।”

জাবি শাখা ছাত্রদলের অবস্থান কর্মসূচী

এদিকে, জাকসুর রোডম্যাপ ঘোষণা হওয়ার পর সংস্কারের প্রস্তাব তুলে ছাত্রদল জাকসু বানচালের চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা। ঘোষিত সময়ের মধ্যে জাকসুর তফসিল ঘোষণার দাবিতে ‘জাকসুর পক্ষে জাহাঙ্গীরনগর’ নামে একটি সর্বদলীয় প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলেছেন তারা।

সন্ধ্যায় অবস্থান কর্মসূচীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইন্সটিটিউটের ৪৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী আব্দুর রশিদ জিতু বলেন, “তফশীল ঘোষণা বিকেলে হওয়ার কথা থাকলেও এখনো হচ্ছে না। অছাত্ররা প্রশাসনের সঙ্গে মিটিং করছে। প্রশাসনকে হুশিয়ার করতে চাই, অছাত্রদের আস্তানা এই ক্যাম্পাসে হবে না। আজকের মধ্যেই জাকসুর তফশিল ঘোষণা করতে হবে।”

অর্থনীতি বিভাগ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক শাওন বলেন, “৫ আগস্টের আগে যেভাবে একদল হামলা-অরাজকতা করত, একইভাবে এখন আরেক দল করছে। ওদের যেভাবে তাড়িয়েছি, সেভাবে আবার  রাজপথে আমাদের দাঁড়াতে হবে। আমরা শিক্ষার্থী সংসদ চাই। ক্যাম্পাসে অছাত্রদের রাজনীতি চাই না। আমরা প্রশাসনকে জানাতে চাই আজকেই তফসিল ঘোষণা দিতে হবে।”

নৃবিজ্ঞান বিভাগের ৪৮ ব্যাচের শিক্ষার্থী মেহের আফরোজ শাওঁলি বলেন, “৫ আগস্টের পর আমরা চাইনি আবার ছাত্রলীগ মতো কেও ছড়ি ঘোরাক, ত্রাশের রাজনীতি চলুক। কারা জাকসু বানচাল করতে চায়, তাদের আমরা চিনি। প্রশাসনের সাহস কিভাবে হয়, অছাত্রদের প্রশাসন বিল্ডিংয়ের সামনে আন্দোলন করতে দেয়। ভিসি আমাদের ভয় দেখায় জাকসু দিতে গিয়ে লাশ পড়লে তখন কি হবে। ভিসিকে বলতে চাই, ‘নাটক কম করো পিও’। আজকের মধ্যেই জাকসুর তফসিল ঘোষণা করতে হবে।”

প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী শাহাদাত হোসেন বলেন, “তারা বলেন জাকসু হলে নাকি লাশ পড়বে। তার মানে উনি সিদ্ধান্ত দিয়েছে তারা অশান্তি অরাজকতা সৃষ্টি করবে। তারা কাদের ছত্রছায়ায় ক্যাম্পাসে আসে? তারা হলে এসে মিটিং করে, দু’দিন পর আমাকে হল থেকে বের করে দিবে না- তার কি গ্যারান্টি আছে। জাকসু না হলে আবার সে নতুন স্বৈরাচার গড়ে উঠবে। আপনারা যে নামেই রাজনীতি করেন না কেন, লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি শুরু করতে চাইলে আবার মুগ্ধ, সাঈদ জীবন দিয়ে নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলবে।”

পুর্ব ঘোষণা অনুসারে আজ ১ ফেব্রুয়ারি জাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার কথা ছিল।

ঢাকা/আহসান/মেহেদী

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ছ ত রদল র র জন ত

এছাড়াও পড়ুন:

ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী-শিবিরের পাল্টাপাল্টি অবস্থান

জাকসু নির্বাচন নিয়ে ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি)। পূর্বঘোষিত রূপরেখা অনুযায়ী শনিবার জাকসু নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার কথা ছিল। তবে জাকসু নির্বাচন সংক্রান্ত পরিবেশ পরিষদের পরামর্শক্রমে যথাসময়ে ঘোষণা করা হয়নি তপশিল। তপশিল ঘোষণা নিয়ে ছাত্রদল-বৈষম্যবিরোধী-শিবির পাল্টাপাল্টি অবস্থান নিয়েছে। 

ছাত্রদল ও বাম সংগঠনগুলো চাচ্ছে, জাকসুর গঠনতন্ত্রসহ প্রয়োজনীয় সংস্কারের পর নির্বাচন হোক। এ নিয়ে তারা শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে। অন্যদিকে তপশিল ঘোষণাসহ দ্রুত নির্বাচনের দাবিতে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে পাল্টা অবস্থান নেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, ছাত্রশিবির, জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটভুক্ত ২টি সংগঠন, গণঅভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলন, জুলাই গণহত্যা বিচার নিশ্চিত পরিষদসহ বেশ কিছু সংগঠনের অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মী। এসময় অনতিবিলম্বে জাকসু নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার দাবি জানান তারা। অন্যথায় আসন্ন ভর্তি পরীক্ষা বন্ধের হুঁশিয়ারি দেন নেতা-কর্মীরা। 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাবি শাখার সদস্য সচিব তৌহিদ মোহাম্মদ সিয়াম বলেন, ‘ছাত্রদলের ব্যানারে কিছু অছাত্র আজকে রেজিস্ট্রার ভবনে সামনে অবস্থান নিয়ে জাকসুর তপশিল ঘোষণা না করতে চাপ প্রয়োগ করেছে। তাই তপশিল ঘোষণা করা হয়নি। তার প্রেক্ষিতে জাকসুর পক্ষের সব শক্তিকে এক করে আমরা ক্যাম্পাসে মিছিল দিয়ে অবস্থান নিয়েছি। আসন্ন ভর্তি পরীক্ষার আগে তপশিল ঘোষণা না করা হলে ভর্তি পরীক্ষা হতে দেওয়া হবে না।’  

গণঅভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলনের আহ্বায়ক আব্দুর রশিদ জিতু বলেন, ভর্তি পরীক্ষার আগেই তপশিল ঘোষণা করতে হবে। অন্যথায় ভর্তি পরীক্ষা হতে দেওয়া হবে না। প্রশাসন গত এক মাস আগে জাকসু বাস্তবায়নের লক্ষ্যে একটা রোডম্যাপ প্রকাশ করেছিল, সেই লক্ষ্যে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করেছিল এবং আজকে ছিল তপশিল ঘোষণার তারিখ। কিন্তু একটা কুচক্রী মহলের দাবির প্রেক্ষিতে জাকসু বানচালের চেষ্টা করছে।

প্রয়োজনীয় সংস্কার ছাড়া জাকসু সুষ্ঠু হবে না, সেজন্য সংস্কার চেয়ে শাখা ছাত্রদলের সদস্য সচিব ওয়াসিম আহমেদ অনিক জানান, জাকসু নির্বাচনের গুরুত্বপূর্ণ চেয়ারে যারা বসে আছেন তারা আওয়ামী লীগের দোসর। তাদের বসিয়ে রেখে কোনোভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। তাছাড়া জাকসুর যে গঠনতন্ত্র রয়েছে সেটা অনেক আগের। এই গঠনতন্ত্র সংস্কার করতে হবে এবং এই কাজগুলো সম্পন্ন করে নির্বাচন দিতে হবে অন্যথায় তা মেনে নেওয়া হবে না।

 এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসান বলেন, ‘ছাত্র সংগঠনগুলো দুইটি পক্ষ বিভক্ত হয়েছে—এক পক্ষ নির্বাচন সূচি অবিলম্বে ঘোষণা করার দাবি জানাচ্ছে, অন্য পক্ষ নির্বাচনের সূচি ঘোষণার আগে সংস্কার কমিশন গঠন চাচ্ছে। আমরা ইতোমধ্যে পরিবেশ পরিষদের পরামর্শক্রমে জাকসু নির্বাচনের গঠনতন্ত্র সংস্কারের বিষয়ে একটি কমিটি গঠন করেছি৷’ 

জাকসুর গঠনতন্ত্র সংস্কার কমিটি গঠন
জাকসু নির্বাচনের লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক আব্দুর রবকে আহ্বায়ক করে ১০ সদস্যের জাকসু গঠনতন্ত্র সংস্কার কমিশন গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সংস্কার কমিটিকে আগামী চার কর্মদিবসের মধ্যে সংস্কার বিষয়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিতে বলা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী-শিবিরের পাল্টাপাল্টি অবস্থান