সবার জন্য অভিন্ন প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা চালুর দাবি জানিয়েছেন সমকালের উপদেষ্টা সম্পাদক আবু সাঈদ খান। তিনি বলেন, উচ্চশিক্ষায় না হোক, অন্তত প্রাথমিক শিক্ষায় এটি চালু হতে পারে কিনা– যেখানে মন্ত্রী, মালিক ও শ্রমিকের সন্তানরা একই ধরনের শিক্ষা পাবে। চীন ও জাপানে এ ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থা চালু আছে। এক জাতি গড়তে হলে অভিন্ন প্রাথমিক শিক্ষা চালু করা জরুরি। শিক্ষায় ভাগ থাকলে জাতিও বিভক্ত হয়ে যাবে। শিক্ষা ব্যবস্থা ঠিক না হলে শুধু শিক্ষকের দাবি-দাওয়া আদায় করে কোনো সমস্যার সমাধান হবে না। শিক্ষা ব্যবস্থা পরিবর্তনে শিক্ষকের পক্ষ থেকে আওয়াজটা তোলা দরকার। শনিবার সকালে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির ১৩তম জাতীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

আবু সাঈদ খান বলেন, দেশে একমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা নেই, বিভিন্নমুখী হয়ে গেছে। আমরা চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের উপযোগী শিক্ষা করতে পারিনি। এমনকি দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় শিল্পবিপ্লবের উপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থাও করিনি। অন্যদিকে, কওমি মাদ্রাসার সংখ্যা বাড়ছে। সাধারণ শিক্ষার শিক্ষার্থীরা কমছে। মাদ্রাসা শিক্ষার প্রতি আমার কোনো আক্রোশ নেই। প্রশ্ন হলো, সেখানে মানসম্পন্ন ও সময়োপযোগী শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে কিনা, কর্মোপযোগী শিক্ষা হচ্ছে কিনা; সেটিও আমাদের দেখতে হবে।

তিনি বলেন, মেধাবীদের শিক্ষকতায় আনতে হলে শিক্ষায় বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। মেধা পাচার রোধ করে মেধাবীকে দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে। বৈষম্যহীন শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করতে হবে। সব শিক্ষকের বেতন একই কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসতে হবে।

শিক্ষক সমিতির সদ্য বিদায়ী সভাপতি অধ্যক্ষ মো.

বজলুর রহমান মিয়ার সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন।
সম্মেলনের মাধ্যমে অধ্যক্ষ শেখ কাওছার আহমেদকে সমিতির সভাপতি ও শামীম আল মামুনকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়।
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব যবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

পাইকারিতে দাম কমলেও প্রভাব নেই খুচরা বাজারে

রমজান মাস ঘিরে এবার ভোগ্যপণ্য আমদানির নতুন রেকর্ড হয়েছে। সর্বশেষ চার মাসে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এবার ভোজ্যতেল, ছোলা, ডাল, চিনি, খেজুর, পেঁয়াজসহ ৯ ধরনের পণ্য প্রায় ৩৯ শতাংশ বেশি এসেছে। তবে পাইকারি বাজারে এমন আমদানির সবচেয়ে বেশি প্রভাব খেজুরের দামে। এই পণ্যের যে হারে দাম কমেছে, তা ‘অবিশ্বাস্য’ বলছেন অনেকে। এ ছাড়া প্রতিদিন দাম কমছে ডাল, চিনি, পেঁয়াজেরও। তবে পাইকারি বাজারে যে হারে দাম কমছে, সে হারে খুচরা বাজারে তার প্রভাব পড়েনি। মনিটরিংয়ে দুর্বলতা থাকায় দাম কমার সুফল কিছুটা কম পাচ্ছেন সাধারণ ভোক্তা।

চট্টগ্রামের প্রধান পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জের হামিদ উল্লাহ মিয়া মার্কেট সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিছ আলম বলেন, আগের বছরের তুলনায় এবার বেশ কিছু পণ্য বেশি আমদানি হয়েছে। তাই কিছুটা কম দামে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজসহ মসলা জাতীয় বিভিন্ন পণ্য।

টিকে গ্রুপের পরিচালক শফিউল আতাহার তসলিম বলেন, গত দুই মাসে ডলারের দাম কিছুটা স্থিতিশীল এবং আন্তর্জাতিক বাজারে কিছু পণ্যের দাম নিম্নমুখী থাকায় বিপুল পরিমাণ পণ্য আমদানি হয়েছে। বাজারে এর ইতিবাচক প্রভাবও আছে।

৩০-৪০ শতাংশ কমেছে খেজুরের দাম
দেশে খেজুরের বার্ষিক চাহিদা ৬০ থেকে ৯০ হাজার টন। শুধু রমজান মাসেই ৪০ হাজার টন খেজুর প্রয়োজন হয়। খেজুর মূলত সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, তিউনিসিয়া, মিসর, জর্ডান, ইরাক, ইরান ও পাকিস্তান থেকে আমদানি হয়। গত কয়েক বছর ধরে রমজান শুরুর আগেই আগুন লাগত খেজুরের দামে। এবার সে চিত্র একেবারে বিপরীত। ১০ শতাংশ শুল্কহার কমার প্রভাবে কেজিতে খেজুরে দাম কমেছে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ। গতবারের তুলনায় এবার মানভেদে কোনো কোনো খেজুরের দাম ১০০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত কমে গেছে।

চট্টগ্রাম নগরের ফলমন্ডী ও রিয়াজউদ্দিন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বহু জাতের খেজুরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাহিদা রয়েছে ইরাকি জায়েদি খেজুরের। গত বছরের তুলনায় এবার জায়েদি খেজুর ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা কমে ৩৫০ থেকে ৩৭০, আজোয়া ২০০ থেকে ২৫০ টাকা কমে ৬০০ থেকে ৮০০, মেডজল ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা কমে ৯০০ থেকে ৯৫০ এবং মাবরুম খেজুর ৪০০ টাকা কমে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

রিয়াজউদ্দিন বাজারের ব্যবসায়ী হারুনুর রশিদ জানান, পাইকারিতে জায়েদি খেজুর ১০ কেজির কার্টন ১ হাজার ৭০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বস্তার খেজুর ১২৫ টাকা থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খেজুরের দাম আরও কমে আসতে পারে। 

পণ্য বেশি এলেও প্রভাব কম খুচরা বাজারে
রমজানে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় ৯টি পণ্য। এসব পণ্যের রমজান-পূর্ববর্তী চার মাসের ঋণপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এবার গড়ে ৩৯ শতাংশ পণ্য বেশি এসেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, ২০২৪ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত চার মাসে আমদানির জন্য ব্যবসায়ীরা চিনি চার লাখ ৫৪ হাজার, ডাল জাতীয় পণ্য ১ লাখ ৫৭ হাজার, সয়াবিন তেল ৫ লাখ ৯৮ হাজার, ছোলা ৫৭ হাজার ৫৫৫, মটর ডাল ২ লাখ ২ হাজার ৮৪৫, পেঁয়াজ ২ লাখ ৮০ হাজার, রসুন ৬১ হাজার ৩৮১, আদা ৫২ হাজার ৫১৫ ও খেজুর ১৪ হাজার ৪২০ টন আনার ঋণপত্র নিষ্পত্তি করেছেন।

অথচ গত রমজানের একই সময়ে (২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারি) ব্যবসায়ীরা চিনির জন্য ৩ লাখ ৭৮ হাজার, ডাল জাতীয় পণ্য ১ লাখ ৯ হাজার, সয়াবিন তেল ৪ লাখ ৪৭ হাজার, ছোলা ৫৯ হাজার ৩২৯, মটর ডাল ১ লাখ ৯ হাজার, পেঁয়াজ ২ লাখ ৭৫ হাজার, রসুন ৫০ হাজার ৯৯৫, আদা ৩৩ হাজার ৫৭৩ ও খেজুর ১১ হাজার ৭১৪ টন পণ্য আনতে ঋণপত্র নিষ্পত্তি করেছিলেন। এই হিসাবে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এবার চিনিতে ২০ শতাংশ, ডাল জাতীয় পণ্যে ৪৪, সয়াবিন তেলে ৩৪, ছোলায় ৬৪, মটর ডালে ৮৫, পেঁয়াজে ২, রসুনে ২০, আদায় ৫৬ ও খেজুরের আমদানি বেড়েছে ২৩ শতাংশ। এটির প্রভাবে এবার পাইকারি বাজারে কিছু পণ্যের দাম কমেছে। তবে সেই হারে খুচরা বাজারে দাম কমেনি।

কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ভোগ্যপণ্য যে হারে আমদানি হয়েছে, দাম আরও কমার কথা। ছোলার দাম কিছুদিন কম থাকলেও এখন আবার বেড়েছে। অবশ্য খেজুরের দাম এখনও কম। মনিটরিংয়ে দুর্বলতা থাকায় খুচরা বাজারে ভোক্তারা দাম কমার সুফল সেভাবে পাচ্ছেন না। প্রশাসনের নজরদারি আরও জোরদার করা দরকার।

সম্পর্কিত নিবন্ধ