বিপিএলে নানা অনিয়ম, আসিফ মাহমুদের কড়া হুঁশিয়ারি
Published: 1st, February 2025 GMT
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) শুরুর আগ থেকেই সরাসরি জড়িত ছিলেন ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভুঁইয়া। তবে বিপিএল শুরুর পর তাকে আর কোথাও দেখা যায়নি। এমনকি খেলা দেখতেও আসেননি।
অবশেষে বিপিএল শেষ হতে যখন ৬ দিন বাকি, তখন বিসিবিতে আসেন আসিফ। ততদিনে অবশ্য নানা অনিয়মে বিপর্যস্ত দেশের একমাত্র ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক লিগটি।
শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় বিসিবিতে আসেন ক্রীড়া উপদেষ্টা। রাত ৯টায় মুখোমুখি হন সংবাদ মাধ্যমের। শুরুতে নিজ থেকে বিপিএল নিয়ে প্রতিক্রিয়া দেন আসিফ, “এবারের বিপিএলে আমরা কিছু নতুনত্ব আনার চেষ্টা করেছি। এর বাইরেও কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে, আপনারা অবগত আছেন।”
আরো পড়ুন:
সেরা দুইয়ে থেকে প্রথম কোয়ালিফায়ারে চিটাগং কিংস
ফিক্সিংয়ের সংবাদ নিয়ে মিথুন
আমার সম্মান নিয়ে কেউ খেলবে, এটা কখনো ছাড় দেই না
“ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটা সত্যানুসন্ধান কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। দ্রুত অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাগুলোকে আমরা দেখছি।”
আসিফ মাহমুদের কাছে শুরুর দিকেই প্রশ্ন ছিল দুর্বার রাজশাহীর পেমেন্ট অনিয়মের প্রসঙ্গে। আসিফ দিয়েছেন কড়া বার্তা, “আমি সরাসরি রাজশাহীর মালিকের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি আশ্বস্ত করেছেন, সেটা দিয়ে দেবেন। আমি বলেছি, তিনি যদি সেটা করতে ব্যত্যয় হন, সেক্ষেত্রে আমরা আইনি ব্যবস্থা নেব। এটার দায়টা কার ওপর আমাদের সত্যানুসন্ধান কমিটি বের করবে। তারপর তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।”
এর আগে, বিপিএলে খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিক বকেয়া নিয়ে সত্যানুসন্ধান কমিটি গঠন করেছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি)। আসিফও সেই পথে হাঁটলেন, “এনএসসি থেকে একটা সত্য অনুসন্ধান কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। ফিক্সিংয়ের যে অভিযোগটা এসেছে সেটার ভিত্তিতে বিসিবি একটি স্বাধীন স্বতন্ত্র কমিটি গঠন করবে, সেটা অনুসন্ধান করতে। সরকারের পক্ষ থেকে যা সহযোগিতা করা যায়, আমরা করব। যত দ্রুত এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা যেগুলো ঘটেছে, সেগুলোর অ্যাড্রেস করছি।’’
“কমিটি খুঁজে বের করবে যে দলগুলো সামর্থ্য ছিল না, তারা কীভাবে এখানে আসল।”
ঢাকা/রিয়াদ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
উপনির্বাচনে উদাসীন ফারুক
বিসিবির পরিচালনা পর্ষদের ১৫টি পদ শূন্য হয়ে আছে চার মাসেরও বেশি সময়। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর থেকে ক্রিকেট বোর্ডের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে ১০ জন পরিচালক নিয়ে। যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার ভাষায় জোড়াতালি দিয়ে চলছে বিসিবি। অথচ বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ চাইলে অনেক আগেই পরিচালনা পর্ষদের শূন্যপদ পূরণ করা সম্ভব হতো বলে মনে করেন জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) একাধিক কর্মকর্তা।
পরিচালকদের শূন্যপদ সম্পর্কে জানতে চেয়ে বিসিবিকে চিঠিও দিয়েছিল এনএসসি। চিঠি ইস্যুর চার মাস পেরিয়ে গেলেও বিসিবি উপনির্বাচনের উদ্যোগ না নেওয়ায় বিস্মিত ক্রীড়া নীতিনির্ধারকরা। এ ব্যাপারে বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদের আন্তরিকতার ঘাটতি দেখছেন ক্রিকেট-সংশ্লিষ্টরাও। দেশের ক্রিকেটের কার্যক্রমে গতি আনতে পরিচালকদের শূন্যপদে দ্রুত নির্বাচন আশা করেন তারা।
ফারুক বিসিবি সভাপতি নির্বাচিত হন গত বছর ২১ আগস্ট। ১০ জন পরিচালক নিয়েই গত ছয় মাসে ক্রিকেট কার্যক্রম চালিয়ে নিতে পারলেও উন্নয়ন কার্যক্রমে গতি আনা সম্ভব হয়নি। বিভাগীয় পর্যায়ে একাডেমি ভবন নির্মাণের পরিকল্পনার কথা বলা হলেও বাস্তবে আলোর মুখ দেখেনি। মূলত, জাতীয় দলের কার্যক্রমগুলো বাস্তবায়ন করতেই ব্যস্ত থাকতে হয়েছে সভাপতিকে। পাকিস্তান, ভারত, আফগানিস্তান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর করেছে জাতীয় দল। নারী টি২০ বিশ্বকাপ আয়োজন করেছেন নিরপেক্ষ ভেন্যু দুবাইয়ে। বিপিএল, ঢাকা তৃতীয়, দ্বিতীয় এবং প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লিগ আয়োজন করেছেন স্পন্সর নিয়ে। প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগ মাঠে গড়াবে কাল থেকে।
নারীদের আন্তর্জাতিক সফরের পাশাপাশি ঘরোয়া লিগের খেলাও অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রথমবারের মতো নারীদের লাল বলের ক্রিকেট লিগ হয়েছে। ক্রিকেটীয় এ কার্যক্রম নিয়ে সভাপতির গর্ব করার উপলক্ষ থাকলেও দুর্বলতাগুলো চোখে পড়ার মতোই। পরিচালক কম থাকায় বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল, ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করতে হয়েছে ফারুককে। বর্তমানে একাধিক স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান করা হয়েছে একজন পরিচালককে। ফিন্যান্স, গেম ডেভেলপমেন্ট ও লজিস্টিক অ্যান্ড প্রটোকল বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয় ফাহিম সিনহাকে। গ্রাউন্ডস, টেন্ডার অ্যান্ড পারচেজ ও এইচপির চেয়ারম্যান মাহাবুবুল আনাম, টুর্নামেন্ট, ফ্যাসিলিটি ম্যানেজমেন্ট ও প্রতিবন্ধী ক্রিকেটের চেয়ারম্যান আকরাম খান। স্বপন চৌধুরীকে বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্ট কমিটি ও শৃঙ্খলা কমিটির চেয়ারম্যান সাইফুল আলম চৌধুরী স্বপ্ন। ইফতেখার আহমেদ মিঠু মিডিয়া ও আম্পায়ার্স কমিটির প্রধান। সালাউদ্দিন চৌধুরীকে সিসিডিএমের সঙ্গে অডিটের চেয়ারম্যান করা হলেও কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্টের কারণ দেখিয়ে অডিট বিভাগের চেয়ারম্যানের পদ ছেড়েছেন। নিজেদের ব্যবসা-বাণিজ্য সামলে এত বিভাগ কাজ সুচারুভাবে সম্পন্ন করা কঠিন বলে মনে করেন বিসিবি কর্মকর্তারাই।
নামপ্রকাশ না করার শর্তে একজন পরিচালক বলেন, ‘ইসমাইল হায়দার মল্লিকের ঘনিষ্ঠ কর্মকর্তারা বহাল রয়েছেন। এখন বোর্ডে কী হচ্ছে, সব খবর চলে যাচ্ছে আগের পরিচালকদের কাছে। এগুলো পরিষ্কার করার পাশাপাশি উপনির্বাচনের মাধ্যমে ১৫ জন পরিচালক সংযুক্ত করা গেলে স্বেচ্ছাচারিতা থাকবে না। সভাপতির উচিত হবে দ্রুত উপনির্বাচন দেওয়া।’
বিসিবির পরবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে অক্টোবরে। ক্লাব ক্যাটেগরিতে ছয়টি, বিভাগীয় ক্যাটেগরিতে আটটি ও সাবেক ক্রিকেটার ক্যাটেগরিতে একজন পরিচালকের পদ শূন্য রয়েছে। বিসিবির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, পরিচালকের পদ শূন্য হলে দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচনের মাধ্যমে শূন্যপদ পূরণ করতে হবে। বিদ্যমান কাউন্সিলরদের থেকে প্রার্থী হতে পারবেন। কাউন্সিলর নন এমন কেউ পরিচালক পদে নির্বাচন করতে পারবেন না। তিন বছর আগের তালিকাভুক্ত কাউন্সিলরদের ভোটে হতে হবে উপনির্বাচন। সে ক্ষেত্রে বিসিবির উপনির্বাচনের জন্য কাউন্সিলর নেওয়ার প্রয়োজন নেই। প্রশ্ন হলো বিসিবির কার্যক্রমে গতি আনতে এবং গঠনতন্ত্র রক্ষার স্বার্থে ফারুক আহমেদ উপনির্বাচন দিতে রাজি আছেন কিনা। এ ব্যাপারে জানতে চেয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে বিসিবি সভাপতিকে ফোনে পাওয়া যায়নি।