রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ২১ দিনব্যাপী বইমেলা শুরু হয়েছে। শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) থেকে শুরু হওয়া এ বইমেলা চলবে আগামী ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেট চত্বরে বইয়ের দোকান 'ওঙ্কার' এই মেলার আয়োজন করেছে। প্রতিদিন সকাল ১০ টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এ মেলা চলবে।
শনিবার দুপুর ১২টার দিকে এ মেলার উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা আমিরুল ইসলাম কনক।
এ সময় তিনি বলেন, “মানুষের বুদ্ধি ও জাগতিক বিস্তারের জন্য বইয়ের কোন বিকল্প নেই। ওঙ্কার যে আয়োজন করেছে, এটা প্রশংসার দাবিদার। এ মেলা অন্যদের বইপড়ার প্রতি উৎসাহিত করবে বলে আমি আশাবাদী। ওঙ্কারের জন্য শুভকামনা রইল। ওঙ্কার একদিন একটি বৃহৎ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানে রূপ নিবে, যদি পাঠকের ভালোবাসা পায়।”
সরেজমিনে দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেট চত্বরে আয়োজিত বইমেলায় ওঙ্কারের একটি বইয়ের স্টল বসেছে। উদ্বোধনের আগে থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মেলায় এসে ভীড় করতে শুরু করেন।
এ স্টলটিতে স্থান পেয়েছে বাদশাহনামা, অপরাজিত, চাঁদের পাহাড়, শার্লক হোমস সমগ্র, কালপুরুষ, কাঠপেন্সিল, গৃহদাহ, শেষ মৃত পাখি, নারীদের একাত্তর, গ্রামের একাত্তর, বাংলায় বর্গিসহ বিভিন্ন দেশি-বিদেশি গল্প, উপন্যাসের বই। বইপ্রেমী শিক্ষার্থীরা এসব বই হাতে নিয়ে নিয়ে দেখছেন এবং কিনছেন।
মেলায় ঘুরতে আসা দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী আশিকুল্লাহ মুহিব বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে বইমেলা হলে শিক্ষার্থীরা দেখতে আসে, বই পড়ে। এতে শিক্ষার্থীদের মাঝে বই পড়ার প্রবণতা বাড়ে। রঞ্জু ভাই তার ব্যবসার পাশাপাশি এমন উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন, যা আমাদের জন্য আসলেই আনন্দের।”
মেলার আয়োজক এবং ওঙ্কারের কর্ণধার রমজান আলী রঞ্জু বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে যে একটি বইয়ের দোকান আছে, ছাত্রদের দাবি এটা সবাই জানুক। এ কারণে মেলার আয়োজন করা। অনেকে বইমেলা করে তিন থেকে সাতদিনের। আমি চিন্তা করলাম একুশের মাসে একুশ দিন মেলা করব। আজ মেলার উদ্বোধন হলো। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এ মেলা চলবে।”
ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
খুঁড়িয়ে চলছে জিকে সেচ প্রকল্প, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক
দিন দিন কমে আসছে গঙ্গা-কপোতাক্ষ (জিকে) সেচ প্রকল্পের আওতা। এক সময় ৪ জেলার ১৩টি উপজেলার ১ লাখ ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা দেওয়া হলেও এখন তার আওতা অর্ধেকেরও নিচে নেমে এসেছে। গত শতাব্দীর ষাটের দশকে নির্মিত দেশের বৃহত্তম এ সেচ প্রকল্প নিয়ে নানা সমস্যা হচ্ছে। এক বছর ধরে দুটি সেচ পাম্প বিকল, খালগুলো ভরাট ও বেদখল, সংস্কার না হওয়া ও লোকবল সংকটে খুঁড়িয়ে চলছে কার্যক্রম।
সম্প্রতি জিকে প্রকল্পের আধুনিকায়নে ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নেওয়া হলেও সেটি আলোর মুখে দেখেনি। প্রকল্পটি পাস হয়ে বাস্তবায়ন হলে জিকের সেচ সরবরাহ স্বাভাবিক হওয়ার পাশাপাশি ফসল উৎপাদন বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, খরাপ্রবণ এলাকা হওয়ায় কুষ্টিয়া অঞ্চলে ষাটের দশকে ভেড়ামারার মসলেমপুরে পদ্মা নদীতীরবর্তী এলাকায় পাম্প স্টেশন গড়ে তোলা হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ ও মাগুরা জেলার ১৩টি উপজেলা দিয়ে প্রধান খাল খনন করা হয়। ১৯৩ কিলোমিটার প্রধান খালের পাশাপাশি ৪৬৭ কিলোমিটার সেকেন্ডারি খাল আছে। এ ছাড়া টারশিয়ারি খাল আছে ৯৯৫ কিলোমিটার। তবে এসব খালের বড় অংশ বেদখল হয়ে গেছে। অনেক খাল ভরে গেছে ঝোপ-ঝাড়ে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের মরফলজি বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, ‘মূলত পদ্মার পানি ব্যবহার করে সেচ প্রকল্পটি সচল রাখা হয়। দুটি মৌসুমে পানি সরবরাহ করা হয়। রবি মৌসুমে বোরো ধানসহ অন্যান্য ফসল আবাদ হয়। খরিপ-২ মৌসুমে আমন ধানসহ ফসল উৎপাদনের জন্য পানি দেওয়া হয়।
ভেড়ামারায় জিকের প্রধান পাম্প স্টেশন। তিনটি বড় পাম্প আছে এই স্টেশনে। তবে দুটি পাম্প এক বছর ধরে নষ্ট। একটি পাম্প সচল থাকলেও সেটি চালানোর জন্য পদ্মায় পানির লেভেল কমপক্ষে ৪.২ মিটার প্রয়োজন। ১৫ দিনের বেশি সময় ধরে পদ্মার পানির স্তর দ্রুত নামছে। মরফলজি বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, পদ্মার পানির বিপৎসীমা ১৪.২৫ মিটার। ১১ জানুয়ারি পানির লেভেল ছিল ৪.৭২ মিটার; আগের দিন ৪.৭৭ মিটার, ৯ জানুয়ারি ৪.৮৩ মিটার ও ৮ জানুয়ারি ছিল ৪.৯৮ মিটার।
মরফলজি বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রইচ উদ্দিন বলেন, পাম্প চালাতে হলে পানির উচ্চতা ৪.২ মিটারের ওপর থাকতে হবে। এর কম হলে পাম্প স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যায়। তাদের প্রস্তুতি আছে সেচ দেওয়ার। তবে সেটি পানির ওপর নির্ভর করবে। তিনি বলেন, গঙ্গা চুক্তি অনুযায়ী পহেলা জানুয়ারি থেকে ৩১ মে পর্যন্ত যৌথ সমীক্ষার মাধ্যমে আমরা ভারত থেকে পানি পেয়ে থাকি। চুক্তি অনুযায়ী পানি পেলেও যে পরিমান পানি পদ্মায় থাকে, তা প্রয়োজনের তুলনায় কম।
পাম্প স্টেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, ২০০৯ সালে জাপানের একটি কোম্পানী থেকে ৩টি বড় পাম্প এনে স্থাপন করা হয়। তবে গত বছর তার দুটি বিকল হয়ে পড়ে। অন্যটি পানির অভাবে গত বোরো আবাদের সময় বন্ধ রাখতে হয়। জাপানের প্রকৌশলীদের সঙ্গে যোগাযোগ করার পর তারা পরিদর্শন করেছেন। কিছু যন্ত্রাংশ ইতোমধ্যে আনা হয়েছে। বাকি যন্ত্রাংশ বন্দরে এসেছে। ৪ থেকে ৫ মাসের মধ্যে পাম্প মেরামত শেষে সচল করা সম্ভব হবে।
এ প্রকল্পের মাধ্যমে একসময় ১ লাখ ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়া হলেও বর্তমানে কুষ্টিয়া ও চুয়াডাঙ্গা জেলায় মাত্র ৩৫ থেকে ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা পাচ্ছেন কৃষকরা। তাও বিভাজন করে দিতে হয়। একটি জেলা পেলে আরেক জেলার কৃষকরা পান না।
কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বরিয়া গ্রামের কৃষক আফসার উদ্দিন বলেন, ‘গত বোরো মৌসুমে ধান রোপণের আগে জানতে পারি, জিকে খালে পানি আসবে না। তখন বিকল্প উপায় না থাকায় অনেক জমি অনাবাদি রাখেন কৃষক। এবারও পানি পাব না বলে জানতে পেরেছি। তাই ধানের বদলে পেঁয়াজ ও ভুট্টা আবাদ করেছি, যাতে পানি কম লাগে।’
কৃষক মশিউর রহমান বলেন, আগে এ মাঠের কৃষকরা জিকের পানি দিয়ে ধান আবাদ করতেন। এক বিঘা জমিতে সারাবছর ধান আবাদ করতে খরচ হয় মাত্র ২৮০ টাকা। পানি না পাওয়ায় এখন শ্যালো মেশিনে পানি দিয়ে আবাদ করতে ৩-৪ হাজার টাকা লাগছে। তাও বেশি গরম পড়লে তেমন ওঠে না।
কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রশিদুর রহমান বলেন, ৪টি জেলায় জিকের খাল বিস্তৃত। আগে অনেক লোকবল ছিল। তখন খাল বেদখল হতো কম। লোকবল না থাকায় অনেক স্থাপনা ও খাল বেদখল হয়েছে। স্থাপনা নির্মাণ ছাড়াও বাড়িঘর করা হয়েছে। সংস্কার না হওয়াতেই এমন অবস্থা। উচ্ছেদের জন্য তালিকা করা হচ্ছে।
জিকের পাম্প হাউস আধুনিকায়নসহ খাল সংস্কারের জন্য ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। বর্তমান সরকার টাকা কাটছাঁট করে সেটি ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকায় করার পরামর্শ দিয়েছে। কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আব্দুল হামিদ বলেন, প্রকল্পের আওতায় দুটি বড় ও ৫টি ছোট পাম্প স্থাপন করা হবে। খাল সংস্কারসহ গাছ লাগানো হবে। নতুন পাম্প স্থাপন করা হলে পদ্মার পানি ৩ সেন্টিমিটারের নিচে নামলেও পানি সরবরাহ সচল থাকবে।
জিকে সেচ ব্যবস্থাপনা ফেডারেশনের সভাপতি সাফায়েত হোসেন পল্টু বলেন, গত বছর খালে পানি সরবরাহ না করায় অনেক সমস্যা হয়। অনেক জমি অনাবাদি ছিল। সেচ সরবরাহ সচল রাখা হলে ফসল উৎপাদন বাড়বে। পরিবেশও রক্ষা হবে।