‘গণহত্যার বিচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে ছবি-ভিডিও’
Published: 1st, February 2025 GMT
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে পরিচালিত গণহত্যার বিচারে ছবি-ভিডিও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। শনিবার রাজধানীর পান্থপথে দৃকপাঠ ভবনে বাংলাদেশ প্রটেস্ট আর্কাইভ (বিপিএ) উদ্বোধন উপলক্ষে এক আলোচনায় এ কথা বলেন বক্তারা।
আলোকচিত্রী শহিদুল আলম বলেন, জুলাই-আগস্টে এত বড় একটা অন্যায় আমাদের দেশে হয়ে গেছে, আরেকবার যেন কোনো সরকার কোনোভাবেই এই জিনিস করতে না পারে। এমন করে কেউ যেন পার পেয়ে যেতে না পারে।
বিপিএ কাজ প্রসঙ্গে লেখক ও গবেষক আলতাফ পারভেজ বলেন, এসব কাজের বেলায় সরকার থেকে দূরে থাকার বিষয় আছে। যদি অনেক দূর যেতে হয়, রাষ্ট্র এবং সরকার থেকে দূরে থাকতে হবে।
সংবিধান সংস্কার কমিশনের সদস্য মুসতাইন জহির বলেন, পুলিশ যাত্রাবাড়ী থানায় দিনের পর দিন গুলি করেছে। জানতে হবে, কোন পুলিশ কর্মকর্তা করেছে। এসব বিস্তারিত যখন আপনি জানতে পারবেন না, আমরা তখন আবার একটা জাতীয় সমস্যার মধ্যে পড়ব।
ফ্যাক্ট চেকার কদরুদ্দিন শিশির বলেন, বিগত স্বৈরাচারী সরকার ছবি-ভিডিও মুছে ফেলতে তৎপর ছিল। যাত্রাবাড়ীর অন্তত ২০ প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছি, পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলগুলোর কাছাকাছি বাড়ি বাড়ি গিয়ে ডিভাইসের দখল নিয়েছিল এবং ছবি-ভিডিও মুছে দিয়েছিল।
বিপিএর ইনভেস্টিগেটর মিনহাজ আমান বলেন, ২০-৫০ বছর পরও যেন কেউ চাইলে ভিডিওগুলো ব্যবহার করতে পারি, আমরা এ লক্ষ্যে কাজ করছি। বিচারের কাজে সহযোগিতা হবে এটি আমাদের প্রথম চাওয়া।
অনুষ্ঠানের শুরুতে বিপিএর সহপ্রতিষ্ঠাতা শোয়েব আব্দুল্লাহ তাদের কার্যক্রম তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘বিচারের কাজে যুক্ত যারা রয়েছেন, তদন্তসংশ্লিষ্টরা যদি এসব ভিডিও থেকে উপকৃত হন, তাহলে আমাদের এ উদ্যোগ সার্থক হবে। তবে কাজটি দীর্ঘমেয়াদি। ১০ বছর পর এর গুরুত্ব কত, সেটা আমরা জানি। কিন্তু এক-দু’বছর পর কী হবে, তা এই মুহূর্তে বলা মুশকিল।’
ভিজ্যুয়াল মাধ্যম ব্যবহার করে মানবাধিকার রক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন উইটনেসের সিনিয়র কর্মসূচি ব্যবস্থাপক (এশিয়া অ্যান্ড প্যাসিফিক) অরুল প্রকাশ সিন্নাপ্পান এবং অপর কর্মকর্তা হুয়ে শিন চাও ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ইনকিলাব মঞ্চের পুলিশ সদর দপ্তর ঘেরাও মিছিল আটকালো হাইকোর্ট মোড়ে
জুলাই আন্দোলনে নিহতদের নিয়ে ষড়যন্ত্র এবং গণহত্যায় জড়িত পুলিশ সদস্যদের বিচারসহ পাঁচ দাবিতে পুলিশ সদর দপ্তর ঘেরাওয়ের উদ্দেশ্যে ইনকিলাব মঞ্চের মিছিল আটকে দিয়েছে পুলিশ। পরে দাবির একটি স্মারকলিপি তুলে দিয়ে শনিবার সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত আলটিমেটাম বেঁধে দিয়ে কর্মসূচি শেষ করেন তারা।
শুক্রবার দুপর সাড়ে তিনটায় শাহবাগ থানার সামনে থেকে মিছিল নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি ও দোয়েল চত্বর হয়ে হাইকোর্ট মোড়ে যেতেই মিছিলটি আটকে দেয় পুলিশ। সেখানে ব্যারিকেড দিয়ে বিপুল সংখ্যক পুলিশ লাঠি হাতে অবস্থান নেন। পরে সেখানে দাঁড়িয়ে স্লোগান দিতে থাকেন আন্দোলনকারীরা।
এ সময় ডিএমপির রমনা জোনের ডিসি মাসুদ আলম বলেন, ‘আপনারা এমন কিছু করবেন না যাতে আমাদের কাজ করতে সমস্যা হয়। এতে রাষ্ট্র দুর্বল হয়ে পড়বে। এখানে যারা পুলিশ সদস্য আছেন সবাই ঢাকায় নতুন, জুলাইয়ে আমাদেরও ব্যাপক ভূমিকা ছিল। আপনাদের দাবিদাওয়া আমার কাছে দেন। আমি কালকে আইজিপির কাছে পৌঁছে দেব।’
এ সময় ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি পাঁচদফা দাবি তুলে ধরে জানান, তারা (পুলিশ) কথা দিয়েছেন আমাদের পাঁচ দফা আইজিপির কাছে পৌঁছে দেবেন। আমরা নিশ্চিত হতে চাই আগামীকাল সন্ধ্যা সাতটার মধ্যে পাঁচ দফা দাবির ব্যাপারে আপডেট জানানো হবে। এমনটি না হলে কর্মসূচি ঘোষণা না দিয়ে আমরা পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের বারান্দায় অবস্থান নেব। পরে ইনকিলাব মঞ্চের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্যসচিব ফাতিমা তাসনিম ঝুমা রমনা জোনের ডিসির হাতে স্মারকলিপি তুলে দেন।
ইনকিলাব মঞ্চের পাঁচ দফা দাবি হচ্ছে- জুলাই গণহত্যায় সরাসরি জড়িত সব পুলিশকে অতি দ্রুত গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে; জুলাই আন্দোলনে নিহত এবং এ আন্দোলনের কর্মীদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মামলা, মিথ্যা প্রতিবেদন ও হয়রানিতে যেসব পুলিশ কর্মকর্তা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে; ছাত্রলীগের নেতাকর্মী যারা পুলিশ বাহিনীতে আছে তাদের বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠাতে হবে; জুলাই গণহত্যার দায়ে তিরস্কৃত ও বদলি হওয়া পুলিশদের তালিকা জনমক্ষে প্রকাশ করতে হবে এবং দেশের সার্বভৌমত্বের স্বার্থে জুলাই গণহত্যার দায়ে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের পার্বত্য চট্টগ্রামে বদলি করা বন্ধ করতে হবে। এ সময় ইনকিলাব মঞ্চের বিভিন্ন শাখার নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।