ট্রাম্পের শুল্কের চাবুক, উল্টো ভুগতে পারে যুক্তরাষ্ট্র
Published: 1st, February 2025 GMT
প্রতিবেশী কানাডা ও মেক্সিকোর প্রতি সম্ভবত এর আগে আর কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট এত কঠিন হননি। চীনের পণ্যে যেখানে ১০ শতাংশ শুল্ক, সেখানে এ দেশ দুটিকে মোকাবিলা করতে হচ্ছে ২৫ শতাংশ। এ অবস্থায় চীন, মেক্সিকো ও কানাডার পণ্যে শুল্ক আরোপ নতুন করে বিশ্বের বাণিজ্য যুদ্ধের শঙ্কাকে উস্কে দিয়েছে। এরই মধ্যে পাল্টা পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি দিয়েছে কানাডা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুল্ক আরোপ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য হিতে বিপরীত হতে পারে।
ট্রাম্পের শুল্ক স্থানীয় সময় গতকাল শনিবার থেকে কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে। দ্য গার্ডিয়ান অনলাইনের প্রতিবেদনে বলা হয়, ট্রাম্প প্রশাসন মনে করছে, শুল্ক আরোপ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য আশীর্বাদ হয়ে আসছে। কিন্তু অনেক বিশ্লেষক দৃঢ়ভাবে এর বিরোধিতা করছেন। তারা বলছেন, এতে যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি বাড়বে। সেই সঙ্গে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে যাবে। ফলে মার্কিন শ্রমজীবীরা চাপে পড়বেন; ভোক্তাদের বেশি অর্থে পণ্য কিনতে হতে পারে।
কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক জোসেফ স্টিগলিজ বলেন, স্পষ্টভাবে সব অর্থনীতিবিদ মনে করেন– এ ধরনের শুল্ক আরোপের ঘটনা যুক্তরাষ্ট্র, এমনকি পুরো বিশ্বের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। অন্য দেশগুলো যে পাল্টা পদক্ষেপ নেবে না, এমনটা ভাবা ঠিক নয়।
একই সুরে কথা বলেছেন পিটারসন ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিকসের নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্কুস নোল্যান্ড। তিনি বলেন, এ ধরনের শুল্ক আরোপ মার্কিন অর্থনীতির হতাশাজনক প্রবৃদ্ধির কারণ হতে পারে; সেসঙ্গে বাড়বে মূল্যস্ফীতিও। আর ভুক্তভোগী দেশগুলো যদি পাল্টা পদক্ষেপ নেয়, তাহলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। একই ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ ফেলো ম্যারি লাভলি বলেন, শুল্ক আরোপ থেকে ইতিবাচক কিছু পাওয়া কষ্টকর। কারণ এটা ভোক্তাদের নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করবে।
কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্যবিষয়ক বিশেষজ্ঞ সতর্ক করে বলেছেন, ট্রাম্পের শুল্ক অতিরিক্ত কিছু অপ্রত্যাশিত প্রভাব নিয়ে আসবে। বিশেষ করে মার্কিন রপ্তানিকারকরা কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাবেন। কারণ তারা বিদেশি বাজারে শুল্ক-বাধার মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন।
সিএনবিসি জানায়, আমদানির পরিমাণ বিবেচনায় চীন, মেক্সিকো ও কানাডা যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ তিন বাণিজ্য অংশীদার। এ তিন দেশ ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রে যথাক্রমে ৫৩৬, ৪৫৫ ও ৪৩৭ বিলিয়ন ডলার পণ্য রপ্তানি করে।
শনিবার দ্য কনভারজেশনের প্রতিবেদন জানায়, কানাডা ও মেক্সিকোর ওপর শুল্ক আরোপ বৃহৎ বাণিজ্য যুদ্ধের শঙ্কাকে উস্কে দেবে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কানাডা ও মেক্সিকোর বাণিজ্য বেশ চমৎকার। বিশেষ করে অটোমোবাইল, জ্বালানি, কৃষি ও মার্কিন ভোক্তাদের জন্য পণ্য সরবরাহ করে থাকে এ দুই দেশ। শুল্ক আরোপ এসব খাতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
এদিকে ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্ক আরোপের বিরুদ্ধে জোরালো ও যুক্তিসংগত পদক্ষেপ নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো।
শুক্রবার কানাডা-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কবিষয়ক উপদেষ্টা পরিষদের এক বৈঠকে ট্রুডো বলেন, ‘আমার বলতে দ্বিধা নেই, আসছে দিন ও সপ্তাহগুলোতে আমাদের দেশকে কঠিন সময়ের মুখোমুখি হতে হবে। আমি জানি, কানাডার নাগরিকরা হয়তো উদ্বিগ্ন ও চিন্তিত। কিন্তু আমি তাদের জানাতে চাই, ফেডারেল সরকার ও সরকারি সব সিদ্ধান্ত প্রকৃতপক্ষে তাদের কথা ভেবেই নেওয়া হয়।’
এ তিন দেশ ছাড়াও এরই মধ্যে ইউরোপের দেশগুলোর ওপর শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন ট্রাম্প। বার্তা সংস্থা আনাদলু জানায়, শুক্রবার ট্রাম্প বলেছেন, তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নের ওপর ‘নিশ্চিতভাবে’ শুল্ক আরোপ করবেন। ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘ইইউ আমাদের খুব বাজেভাবে দেখে।’
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র শ ল ক আর প পদক ষ প র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
কানাডায় নির্বাচন: মার্ক কার্নির লিবারেল সদর দপ্তরে উৎসব শুরু
কানাডায় ভোট গ্রহণ শেষে চলছে গণনা। ভোটের চূড়ান্ত ফলাফল আসতে আরও খানিকটা সময় লাগবে। তবে এরই মধ্যে দেশটির বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নির দল লিবারেল পার্টির সদর দপ্তরে উৎসব শুরু হয়ে গেছে। কারণ, দেশটির রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম সিবিসি বলেছে, এবার লিবারেল সরকার হতে চলেছে।
কানাডার ৩৪৩ আসনের হাউস অব কমন্সে লিবারেল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে, নাকি তাদের সংখ্যালঘু সরকার গঠন করতে হবে, তা এখনো নিশ্চিত নয়। তবে মার্ক কার্নিই যে প্রধানমন্ত্রী থাকবেন, তা অনেকটা নিশ্চিত হয়ে গেছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
বিবিসির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, লিবারেল ১৫৬টি আসনে এগিয়ে আগে। একক সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকার গঠন করতে চাই ১৭২টি আসন। খুব একটা পিছিয়ে নেই প্রতিদ্বন্দ্বী কনজারভেটিভ পার্টি। দলটি ১৪৭ আসনে এগিয়ে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, আমাদের নির্বাচন থেকে দূরে থাকুন। কানাডা সব সময় গর্বিত, সার্বভৌম ও স্বাধীন দেশ থাকবে এবং আমরা কখনো ৫১তম অঙ্গরাজ্য হব না।—পিয়েরে পলিয়েভর, বিরোধী কনজারভেটিভ পার্টির নেতাপুরোপুরি বদলে যাওয়া এক নির্বাচনী পরিবেশে গতকাল সোমবার ভোট দিয়েছেন কানাডার জনগণ। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক আরোপ এবং কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুক্ত করার ইচ্ছা দেশটিতে নির্বাচনের আগে প্রধান আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠেছিল।
ট্রাম্পের এ ধরনের হুমকি কানাডায় দেশপ্রেমের জোয়ার সৃষ্টি করেছে। এমন পরিস্থিতিতে লিবারেল পার্টির প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী মার্ক কার্নির প্রতি জনসমর্থন বেড়ে যায়।
লিবারেল ১৫৬টি আসনে এগিয়ে আগে। একক সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকার গঠন করতে চাই ১৭২টি আসন। খুব একটা পিছিয়ে নেই প্রতিদ্বন্দ্বী কনজারভেটিভ পার্টি। দলটি ১৪৭ আসনে এগিয়ে।অথচ যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপ ও ট্রাম্পের আক্রমণাত্মক কথাবার্তা শুরু হওয়ার আগে জরিপে প্রতিদ্বন্দ্বী পিয়েরে পলিয়েভরের কনজারভেটিভ পার্টি থেকে সামান্য পিছিয়ে ছিল কার্নির লিবারেল দল। ট্রাম্প কানাডাকে নিয়ে আক্রমণাত্মক কথা বলা শুরু করলে কানাডীয়দের মধ্যে দেশপ্রেমের জোয়ার ওঠে এবং জরিপের পূর্বাভাসে হঠাৎ বিপরীতমুখী প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
ভোটের দিন সকালেও ট্রাম্প কানাডাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দিয়েছেন। ট্রাম্প লিখেছেন, কানাডা যদি যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম কাঙ্ক্ষিত অঙ্গরাজ্য হয়, তবে শূন্য শুল্কের সম্মুখীন হবে।
লিবারেল পার্টির সদর দপ্তরে সমর্থকদের উল্লাস