হাসিনা ভালো হয়নি, ভারত থেকেও দুষ্টুমি করছেন: ফখরুল
Published: 1st, February 2025 GMT
শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালানোর কারণে মানুষ দম ভরে নিঃশ্বাস নিতে পারছেন—মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘‘দেশে এখন আতঙ্ক নেই। ১৮ কোটি জনগণের বুকে পাথরের মতন বসে শাসন করেছে। হাসিনা আগেও ষড়যন্ত্র করেছে। দেশ থেকে পালিয়ে ভারতে গিয়ে এখনো ভালো হয়নি। সেখানের আশ্রয়ে থেকে দেশ নিয়ে দুষ্টুমি করছে। হাসিনা অনেক মা-বাবার বুক খালি করেছে। এ নিয়ে তার কোনো অনুশোচনা নেই।’’
শনিবার (০১ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। উত্তরায় ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়ার রোগ মুক্তি কামনায় দোয়া মাহফিল এবং দরিদ্রদের শীতের কাপড় ও শাড়ি বিতরণ করা হয়।
ন্যূনতম সংস্কার করে দ্রুত নির্বাচন দিতে বর্তমান সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘পলাতক হাসিনা সরকারের রুগ্ন অর্থনীতির কারণে বাজারদর বৃদ্ধি হয়েছে। দক্ষিণখানের গুমের শিকার মুন্নার মা-বাবার কান্না দেখে আমি নিজেও অসুস্থ হয়ে পড়েছি। পলাতক হাসিনা দেশে ‘আয়নাঘর’ সৃষ্টি করে গুম-খুনের রামরাজত্ব কায়েম করেছিল। হাসিনা সরকারের উত্তরা এলাকার এমপি হাবিব হাসান এবং খসরু নিরীহ মানুষের জমি বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল করেছিল।’’
আরো পড়ুন:
‘উপদেষ্টারা কেউ রাজনীতি করলে, সরকার থেকে বের হয়ে করবে’
অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন ফখরুলের
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ছাত্ররা দল গঠন করলে স্বাগত জানাই। সরকারে কিছু থাকবেন, আবার কিছু লোক সরকারের সহায়তায় দল গঠন করবেন, এটা হতে পারে না। সরকারের লোকজন সংঘাতময় কোনো বক্তব্য দেবেন না। নিরপেক্ষ থেকে নির্বাচন দিতে হবে। আর নয়তো জনগণ মেনে নেবেন না।’’
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ আফাজ উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপি কেন্দ্রীয় ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল হক, সদস্য সচিব মোস্তফা জামান। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন দক্ষিণখান থানা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক হেলাল উদ্দিন তালুকদার।
আমিনুল হক বলেন, ‘‘বিএনপি জনগণের দল। জনগণের পাশে থেকে কাজ করে। তারেক রহমানের নির্দেশে করোনাকালে আমরা জনগণের পাশে থেকে লাশ দাফন করাসহ দরিদ্রদের জন্য ত্রাণসামগ্রী নিয়ে গ্রামে গ্রামে গিয়ে দিয়েছি। কিন্তু আ.
তিনি বলেন, ‘‘এখন দেখা যায়, নব্য বিএনপি সেজে আ.লীগের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলদারি লুটতরাজসহ বিভিন্ন ধরনের অপকর্ম করে বিএনপির ওপর চাপিয়ে দেওয়া অপচেষ্টা করছে। এজন্য আমাদের সকলকে সর্তক থাকতে হবে।’’
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আমিনুল হক বলেন, ‘‘বাংলাদেশের জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী অতি দ্রুত সময়ের ভেতরে একটা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দিয়ে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করুন। কারণ, দেশের মানুষ গত ১৫ বছর ধরে ভোট দিতে পারেননি। তারা ভোট দিতে চায়।’’
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন— মহানগর উত্তরের যুগ্ম আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমান সেগুন, এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন, এম কফিল উদ্দিন আহমেদ, গাজী রেজাউনুল হোসেন রিয়াজ, মাহাবুব আলম মন্টু প্রমুখ। অনুষ্ঠান শেষে দরিদ্রের মধ্যে শীতবস্ত্র ও শাড়ি বিতরণ করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
ঢাকা/নাজমুল
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ম র জ ফখর ল ইসল ম আলমগ র ব এনপ জনগণ র প ব এনপ র সরক র র ফখর ল
এছাড়াও পড়ুন:
৩১ দফা বাস্তবায়নই হবে বিএনপির ওপর নির্যাতনের প্রতিশোধ: তারেক রহমান
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ৩১ দফা বাস্তবায়নই হবে বিএনপির ওপর অত্যাচার-নির্যাতনের প্রতিশোধ। আমরা দেশ ও জনগণকে নিয়ে আলোচনা করেছি। এখন এটি আমাদের বাস্তবায়ন করতে হবে। আমার ওপর যে অত্যাচার-নির্যাতন হয়েছে, আমার মায়ের ওপর অত্যাচার হয়েছে, আমার ভাইকে হত্যা করা হয়েছে। আমি এসবের প্রতিশোধ নিতে চাই ৩১ দফা বাস্তবায়ন করে। বুধবার সন্ধ্যায় লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে রংপুর বিভাগের রংপুর, নীলফামারী ও সৈয়দপুর সাংগঠনিক জেলায় ৩১ দফা নিয়ে কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তারেক রহমান বলেন, বিএনপির উপর জনগণ আস্থা রাখে। তারা মনে করে দেশ ও মানুষের জন্য কিছু করা সম্ভব হলে তা বিএনপিই পারবে। তাই আমি বলছি, জনগণের আস্থা ধরে রাখতে হবে। কর্মশালায় ৩১ দফার আলোচনা ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মৎসজীবীদলসহ যারা শহীদ জিয়া ও খালেদা জিয়ার আদর্শকে ধারণ করে তাদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে। তারা জনগণের কাছে সেই বার্তা নিয়ে যাবে এবং জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করবে।
তিনি বলেন, আপনারা স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছেন। রাজপথে মিছিল, মিটিং, সংগ্রাম করেছেন। কিন্তু এবার জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে দেশ গঠনের জন্য। আজ থেকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত প্রতিটি কর্মী এই ৩১ দফার বার্তা চারদিকে ছড়িয়ে দেবে। সবার কথা ৩১ দফার মধ্যে রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা টিভির টকশোতে, সরকারি ব্যক্তিদের কাছে, রাজনৈতিক দলের নেতাদের কাছে সংস্কার নিয়ে সেসব কথাই শুনি। কিন্তু আজকের আলোচনায় প্রান্তিক মানুষের চাওয়াগুলো উঠে এসেছে। এগুলো নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে।
তারেক রহমান বলেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ জিয়াউর রহমান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া দেশ পরিচালনার সুযোগ পাওয়ার পর তারা কীভাবে দেশের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অবকাঠামো উন্নয়ন, কৃষি উৎপাদন বাড়ানো যায় সেই কাজগুলোই করেছেন। তারা সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছিলেন, নারীদের আসন সংখ্যা বাড়িয়েছিলেন। আইনী ব্যবস্থাকে স্বাধীন করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। মানুষের জীবন সম্পর্কিত সবগুলো কাজকে বিএনপি প্রাধান্য দিয়েছে। আমাদের দেশ ও মানুষের কল্যাণে কাজ করে যেতে হবে।
তিনি বলেন, বিগত ১৫ বছর স্বৈরাচার সরকার ক্ষমতাকে ধরে রাখতে নানা ট্যাগ দিয়ে জাতিকে বিভক্ত করে রাখার চেষ্টা করেছিল। জাতিকে এগিয়ে নিতে হলে চেষ্টা করতে হবে কম মতপার্থক্য ও জাতিকে ঐক্যবদ্ধ রাখা। কারণ জাতি বিভাজিত হলে দেশ এগিয়ে যেতে পারবে না। আমরা ধর্ম বিবেচনায় নয়, বাংলাদেশি হিসেবে বিবেচনা করবো এবং সকল ধর্মের মানুষের সম্প্রীতির দেশ গড়ে তুলবো।
কর্মসংস্থান নিয়ে তিনি বলেন, দেশের প্রায় ৩ কোটি নারী-পুরুষ বেকার রয়েছে। এত মানুষকে বেকার রেখে দেশকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভাব হবে না। তাই কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র বাড়াতে হবে। সেটি সরকারি বা বেসরকারিভাবে হতে পারে। বিশেষ কোনো প্রকল্পে কর্মসংস্থান তৈরি ও উদ্যোক্তা তৈরির মাধ্যমে হতে পারে।
তারেক রহমান বলেন, সমাজের অনেক গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি রয়েছেন যারা দেশের জন্য কাজ করতে চান। কিন্তু তারা নিয়মিত রাজনীতিতে নেই। এমন শিক্ষক, সাংবাদিক, আইনজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষকে সমাজের উন্নয়নে কাজ করার সুযোগ দেবে বিএনপি।
তিস্তা বিষয়ে তারেক রহমান বলেন, উত্তরের তিন কোটি মানুষ তিস্তার সঙ্গে জড়িত। বিগত সময়ে এটিকে নিয়ে রাজনীতি হয়েছে। যার ফলে মানুষের ভাগ্যের উন্নয়নের পরিবর্তন হয়নি। এবার আমরা তিস্তাপারের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে রাজনীতি করতে চাই না। দেশ পরিচালনার সুযোগ পেলে যেভাবে উন্নয়ন ও পরিকল্পনা গ্রহণ করলে মানুষের উপকার হবে, সেটাই করা হবে। পরে তিনি বিএনপির ৩১ দফা নিয়ে নেতাকর্মীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।
রংপুর শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সামুর সভাপতিত্বে কর্মশালায় উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু। এতে প্রশিক্ষণ দেন বিএনপি মিডিয়া সেলের প্রধান অধ্যাপক ডা. মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. আব্দুল্লাহ আল মামুন। কর্মশালায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ আসাদুল হাবীব দুলু, গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খান, সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা, বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ফজলুর রহমান খোকন ও নাটোর জেলা বিএনপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট ফারজানা শারমিন পুতুল, জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম, সদস্যসচিব আনিছুর রহমান লাকু, মহানগর সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট মাহফুজ উন নবী ডন।