আয়কর ছাড়ের বড় ঘোষণা দিয়ে ভারতের বাজেট পেশ
Published: 1st, February 2025 GMT
মধ্যবিত্তদের জন্য বাজেটে আয়কর ছাড়ের বড় ঘোষণা দিয়ে পার্লামেন্টে বাজেট পেশ করেছেন ভারতের কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। আজ শনিবার সকালে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে দেখা করে সংসদের উদ্দেশ্যে রওনা দেন নির্মলা সীতারামন। এরপর তিনি পার্লামেন্টে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট পেশ করেন।
নরেন্দ্র মোদির তৃতীয় দফার প্রধানমন্ত্রিত্বের প্রথম পূর্ণাঙ্গ এই বাজেট মধ্যবিত্ত বেতনভোগী করদাতাদের জন্য স্বস্তিদায়ক। এবারের বাজেটে সবচেয়ে বড় ঘোষণা হল আয়কর ছাড়। ১২ লাখ রুপি পর্যন্ত আয়ে কোনো আয়কর দিতে হবে না বলে ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। এর আগে এই কর ছাড়ের ঊর্ধ্বসীমা ছিল ৭ লাখ রুপি।
এর মাধ্যমে টানা আটবার কেন্দ্রীয় বাজেট পেশ করে নতুন রেকর্ড গড়েছেন ভারতের এই নারী অর্থমন্ত্রী। এর মধ্যে সাত বার পূর্ণাঙ্গ বাজেট এবং একবার অন্তর্বর্তী বাজেট পেশ করেছেন তিনি।
আয়করের নতুন এই ব্যবস্থা আগামী অর্থবছর থেকে চালু হবে। উচ্চ আয়ের কর্মীরাও করছাড়ের আওতায় থাকবেন। বছরে ৫০ লাখ রুপি যাদের আয়, নতুন কাঠামোয় তারা ছাড় পাবেন ১ লাখ ১০ হাজার রুপি।
বাজেট পেশ করে দেশটির নাগরিকদের উদ্দেশ্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এই বাজেটের লক্ষ্য ক্রমবর্ধমান মধ্যবিত্তের ব্যয় ক্ষমতা বাড়ানো। এবারের বাজেটে স্বাস্থ্যখাতে বড় ঘোষণা দেন অর্থমন্ত্রী। দেশের প্রতিটি জেলায় ক্যান্সার সেন্টার তৈরি, মেডিকেল কলেজগুলোতে ১০ হাজার আসন বৃদ্ধি, চিকিৎসকদের সংখ্যা বাড়ানো, এক কোটি কর্মীকে স্বাস্থ্য ও বীমার সুবিধার আওতায় আনার সিদ্ধান্ত। ক্যান্সারসহ দুরারোগ্য ব্যাধির জন্য ব্যবহৃত ৩৬টি জীবনদায়ী ওষুধে কোনো কর লাগবে না। দেশের কৃষকদের উন্নয়ন ও আত্মনির্ভরতা বাড়াতেও একাধিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জোর দেওয়া হয়েছে পর্যটন, ক্ষুদ্র ব্যবসায়।
কেন্দ্রের এই ঘোষণায় কিছুটা উচ্ছসিত মধ্যবিত্ত সমাজ। এই বাজেটে দাম কমেছে মোবাইল ফোন, এলইডি টিভি, ইলেকট্রিক গাড়ি, দেশে তৈরি কাপড়, বরফজাত মাছ, চামড়ার জিনিস, মেডিকেল সরঞ্জামের। দাম বেড়েছে স্মার্ট মিটার, সোলার সেল, বিদেশি জুতা, বিদেশি আলো ও বিদেশি মোটরসাইকেলের।
বাজেটে কোন দেশের বরাদ্দ কত?
প্রতিবেশী দেশ ও কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ এমন দেশগুলোকে অর্থনৈতিক অনুদান দেয় ভারত। এবারের বাজেটে দেখা যায়, ২০২৫ সালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষে এমন বিদেশি অনুদান বাবদ মোট ৫ হাজার ৪৮৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় অনেকটাই কমেছে। গত বছর বিদেশি অনুদান বাবদ বরাদ্দ ছিল ৫ হাজার ৮৮৩ কোটি টাকা।
বাজেটে প্রতিবেশী মালদ্বীপে ভারতের সাহায্য গত বছরের বরাদ্দের তুলনায় ১২০ কোটি টাকা বেড়েছে। এই বছর সরকার মালদ্বীপকে ৬০০ কোটি রুপি অনুদান দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। গত বছরের মালদ্বীপের জন্য বাজেটে বরাদ্দকৃত ছিল ৪৭০ কোটি রুপি। গাণিতিক হিসাবে, এই এক বছরে মালদ্বীপের জন্য ভারতের বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ২৭ শতাংশ।
শুধু মালদ্বীপ নয়, আফগানিস্তানের জন্যও বাজেট বরাদ্দ বাড়িয়েছে ভারত। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৫০ কোটি রুপি থেকে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বরাদ্দ বেড়ে হয়েছে ১০০ কোটি রুপি।
তবে বরাবরের মতই ভারতের বাজেটে বৈদেশিক সহায়তার সব থেকে বড় বরাদ্দ পেয়েছে প্রতিবেশি পাহাড়ি দেশ ভুটান। ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষে আর্থিক বরাদ্দ ১৫ শতাংশ কমালেও ভুটানকে ২ হাজার ১৫০ কোটির বরাদ্দ দিয়ে উন্নয়ন সহায়তার অংশীদার করেছে ভারত।
এদিকে ভারতের সঙ্গে সাম্প্রতিক বাংলাদেশের কূটনৈতিক শীতলতার প্রভাব পড়েনি বাজেট বরাদ্দে। শেষ আর্থিক বছরের মতোই ১২০ কোটি রুপিতে অপরিবর্তিত রয়েছে বাংলাদেশের উন্নয়ন সহায়তার বরাদ্দ। বাংলাদেশের সঙ্গে নেপাল শ্রীলংকা, মালদ্বীপের আর্থিক বরাদ্দও অপরিবর্তিত রেখেছে ভারত। আর্থিক বরাদ্দ উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে মরিস মরিশাস, সেশেলস ও গৃহযুদ্ধ বিধ্বস্ত মিয়ানমারের।
বাজেটে আফ্রিকার দেশগুলোর জন্য বরাদ্দ ২০০ কোটি থেকে বাড়িয়ে ২২৫ কোটি করা হয়েছে। লাতিন আমেরিকার বরাদ্দ ৯০ কোটি থেকে কমে হয়েছে ৬০ কোটি। ইরানের চবাহার পোর্টের জন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ ধরে রাখা হয়েছে। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিপর্যয়ের ক্ষেত্রে যে অনুদান দেওয়া হয়, সেই বরাদ্দ ৬০ থেকে বাড়িয়ে ৬৪ কোটি টাকা করেছে কেন্দ্র।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব জ ট প শ কর র জন য ব গত বছর আর থ ক বছর র
এছাড়াও পড়ুন:
৩ মাসে আয় ৯৯ কোটি টাকা, আয়ের অর্ধেকই মুনাফা
চলতি বছরের প্রথম ৩ মাসে ৯৯ কোটি টাকার ব্যবসা করেছে বাংলাদেশ সাবমেরিন কেব্লস। আর সব ধরনের খরচ বাদ দেওয়ার পর শত কোটি টাকার ব্যবসার প্রায় অর্ধেকটাই মুনাফা করেছে কোম্পানিটি।
সরকারি মালিকানাধীন এই কোম্পানি গত জানুয়ারি থেকে মার্চ—এই ৩ মাসে মুনাফা করেছে ৪৮ কোটি টাকা। আর এই সময়ে ব্যবসা করেছে ৯৯ কোটি টাকার। অর্থাৎ কোম্পানিটি যা আয় করে, সব খরচ বাদ দেওয়ার পর তার প্রায় অর্ধেকই মুনাফা। কোম্পানিটির গত জানুয়ারি-মার্চের তৃতীয় প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য পাওয়া গেছে। গতকাল সোমবার কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদের সভায় এই প্রতিবেদন অনুমোদন করা হয়। আর শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি হিসেবে নিয়ম অনুযায়ী, আর্থিক প্রতিবেদনের এসব তথ্য স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের জানানো হয়েছে।
দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) দেওয়া কোম্পানিটির তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম ৩ মাসে কোম্পানিটির মুনাফা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে সাড়ে ৭ কোটি টাকার বেশি বা প্রায় ১৯ শতাংশ বেড়েছে। ২০২৪ সালের প্রথম ৩ মাসে কোম্পানিটি মুনাফা করেছিল ৪০ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। অথচ এই সময়ের ব্যবধানে কোম্পানিটির আয় বা ব্যবসা বেড়েছে সোয়া ২ কোটি টাকা বা সোয়া ২ শতাংশের মতো। চলতি বছরের প্রথম ৩ মাসে কোম্পানিটি ব্যবসা করেছে ৯৯ কোটি ৪২ লাখ টাকার। গত বছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ৯৭ কোটি ২০ লাখ টাকা।
সাবমেরিন কেব্লসের আর্থিক বছরের হিসাব করা হয় জুলাই-জুনের অর্থবছরের হিসাবে। সেই হিসাবে, গত মার্চ শেষে কোম্পানিটির তিনটি প্রান্তিক শেষ হয়েছে। শেয়ারবাজারের নিয়ম অনুযায়ী, তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে প্রতি প্রান্তিক শেষে আয়-ব্যয়ের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন দাখিল করতে হয়। তার আগে কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের সভায় এই আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদন করতে হয়। এসব প্রক্রিয়া শেষে গতকাল সাবমেরিন কেব্লস তাদের ৯ মাসের (জুলাই-মার্চ) আয়-ব্যয় ও মুনাফার তথ্য প্রকাশ করেছে।
আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, কোম্পানিটি গত ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) ২৯৪ কোটি টাকার ব্যবসা করেছে। তার আগের অর্থবছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ৩৩৮ কোটি টাকা। সেই হিসাবে, ১ বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির ৪৪ কোটি টাকার ব্যবসা কমেছে। তবে ৯ মাসের বিবেচনায়ও দেখা যায়, কোম্পানিটি যে পরিমাণ আয় বা ব্যবসা করে, তার প্রায় অর্ধেকই মুনাফা। গত জুলাই-মার্চে ২৯৪ কোটি টাকার আয়ের বিপরীতে সব ধরনের খরচ বাদ দিয়ে কোম্পানিটি মুনাফা করেছে ১৪০ কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ৩৩৮ কোটি টাকার ব্যবসা করে কোম্পানিটি মুনাফা করেছিল ১৬৮ কোটি টাকা।