বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গুরুতর আহত ১৯৪ জনের চোখের চিকিৎসা দিয়েছে সিঙ্গাপুরের পাঁচজনের চক্ষু বিশেষজ্ঞ একটি চিকিৎসক দল। দুই দিনের কার্যক্রমের প্রথমদিন শনিবার তারা জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল (এনআইওএন্ডএইচ) এবং বাংলাদেশ আই হাসপাতাল ঘুরে এসব রোগী দেখেন।

আহতের চোখের পরীক্ষা-নিরীক্ষা পর্যালোচনা করে সার্জারি, সিলিকন অয়েল পরিবর্তনসহ নানা নির্দেশনা দেন। এ সময় ভবিষ্যতের চিকিৎসা এবং পুনর্বাসন প্রোটোকল সম্পর্কে পরামর্শ দেন। 

দ্বিতীয় দিন রোববার তারা এই দুই হাসপাতালে আর ও রোগী দেখবেন এবং সোমবার রাতে বাংলাদেশ ত্যাগ করবেন।

এই দলের সদস্যরা হলেন- মাউন্ট এলিজাবেথ নোভেনা হাসপাতালের চক্ষু ও কর্নিয়া সার্জারির প্রধান ডোনাল্ড ট্যান, ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি হাসপাতালের অফথালমোলোজির ক্লিনিক্যাল ডিরেক্টর ব্লাঞ্চ লিম, সিঙ্গাপুর ন্যাশনাল আই সেন্টারের সহযোগী অধ্যাপক এবং রেটিনা সার্জন রোনাল্ড ইয়োহ, মাউন্ট এলিজাবেথ নোভেনা হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট এবং রেটিনা বিশেষজ্ঞ নিকোল ট্যান এবং সিঙ্গাপুর ন্যাশনাল আই সেন্টারের কনসালট্যান্ট চক্ষু বিশেষজ্ঞ রুবেন ফু।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়, বুয়েট আমরা ৯২ ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ আই হাসপাতাল, জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল এবং অরবিস ইন্টারন্যাশনালের যৌথ উদ্যোগে সিঙ্গাপুরের চক্ষু বিশেষজ্ঞদের বাংলাদেশে আনা হয়েছে।

চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক খায়ের আহমেদ চৌধুরী বলেন, ঘণ্টায় ১৩৭ জন আহতদের চোখের অবস্থা নানাভাবে পর্যবেক্ষণ করেন। এ সময় রোগীদের পরবর্তীতে করণীয় বিষয়েও নির্দেশনা দেন। 

তিনি বলেন, যদি তাদের (রোগীদের) আরও চিকিৎসার প্রয়োজন হয়, তাহলে চিকিৎসকদের আরেকটি দল আসবে। যদি কোনো রোগীর বিদেশে চিকিৎসার প্রয়োজন হয়, তাহলে তারা সে পরামর্শও দেবেন।

চিকিৎসক দল চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট থেকে বিকেলে বাংলাদেশ আই হাসপাতাল যান। সেখানেও ৫৭ আহতের চোখের চিকিৎসা দেন। 

বাংলাদেশ আই হাসপাতালের চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা.

ইসতিয়াক আনোয়ার বলেন, সিঙ্গাপুরের চিকিৎসক আহতের গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন। এদের মধ্যে উন্নত চিকিৎসার জন্য যাদের বিদেশ যাওয়া প্রয়োজন তাদের একটি তালিকা তৈরি করা হবে। কালকেও দুই হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হবে।

জুলাই আন্দোলনে চোখে আঘাতপ্রাপ্তদের চিকিৎসার জন্য বিদেশ থেকে আসা এটি চতুর্থ চক্ষু বিশেষজ্ঞ দল। এর আগে একটি চীনা, একটি নেপালি এবং একটি ফরাসি দল তাদের চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশে এসেছিল।

চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আন্দোলনের সময় চোখে আঘাতপ্রাপ্ত কয়েকশ’ রোগী এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। তাদের মধ্যে চারশ’ জনেরও বেশি এক চোখে এবং ৫৫ জন উভয় চোখে আঘাত পেয়েছেন। আহতদের মধ্যে নয়জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো হয়েছে।

আহতদের চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের দেওয়া চিকিৎসায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন ডা. রোনাল্ড ইয়োহ। তিনি বলেন, আন্দোলনের সময় শত শত মানুষের চোখের আঘাত বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর বিশাল চাপ সৃষ্টি করেছিল। কিন্তু তারা (চক্ষু হাসপাতালগুলো) অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে রোগীদের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা করেছে এবং তাদের দেওয়া চিকিৎসা দেখে আমরা মুগ্ধ হয়েছি।
 

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

চাঁদপুরে বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে গোলাগুলি, নিহত ২

চাঁদপুরের মতলব উত্তরের বাহেরচরে অবৈধ বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে কানা জহির ও কিবরিয়া গ্রুপের মধ্যে গোলাগুলিতে রিফাত ও রাসেল নামে দুই জন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। 

এ ঘটনায় আইয়ুব আলী নামে আরও একজন গুলিবিদ্ধ হয়ে ঢাকায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন। সংঘর্ষে ১১ জন গুরুতর আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার পরে মোহনেপুরের কাছাকাছি মেঘনা নদীতে এ ঘটনা ঘটে। তবে ঘটনাস্থল আব্দুল্লাপুরও হতে পারে বলে জানিয়েছে পুলিশ। আহতদের পার্শ্ববর্তী মুন্সিগঞ্জ হাসপাতালে নেওয়া হলে বিষয়টি জানাজানি হয়।

মুন্সিগঞ্জ সদর থানার ওসি মো. সাইফুল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, প্রভাব বিস্তারের জের ধরে মেঘনা নদীতে বালু উত্তোলন নিয়ে দ্বন্দ্বে কানা জহির ও কিবরিয়া গ্রুপের সদস্যরা দুটি করে মোট চারটি স্পিডবোটে করে একে অপরের প্রতি সশস্ত্র হামলা চালায়। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন চাঁদপুরের মতলব উত্তরের দশানি গ্রামের রিফাত (২৯) ও ভাষানচর গ্রামের রাসেল (৩০)। 

গুলিবিদ্ধ আইয়ুব আলীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল থেকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

একটি অসমর্থিত সূত্র বলছে, ডাকাত দলের সাথে নৌ পুলিশের গোলাগোলি ঘটেছে। যদিও নৌপুলিশের কেউ এখনো এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে কানা জহির এবং কিবরিয়া দুজনেরই নৌ ডাকাত হিসেবে কুখ্যাতি রয়েছে।

ওসি মো. সাইফুল বলেন, “এটি চাঁদপুরের ঘটনা। গুলিবিদ্ধ আহতদের মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে এলে দায়িত্বরত চিকিৎসক দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন এবং এক জনকে ঢাকায় পাঠান। অন্তত ১১ জন আহত হওয়ার খবর পাচ্ছি। এটি বালু উত্তোলনে প্রভাব বিস্তারকে জেরে সংঘর্ষ ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি। বিস্তারিত পরে জানাতে পারব।”

ঢাকা/অমরেশ/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘সমন্বয়ক’ আখ্যা দিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, আহত ৮
  • চাঁদপুরে বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে গোলাগুলি, নিহত ২