বরগুনায় বঙ্গবন্ধু নৌকা জাদুঘর ভাঙচুর
Published: 1st, February 2025 GMT
বরগুনা পৌর শহরের বঙ্গবন্ধু নৌকা জাদুঘরে ভাঙচুর চালানোর অভিযোগ উঠেছে বিএনপির সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে।
শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১১টার দিকে জাদুঘরটি ভাঙচুর করেন তারা। বিকেল পৌনে ৫টার দিকে জাদুঘরটি পুরোপুরি গুঁড়িয়ে দেন নেতাকর্মীরা।
জাদুঘরটি ভাঙচুরে নেতৃত্ব দেন যুবদলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মুরাদ খান, বরগুনা জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ইকবাল হোসেন সোহাগ এবং বরগুনা জেলা ছাত্রদলের সাবেক সদস্য সচিব মুরাদুজ্জামান টিপন।
আরো পড়ুন:
১৫ জেলেকে অপহরণের অভিযোগ, আটক ৩ বনদস্যু
বিএনপি মামলা বাণিজ্য শুরু করেছে: ইব্রাহীম মোল্লা
২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর বরগুনা পৌর পুরানো গ্রন্থাগারের ঝূঁকিপূর্ণ ও পরিত্যক্ত ভবন ভেঙে তৈরি করা হয়েছিল নৌকা জাদুঘর।
বরগুনা জেলা প্রশাসনের নাজির তানসেন জানান, নদী মাতৃক দেশের এক সময়ের একমাত্র বাহন নৌকাকে নতুন প্রজন্মের কাছে পরিচিত করানোর পাশাপাশি দেশি-বিদেশি পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে বরগুনায় নির্মাণ করা হয়েছিল দেশের প্রথম নৌকা জাদুঘর। ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর ১৬৫ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৩০ ফুট প্রস্থের নৌকার আদলে জাদুঘরটির নির্মাণ কাজ শেষ করে তৎকালীন বরগুনা জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ। এর মূল ভবন ৭৫ ফুট, প্রতিটি গলুইয়ের দৈর্ঘ্য ৪৫ ফুট। এরপর দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ১০১ ধরনের বিলুপ্ত নকশার নৌকা সংগ্রহ করে রাখা হয়েছিল।
ওই সময় জাদুঘরটির পাশাপাশি নৌকা গবেষণাকেন্দ্র, আধুনিক লাইব্রেরি, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্নার, শিশুদের বিনোদনের জন্য রাইড, থিয়েটার, ক্ষুদ্র ক্যাফেসহ নানা প্রতিষ্ঠান নির্মাণের আশ্বাস ছিল। তবে উদ্বোধনের চার বছরেও তা বাস্তবায়ন হয়নি।
দক্ষিণের পর্যটন উদ্যোক্তা আরিফুর রহমান বলেন, “বরগুনা উপকূলীয় জেলা। এই জেলার চারপাশ নদীবেষ্টিত। নৌকা আমাদের ঐতিহ্য। তবে দলীয় প্রতীক হিসেবে না দেখে ঐতিহ্য হিসেবে ভাবলে নৌকা জাদুঘরটা রাখা যেত। হয়তো নামের পরিবর্তন করে নৌকা জাদুঘরটা টিকিয়ে রাখা হলে আমাদের উপকূলের ঐতিহ্য টিকে থাকতো। বিএনপির উদ্যোগে ভেঙে ফেলা হয়েছে নৌকা জাদুঘর।”
বরগুনা জেলার ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মুরাদুজ্জামান টিপন বলেন, “নৌকা জাদুঘরের নামে ১০ টাকা করে চাঁদা উঠানো হতো। সরকারি সম্পত্তি দখল করে নৌকা জাদুঘর করা হয়েছে। তাই জনগণ এটা ভেঙে ফেলেছে।”
যুবদলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মুরাদ খান বলেন, “বঙ্গবন্ধু নৌকা জাদুঘর নাম দেওয়ার কারণে জনরোষ সৃষ্টি হয়েছিল। তাই এটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। পরবর্তীতে শহীদ জিয়া স্মৃতি পাঠাগার তৈরি করার দাবি জানাচ্ছি জেলা প্রশাসকের কাছে।”
এ বিষয়ে জানতে বরগুনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আলমকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
ঢাকা/ইমরান/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর জ দ ঘর বরগ ন
এছাড়াও পড়ুন:
জবি শিক্ষার্থীদের উপর ছাত্রদল কর্মীর নেতৃত্বে হামলার অভিযোগ, প্রতিবাদে বিক্ষোভ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা এ বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করে দ্রুত বিচার দাবি করেন।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা হলেন, জবির রসায়ন বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আকাশ আলী, তামান্না তাবাসসুম ও আবুল বাসার। অপরদিকে, হামলার নেতৃত্ব দেওয়া অভিযুক্ত ছাত্রদল কর্মী অনিক কুমার দাশ মার্কেটিং বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ।
এর আগে, গতকাল বুধবার (২৯ জানুয়ারি) জবির কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মার্কেটিং বিভাগের দুই শিক্ষার্থী জুতা পায়ে উঠলে রসায়ন বিভাগের দুই শিক্ষার্থী তার প্রতিবাদ করে। এতে তাদের ওপর হামলা চালায় মার্কেটিং বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থী।
এ হামলার নেতৃত্ব দেন জবি ছাত্রদল কর্মী ও মার্কেটিং বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী অনিক কুমার দাশ। এতে আরো যুক্ত ছিলেন, মাহফুজুর রহমান চৌধুরী মাহী, আয়ান, আরিফ, রাতুল, আসিফসহ আরো ১৫ জন।
এ হামলার প্রতিবাদে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, গত ৫ আগস্ট পরবর্তী বাংলাদেশে আমরা আর কোন দমন-পীড়ন বরদাস্ত করব না। আর কাউকে ফ্যাসিস্ট হয়ে ওঠার সুযোগ দেওয়া হবে না। এর আগের হামলাগুলোর ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হলে আজ আমাদের এখানে দাঁড়াতে হত না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এসব ঘটনার দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা করুক। আমরা এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
রসায়ন বিভাগের ভুক্তভোগী নারী শিক্ষার্থী ২০২০ -২০২১ সেশনের তামান্না তাবাসসুম বলেন, “আমরা প্রক্টরের কাছে গিয়েছিলাম। তারা আমাদের কোন সহযোগিতা করেনি। আমরা তাহলে কার কাছে যাব? আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।”
একই বিভাগের শিক্ষার্থী আকরাম হোসেন বলেন, “গতকালের ঘটনার পর আমরা প্রক্টরের কাছে যাওয়ার পর তিনি আমাদের বলেন, ২০০৫ সালের নীতিমালা পড়ার জন্য। এ বিষয়ে তারা কি পদক্ষেপ নেবে, সে ব্যাপারে তিনি আমাদের কিছু জানাতে পারেননি। বরং আমাদের বিভাগের শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। যদি এ ঘটনায় প্রশাসন কোন ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে আমরা প্রশাসন ও যে দলের প্রশ্রয়ে এ ঘটনা ঘটেছে, তাদের বিরুদ্ধে সাধারণ শিক্ষার্থীরা আন্দোলন গড়ে তুলবে। সেই সঙ্গে আমরা ক্লাস বর্জনের ডাক দেব।”
আব্দুল কাহহার জামিল বলেন, “গতকালের ঘটনায় প্রক্টর স্যার আমাদের কোন খোঁজ নেননি। রাত ১০টার পর একজন সহকারী প্রক্টরকে পাঠান। তিনি চিকিৎসার জন্য কিছু টাকা দেন। কিন্তু প্রক্টর স্যারের সঙ্গে আমরা কথা বলতে গেলে তিনি দুর্ব্যবহার করেন। গত ১ বছরে আামদের বিভাগের শিক্ষার্থীরা তিনটি হামলার অভিযোগ করলেও সুষ্ঠু বিচার পাননি। যদি ওই ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হত, তাহলে আজ আমাদের এখানে দাঁড়াতে হত না। আমরা এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।”
তিনি বলেন, “বিচারের নামে টালবাহানা করা হয়। আমাদের প্রক্টর অফিস থেকে ভয় দেখিয়ে অভিযোগ তুলে নেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হয়। এছাড়া আমাদের নানা হুমকি দিয়ে ভয় দেখনো হয়। বলা হয়, যদি ক্যাম্পাসের বাইরে কেউ হামলা করে, তাহলে সে দায় প্রক্টর অফিস নেবে না।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক বলেন, “সবকিছুর জন্য সময় দরকার। রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা যেভাবে বিচার চাচ্ছে, সেটা এত দ্রুত সম্ভব না। আগের একটা কমিটি আছে, সে কমিটির কাছেই আমি এটার তদন্ত হস্তান্তর করেছি।”
তিনি বলেন, “হ্যাঁ, আমি তাদের ২০০৫ সালের নীতিমালা পড়তে বলেছি। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে আগামীকাল ভর্তি পরীক্ষা আছে। সব মিলিয়ে ব্যস্ততার মধ্যে আছি।”
ঢাকা/লিমন/মেহেদী